Sayandipa সায়নদীপা

Tragedy Crime

5.0  

Sayandipa সায়নদীপা

Tragedy Crime

নেশা

নেশা

5 mins
1.6K



 ঘুমের মাঝে একটা কি যেন অস্বস্তি এসে ধাক্কা দিচ্ছে কানে, বারংবার। কেউ কি কাঁদছে! একটা বাচ্চার কান্না যেন, থেকে থেকে ফুঁপিয়ে উঠছে। চোখটা খুলতে যেয়েও খুলতে পারেনা কৌশিক, একটা তন্দ্রার আবেশ এসে আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রেখেছে ওদের, সারা শরীর জুড়েও যেন এক মাত্রাহীন অলসতা। অথচ কান্নার আওয়াজটা হয়েই চলেছে, উফফ কি অস্বস্তিকর! উঠতে চেয়েও উঠতে পারছেনা কৌশিক। কে কাঁদে! পাশের ফ্ল্যাটে কি কোনো বাচ্চা আছে? আচ্ছা সত্যিই কি কেউ কাঁদছে নাকি কৌশিক স্বপ্ন দেখতে কোনো? ওটা কে দাঁড়িয়ে আছে ওখানে? তিতলি? ও কি কাঁদছে? কিন্তু তা কি করে হয়, তিতলি তো বাড়ি চলে গেছে।


  সকালে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়াতেই কালকে রাতের ঘটনাটা মনে পড়ল কৌশিকের। পুরোটাই বোধহয় স্বপ্ন, তাও আজ একবার আলাপ করার অছিলায় পাশের ফ্ল্যাটে দেখে আসবে কোনো বাচ্চা আছে কিনা, নয়তো মনের এই খচখচানি যাবে না কিছুতেই। আসলে এসব কিছুই হতো না যদি না এই ফ্ল্যাটটার সম্বন্ধে ওই গুজবটা শুনতো। কৌশিক জানে এসব গুজবের পেছনে প্রকৃত অলৌকিক ব্যাপার কম, দুষ্ট লোকের দুরভিসন্ধি বেশি থাকে। তাই গুজবে কান দেয়নি ও।


  অফিস থেকে ফিরে রকিং চেয়ারে গা টা এলিয়ে দিলো কৌশিক। কাল রবিবার ছিলো বলে তিতলি এসেছিল আঁকা শিখতে, বাকি বাচ্চাগুলো আসেনি কেউ। কৌশিকের এই নতুন ফ্ল্যাটে কেউ কি আর আসবেনা তারা! চাকরিটা পেয়ে যাওয়ার পর থেকে এখন শুধু রবিবারটাই বাচ্চাদের আঁকা শিখিয়ে নিজের শখ পূরণ করে কৌশিক; তবে সেই সঙ্গে অন্য একটা শখও মিটিয়ে নেয় মাঝেমাঝে।  শখের কথাটা মনে পড়তেই আলতো হেসে নিলো কৌশিক। হাত দুটো চোখের সামনে তুলে একবার দেখে নিলো তাদের, ওর বিশেষ শখটা এই হাটদুটোর কাছে কাছে নেশার মতন, ওরা আজ অবধি কোনোদিনও বেইমানি করেনি ওর সঙ্গে।


 ডিং… ডং…

ঘড়িতে এখন কাঁটায় কাঁটায় আটটা… এই সময় আবার কে এলো! উঠে গিয়ে দরজাটা খুললো কৌশিক। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে পাশের ফ্ল্যাটের বৌদি, সঙ্গে ওনার সাত বছরের ছেলেটা। কৌশিককে দেখেই বৌদি একগাল হেসে বলেন, “তোমার কাছে নাকি কি পাওয়ার রেঞ্জার্স কালেকশন আছে ওকে সেটা দেখতে ডেকেছিলে? আসবে বলে পাগল করে দিচ্ছে আমাকে।”

  “হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি দেখেছিলাম ওকে। ভেতরে আসুন বৌদি।”

 “না ভাই, এখন শান থাক তোমার কাছে, আমি যাই রান্না করি।”

 “আচ্ছা।”


  শানকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দেয় কৌশিক। তারপর ঘরের কোণে রাখা একটা বাক্স থেকে বের করে আনে পাওয়ার রেঞ্জার্সের সেটটা। পরম যত্নে একবার হাত বুলিয়ে নেয় ওটার ওপর, এই তো হলো তার দ্বিতীয় শখ থুড়ি শখ পূরণ করার অস্ত্র। সেটটা হাতে তুলে দেয় শানের, মুহূর্তের মধ্যে সে মেতে যায় তাতে। আস্তে করে কৌশিক বসে ওর পাশে, কিছুক্ষণ ওর সঙ্গে মডেল গুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে, তারপর শুরু হয় ওর কালো হাত দুটোর খেলা। খুনসুটি করার অছিলায় সুড়সুড়ি দিয়ে শানকে। মজা পেয়ে বাচ্চাটা খিলখিল করে হেসে ওঠে। সুড়সুড়ি দিতে দিতেই হাতটা নামায় কৌশিক, একটানে খুলে শানের প্যান্টের চেন, হাত ভরে দেয় ভেতরে। খুনসুটির অংশ ভেবে নিয়ে ছেলেটার মুখে তখনও লেগে থাকে হাসি। কিন্তু তারপরেই বোধহয় ব্যাথা পায় সে, কঁকিয়ে ওঠে… এই পুঁচকে নরম শরীর গুলোর গন্ধ নেশার মত লাগে কৌশিকের, ওদের ভেবলে যাওয়া মুখটা দেখলে এক অদ্ভুত আনন্দ পায় সে, এক বন্য আনন্দ। তার এই শখের কথা কেউ জানেনা। বাচ্চাগুলোর এমন ব্রেন ওয়াশ করে দেয় যে হাজার চেষ্টা করলেও কেউ মুখ খোলে না ওর বিরুদ্ধে।


  “কাকু লাগছে…”

“আরে এটাই তো খেলা, দেখি তুমি কত ব্যথা সহ্য করতে পারো।” 

নরম শরীরটাকে পিষে ফেলতে ফেলতে চটজলদি জবাব দেয় কৌশিক। আর তৎক্ষণাৎ ঘরের আলোটা খট করে একটা শব্দ করে নিভে যায়। নিশ্ছিদ্র আঁধার নামে ক্ষণিকের জন্য, কোথাও থেকে যেন একটা বাচ্চার কান্নার আওয়াজ ভেসে আসে ঠিক কাল রাতের মত। তবে এ গলা তো শানের নয়, অন্য কেউ কাঁদে। বিছানা থেকে নামতে যেতেই হোঁচট খায় কৌশিক। তারপর দেখে দরজার তলা দিয়ে আলো চুঁইয়ে ঢুকছে, তার মানে শুধু তার ফ্ল্যাটেরই আলো গেছে। একটু এগোতে গিয়েই থমকে যায় কৌশিক, শরীরের রক্ত জল হয়ে যায় আচমকা। মেঝেটা কাঁপছে, আর সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একটা কালো ধোঁয়ার কুণ্ডলী মেঝে থেকে পাক খেতে খেতে ওপরে উঠতে থাকে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ধোঁয়ার কুণ্ডলীর মধ্যে থেকে মাথা তোলে একটা বাচ্চা ছেলে। বাচ্চাটা কাঁদছে… উফফ কি বীভৎস সে কান্নার আওয়াজ! কানে তালা লেগে যায় কৌশিকের, ঘরের জিনিসপত্র গুলো এলোমেলো হয়ে ছুটে আসতে থাকে ওর দিকে, ওর কপাল, মাথা সবে ঠুঁকে যায় সেসব। প্রতিহত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয় কৌশিক। বাচ্চাটা এবার একটু একটু করে এগিয়ে আসতে থাকে ওর কাছে…

নাহ... নাহ... আঁ... আঁ...


***************************************************************


সেদিন ঋষভ খেলতে গিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। খেলতে গেলেই মাঠের ওদিকের বাড়িটায় ভাড়া থাকা মিত্র কাকু ডাকতো ওকে চকোলেট দেবে বলে। কয়েকবার গিয়েছিল ঋষভ, চকোলেট দিয়ে কাকু ওকে আদর করতেন নানান ভাবে কিন্তু সে আদরে কেমন যেন ব্যাথা লাগতো, ঋষভ বুঝতে পারতো না কেন। মা, বাবা, দাদাই আদর করলে তো কই এমন ব্যাথা লাগেনা। মাকে ঋষভ বলেওছিল সে কথা, মা তো পাত্তাই দেয়নি। ঋষভ নিজেই আর যেত না কাকুর কাছে। কিন্তু সেদিন মাঠে কেউ খেলতে আসেনি তাই কাকু ডাকতে গিয়েছিল ও। চকোলেট দিয়ে কাকু আদর করতে যেতে বারণ করেছিল ও কিন্তু কাকু শোনেননি, তখন চিৎকার করে উঠে ছুটে পালাতে যায় ঋষভ। কাকু খপ ধরে নেন ওকে, ও ছটফট করতে থাকে পালানোর জন্য, কাকু আরও শক্ত করে ধরতে যান ওকে। শুরু হয় ধস্তাধস্তি, মেঝেতে পড়ে যায় ঋষভ, ওর মাথাটা ঠুঁকে যায় টেবিলে, ধাক্কা পেয়ে টেবিল থেকে পাথরে বড় ফুলদানিতে সোজা এসে পড়ে যায় ওর মাথায়… এরপর কি ঘটেছিল ঠিক মনে নেই ঋষভের। খালি আবছা আবছা মনে পড়ে কাকু ওর শরীরটাকে রেখে একটা বড় গর্ত খোঁড়ে… ওই জায়গাটায় তখন একটা মস্ত ফ্ল্যাট বাড়ির তৈরির কাজ চলছিল… তারপর ঋষভকে কাকু শুইয়ে দেন গর্তটায়। সেই থেকে এখানে আটকে আছে ঋষভ, গ্রাউন্ড ফ্লোরের এই ফ্ল্যাটটায় কেউ এলেই ঋষভ তাকে ডাকতে চায়, কেঁদে বলে মেঝের তলা থেকে ওকে বের করতে। কিন্তু লোকগুলো তো ওর কথা শুনতেই চায় না, কদিন থাকার পরেই চলে যায় অন্যত্র। আজ এই দুষ্ট লোকটাকে বন্ধুটাকে ঠিক সেই রকম করে কষ্ট দিয়ে আদর করছিল যেমনটা ঋষভকে মিত্র কাকু করতো। তাই তো ঋষভ ওর দিকে জিনিস ছুঁড়ে মেরেছে। আর সুযোগে বন্ধুটা পালাতে পেরেছে। যদিও আলাপ করা হলোনা বন্ধুর সাথে তাও ঋষভ খুশি। এই হাত দুটো দিয়েই লোকটা বন্ধুটাকে কষ্ট দিচ্ছিল না। ঋষভ দিয়েছে ওর হাত দুটোকে শরীর থেকে টেনে খুলে। রক্ত রক্ত... চারিদিকে রক্ত। এখন দেখো এই দুষ্ট লোকটা কেমন যেন একটা করছে, ঠিক যেন পাগলের মতন...


শেষ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy