পাতালঘরে কর্ণপিসাচীনি
পাতালঘরে কর্ণপিসাচীনি
রত্নপ্রভ মল্লিক আজও এই তুরিয় গ্রামের একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে রেখেছেন । স্বাধীনতার এত গুলো বছর পার করেও তুরিয় গ্রাম স্বাধীন হতে পারেনি । তারা হয়ত ব্রিটিশদের অধীনে নেই তবু তাদের ঈশ্বর তো একজনই রত্নপ্রভ মল্লিক । এ গ্রামের বাসিন্দা দের বাইরে কাজ করতে যাওয়ার অনুমতি নেই , গ্রামের স্কুলের চৌহদ্দির বাইরে বের হয়ে অনুমতি নেই শিক্ষা গ্রহণের । নাম কা বাসতে পঞ্চায়েত আছে তাও তো সাজানো ঘুটি মাত্র মল্লিক দের । মল্লিকরা জমিদার ছিল দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে পরে জমিদারী প্রথা লোপ পায় । আজও তুরীয় গ্রাম শাসিত হয় মল্লিক দের অঙ্গুলীর ইশারায় । তবে দিনকয়েক ধরে একটা উটকো ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে মল্লিকদের । রাতবিরেরত গ্রামের লোকজন ছুটে আসে তাদের নতুন প্রাসাদপম অট্টালিকাতে । জমিদারী থাকতে যে মহলে মল্লিকরা বাস করতো তা ভেঙে পড়ে আর সকলেই এই নতুন মহলে সরে আসে তাও বহুদিন হলো । পুরোনো পরিত্যক্ত মহলটা এখন সাপ খোপের ডেরায় পরিণত হয়েছে । তো সমস্যা সেই মহল থেকে শুরু ! গ্রাম থেকে একদিন দুদিন পর পর শিশু গায়েব হয়ে যাচ্ছে আর ভাঙা মহলে নাকি সেই শিশুদের মৃত অবস্থায় পাওয়া যাচ্ছে । এই নিয়ে ছয়টি শিশু মৃত , তাই গ্রামের বাসিন্দারা শিশু হারালেই মল্লিক দের কাছে চলে আসে , কিন্তু মল্লিকা রাই বা কি করবে ? তারাও তো আর ওখানে থাকে না , গ্রামের কেউ ওদিকে যায় ও না ! এবার গ্রামে এসেছে নতুন বিডিও , সে ছোকরা ছেলে , উত্তেজনায় তার রক্ত টগবগ করে ফুটছে । তো সেই বিডিও র কানেও খবরটা গিয়ে পৌছালো , সে জানতো মল্লিক দের কেমন দাপট বা এগ্রামে সরকারী কর্মীদের কি হাল তবু এতদিন সে চুপ ছিল তার কারণ গ্রামের শান্তি বজায় ছিল । গ্রামে কিন্তু রেশন বা যাবতীয় কার্যকলাপে মধ্য কোন অসঙ্গতি ছিল না । তবে এখন যেটা ঘটছে তাতে পাশের গ্রামে অবস্থিত পুলিশ চৌকির লোককে তুরীয় গ্রামের ব্যাপারে নাক গলাতেই হয় । বিডিও রাজদীপ জানা পুলিশ নিয়ে গ্রামে ঢুকে পুরোনো জমিদার বাড়ি সার্চ করাতে শুরু করলো । তবে তেমন কিছুই পাওয়া গেলো না শুকনো রক্তের কালো হয়ে যাওয়া দাগ ছাড়া । শেষে রণে ভঙ্গ দিয়ে পুলিশ টিম ওখান থেকে চলে গেল কিন্তু রয়ে যায় একজন রাজদীপ । শুকনো পাতার ডাই কে লাঠি দিয়ে সরিয়ে সরিয়ে সে এগিয়ে যেতে থাকে পুরো ভগ্ন হয়ে যাওয়া পরিত্যক্ত এলাকায় যেখানে পুলিশ তল্লাশি চালায় নি । এক সময় সে এসে দাঁড়ায় দুর্গা দালানের দিকে যেখানে একটা বট গাছ তার বিশাল বপু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অতীতের সাক্ষী হয়ে । গাছের ঝুড়ি নেমে এসেছে আর চারদিক ঘিরে রেখেছে । ওখানে গিয়ে রাজদীপ দেখছিল , না তেমন কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না এখানে তার মানে খুনটা অন্যত্র করে এখানে ফেলে দেয়া হয় । কিন্তু জনবহুল এলাকা দিয়ে এভাবে একটা লাশ কি করে নিয়ে আসে অপরাধী ? যাক ফিরে যাওয়া যাক অন্ধকার নেমে আসছে । যাবার সময় আচমকাই রাজদীপ পচা পাতার উপর পা দিয়ে ফেলায় তার পা স্লিপ খেয়ে যায় আর পড়ে যাওয়া থেকে বাঁচতে সে দুর্গা দালানের একটা থমকে জড়িয়ে ধরে । যেই না থামটা ধরা সেই ক্যাঁচ করে শব্দ করে ওর নিচেকার মেঝেটা সরে যায় আর রাজদীপ হুড়মুড় করে মাটির গভীরে পড়তে থাকে । পড়তে পড়তে সে লক্ষ করে আচমকা পরে গেছে সে ঠিকই তবে একটা বন্ধুর সিঁড়ি নেমে এসেছে ওই দুর্গা দালান থেকে পাতালের দিকে । রাজদীপ ভাবে যদি প্রাণে বাঁচি তো ওই সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হবে । অনেক উঁচু থেকে পরে সে সাময়িক ভাবে সংজ্ঞা হারায় । তার পর যখন তার জ্ঞান ফিরে আসে তখন মাটির নিচে বসে রাত না সকাল ঠাওর করা যায় না । ঘড়িটাও পরে গিয়ে ভেঙ্গে গেছে আর সারা শরীরে চোট ও পেয়েছে । কোন রকমে টেনে হিঁচড়ে নিজেকে দার করায় রাজদীপ । আসে পাশে এলাকা ঘুরে ঘুরে দেখে আর সে বুঝে যায় উপর থেকে পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির নিচের গুপ্ত ঘর কিন্তু আজও ব্যবহার হয় । মাটির নিচে ও ইলেকট্রিক এর ব্যবস্থা আছে , একটা জলচৌকি আছে আর সবথেকে ইম্পর্টেন্ট একটা বিশাল বড় অষ্ট ধাতুর তৈরি মূর্তি যাকে নিত্য আরাধনা করা হয় সেটা বোঝাই যাচ্ছে । রাজদীপ পুরা বিভাগের ছাত্র ছিল সে মূর্তি টি দেখেই বুঝে যায় এটা কোন দেবতার মূর্তি নয় আর এর এন্টিক ভ্যালু ও অনেক । যাই হোক সে ফোন তো সঙ্গে আনেনি যে একটা ছবি তুলে রাখবে । তাই আপাতত সে ঠিক করে ফিরে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ হবে । গ্রামে ফিরে পুলিশ নিয়ে আসতে হবে কারণ আপাতত সে ছাড়া এখানে কেউ নেই কিন্তু যখন আসবে তখন রাজদীপ একা তাদের সাথে পেরে নাও উঠতে পারে । বন্ধুর এবড়ো খেবরো
সিঁড়ি বেয়ে উঠতে বেশ বেগ পেতে হলো তাকে । তা হলে যে ওই শিশুদের মৃত দেহ সিঁড়ি বেয়ে আনে তার শক্তি বোঝাই যায় কেমন । রাজদীপ জমিদার বাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসে আর পুলিশ স্টেশনের দিগে এগিয়ে যেতে থাকে তবে পথে সে তার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আর নিজের কোয়ার্টার এ ফিরে আসে । রাজদীপ ভাবে মল্লিক বাড়ির আধিপত্য এই গ্রামে আর এখানকার সব কিছুই তাদের অধীনস্থ তাই তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নেওয়া মানে নিজেকে বিপদে ফেলে দেওয়া । গ্রামে ইন্টারনেট পরিষেবা নেই কারণ টা গ্রামের লোকেরা না বুঝলেও রাজদীপ বোঝে । মল্লিক বাড়িতে দিব্যি ইন্টারনেট সংযোগ আছে তা হলে ওই বাড়ির চৌহদ্দির বাইরে কেন নেই ? আসলে রত্নপ্রভ মল্লিক জ্যামার লাগিয়ে রেখেছে যাতে গ্রামের মানুষ বাইরের কোন খবর বেশি না পায় । টিভি চ্যানেল বলতে শুধুমাত্র দুরদর্শন কারণ কেবল ও গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হয় নি । তাই এখানকার মানুষ বাকি পৃথিবীর থেকে এক প্রকার বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে । যাদের এত ক্ষমতা তারা পুলিস কেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে তাই রাজদীপ গ্রামের বাইরে চলে যায় আর ওখানে গিয়ে ইন্টারনেট সার্চ করে বিভিন্ন অষ্টধাতুর মূর্তি সার্চ করে যায় । অত বড় মূর্তি বিরল তাই সে সঠিক সাইডে খোঁজ নিয়ে পেয়েও যায় যাবতীয় তথ্য । সেই তথ্যে তার শিরদাঁড়া দিয়ে হিমেল স্রোত বইয়ে দেয় । মূর্তি টি সমন্ধে তথ্যে এই যে ওটি পাল যুগের সমসাময়িক কালের তৈরি আর কয়েক বছর আগে মূর্তি রহস্যময় ভাবে চুরি হয়ে যায় মিউজিয়াম থেকে । কোটি টাকার এন্টিক মূল্যের ওই মূর্তি আপাত নিরীহ হলেও আসলে একটি কর্ণ পিশাচীনির মূর্তি , যাকে সঠিক ভাবে জাগ্রত করা গেলে সাধক সহজেই যে কোনো আসন্ন বিপদ, ভবিষ্যতে কি ঘটতে চলেছে, কোন কাজের কি পরিণাম হতে চলেছে, তা জানতে পারে এবং সে বহুল শক্তির অধিকারী হয় । কর্ণ পিশাচিনী হলেন যক্ষিনী বিদায়ের সপ্তম রূপ যা অথর্ব বেদে উলেখ্য । আবার অনেক সূত্রে বলা হয়েছে রূদ্রযামল তন্ত্র মতে কর্ণপিশাচী হলেন চৌষট্টি যোগিনীর এক যোগিনী।
স্বাক্ষাৎ মা, শক্তির এক রূপ। আবার ভুতডামোর মতে উনি একজন মহাশক্তিধর যক্ষিনী। কর্ণ পিশাচীনি হলেন পিশাচদের এক বিশেষ ভাগ। বৌদ্ধ তন্ত্রে ও তাঁর উল্লেখ আছে। এনাকে সাধনা করে বশ করতে পারলে ইনি সারাক্ষন সাধকের কানে কানে ফিসফিসিয়ে কথা বলতেই থাকেন। সাধক সহজেই যে কোনো কাজের কী পরিনাম হতে চলেছে তা পূর্বেই জানতে পেরে যায়। তবে এনাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য। ইনি যখন বলতে শুরু করেন তখন সাধকের কানে আর অন্য কোনো শব্দই পৌছায় না কারণ ইনি বলতে শুরু করলে আর থামতে চান না। রাজদীপ বোঝে কোন ভাবে চুরি যাওয়া এই মূর্তি মল্লিক বাড়ির কারোর হাতে এসেছে এবং সেই পিশাচ সাধনা করে যাচ্ছে নিরীহ শিশুর মৃত্যু র বিনিময়ে । এই অরাজকতা চলতে দেবে না রাজদীপ অনেক হয়েছে । এত দিন ধরে এরা যা যা করে এসেছে তা অন্যায় , তারা নিজের অধীনে রেখে এসেছে গ্রামের বাসিন্দা দের । তারা উচ্চ শিক্ষা পায়নি , গ্রামের বাইরের জগৎ দেখেনি এপর্যন্ত তবু রাজদীপ সহ্য করে নিয়েছে কারণ মল্লিকরা ওদের অভাবে রাখেনি । গ্রামের মানুষেরা সুখে শান্তিতে ছিল তবে এখন এই ঘটনা কে ঘটাচ্ছে ? বিশদে জানতেই হবে তাকে তাই কলকাতা থেকে গোয়েন্দা বল্লভ রায়কে তলব করে রাজদীপ । আর বল্লভ তুরীয় গ্রামে প্রবেশ করে এক সাধুর ছদ্দবেশ নিয়ে । রাজদীপ বল্লভ কে নিজের মামা পরিচয় দিয়ে মল্লিক বাড়িতে নিয়ে যায় । রত্নপ্রভ মল্লিক কে রাজদীপ জানায় তার মামা সাধু নাগানন্দ মহারাজ কামরূপ থেকে ভাগ্নের সাথে দেখা করতে এসেছে এই গ্রামে । উনি দেবতার স্থান ছাড়া বাস করেন না তাই মল্লিক বাবু যদি মামা কে এক দু রাত আশ্রয় দেন ওনার বাড়ির কালি মন্দিরে তবে খুব ভালো হয় । মল্লিক বাবু রাজি হয়ে যান তবে বল্লভ কে এখানে রাখার জন্য আগ্রহ বেশি পরিলক্ষিত হয় ওনার বিধবা কন্যা মায়ার মধ্যে । মল্লিক বাড়িতে থাকে রত্নপ্রভ মল্লিক , ওনার স্ত্রী কায়া , ছেলে বারিক ও তার স্ত্রী পাপিয়া আর বিধবা মেয়ে মায়া । মায়ার স্বামী ও কিন্তু কাকতলীয় ভাবে ওই জাদুঘরে কর্মরত ছিলেন যেখান থেকে মূর্তি চুরি যায় । খুব স্বাভাবিক এতে মল্লিক দের হাত ছিল তবে কিছু প্রমান হয়নি । মূর্তি চুরির ঘটনার কিছুদিন পর মায়ার স্বামী তপন কুমার রায় আত্মহত্যা করেন তবে কারণ অজানা । এসব তথ্য বল্লভ পেয়ে জানিয়েছে রাজদীপ কে আর তার একশো পার্সেন্ট সন্দেহ মায়ার উপরে । কারণ বল্লব মানে সাধু নাগানন্দ ওবাড়িতে গিয়ে থেকেই মায়া পরে আছে তার কাছে তাকে সেবা করতে । তার বিভিন্ন তন্ত্রচার এ বহুল জ্ঞান সেটাও বল্লভ বুঝে গেছে । মায়াকে ইচ্ছা করে বল্লভ জিজ্ঞাসা করে বলতো মা পিশাচ সমন্ধে তোমার কি ধারণা ? মায়া সরল বিশ্বাসে বলে মহারাজ আমি দেবতাকে পুজো করি পিশাচ সমন্ধে আমার কোন জ্ঞান নেই । আমি বিধবা মানুষ , অবিরা আমার জীবনে যা কিছু সবটাই এই মা মহামায়া । তবে পিশাচ পিশাচী নিয়ে আগ্রহ আছে আমার মা এর ।মল্লিক গিন্নি কায়া দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব শুনছিলো আড়ালে এবার সে এসে হাজির হয় সাধু রূপী বল্লভ এর সামনে । মেয়েকে বায়না দিয়ে সরিয়ে দিয়ে কায়া বসে যায় । সে বলে কর্ণপিশাচিনী কথার উদ্ভব হয় কর্ণ (সংস্কৃততে) এর অর্থ কান থেকে । কর্ণ পিশাচিনী হলো পিশাচদের এক বিশেষ ভাগ।
তন্ত্রে পিশাচ হল অত্যন্ত নিম্ন শ্রেণীর এক জীব। সাধারণ মনুষ্য সমাজে যা কিছু ঘৃণ্য ও উচ্ছিষ্ট তার উপরেই লালিত পালিত হয় এই পিশাচগণ। মানুষ ও ভুতের মাঝামাঝি একটি স্তরে এদের অবস্থান। বৌদ্ধিক শক্তিতে এরা মানুষের থেকে অনেক নিম্ন পর্যায়ের হলেও, অন্যান্য সমস্ত ক্ষেত্রে এরা অসীম শক্তিধর। তাই মন্ত্র বলে এদের একবার বশে আনতে পারলে এদেরকে দিয়ে ক্রীতদাসের মতো সব কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। বিভিন্ন দুরূহ অসাধ্য কাজও সহজেই মানুষ করতে পারে এদের সাহায্যে। তবে পিশাচ সিদ্ধ হতে গেলে সাধকের মধ্যেও পিশাচের কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যে সাধক পিশাচ সাধনা করে তার দেহ সম্পূর্ণ কালো কয়লার বর্ণ ধারণ করে। এছাড়া সারাক্ষন নোংরার মধ্যে থাকে, মল-মূত্র ভক্ষণ করতেও পিছুপা হয় না। অনেক সময় মরার মাংস খায়, মরার মাথা কেটে নিয়ে গিয়ে ক্রিয়া করে। এইসব অতি নিম্ন গুন তার মধ্যে প্রকাশ পায়। এদের কাজে লাগানো মানে আগুন নিয়ে খেলা করা। পিশাচসিদ্ধ হওয়ার পর সাধক যদি সামান্য অনিয়ম করে বা অসাবধানতাবশত নিজের প্রতিকার নিতে ভুলে যান। তবে ওই পিশাচের হাতেই তাকে মরতে হয়। বল্লভ অবাক হয়ে যায় কায়া মল্লিকের রিসার্চ দেখে । সে তাকে উৎসাহিত করতে বলে বা বেটি খুব ভালো , আর কি জানিস বল রে বেটি । কায়া বলে যক্ষিনী সাধারণত গাছগুলিতে বাস করে এবং তাদের সাধনা উপযুক্ত গাছের নীচে সবচেয়ে ভাল হয়। সিদ্ধির দুটি উপায় আছে। ভাম মার্গটি নিরঙ্কুশভাবে ব্রহ্মচীনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং সাধককে ইচ্ছা থেকে বঞ্চিত করে চলেছে; দক্ষিণ মার্গী সাধনা প্রক্রিয়া স্নানের বিষয়টি নিষিদ্ধ করে এবং নিজের বিসর্জন ব্যবহারের প্রস্তাব দেয়। বল্লভ বুঝেই যায় যে মায়া তো তার একা হয়ে যাওয়া জীবন উৎসর্গ করেছে ঈশ্বরকে তাই সাধুর সেবা করার সুযোগ পেয়ে সে খুশি হয়েছিল । আসল গেম খেলছে এবাড়ির কর্তি কায়া মল্লিক ।
বল্লভ বলে তা বেটি তুই যে অপার জ্ঞান অর্জন করেছিস আমি নিশ্চিত তুই সফল হবি এই সাধনা যদি তুই করতে পারিস । তবে তার জন্য একটি মূর্তি প্রয়োজন সেটা মনে হয় আর উদ্ধার করা সম্ভব নয় । কায়া হেসে উঠল বললো বাবা আপনি শুধু আশীর্বাদ করুন আমি প্রায় সফল হয়েই গেছি । বল্লভ বলে তা কেমন করে রে বেটি ? কায়া বলে আমার জামাই তপন চাকরি করতো জাদুঘরে আর তখন আমি ওখানে গিয়ে আবিস্কার করি এক প্রাচীন কর্ণ পিশাচিনির মূর্তি । এসব বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল বরাবরই তার পর ওই মূর্তি দেখে আর লোভ সামলাতে পারলাম না । মেয়েকে লুকিয়ে জামাইকে পাখি পড়া করে বোঝালাম যে আমি যদি ঐ মুর্তি হাতে পাই তা হলে জামাইকে আমি টাকার সাগরে ভাসমান করে দেব । জামাই লোভে পরে ওটা সরিয়ে ফেলে আর লোকমারফত ওটাকে এনে আমি পুরোনো জমিদার বাড়ির গুপ্তঘরে রাখি । আমার সাধনা শুরুর আগেই জামাই আত্মহত্যা করে , ও নাকি সবসময়ই বলতো ওর কানের কাছে কে সবসময়ই কথা বলতো । আমি বুঝতে পারছিলাম ভীষণ জাগ্রত ওই মূর্তি তার অপহরণকারীকে মেরে ফেলতে চাইছে আর এদের নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই কষ্টসাধ্য। এরা কানে কানে কথা বলা শুরু করলে আর থামতে চায় না। আমার জামাই সহ্য করতে পারেনি , সে উন্মাদ হয়ে ওঠে শেষ দিকে আর ওই যন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেতে নিজেকে শেষ করে দেয় । তার পর আর কি আমার মেয়ে আমার কাছে চলে আসে । আমি জানতাম জামাইকে ফিরিয়ে আনতে আমাকে কি করতে হবে তাই আমি কর্ণ পিশাচিনির সাধনা শুরু করি । এগারোটা শিশু বলি দান করে আমি আমার জামাইকে ফিরিয়ে আনবো । কাজ অর্ধেক হয়েই গেছে মহারাজ আর পাঁচটি শিশু চাই । কাল দুটি শিশু অপহরণ করবো আমি তার পর রাত্রে বেলায় এই বাড়ির তলার সুড়ঙ্গ পথে পুরোনো জমিদার বাড়ির ওই ঘরে গিয়ে সাধনা করবো । আমার অনুরোধ আপনি আমার সাধনার শেষ পর্যন্ত এখানেই থেকে যান । কাল চলুন আমার সাথে দেখবেন সচক্ষে সবটাই । বল্লভ রাজি হয়ে গেল আর সুযোগ পেয়ে সবটা রাজদীপ কে বলে দিলো । রাজদীপ ফোর্স রেডি করে সেদিন রাতে পৌঁছে গেল পরিত্যক্ত জমিদার বাড়ির দিকে । সেখানে গিয়ে তারা চুপিসারে অপেক্ষা করতে লাগলো কারণ বল্লভ জানিয়েছে সে আসার আগে ফোনে যোগাযোগ করবে । বল্লভ এর ফোন পেয়ে খুব সন্তর্পণে রাজদীপ ফোর্স নিয়ে নামতে শুরু করে পাতাল ঘরের দিকে । ওখানে গিয়ে রাজদীপ দেখে বল্লভ কে নিয়ে পুজোয় বসেছে কায়া আর সঙ্গে তার পুত্র বারিক মল্লিক ও উপস্থিত । তার মানে রাজদীপ ঠিক ধরে ছিল , খুব বলশালী কেউ যে ওই মৃত দেহ গুলো উপরে তুলে নিয়ে গিয়ে ফেলে আসতো সিঁড়ি বেয়ে । বল্লভ ও হটাৎ আবিস্কার করে বারিক কে কারণ এর যোগাযোগ এর কথা কায়া মল্লিক আগের দিন বলেনি । দুটি পাঁচ ছয় বছরের ছেলে কে তুলে এনে দাঁড় করিয়ে রেখেছে ওরা । পুজোর শেষে ওদের প্রাণটা কেড়ে নিয়ে ওদের ফেলে দেওয়া হবে ।
একটি দিয়া জ্বলছে সামনে , দিয়া খাঁটি ঘি বা অন্য কোন তেলর ও হতে পারে । কায়া তার আঙ্গুলগুলিকে তেলে ডুবিয়ে রেখেছে এবং কিছুটা তার পায়ের ত্বকে লাগিয়ে নিচ্ছে । এরপরে সে মন্ত্র জপ শুরু করা শুরু "ওমঃ হ্রীম কর্নপিশাচি মেম কর্নে,
কথায়া হুম ফাট্ স্বাহাঃ "
কর্ণ পিশাচিনি জাগ্রত হবার আগেই পুজো বন্ধ করতে হবে তাই রাজদীপের ইশারায় ফোর্স ঝাঁপিয়ে পড়ে মল্লিক দের উপর । বাচ্চা দুটোকে বাঁধন মুক্ত করে রাজদীপ , সাধু বেশী বল্লভ কে এক কনস্টেবল ধরতে যায় তখন বল্লভ নকল দাড়ি চুল খুলে স্বমহিমায় ধরা দেয় । কায়া মল্লিক রাগে চিরবিড়িয়ে ওঠে । তবে কিছুই করার নেই তার আর তার গুণধর পুত্রের । তারা হাতেনাতে ধরা পড়েছে যে । মূর্তি টা এই মুহূর্তে হাত দেওয়া ঠিক হবেনা সেটা বল্লভ সাজেস্ট করে ম কারণ আধা পুজোর ফলে ওটা একটিভ আছে । তাই সকালে কোন গুণী সাধুর সাহায্য এটাকে নিষ্ক্রিয় করে তবেই জাদুঘরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব । রত্নপ্রভ মল্লিক সব শুনে হতাশাগ্রস্ত এবং কিংকর্তব্যবিমূঢ় । পুলিশ ধরে নিয়ে যায় কায়া ও বারিক কে । ওদের ফাঁসি তো হবেই চুরি , খুনের মামলায় । রত্নপ্রভ মল্লিক এসব ঘটনার পর স্তম্ভিত তাই তিনি গ্রামবাসী দের জানান যে তাদের সন্তানদের ফিরিয়ে দেবার সামর্থ্য নেই ওনার তবু উনি ওদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে চান আর এবার থেকে সবাই স্বাধীন । যে যেখানে ইচ্ছা যেতে পারে অথবা যা ইচ্ছা করতে পারে । উনি আর কোন বিধিনিষেধ আরোপ করবেন না । রাজদীপ ও বল্লভ এই তদন্তের সফলতা লাভ করে পদোন্নতি করে । আবারো অন্ধকার হেরে যায় আলোর কাছে ।

