নতুন বছরে, সুস্থ সকলে:-
নতুন বছরে, সুস্থ সকলে:-
আজকে আমার দিদি শাশুড়ি লতিকা দেবীর আজ ৮০তম জন্মদিন। নতুন বছরের শুরুতে আমরা সকলে ভেবেছিলাম আজকের দিনটা খুব গমগম করে উদযাপন করবো। সে রকম ব্যবস্থাও হয়েগেছিলো। আমাদের পরিবারের যারা অনেক দূরে দূরে থাকেন সকলেই ট্রেন বা ফ্লাইটের টিকিক বুক করিয়ে নিয়েছিলেন কিন্তু বর্তমানে লক ডাউনের কোপে পরে যাতায়াত প্রণালী বিচ্ছিন্ন। কেউ কোথাও যেতে পারে না, সবাই ঘরে বন্দী। আমার শ্বশুরমশাই যতোটা পারছেন চেষ্টা করছেন আমার আদরের দিদিশাশুড়ি কে যত্নে রাখার। যবে থেকে শুনেছেন যে বয়স্করা বেশি আক্রান্ত হন এই ভাইরাসটির দ্বারা তবে থেকেই আমরা সকলে খুব নজরে নজরে রাখি ওনাকে। আজ সকালে ওনার ঘরে গিয়ে দেখি চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছেন। আস্তে করে ডাক দিলাম,
- ঠাম্মা....
- ও! নতুন বৌ, তুই এলি?
যদিও আমি আর নতুন নই এ সংসারে, সাত বছর অতক্রম করে ফেলেছি তবুও তিনি আমাকে নতুন বৌ বলেই সম্বোধন করেন।
- ঠাম্মা, জন্মদিনের আর বাংলা নতুন বছর ১৪২৭ এর অনেক শুভেচ্ছা গো তোমায় । তুমি খুব ভালো থাকো, সুস্থ থাকো।
এই বলে প্রণাম করলাম দিদিশ্বাশুড়ি কে।
আমায় প্রাণভরে আশীর্বাদ করেই হু হু করে কেঁদে ওঠেন আমাকে জড়িয়ে ধরে। ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলছেন,
- নতুন বৌ। কেউ আসতে পারলো না রে। কি হয়ে গেলো বল! কেউ আসতে পারলো না। ভাবছিলাম ছোট খোকা ছোট বৌমা,বড় খুকি আর বড় জামাই সহ নাতি নাতনিরা আসবে, পয়লা বৈশাখে বাড়িটা গমগম করবে কিন্তু কেউ আসতে পারলো না।
বুঝতে পারছিলাম যে ওনার বড্ড
অসহায় লাগছে কেউ আসতে পারবে না জেনে। কিন্তু আসা যে সম্ভব নয়। কি রকম বিপদ সঙ্কুল পরিস্থিতি এখন। সান্ত্বনা দিয়ে বললাম,
- তোমার খুব মন খারাপ না গো ঠাম্মা। কিন্তু এই মুহূর্তে কেউ না আসতে পারলেও এই লক ডাউনটা উঠে গেলেই দেখবে সবাই তোমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছে।
- বলছিস তাহলে?
- হ্যাঁ গো ঠাম্মা, দেখে নিও। এই বলে তখনকার মতন ওই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম।
সন্ধ্যেবেলা একটা বাটিতে পায়েস নিয়ে আমি, আমার কর্তা, আমার ছানা কোলে আমার শ্বশুরমশাই আর আমার শ্বাশুড়ি মা সবাই গেলাম ঠাম্মার ঘরে।
- ঠাম্মা দেখো আমরা এসেছি।
উনি একটু হাসি দিয়ে আমাদের দিকে তাকাতেই টুক করে একটা ফটো তুলে আমাদের ফ্যামিলি হোয়াটসআ্যপ গ্রুপে পাঠিয়ে দিলাম।
এবারে মুহুর্মুহু সকলে ভিডিও কল করে ঠাম্মাকে নববর্ষ তথা জন্মদিনের শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করতে লাগলো। সকালে যদিও সকলের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল ঠাম্মার কিন্তু এখন ভিডিও কলে পর পর সকল সামনে থেকে দেখতে পেয়ে ঠাম্মার চোখে আনন্দাশ্রু। হ্যাঁ লকডাউনের কারণে আমরা স্ব-শরীরে হয়ত কোথাও উপস্থিত থাকতে পারছি না বর্তমানে কিন্তু টেকনোলজি মারফত এই দূরত্বের ব্যবধানটা ঘুঁচে গেছে অনেকটাই। দূরে দূরে থেকেও আমরা সমগ্র পরিবার আরো কাছে এসে পড়েছি যেনো। আমার দিদিশাশুড়ি কায়মনে প্রার্থনা করছেন গোটা বিশ্ব এই করাল ভাইরাসের প্রকোপ কাটিয়ে উঠুক খুব তাড়াতাড়ি, সকলে আবার প্রাণখুলে বাঁচুক। হ্যাঁ আমরা সকলেই এটাই চাই, এক সুস্থ, স্বাভাবিক, সুন্দর জীবন।