নেশা
নেশা
ভুমি সেদিন ইচ্ছে করেই লাল শাড়ীটা পড়েছিল। যদিও জানে মলয়ের লাল একেবারে পছন্দ নয়। সব সময় স্বামীর ইচ্ছে মত সাজতে ওর ইচ্ছে করে না। বরং উল্টোটা নিজের পছন্দের রঙের ওপরেই প্রাধান্য দেয় বেশি। টকটকে লাল শাড়ি দেখে যে মলয় ঠোঁট উল্টে বলবে "বাব্বা, আর রং পেলে না, কি ক্যাটক্যাট করছে" সেটা ছবির মত স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ভুমি। মলয় অফিস থেকে ফিরতে এখনো প্রায় আধ ঘন্টা বাকি, ভুমি মেকআপ করে রেডি হয়ে নিলো। আজ ওর সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু অরুনের বিয়ে। বলতে বাধা নেই এক সময় এই অরুনও ওকে প্রেম নিবেদন করেছিলো। কিন্তু ভুমি রাজি হয় নি। আসলে অরুনের মাত্রাতিরিক্ত মদের নেশা ওর ঠিক পছন্দ ছিল না। মলয় ড্রিংক একেবারে করে না তা নয়, তবে কখনো সখনো। অরুণ ভূমিকে পাওয়ার জন্য নেশা ছাড়তেও রাজি ছিল কিন্তু ভূমির বিশ্বাস হয় নি। ভেবেছিলো বিয়ের পর আবার সেই এক রাস্তায় ফিরে যাবে, তাই মন থেকে অরুণকে নির্দ্বিধায় মুছে ফেলেছিলো। ভূমির এই প্রত্যাখ্যান অরুণকে নিদারুণ কষ্ট দিয়েছিল, কিছুদিন বাড়ি থেকে বেরতোই না, সর্বক্ষণ মদের নেশায় চুর হয়ে থাকতো। একটা সময় এলো যখন ওকে হসপিটালে ভর্তি করতে হলো। বেশ কিছুদিন ভর্তি থেকে যখন ফিরলো তখন যেনো এক নতুন অরুণ। নেশা করা ছেড়ে দিয়েছে। ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা অরুণ জয়েন করলো এক আইটি কোম্পানিতে। না চিকিৎসার সুফল নয়, তার ঘা খাওয়া হৃদয়টা অধিকার করেছিলো এক নার্স। হসপিটালে এই নার্স মোনার ওপর ভার ছিলো অরুনের দেখাশোনার। প্রথম প্রথম মোনার অযাচিত আচরণে বিরক্ত হলেও মোনা কিন্তু হাল ছাড়ে নি। গল্প করার ছলে তার সব দুঃখ, কষ্ট যেনো শুষে নেওয়ার চেষ্টা করতো। এভাবে একদিন অরুণ ভালোবেসে ফেলে মোনাকে। মোনা যেনো অরুনের হৃদয়টাকে নতুন করে গড়ে তুলেছে, সেই আগের ক্ষত টুকু আর নেই। ভূমির বাড়ি এসে অরুণ আর মোনা নিমন্ত্রণ করে গেছে। মলয় আর ভুমি বিয়ে বাড়ি পৌঁছুতে একটু দেরিই হলো। অনেক চেনা বন্ধু বান্ধবদের সাথে অনেকদিন পড়ে দেখা। ভূমির আর খেয়াল নেই রাত হয়েছে। ঘড়িতে রাত একটা বেজে দশ, মলয়কে খুঁজে না পেয়ে মোবাইলে ফোন করে "কি হলো, বাড়ি যাবে না, ক' টা বাজে দেখেছো?" মলয় তখন মোবাইলটা নিয়ে টাল খেতে খতে বলে উঠলো "দূর, তুমি যাও, আমি আর একটু ড্রিংক করে তবেই যাবো"। ভুমি লিফটের অপেক্ষা না করে সিঁড়ি ভেঙে নিচে নামে। আর অপেক্ষা নয়, গাড়ি আগে থেকেই বলা ছিলো, যাহোক করে ঠেলে মলয় কে তুলে উঠে বসে একটা স্বস্তির শ্বাস নেয়।