Ajoy Kumar Basu

Fantasy

1  

Ajoy Kumar Basu

Fantasy

পিকনিকে অঘটন

পিকনিকে অঘটন

5 mins
937


আমরা জনা কুড়ি ইস্কুলে পড়ি। প্রত্যেকে কেউকেটা। এক্কেবারে অ -দলবদ্ধ। মিল একটাই -সবাই কিছু করতে চায়। আর একটায় অভিন্ন : ঝমঝমে বৃষ্টিতে ফুটবল খেলা। কাদা মাখা বাড়ী ফেরার বকুনি আমাদের বড়ই আনন্দের গপ্পো। যে যত বকুনি পাবে , সেদিনের সেই সেরা। আর ছিল সত্যনারায়ণ পুজোর নামে একটু রাত করে বাড়ী ফেরা। আফটার অল সত্যনারায়ণ বোলে কথা , আমাদের মতো ভক্ত ছাড়া পূজো অসম্ভব। এখন বুঝি সত্যনারায়ণ পুজোর নামে কেন বকুনি পেতাম না ; ওই একদিন আমাদের জনক -জননীরা জানতেন আমরা কোথায় আছি।

এর মানে এই নয় যে আমরা এদিক ওদিক পালাতাম। কিন্তু ডি এম সাহেবের বাগানে ভালো লিচু ,লাল রংয়ের হাতছানি আমাদের একটু বেশি টানতো। রাত ছাড়া উপায় ছিল কী ? দিনের বেলা ইয়া ইয়া গোঁফ ওলা পাহারা। রাতের বেলা বেচারীরা একটু ঘুমোবে এটাই তো উচিত। আর তাই আমাদের মাঝে মাঝে মধ্য রাত্রে সান্ধ্য ভ্রমণে বেড়োতেই হতো। আমাদের কিন্তু সবাই একটু একটু ভালোবাসতো। না বেসে উপায় কী। দরকার পড়লেই আমরা হাজির। এর বাড়ীর বেড়াল ছানা ওবাড়ীতে পাচার ,এবাড়ীর কুলগাছের ডাল পাশের বাড়িতে , সব কুল যাচ্ছে অন্যের পেটে তাই ডালটা কাটতে হবে; কে করবে ? মালি ? মারামারি হয়ে যাবে। আর আমরা রাতের অন্ধকারে নিঃশব্দে কাজ করি। জানতে পারে না ,আর জানলেও কিছু করতে পারে না.... আমাদের স্বার্থহীন পড়শী সম্প্রীতি রক্ষা যে একটা সমাজ সেবা এটা সবাই মানতো। আমাদের একটা ক্লাব ছিল ,গালভরা নাম Barrack Square Junior .ছেলে মেয়ে সবাই মিলে ফুটবল ক্রিকেট দাঁড়ি পাল্লা ,চোর পুলিশ সব খেলা হতো। আমরা অবশ্য মেয়েদের সঙ্গে নিয়ে রাত্রি অভিযানে যেতাম না ; তাই একটা চাপা রেষারেষি ছিল।

এই মেয়েগুলো আমাদের বিপদের মুখে ফেললো। তখন বাইবেল পড়িনি ,তাই জানতাম না জ্ঞান বৃক্ষের ফল কে কাকে খাইয়েছিল। জানলে সাবধানে থাকতাম। আমাদের চোখে মেয়েগুলো আমাদের মতনই , একটু সুর ওয়ালা গলা আর রাগলে চিৎকার করে লোক জড়ো করে। আর বাবা মায়েরা ঝগড়ার সময়ে মেয়েদের হয়ে কথা বলতো।

 এইতো সেবার রিনি জোগাড় করে অন্য একগাদা পাকা কুল সঙ্গে কাঁচা লঙ্কা আর তেল। একটা বড়ো কুল পার্টি শুরু , আর তখনি হাজির রিনির মা আর কাকিমা, হাতে ছড়ি। কথা নেই দু ঘা রিনির ভাইটার পিঠে। কুলের আচার করবে বলে রোদ্দুরে কুল শুকোচ্ছিলো ,একটাও নেই। প্রথমে ভেবেছিলো হনুমানের কীর্তি , বহ রম পুরে তাদের বেশ আধিপত্য। মনেও আসেনি এ কাজ হনুমতিও করতে পারে। দুই আর দুই মিলিয়ে তেরো করে নিশ্চিত হলো বাড়ীতে থাকা হনূমান ই এ কাজ করতে পারে। সাজাটা ঠিক করে দেরী নয় , সাজাটা দেয়া হয়ে গেল। অপরাধীর কথার No Value .সেই থেকে একই ধারা চলে আসছে। একদল রাত্রের অন্ধকারে বাড়ী ঢুকে ভাঙচুর করলো আর বিচারে বাড়ী জমি তারাই পেলো। এসব কথা না বলাই ভালো। কিন্তু সেদিন মা কাকী কুল গুলো বাজে আপ্ত না করে গজগজ করে প্রস্থান করলেন। আমরা কেউ মুখ খুলিনি। শুধু প্রত্যেকের ভাগ থেকে একটা করে কুলের`টুকরো রিনির ভাইকে দিয়েছিলাম। এই ভ্রাতৃ -ভগিনীত্ব সব কষ্টের Best দাওয়াই।

 

এই মেয়েগুলো Challenge করে বসলো আমরা ছেলেরা কোনো কোম্মের নোই। উদাহরণ আমরা রান্না খেতে পারি কিন্তু রান্না করতে পারিনা। Male Ego জানতাম না। কিন্তু তাদের Observation এর সত্যতা মেনেও হারতে রাজি ছিলাম না। আমরা ছেলের দল ঠিক করলাম জবাব আমাদের দিতে হবেই। বিশু একটু বুদ্ধি রাখে। তার পরামর্শ হল ,আগে experiment করে ,practice করে তারপর নারী সমক্ষে যাওয়াটা বিচক্ষণতার পরিচয় দেবে। আমরা মানলাম আর ঠিক হলো All Male পিকনিক করতে হবে , একটু দূরে যাতে Girl Interference  আর Unwanted Noise আমাদের মনো সংযোগে ব্যাঘাত না করে।

 

পরের রোববার আমাদের বিজয় অভিযান শুরু করলাম। যতটুকু পয়সা জোগাড় হলো তাতে কাউঠ্যার মাংস হতে পারে। বাকি সব সহজ। চাল আর মশলা পেতে কোন অসুবিধা নেই। মায়েরা দয়াময়ী , শুধু Material Supply নয় , রন্ধন প্রণালীটাও বলে দিলেন। এক বন্ধুর মা একটু গভীরে গিয়ে বেশ খানিকটা মুড়ি দিয়ে দিলেন। আমরা হারাধনের দশটি ছেলে পুং সম্মান পুনরুদ্ধারে যাত্রা করলাম। শহর ছাড়িয়ে পদ্দকালীর মন্দির , সঙ্গে বড়ো পুকুর। পুজোর আগে অনেক পদ্ম ফুল পুকুরটাকে ভরিয়ে রাখে।আর সন্ধি পুজোতে সেগুলো চলে যায় ১০৮ পদ্ম Per পুজো রেটে।

 

এরপর সহজ কাজ ,উনুন তৈরী ,কাঠকুটো জোগাড় করা আমাদের হাতের খেলা। কাঁচা আম পোড়াতে পোড়াতে আমরা সবাই Expert হয়ে গেছি। এত জনের দরকার নেই বুঝে কজন বেড়োলো Additive এর সন্ধানে। ফিরলো তাড়াতাড়ি , সঙ্গে ছোট বড়ো মিলিয়ে গোটা দশ বেগুন। কারণ দিলো , বেগুন ক্ষেতের মালিক তেড়ে আসছিলো , হাতে কাস্তে ,তাই Choicest আইটেম বার করা যায় নি। হাতের কাছে যা পেয়েছে নিয়ে এসেছে। সেকি জয়োল্লাস আমাদের ! তাড়াতাড়ি বেগুন পোড়া তৈরী হলো যাতে কেউ তাদের Trace করতে না পারে। ছিলকা বোঁটা চলে গেল পুকুরের নীচে। আমাদের Late Breakfast মুড়ি -বেগুনপোড়া।

 

রান্নার দায়িত্ত স্বেচ্ছায়ে নিলো দুই বীর , আমি আর সন্দীপ। বাকিরা গেল আবিষ্কারের পথে

 

মাংসটাকে আগে নিলাম। অদা ,পেঁয়াজ ,রসুন ,আর যা যা মশলা আছে মিশিয়ে ইট মেরে পেস্ট বানালাম। হাঁড়িতে তেল আর চিনি গরম হতেই মশলার পেস্ট। মশলা ভাজা ভাজা হলে মাংস ছাড়লাম। আবার কোষলাম। যখন বেশ কালচে হলো তখন ঢাল্লাম জল। এবার বসে থাকা। ভাতের চাল ধুয়ে ভিজিয়ে একলাম।অধঃগানটা সেদ্ধ , THE END . ভাট্টাকে বসলাম জাল দিলাম বেশি করে। সন্দীপ বললো ,একবার টেস্ট করে দেখলে হতো না? হাতায়ে করে ছোট্ট মাংসের টুকরো। ফুঁ দিয়ে ঠান্ডা করে সন্দীপের সামনে দিলাম। তারপর সন্দীপের আর্তনাদ , নুন দিসনি ? দিলাম নুন , একটু অপেক্ষা। আবার টেস্ট , এবার দুজনে।

তখন তো আর সেলফি ছিলোনা , তাই আমাদের মুখ রেকর্ড করতে পারিনি। মানব সমাজের একটা অপূরণীয় ক্ষতি , হারিয়ে গেল।

ফিসফিস করে সন্দীপ বললো ,একটু পোড়া গন্ধ এলো কোথা থেকে ? আর মাটির স্বাদ পাচ্ছি। আমার মুখে ভাষা নেই , শুধু নিস্তব্ধ সম্মতি। এত খারাপ মাংস যে ক্ষুধার্থ বাঘও খাবে না..অসহায় আমরা দুটি। না , কাঁদিনি। একটা ভয় -বাকিরা খেতে বসে আমাদের কী করবে।

কিন্তু আমরা থামিনি। পোড়া কাঠ সাজিয়ে দুটো চিতা বানালাম। তাদের ওপর দুটো হাঁড়ি। অল্প আঁচে নরম হবে আর থাকবে গরম। অন্ততঃ গরম ভাত আর নুন মন্দ লাগবে না।

পরের ঘন্টা তিনেক শুধু মজা। সাঁতার ,দৌড়োনো , জলে লাফালাফি। রান্না রইলো নিজের জায়গায়। হুঁশ এলো পেটের ডাকে। কী যে খিদে বলা যাবেনা। সবাই যখন খাবার জন্যে জামা প্যান্ট পড়ছে , আমার আর সন্দীপনের পেটে double গুড়ুগুড়ু। তৈরী থাকলাম বাঘের পেটে যেতে ,আজ আর নিস্তার নেই , আটটা বাঘ আস্ত খাবে।

 

সবাই তাড়াতাড়ি পাত সাজিয়ে বসলো , ভাতটা নিজেরাই নিলো। আমার কাজ মাংস পরিবেশন। সন্দীপ এই পরিস্থিতি দেখতে পারলোনা। জলত্যাগের অছিলায় একটা গাছের পেছনে। আর ফেরে না। আমি একলা মাংসের হাঁড়ি খুললাম। কোথায় মাংসর টুকরো? সব পেস্ট হয়ে গেছে। কাউঠ্যার মাংস এতো তাড়াতাড়ি গলে যাবে আমি কী ছাই জানি ? এর আগে খুব ভগবান মানতাম না , এই প্রথম ডাকলাম মন থেকে।

প্রত্যেকের পাতে দুহাতা মাংসোর পেস্ট। আমি চোখ বন্ধ করে বসা, হাতটা ভাতে। সন্দীপ দূরে ,তারও চোখ বন্ধ। মনটাকে শক্ত করলাম,জানি এক্ষুনি আসবে মাংসের ঢেলা।

এক সেকেন্ড দু সেকেন্ড ,আরো কটা সেকেন্ড।

তারপর অষ্ট কন্ঠে , "কী অপূর্ব রান্না !"

চোখ মেলে দেখি সকালের তৃপ্ত চাউনি , আঙুল চেটে খাচ্ছে সবাই। সন্দীপ গাছের পেছন থেকে বেড়োলো।

আমরা দশজন খাচ্ছি , বেশী কথা বলবার সময় নেই। রান্নাটা সকালের মতো অত খারাপ লাগছে না। ভালো লাগছে ,অপূর্ব লাগছে। খিদেটা ভীষণ পেয়েছে। ভাত আর মাংসোর তরকারি খাচ্ছি। এতো বন্ধু আনন্দ করছি , মাংসটা কেমন জানি আমাদের আনন্দের তালে না চ্ছে। আমি কী খাবার খাচ্ছি ,না কী আনন্দসাগরে ডুবে আছি ?

হারাধনের দশটি ছেলে রান্না জানে নাই

সবাই মিলে আনন্দটা ভাগ করলো তাই। 

 

অজয় কুমার বসু

 

স্বাদ শুধু জিভের নয়। খিদে আর পরিবেশ সাধারণ খাবারকে অসাধারণ করে তোলে। আমার লেখা খাবারের নয়। বন্ধুত্বের। পুরোনো দিনের দুস্টুমি ,ভাবনা ঝগড়া সব কিছু মিলে একাকার হয়ে গেছে। খাবারটা উদাহরণ মাত্র। আমরা দশ বন্ধু খুঁজতে বেড়িয়েছি নিজেদের ,জানতে চাইছি ের বন্ধুত্ব আমাদের শক্তি। বন্ধুরা বিচার করে না , কেবল হাতটা ধরে থাকে। একমাত্র বন্ধুরাই পারে কিছু না পেয়ে সবটুকু দিতে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Fantasy