Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Debdutta Banerjee

Abstract

2  

Debdutta Banerjee

Abstract

পাপ

পাপ

6 mins
606


ওরা তিনজন ছিল ছোটবেলার বন্ধু, এক সাথে এক স্কুল কলেজে পড়ে বড় হয়েছে।  তবে রোহণ জন্মেছিল সোনার চামচ মুখে নিয়ে আর লোহিতের ভাগ্য ছিল ঠিক তার উল্টো, বাপ মা হারা লোহিত মামাবাড়ির এক কোনে আগাছার মত বেড়ে উঠছিল। তাই প্রিয়া যখন রোহণের হাত ধরে স্বপ্নের জাল বুনেছিল লোহিত খুশি হয়েছিল। কি বা ও দিতে পারত প্রিয়া কে!! আস্তে আস্তে দূরে সরে এসেছিপড়া শেষ করে রোহণ যখন বাবার অতবড় ব‍্যবসার দায়িত্ব আর প্রিয়ার দায়িত্ব নিয়েছিল লোহিত তখন প্রাইভেট চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিতে ব্যস্ত। মামা হঠাৎ চলে যেতেই মামি আর ভাই বোন গুলোর দায়িত্ব এসে পড়েছিল ওর উপর। যে মামি ছোটবেলায় ওকে সব সময় দূরছাই করত সেই মামি ওর হাত ধরে কেঁদে বলেছিল ভাই বোন গুলোর কথা ভেবে কিছু চাকরীর ব্যবস্থা করতে। লোহিত অনেক চেষ্টা করেও কল সেন্টার ছাড়া কিছুই জোটাতে পারে নি। সাধারণ গ্ৰাজুয়েট দের জন্য এর বেশি কিছু দরজা খোলাতবে ইদানীং ওদের অবস্থা ফিরছিল একটু একটু করে। আর ঠিক তখনি খুন হয়ে গেলো রোহণ আর সেই অভিযোগে গ্ৰেফতার হলও লোহিত।ওরা তিনজন সাহানার কলেজের বন্ধু ছিল। তাই খবরটা পড়ে চমকে উঠেছিল ও। প্রথমেই দেখা করেছিল প্রিয়ার সাথে, কিন্তু এই ঘটনায় আকস্মিক আঘাতে প্রিয়া যেন পাথর। কিছুই বলছে না সে। লোহিতের সাথে রোহণদের বহুদিন যোগাযোগ নেই, কি কারণে লোহিত এমন করল এটাই ছিল বড় প্রশ্ন। মিডিয়া তোলপাড় হচ্ছে, কেউ খুঁজছে প্রিয়ার সাথে লোহিতের পরকীয়ার গল্প, কেউ বলছে হিংসায় ও ফ্রাস্টেশনে এমন করেছে লোহিত। কেউ আবার বলছে লোহিতকে ফাঁসানো হয়েছে।

দুপুর বেলা রোহণের  অফিসে ঢুকে ওর বুকে এলোপাথাড়ি ছুরি বসিয়েছিল লোহিত। তারপর রক্তমাখা ছুরি হাতে ওখানেই বসেছিল...আলোক সব শুনে বলেছিল সাইকো কেস। কোনও পুরানো রাগ ছিল হয়তো। কিন্তু নিজের কানেই যুক্তিটা টেকেনি।পরদিন ওরা দুজনেই গেছিল লোহিতের সাথে দেখা করতে। কিন্তু লোহিত মুখ খোলে নি।

বাড়ি ফিরে আলোক বলেছিল -''ওরা দু জনেই কিছু লুকাতে চাইছে। ওদের অতীত ও বর্তমান সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নিতে হবে। ''লোহিতের অফিস ডালহৌসির এক গলিতে, ক্লাইভ হাউসের ভেতর। আলোক নিচের দারোয়ানকে ঐ অফিস সম্পর্কে জিজ্ঞেস করতে সে চোখ মটকে বলেছিল উপরে উঠে যান। তবে অফিসের ভেতরটা ঝকঝকে। কল সেন্টার নয়, কুরিয়ার কোম্পানি ও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট। এক মহিলা ম্যানেজার বলল লোহিত খুব চাপা স্বভাবের ছেলে ছিল। মন দিয়ে কাজ করত।  বাকি দু জন কর্মচারী কিছুই বলেনি। কোর্টে লোহিতের শুনানি ছিল সেদিন। ও দোষ স্বীকার করেছিল তবে কারণ বলেনি বলে রায় বার হয় নি।

 

সেদিন বিকেলে সাহানা আবার ছুটেছিল প্রিয়ার কাছে।-''কত ভালো বন্ধু ছিলি তোরা, কি এমন হলও রে? তুই না মুখ খুললে হয়তো লোহিতেরো ফাঁসি হয়ে যাবে। যদি তোর মনে হয় লোহিত দোষী কোর্টে দাঁড়িয়ে বল। ''

সাহানার কথায় সজল চোখে তাকায় প্রিয় সাহানা বলে-''একমাত্র তুই পারিস ওকে বাঁচাতে!!''

-''আমার স্বামীর খুনিকে স্ত্রী হয়ে আমি বাঁচাবো বলছিস!!''-''যদি তাই হয় কোর্টে গিয়ে বল লোহিত খুনি। তুই নাকি প্রথম দেখেছিলি ওকে রক্ত মাখা ছুরি নিয়ে বসে থাকতে। বল তাহলে!!''

সাহানার কথায় প্রিয়া দু হাতে নিজের মাথা টিপে ধরে। বলে -''আমায় ছেড়ে দে সাহানা। একা থাকতে দে। সব পাপ… পাপের ফল !-''আর একটা জলজ্যান্ত ছেলের সাজা হোক !! তুই কি ভাবে এতটা বদলে গেলি প্রিয়া? পাপ পুণ্য বিচার করার তুই কে?''এবার ডুকরে কেঁদে ওঠে প্রিয়া। সাহানাকে জড়িয়ে ধরে বলে -''আমি আর পারছি না রে। আমি ... আমি... '' কান্নার দমকে ওর গলা বুজে আসে।

সাহানা সময় দেয় ওকে গুছিয়ে নিতে যদিও হাতে সময় 

তখনি আলোক ফোন করে বলে -''লোহিতের বাড়ি গেছিলাম। ওর ভাই বোনরা অবাক ওর এই ঘটনায়। ও নাকি খুব পরোপকারী ছিল। ইদানীং ভালো রোজগার করছিল। মামির হাতে মোটা টাকাই দিত। '-''লোহিত কলেজ জীবনে কখনো কোনও মারপিট করেনি। পরোপকারী ও বরাবর। ''

-''ওদিকে রোহণের রেকর্ড ভালো নয়। ব‍্যবসায় প্রচুর দেনা, মদ মেয়েছেলে সব দোষ ছিল ওর। বাবার অবর্তমানে ওর ব‍্যবসা লাটে উঠেছিল প্রায়। '' আলোক খবরটা দিয়েই ফোন কেটে 

অন্ধকার হয়ে এসেছিল। সাদা কাপড়ে প্রিয়া বসে রয়েছে বারান্দায়। সাহানা বলে -''তুই সুখী ছিলি প্রিয়া ? রোহণ তোকে ভালো রেখেছিল রে ?'' মনে একটা আফসোস হয় বহুদিন বন্ধুদের খোঁজ রাখেনিহঠাৎ হেসে ওঠে প্রিয়া। ঐ আধো অন্ধকারে আলুথালু চুল সাদা কাপড়ে ওকে কেমন অন্যরকম লাগে, হাসতে হাসতে বলে ওঠে ও -''আচ্ছা সুখ ঠিক কি রে ? আমায় একটু বলবি। রোহণ ভাবত টাকা মানেই সুখ। লোহিত ভাবত আমি রোহণকে পেয়ে সুখী। আর আমি.….. তাসের ঘরে স্বপ্ন বাসর সাজিয়ে সুখ খুঁজতাম জানিসসাহানা ওর হাতটা ধরে। বলে -''শান্ত হ। কাল তোকে কোর্টে নিয়ে যাবো। তোকে দেখে লোহিত যদি মুখ খোলে। '' 

বাড়ি ফেরার পথে মনটা এলোমেলো হয়ে গেছিল সাহানার। আলোক রাতে ফিরে সব শুনে বলল -'' মেয়েটার কাছে কে আছে? -''ওর মা এসে রয়েছে। কাল আমি কোর্টে নিয়ে যাবো। লোহিতের আর কোনও খবর পেলে। '-''খুনের দু দিন আগে লোহিতের ফোনে সাহানার কল এসেছে দু বার। একেক বার ঘণ্টার উপর কথা হয়েছে। ঘটনার দিন লোহিত ওকে ফোন করেছিল একবার, পনেরো মিনিট। গত ছ মাসে ওদের মধ্যে আর কথা হয়নি। তাই পরকীয়াটা বাদ দাও। -''লোহিত চাইলে প্রিয়াকে আগেই পেতে পারত। প্রিয়া ওকে বেশি পছন্দ করত। ওর চালচুলো ছিল না বলে ও না বোঝার মত থাকত সে সময়। আর সুযোগ নিত রোহণ। লোহিত সরে না গেলে রোহণ প্রিয়াকে পেত না।-''লোহিত ধরা না দিলে ভাবতাম হিন্দি সিনেমার মত সম্পত্তির জন্য প্ল্যান করে খুন। এবার ওরা বিয়ে করবে, কিন্তু এ সে ট্র্যাজিক এন্ডিং।'' আলোক বলে।কিন্তু পরদিন যে আরও বড় ট্র্যাজেডি ওদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল ওরা জানত না।  সকালেই খবর এলো প্রিয়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে হাসপাতালে। যমে মানুষে টানাটানি চলছে। ওকে দেখে কোর্টে যাওয়ার পথে মেলটা দেখেছিল সাহানা। মেলটা রাতেই করেছিল প্রিয়া, একটা ছোট্ট চিঠি

''সাহানা,

লোহিত আমায় সুখী করতে গিয়ে এক অন্ধকারে ফেলে দিয়েছিল। বিয়ের কিছু দিনের ভেতর আমি পুরনো হয়ে গেছিলাম রোহণের কাছে। নিত্য নতুন মেয়ে ছাড়া ওর চলত না। মদ ড্রাগ জুয়া সবের নেশাই ধরেছিল। আর ছিল সন্দেহ বাতিক। ভয়ে লজ্জায় কাউকে বলিনি। ক্ষমতা আর টাকা হাতে এলে মানুষ বোধহয় বদলে যায়। ওর বদল দেখেছিলাম খুব দ্রুত। ব‍্যবসা যখন দেনার দায়ে শেষ ও আমায় ক্যাশ করতে চেয়েছিল। বাজারে ওর সবচেয়ে বেশি দেনা হরিলাল সিং এর কাছে ছিল। আর হরি সিং এর চোখ ছিল আমার ওপর। আমায় ও নিয়ে গেছিল বাইপাসের এক হোটেলে। আর সেই হোটেলেই দেখা লোহিতের সাথে। লোহিত সে রাতে আমায় না বাঁচালে হয়তো ...। সব পাপ ! পরদিন রোহণ সব জানতে পেরে আমায় খুব মেরেছিল। আবার নিয়ে যাবে বলেছিল পরদিন। আমি বাধ্য হয়ে লোহিতকে সব জানাই। বলেছিলাম আমায় একিন্তু ও নিজেই নরকের ভেতর ঢুকে পড়েছিল বুঝিনি। ও সেদিন আমায় খুলে বলে ওর গল্প। ও যে পেশা বেছে নিয়েছিল তাতে অর্থ থাকলেও সুখ নেই। ও প্রফেশনাল জিগোলো। অন্ধকারেই ওর কারবার। খুব কেঁদেছিলাম দুজনে জানিস। কেউ সুখী হইনি জীবনে। আমার দুঃখ টা জেনেও ওঁর কিছু করার ছিল না। হাত পা বাঁধা। পরদিন আমায় দুপুরে হরি সিং এর কাছে নিয়ে যাবে বলেছিল রোহণ। লোহিতকে বলেছিলাম। আর তারপর ...... ও না মারলে হয়তো আমিই মেরে দিতাম সেদিন। তাতে কি আমার পাপ হতো? কি জানি! আমার এই স্বীকারোক্তি ওর সাজা কমাবে কিনা জানি না। তবু তোকে সবটা জানালাম। বাকিটা তোদের হাতে। আমি ক্লান্ত, এবার ছুটি চাই প্রিয়া'' আলোকের ডাকে সাহানার হুঁশ ফিরেছিল। আলোককে মেলটা দেখাতেই ও বলল -''এমনি কিছু ভেবেছিলাম আমি। লোহিত কে বাঁচাতেই হবে।  একটা ভালো উকিল করতে হবে এবার। ভগবান মুখ তুলে চাইলে তোমার বান্ধবী সুস্থ হয়ে উঠবে।

কোর্টের বাইরে দাঁড়িয়ে সাহানা ভাবছিল জীবন কত জটিল রহস্যে ঘেরা। সব রহস্যর সমাধান সুখের হয় না সবসময়।


Rate this content
Log in

More bengali story from Debdutta Banerjee

Similar bengali story from Abstract