ফুল না Fool? (অন্তিম পর্ব)
ফুল না Fool? (অন্তিম পর্ব)
দু দিন ধরে অর্কর বাড়ির সকলে স্নিগ্ধাকে কিভাবে প্রপোজ করতে হবে, অর্ককে তা নিয়ে অনেক রকমের উপদেশ দিয়েছে। কিন্তু সবকিছু অর্কর মাথার কয়েক লক্ষ কিলোমিটার উপর দিয়ে বেরিয়ে চলে যাচ্ছে।
দুদিন ধরে অর্ক বইয়ের একটা পৃষ্ঠাও পড়তে পারেনি বলে, এখন ঘুমোতে যাওয়ার আগে একটু শান্তি করে বই নিয়ে বসেছে। কিন্তু এই শান্তি বেশিক্ষন স্থায়ী হলোনা। অর্পণ হুট্ করে অর্কর রুমে এসে ওর বিছানায় একধারে বসে বলে " এই দাদাভাই কি করছিস? "
অর্ক : দেখতে পাচ্ছিস না বই পড়ছি।
অর্পন : তুই শুধু বই পোকা হয়ে বইতে মুখ গুঁজে বসে থাক।
অর্ক : তো কি করবো? সবাই যা শুরু করেছে...
অর্পন : সবাই তোর সাহায্যই করছে।
অর্ক : সাহায্য কম কনফিউস বেশী করছে।
অর্পন : দাদা রে! তোর কি হবে রে? শেষ কালে তোকে না হিমালয়ে যেতে হয়!!!
অর্ক : মানে?
অর্পণ : হে ভগবান তোর কি যে হবে?
অর্ক : 😒
অর্পণ : চিন্তা করিসনা। আমরা সবাই তোর সাথে আছি। তুই কলেজের পরীক্ষায় পাস করার প্রিপারেশন নে আর আমরা তোকে প্রেম পরীক্ষাতে পাস করানোর প্রিপারেশন নিচ্ছি।
অর্ক : আবার কি করছিস?
অর্পণ : একটু পড়েই জানতে পারবি।
বলে চলে অর্পণ অর্কর রুম থেকে চলে যায়। আর অর্ক সারারাত এই ভেবে টেনশন করে কাটায় যে সকাল হতেই ওর বাবা,মা আর দাদু ওর ওপরে কি অত্যাচার করবে।
সকাল বেলা ব্রেকফাস্ট টেবিলে অর্ক আসতেই সবাই অর্কর দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি করে হাসতে থাকে।
অর্ক যেই পরোটার একটা টুকরো মুখে পোড়ে, তখনি অর্কর দাদু বলে " দাদুভাই স্নিগ্ধা দিদিভাইকে কবে প্রপোজ করবে ভেবেছো? "
অর্কর বাবা : এই জনমে তুমি আর নাত বৌয়ের মুখ দেখতে পাবে না।
অর্কর দাদু : চুপ কর পটলা।
অর্কর বাবা : সত্যি বলার যুগই নেই।
অর্কর মা : বাবা তোমার স্ক্রিপ্ট লেখা শেষ হয়েছে?
অর্কর দাদু : হ্যাঁ একদম।
অর্কর মা : তাহলে শুভ কাজে দেরি কিসের? এবার তাড়াতাড়ি প্রপোজ করে দে।
অর্ক : 😑
অর্কর বাবা : তোমরা এই হাঁদারামকে যতই স্ক্রিপ্ট মুখস্ত করে পাঠাও না কেন, এ ঘেঁটে গোবর করে দেবে।
অর্ক : বাবা!
অর্কর মা : এই তুমি যখনই কথা বলো অশুভ কথা কেন বলো?
অর্কর বাবা : সত্যি কথা বললাম। কিন্তু আমার কথা শোনে কে?
অর্কর দাদু : পটলা চুপ করে মুখে আঙ্গুল দিয়ে বস।
অর্পন : দাদু কেমন স্ক্রিপ্ট লিখেছো, সেটা তো বলো।
অর্কর দাদু : বলবো না। পড়ে শোনাবো। দাঁড়া এখুনি আসছি।
দাদু তাড়াতাড়ি করে গিয়ে নিজের রুম থেকে স্ক্রিপ্টটা নিয়ে আসেন।
অর্কর দাদু : এনেছি।
অর্পণ : কিসের অপেক্ষা। পড়া শুরু করো।
অর্ক বাদে সবাই একসঙ্গে করতালি দিলে দাদু পড়া শুরু করে " হে প্রিয়তমা, শোনো আমার কথা। হৃদয় ছাড়া যেমন শরীরের নেই কোনো অর্থ, ঠিক তেমনি তুমি ছাড়া আমার এজীবন ব্যর্থ। শয়নে, স্বপনে......... "
অর্পণ : দাদু দাদু.... এটা কি?
অর্কর দাদু : স্ক্রিপ্ট।
অর্কর মা : এটা একটু কেমন জানো।
অর্কর বাবা : একটু কেমন জানো নয়। পুরোটাই কেমন জানো। এসব বলে যদি প্রপোজ করে না তাহলে তো স্নিগ্ধা মায়ের উত্তর পাক্কা নাই হবে।
অর্কর দাদু : চুপ কর পটলা।
অর্কর মা : বাবা এটা ক্যানসেল করো প্লিজ।
অর্পণ : দাদু এটা টোয়েন্টি ফার্স্ট সেঞ্চুরি। এখনকার যুগে এভাবে কেউ প্রপোজ করে না।
অর্কর দাদু : আমি তোদের ঠাম্মিকে এই ওল্ড ফ্যাশন ডায়লগগুলো দিয়ে বলেই প্রেম নিবেদন করেছিলাম।
অর্পণ : দাদু ঠাম্মা ঠাম্মা ছিল আর স্নিগ্ধা দি স্নিগ্ধা দি।
অর্কর দাদু : তাহলে?
অর্ক এতক্ষন ধরে চুপচাপ সব শুনছিলো। কিছু বলছিলো না। এবার অর্ক বলে " দাদু যেভাবে ঠাম্মাকে প্রপোজ করেছিল, আমিও সেভাবেই প্রপোজ করবো। চলো দাদু। "
বলেই কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অর্ক দাদুর হাত ধরে দাদুকে নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
দুঘন্টা ধরে অর্কর বাবা, মা আর অর্পণ অর্কর রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে ভিতরে কি চলছে, তা শোনার জন্য দরজায় আড়ি পেতে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্কর মা : কি গো কিছু শুনতে পেলে?
অর্কর বাবা : তোমার মতন অভিজ্ঞ মানুষ যখন শুনতে পাচ্ছে না, তাহলে আমি কিভাবে পাই বলো তো?
অর্কর মা : এই কি বলতে চাইছো?😡
বিড়বিড় করে অর্কর বাবা বলে " এমনি তে তো আমার কোনো কথায় কান দেয় না। আর এখন দেখো...। 😥 বলি ও ইন্দু শোনো না... "😟
অর্কর মা : কি শুনবো? হ্যাঁ?😡
অর্পণ : আরে তোমরা একটু থামবে। তোমাদের কিচিরমিচিরের জন্য কিচ্ছু শুনতে পাচ্ছি না।😠
অর্কর বাবা : হাস!!!😌
অর্কর মা : কি বললে?😡
অর্কর বাবা : এই হুনুমান কিছু শুনতে পেলি?
অর্পন : আমার তো হাতির কান না!!!😠
অর্কর মা : উফফ!!! চুপ করো সব। এবার যে একটা কথা বলবে তাকে আজকে লাঞ্চ আর ডিনার দুটোই খেতে দেবো না। 😤
অর্পণ বাবা : 😰😰
তিনজনে চুপচাপ আবার দরজায় আড়ি পেতে শুনতে লাগলো। কিন্তু হটাৎ করে দরজা খোলাতে অর্কর মা, বাবা আর অর্পন হুমড়ি খেয়ে পড়ে যায়।
অর্ক : তোমরা এভাবে কি করছো?🤨
অর্কর দাদু : আমাদের কথা শুনছিলো।😒
অর্কর বাবা : একদমই না। 😤আমরা কেন কথা শুনতে যাবো?
অর্কর মা : আমরা কথা শুনছিলাম না। আমরা তো.....
অর্পণ : আরে এসব ছাড়ো। আগে বলো তো তোমরা এতক্ষন ধরে দরজা বন্ধ ঘরের মধ্যে কি করছিলে?😒
অর্ক কিছু বলতে গেলে অর্কর দাদু ওকে বারণ করে দিয়ে বলেন, " অর্পণ দাদুভাই! একদম না। "
অর্পণ : আরে একটু তো বলো।
অর্কর দাদু : একটুও না। আধটুও না।😤
অর্কর বাবা : আচ্ছা তাহলে পৌনে আধা বলো।
অর্ক : পৌনে আধা!!!
অর্কর দাদু সবাই নিয়ে অর্কর রুম থেকে যেতে যেতে বলেন, " পৌনে আধাও না। সয়া আধাও না। চলো এখন সবাই এখান থেকে। "
পরের দিন বিকেল বেলা পার্কে......
অর্কর বন্ধু প্রতীকের এর গার্লফ্রেন্ড অলি আর স্নিগ্ধা টিউশন ফ্রেন্ড। স্নিগ্ধাকে অলির সাহায্য নিয়ে পার্কে ডেকে আনা হয়। এক ঘন্টা ধরে স্নিগ্ধা আর অলি পার্কের একটা বেঞ্চে বসে আছে। স্নিগ্ধা বারবার অলিকে জিজ্ঞাসা করছে কেন অলি ওকে এখানে ডেকেছে? অলি স্নিগ্ধাকে বারবার একটা না একটা নতুন বাহানা দিয়ে যাচ্ছে। স্নিগ্ধা রেগে গিয়ে অলিকে বকাঝকা দিয়ে পার্ক থেকে যেতে গেলে অলি স্নিগ্ধাকে বলে যে ওর বয়ফ্রেন্ড প্রতীক ওকে এখানে নিয়ে আসতে বলেছে। স্নিগ্ধা ডেকে আনার কারণ জিজ্ঞাসা করলে বলে যে প্রতীকের কোনো ফ্রেন্ড আছে সে ওকে এখানে আনতে বলেছে। কেন বলেছে অলি তা বলতে গেলেই প্রতীক আর অর্ককে আসতে দেখে চুপ হয়ে যায়।
স্নিগ্ধা : কি হলো বল?
অলি : আর পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর। সব বুঝতে পেরে যাবি।
বলে অলি স্নিগ্ধার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসতে লাগে।
অর্ক : আমার না খুব ভয় লাগছে জানিস।
প্রতীক : সে তো তোর মুখ দেখেই বুঝতে পারছি।
অর্ক : বলছি কি আজকে বরং থাক। আমরা কালকে আসবো। হ্যাঁ।
প্রতীক : একদম না। আজকেই বলবি। তুই একদম টেনশন করিস না। আমরা সবাই তোর সাথে আছি।
বলে হাত দিয়ে ইশারা করলে অর্ক তাকিয়ে দেখে ওরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছে, তার থেকে কিছু দূরে একটা গাছের আড়ালে ওর বাড়ির সবাই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওকেই দেখছে। অর্কর বাড়ির সবাই অর্ককে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে অল দ্যা বেস্ট বলছে, দেখে অর্ক বলে, " আমার বাড়ির সবাই কি করছে এখানে? "
প্রতীক : তোর ওপর অগাধ বিশ্বাস আছে তো, তাই এসেছে।
অর্ক : বলছি... ভয়েতে আমার না পেটটা খুব গুড়গুড় করছে আর মনটাও খুব দুরদুর করছে।
প্রতীক : তো?
অর্ক : আজকে চল। আমরা আবার কালকে আসবো, হ্যাঁ।
প্রতীক : এই নাটক কম করে চল তো চুপচাপ।
বলে প্রতীক অর্কর হাত ধরে ওকে টানতে টানতে স্নিগ্ধা কাছে নিয়ে যেতে লাগে।
এদিকে অর্কর অবস্থা দেখে অর্কর বাবা বলে, "এই ছেলে আমাদের বংশের নাক কাটাবেই। "
অর্কর দাদু : চুপ কর পটলা।
অর্কর বাবা : আমি ঠিক বললাম একদম। তুমি দেখো এই হাঁদা গঙ্গারাম প্রপোজ করতেই পারবে না।
অর্কর মা : বাবুকে কি বলছো? নিজেরটা মনে করো একবার।
অর্কর বাবা : পুরোনো কথা থাক না এখন।
অর্কর দাদু : কেন থাকবে? বাড়ি গিয়ে তোর হবে আজকে।
অর্কর বাবা : আপাতত এখন যা করতে এসেছি আমরা তাতে কনসেনট্রেট করি। এই তোর আবার কি হলো হনুমান?
অর্পণ : আমি বলছিলাম না যে স্নিগ্ধাদিদিভাইকে আমার খুব চেনা চেনা লাগছে। আমার এখন মনে পড়েছে, কেন এতো চেনা চেনা লাগছে।
অর্কর বাবা : কেন?
অর্পণ উত্তর দিতে গেলেই ওরা দেখে প্রতীক অর্ককে টেনে টেনে নিয়ে গিয়ে স্নিগ্ধার সামনে হাজির করে। স্নিগ্ধা রাগী রাগী ফেস করে অর্ক আর প্রতীকের দিকে তাকালে প্রতীক বলে, "অর্ক তোমাকে কিছু বলতে চায়। তাই তোমাকে এখানে ডেকেছি। "
স্নিগ্ধা : যে বলতে চায় সে নিজে কেন ডাকেনি?
প্রতীক : আসলে ও একটু লাজুক প্রকৃতির মানুষ তো তাই!
স্নিগ্ধা : যা বলতে চাও তাড়াতাড়ি বলো।
প্রতীক : ভাই তাড়াতাড়ি করে বলে ফেল।
অর্ক : হ... হ্যাঁ... আ... আ... সো... সো...
স্নিগ্ধা বিরক্ত হয়ে বলে, " যা আটকে আটকে বলছে তাতে এক সপ্তাহের আগে কিছু বলতে পারবে বলে মনে হয় না। এর থেকে ভালো যা বলার আমাকে ই-মেইল করে পাঠিয়ে দিও। অলি ওকে আমার ই-মেইল আই ডি টা দিয়ে দিস। আমি চললাম। "
প্রতীক : না না স্নিগ্ধা প্লিজ যেও না। অলি ওকে আটকাও।
বলে অর্ককে একটু সাইডে নিয়ে গিয়ে বলে " ভাই কি করছিস কি? এতো ভয় পেলে হয়? একটু সাহসী হ। মনে একটু বল সঞ্চয় কর। তুই TKC স্যার এর মতো একজনকে যদি ইমপ্রেস করতে পারিস তাহলে স্নিগ্ধাকেও পারবি। বল আমি পারবো। "
অর্ক : আমি পারবো।
প্রতীক : দ্যাটস দ্যা স্পিরিট মাই ফ্রেন্ড। তুই পারবি। তুই নিশ্চই পারবি।
অর্ক : আমি পারবো।
প্রতীক : গো ব্রো গো! গো ব্রো গো!
প্রতীকের কথা মতো অর্ক বুকে বল নিয়ে স্নিগ্ধার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে নিজের ব্যাকপ্যাক থেকে দুটো লাল গোলাপ ফুল বার করে, স্নিগ্ধার মুখের দিকে তাকাতেই আবার ভয়তে কাঁপতে শুরু করে দেয়।
অর্ক : (ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে)সি... সি...সি...
প্রতীক অলি : 🤦♂️🤦♀️
স্নিগ্ধা : অলি আমি যাচ্ছি।
অলি : এই না না।
প্রতীক : অর্ক কি করছিস কি?
অর্ক : বলছি বলছি। সি... সিগ্ধা...
স্নিগ্ধা : সিগ্ধা!!??
অর্ক : না না... সি সিঘ... স্নিগ্ধা... আমি... আমি... পটি পেয়েছে।
স্নিগ্ধা : কিহ?
প্রতীক : ভাই এসব কি বলছিস?
অর্ক : না... মানে... আমি... আমি... আমি... বলছিলাম কি যে... (স্নিগ্ধার সামনে গোলাপ ফুল দুটো হাতে ধরে এক নিঃশ্বাসে বলে) গোলাপ ফুল গোলাপ ফুল স্বাস্থ্যর জন্য খুব ভালো। এগুলো দিয়ে গোলাপ জল বানিয়ে রোজ মুখে লাগালে স্কিম... স্কিম... না না স্কিন স্কিন। স্কিন একদম নিট এন্ড ক্লিন হয়ে যাবে। তুমি চাইলে এই গোলাপগুলো দিয়ে গোলাপ জামুন, গোলাপ শরবত, গোলাপ জ্যাম, গোলাপ চাটনি সব বানিয়ে নিও। শুধু আমার চাটনি বানিও না হ্যাঁ....
স্নিগ্ধা : কি উল্টোপাল্টা বকে চলেছো সেই থেকে? তুমি না ক্লাস টপার। এদিকে ঠিক করে একটা মেয়েকে প্রপোজও করতে পারোনা। কিচ্ছু হবে না তোমার দ্বারা।
বলেই অর্কর হাত থেকে লাল গোলাপ ফুলটা নিয়ে অর্কর সামনে নি ডাউন করে বসে অর্ককে বলে " ভালো করে কান খুলে শোনো মিস্টার অর্কপ্রভ রায়... তোমাকে আমি অনেক কিছুই বলতে চাই। কিন্তু তোমার এই অদ্ভূদ কাজগুলো এই মুহূর্তে আমার মাথাটাকে পুরো গরম করে দিয়েছে। তাই এতো ভনিতা না করে ডাইরেক্ট বলছি, দ্যাট আই লাভ ইউ। উইল ইউ বি মাই বয়ফ্রেন্ড? "
দূর থেকে স্নিগ্ধার এই রকম কান্ড দেখে অর্কর বাড়ির সবাই পুরো হ্যাঁ হয়ে গেছে। বিশেষ করে অর্কর বাবা।
অর্পণ : সুজন কাকুর মেয়ে এতো স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড জানতাম না তো!
অর্কর মা : কে সুজন কাকুর মেয়ে?
অর্পণ : আরে দাদুর সাথে মর্নিং ওয়াকে যায় যে মন্ডল দাদু ওনার নাতির রিসেপশনে মনে আছে। দাদাভাই পা স্লিপ করে পড়ে যাচ্ছিলো আর একটা মেয়ে এসে ওকে ধরে নিয়েছিল। আর দাদাভাই তাকে থাঙ্কস না বলেই দৌড়ে পালিয়ে গেছিলো। স্নিগ্ধা দিই সেই মেয়ে। মন্ডল দাদু পরে বলেছিলো যে মেয়েটা ওনার রিলেটিভ হয়। আর ওর বাবা মানে স্নিগ্ধাদির বাবা আর আমাদের বাবা পটলা একই স্কুলে ছোটবেলায় পড়তো।
অর্কর দাদু : হ্যাঁ হ্যাঁ। এবার মনে পড়েছে।
পার্কের সবাই অর্ক আর স্নিগ্ধাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে। ওখানে উপস্থিত সবাই অর্ককে বলছে হ্যাঁ বলো। হ্যাঁ বলো। কিন্তু অর্ক তো পুরো মূর্তির মতো জমে গেছে। ওর কানে কারোর কথা যাচ্ছে না। বিরক্ত হয়ে স্নিগ্ধা বলে " অর্ক কি হলো? তাড়াতাড়ি বলো। এভাবে বসতে বসতে আমার পায়ে ব্যাথা করতে শুরু করে দিয়েছে। "
অর্ক নিজের ঘোর কাটিয়ে বলে, " ত... ত... তু... তুম... তুমি.... তুমি কি বললে? "
স্নিগ্ধা : একবারে শুনতে পাওনি? আর এতো তোতলাচ্ছ কেন?
প্রতীক : স্নিগ্ধা অর্ক বোধহয় এটা স্বপ্ন মনে করছে।
স্নিগ্ধা : স্বপ্ন!!! এই যে অর্কপ্রভ রায় এটা স্বপ্ন নয়, বাস্তব। আমি সত্যি সত্যি তোমাকে ভালোবাসি। আই লাভ ইউ। কি হলো শুনতে পেলে নাকি আবার বলবো? যে আমি তোমাকে ভালোবাসি।
স্নিগ্ধার কথা শুনে অর্ক আআআআ করে চেঁচিয়েই সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে ধুপ করে পড়ে যেতে গেলে, প্রতীক ওকে ধরে নেয়।
স্নিগ্ধা : অর্ক... এই অর্ক... কি হলো তোমার?
আধঘন্টা পর....
অর্কর জ্ঞান ফিরলে দেখে ও একটা বেঞ্চে শুয়ে আছে। আর ওর বাড়ির সবাই, স্নিগ্ধা, প্রতীক আর অলি ওকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
অর্কর বাবা : এই তোর কি মৃগী রোগ আছে যে কিছু হলেই অজ্ঞান হয়ে যাস।
অর্ক : 😒
অর্কর দাদু : আহঃ! পটলা চুপ কর। আর নিজের ওই দুর্গন্ধময় মোজাটা অর্ক দাদুভাইয়ের থেকে দূরে রাখ।
অর্কর বাবা : আবার যদি অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে? তাই আগে থেকেই সতর্কতা অবলম্বন করা ভালো না।
অর্কর মা : নিকুচি করেছে তোমার সতর্কতা।
অর্পণ : ওহ.... তোমরা একটু থামবে। দাদাভাই এবার আর ভয় না পেয়ে, না তুতলিয়ে তাড়াতাড়ি করে স্নিগ্ধাদিকে বলে দে।
প্রতীক : হ্যাঁ ভাই এবার তো আর রিজেক্ট হওয়ার চান্স নেই।
অর্ক উঠে দাঁড়িয়ে স্নিগ্ধার দিকে তাকালে স্নিগ্ধা বলে, " তাড়াতাড়ি করে বলো। অনেক দিন ধরে ওয়েটিং এ আছি। আর তর সইছে না। "
অর্কর বাবা : আর হ্যাঁ গোলাপটা হাতে নিয়ে নি ডাউন করে প্রপোজ করবি। ঠিক যেমন স্নিগ্ধা মা করেছে।
স্নিগ্ধা : ভালো মনে করালে আঙ্কেল।
অর্কর বাবা : সেই... নাহলে যা হাঁদারাম ছেলে আমার।
অর্ক : 😑
অর্কর দাদু : চুপ কর পটলা।
অর্ক লাল গোলাপটা হাতে নিয়ে স্নিগ্ধার সামনে নি ডাউন করে বসে স্নিগ্ধাকে বলতে শুরু করে, "স্নিগ্ধা তোমাকে যেদিন থেকে দেখছি, সেদিন থেকে আমার পেট গুড়গুড় আর বুক দূরদুর করতে শুরু করতে শুরু করে। জাগতে, ঘুমোতে,উঠতে, বসতে সবেতেই তোমাকে দেখতে পাই। তুমি জানো আমার মনে হয়েছিল আমার বোধহয় কোনো মানসিক রোগ হয়েছে। তাই আমি সাইকিয়াত্রিস্ট এর কাছে যাবো বলে...... "
স্নিগ্ধা : সাইকিয়াত্রিস্ট এর কাছে যাবে বলে ঠিক করেছিলে। এই সব গল্প আমাকে আঙ্কেল, আন্টি, আর দাদু বলেছে যখন তুমি অজ্ঞান হয়ে ছিলে। তোমার যা হিস্ট্রি শুনলাম আর জিওগ্রাফি দেখলাম তাতে..... আবার যদি অজ্ঞান হয়ে যাও!!!! না না...!!!! আমি আর ওয়েটিং এ থাকতে পারবো না।তাই এখন প্লিজ এসব ছাড়ো আর আমি যেটা শুনতে চাই সেটা বলো।
অর্ক : ওকে। আই লাভ ইউ স্নিগ্ধা।
বলে অর্ক স্নিগ্ধাকে গোলাপটা দিলে স্নিগ্ধা সেটা নিয়ে অর্ককে ওর হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলে, "আই লাভ ইউ টু। " বলেই অর্ককে জড়িয়ে ধরতেই অর্ক আবারও মূর্তির মতো ফ্রিজ হয়ে যায়। আর ওখানে উপস্থিত সবাই অর্ক বলে হাসতে শুরু করে দেয়।
❤️ সমাপ্ত ❤️

