Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

Alpana Mitra

Fantasy

2  

Alpana Mitra

Fantasy

নামকরণ

নামকরণ

7 mins
891


সন্ধ্যা হলেই বড় একা লাগে সুধার। বাবা আহ্লাদ করে নাম রেখেছিলো শুভশ্রী। সে হতে নাকি রথিনবাবুর সংসারে শ্রী ফিরে এসেছিলো। সুধা শুনেছে তার পিসি অরুবালার কাছে। অরুবালা আজ বেঁচে নেই। থাকলে দেখতো....! তাদের শ্রী পঞ্চাশ বছরেও আবার শ্রীহীন হয়েছে। .....সুধা!.....সু...ধা! পুপাইয়ের মেয়ে হয়েছে.....! দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লো আড়ালে। জল লুকালো চশমা পড়ে। ......তাই! আমিও তপুর পেট দেখে ভেবেছিলাম.... মেয়েই হবে। ভালো আছে তো বাচ্চা.....! তাপসীর জ্ঞান ফিরেছে! বসে বসে সিরিয়াল দেখছিল সুধা..... স্টার জলসায় 'শ্রীময়ি' হচ্ছিল। তার জীবনটাও কি একটা সিরিয়াল! মা বাবা আর শুভশ্রী..... এই তিন জনের জীবনটা খুব সুন্দর ছিল। অদৃশ্য প্রডিউসার না গল্পকার নিজেদের সেরা করতে গিয়ে বারবার তাকে শ্রীহীন করলো! অসুস্থ স্বামীর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ভাবলো...... যদি সে অতিনের জীবনে না আসত, তবে হয়তো তাকেও এই বয়েসে শ্রীহীন ভাবে শুয়ে থাকতে হতো না। .....সুধা!.... সুধা!..... কি খবর তাপসীর! .....মেয়ে হেয়েছে। দিদিভাই বলে গেলো। অতিন বুঝতে পারছে সুধার মনে মনে কি কথা বলে চলেছে.... অলক্ষ্যে সুধা ছেলে আশা করেছিলো.... ননদকে বলেছিলো..... ' যদি সে আবার ফিরে আসে, তবেই আবার সে উঠে দাঁড়াবো।' দশ বছর বয়েসে শুভশ্রীর বাবা মারা যায়। বিদিশা না রথিন, কার জন্য জানে না অরুবালা! তবে পিসিই শুভশ্রীকে বলে ছিলো, বিয়ের পনেরো বছরের মাথায় অনেক ডাক্তার দেখানো পর শুভশ্রী পেটে আসে। রথিন খুব হাসতে হাসতে দিদিকে বলেছিলো! ' দিদি! আমাদের মেয়ে হয়েছে! আর আমারো চাকরিতে প্রোমোশন হয়েছে!আমি ওর নাম দিলাম শুভশ্রী। কেমন নাম দিদি! .......'ভালোই, তোদের শুভ দিন ফিরে এলো।' বিদিশা বলেছিলো..... মেয়ে? ফুটফুটে সুন্দর মেয়েকে দেখে ছেলের আফসোস দূর হয়ে গেলো বিদিশার। সুধার একটু একটু মনে পড়ে..... বাবা অফিস থেকে এসেই তাকে কোলে তুলতে গেলেই.... মা চেঁচিয়ে একশা করত.... ' অফিসের জামাকাপড় না ছেড়েই মেয়েকে ধরবে না বলেছি.... আর সে কথা তোমার মনেই থাকে না। মা ভাত মেখে দিত বাবা খাইয়ে দিত আর পিসি দূর থেকে বলত.... ' ভাত না খাইয়ে জল খাওয়াচ্ছিস বেশি'। আসলে আমি দশ বছর বয়েসেও মুখে ভাত নিয়ে মা বাবার কথা শুনতাম। তাই বাবা জল খাইয়ে ভাত গেলাতো। ফাইভে নতুন স্কুলে যাবো....এই নিয়ে কত কি শেখাতো বাবা, আর মা'কে বলতো....'তুমি কিন্তু স্কুলেই বসে থাকবে।' হঠাৎ একদিন মা অজ্ঞান হয়ে গেলো। পিসি দেওয়ালে মাথা ঠুকতে ঠুকতে বললো..... ' এ কি সর্বনাশ করলে ঠাকুর আমাদের '। শান্তুমাসি আমার জন্মের আগের থেকেই কাজ করে আমাদের বাড়ি। সে আমায় কোলে নিয়ে অঝোরে কেঁদে যাচ্ছিলো। মা'য়ের মাঝে মাঝে জ্ঞান ফিরলেই....... ' আমার মেয়ে! কি গো! তুমি কোথায়! তোমার শুভশ্রীকে একা রেখে কোথায় গেলে'। অফিসে বুকে ব্যথা ব্যথা বলে আর ডাক্তার ডাকার সময় দেয়নি রথিন সান্যাল। সব ঠিক হয়ে যায়। যেমন এখনো সব ঠিক আছে.... শুধু আমার...... .......'সুধা!.... সুধা!..... আবারও..... সে আমাদের শত্রু ছিলো, তাই তো আমাদের..... সুধা বুঝতে পারলো.....অতিন চলে গেলে সে কি করে একা থাকবে? তাই তাড়াতাড়ি চোখের জল মুছে অতিনেরর কাছে এলো। বড় জা'য়ের নাতনী হয়েছে। হাসি মুখ তাকে রাখতেই হবে। নয়তো সবাই ভাববে...... বা সুধাকে করুণা করবে......! না। সে যতই শ্রীহীন হোক। সিরিয়ালের শ্রীময়ি হতেই হবে। তার জীবনটাও যে সত্যিই এক 'শুভশ্রী' নামে সিরিয়ালই! মা আমাকে নিয়ে সামলে উঠে বাবার অফিসে জয়েন করেছিলো। শান্তুমাসি আর অরুপিসি দুজনে আমাকে সামলাতো। কিছুটা ঘরের শ্রী ফিরেছিলো। বাবার মৃত্যুদিনে মা অফিস যেতো না। .................... হঠাৎ মা একদিন আমাকে অনেক কাগজে সই করালো। জানতে চাইলাম... কেনো এতো সই-সবুত! ........ আমি যেদিন থাকবো না, সেদিন তো তোকেই সব দেখতে হবে'। উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। মা অফিস ছুটি নিয়েছিলো। অরু পিসি দু বছর হলো মারা গেছে। যদিও তাঁর বয়েস হয়েছিলো। বার্দ্ধক্যে আর ভাত্রি শোকে বিছানা নিয়েছিলো। শান্তুমাসি আর মা দুজনেই আমার বন্ধু ছিলো। সেই মা...... সাতবারের কেমোটা নিতে পারলো না। শুভশ্রী জানতো না। মা'কে জিজ্ঞাসা করলে বলতো...... ' ইদানীং চুলগুলো সব উঠে যাচ্ছে, তাই ডাক্তারের কাছে যাই চুল হবার ওষুধ আনতে'। শুনে গিয়েছিলো..... মেয়ে তার সব সাবজেক্টে লেটার মার্কস পেয়েছে। সতেরো বছর বয়েসে শুভশ্রী আবারও শ্রীহীন হলো। বাবা, পরে মা.... সেই অফিস থেকেই শুভশ্রীর জয়েন লেটার এলো। শান্তিমাসি চেঁচিয়ে বলেছিলো.... ' আমি আরো দুটো কাজ খুঁজে নেবো তবু শুভাকে আমি ঐ অভিশপ্ত অফিসে যেতে দেবো না'। শুনেছি শান্তিমাসিই বাবার অফিসের চেনা ভদ্রলোককে বলে অতনু দত্তের সঙ্গে শুভশ্রী বিয়ে ঠিক করে। বিয়েরা রাতেই শুভশ্রী অনেক কেঁদেছিলো...... ....... আপনারা আমার নাম পাল্টে দিন। আমার মধ্যে কোনো শুভ শ্রী নেই। সেই থেকে অতনু, শভশ্রীকে সুধা বলে ডাকে। দুবছরের মধ্যেই তার কোল জুড়ে এলো ফুটফুটে ছেলে। জা, ভাসুর, ননদ সবাই খুব খুশি। নাম দিলো মৈনাক। মিতুল বলেই ডাকতো সবাই। সবার আদরের মিতুল। সুধাও খুব খুশি। তার সেই শুভশ্রী নাম সবাই ভুলে গেছে। সাতবছর হলো তাদের বিয়ে হয়েছে। মিতুলের পাঁচ বয়েস। খুব বড়ো করেই জন্মদিন আর বিবাহ বার্ষিকীর আয়োজন করবে অতিন। অনেক লোক নিমন্ত্রন করেছে। ননদ, জা সবাই বলেছে... এরপর আরেকটা বাচ্চা নিও সুধা! একটা বাচ্চা রাখতে নেই! একটা বাচ্চা বড়ো হয়ে ভীষণ স্বার্থপর হয়! অনুষ্ঠান শেষে রাতে চাদর ঠিক করতে করতে...... সুধা অতিনকে হাসতে হাসতে বলে..... 'জানো! দিদিভাইরা কি বলছ .....কি? ......একা বোকা। তাই মিতুলের আরেকটা বোন হোক। ....... তাই! বললো! তবে তাই হোক! ....... ছাড়ো তো আজ বড়ো ক্লান্ত। .....হ্যাঁ, সুধা আমিও। ....... আরে তুমিও খেপেছে নাকি! একটাকে নিয়েই বাড়ি সবাই হিমসিম খাচ্ছে...... পনেরো বছরের বড়ো দাদা পুপাইকে তো পড়তে বসতেই দেয় না। ভাসুরেরও একছেলে পুপাই, খুব ভালো ছেলে..... ভাই'য়ের সব আবদার মেটায়। অতনু সুধা আর মিতুলকে নিয়ে ঘুরতে যায়। পুপাইকে বলেছিলো। পুপাইয়ের পরীক্ষা সামনে। সবাই বললো...... মিতুলকে যেন চোখে রাখে। পাঁচ দিন বাদে কাল ওরা বাড়ি ফিরবে। ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। পুপাই ফোনটা কানে তুলতেই.... ' এটা কি সুতনু দত্তের বাড়ি?' ......হ্যাঁ। ......ওনাকে দিন। .....বাবা! বাবা তোমার ফোন! কেউ তোমার সাথে কথা বলতে চাইছেন। ....... হ্যালো! কে বলছেন! ..... আমায় চিনবেন না। আপনার ভাই কি অতিন দত্ত? …...হ্যাঁ, কেনো! কি হয়েছে? ওরা তো মুসৌরী গেছে। কি হয়েছে? কি হয়েছে বলবেন তো? .....হরিদ্বারে কার এক্সিডেন্টে তিনজনের চোট লাগে, তবে অতিনবাবুর বেশি। আমার ফোন নাম্বার, ঠিকানা, হসপিটালের নাম লিখে নিন। ........ অনেক ডাক্তার করেও অতনু উঠে দাঁড়াতে পারলো না। হুইলচেয়ারে বসেই গাড়ি করে অফিস যায়। নাম পাল্টালেও, সুধা আবারও শ্রীহীন হলো। পুপাই চাকরি পেয়েছে। সবাই পুপাইকে বিয়ে দিতে বলছে। মিতুল, দাদার বিয়ে নিয়ে খুবই উদগ্রীব। মিতুলের সামনেই উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা। তাই অতিন আর ছমাস বাদেই পুপাইয়ের বিয়ে দিতে বললে। পুপাইও রাজি না। ভাইয়ের পরীক্ষা শেষ না হতে সে মেয়ে দেখতেই যাবে না। মিতুল সাইন্সে ভালো রেজাল্ট করেছে। মিতুল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে চায়। সুধা অতিনের এক্সিডেন্টের পর থেকে অনেক চুপ হয়ে গেছে। মিতুলের পাঁচ বছরের জন্মদিন আর তাদের সাত বছরের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের রাতে সুধাকে অতিন কাছে পেতে চেয়ে ছিলো। ছেলেমানুষী কোরো না বলে সেদিন অতনুকে ঘুমিয়ে পড়তে বলে। বারো বছর হয়ে গেলো, অতিনেরর শারীরিক চাহিদার ঘুম আর ভাঙ্গে নি। বা চাহিদা মেটানো হয়তো তার সাধ্যে কুলাতো না! ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে সুধা সব কষ্টে পাথর চাপা দিয়েছে। গাড়ি করে অতিন আর পুপাই মিলে মিতুলকে ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি করে দিলো। সামনের অগ্রহায়ণে পুপায়ের বিয়ে ঠিক হয়াছে। ....... মিতুল খুব খুশি। দাদার বিয়েতে তাকে অনেক কাজ করতে হবে..... বাবা বলেছে তাকে। অবশ্য এখনো ছ'মাস হাতে সময় আছে। সুদর্শন মিতুলকে দেখে পুপাইয়ের শ্বশুর বাড়ির লোক চমকে গেছে। ভেবেছে কোনো সিরিয়ালের নায়ক হবে। .......দাদা! কবে যাবি ট্রেজারে! আমি লাল কালো কম্বাইন্ডে ব্লেজার নেবো! সুধা বলেছিলো....'বিয়েতে কালো পরে না মিতুল!' দাদা,আমি কিন্তু বন্ধুদের সাথে দীঘা যাবো! আগে থেকে বলবি! অতিম, সুতনু পুপাই সবাই বারণ করলো। সুধা অনেক করে বললো... .....আরেকটু বড়ো হ, তারপর যাস! ...... কেন আমি কি বড়ো হইনি! ঘর জোরা ছেলে..... জ্যাঠা জ্যেঠি পিসির নয়নের মনি মিতুলের দেহ পাঁচ দিন বাদে কাচের গাড়ি করে বাড়ির সামনে দাঁড়ালো। স্নান করতে গিয়ে সমুদ্রে তলিয়ে যায় মিতুল। সুধা শেষবারের মতো শ্রীহীন হলো। গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলেও পড়েছিলো......ডাক্তার হাত যশে একমাত্র সুধাই সুস্থ অবস্থায় ফিরে এলো। একবছর পিছিয়ে দিল পুপায়ের বিয়ে। পুপাই তো বিয়ে করতেই চাইছিল না। অতসী খুব ভালো মেয়ে। পুপাই চাকরি করা মেয়ে বিয়ে করবে না বলেই ছিলো। কারণ পুপাই বুঝতে পেরেছে.... ঘরে একজন হাসিখুশি কথা বলা মেয়ের দরকার। তিন বছর বাদে পুপাইয়ের মেয়ে হলো। সুধা দেখতে যায়নি। পঙ্গু অতিনকে রেখে কোথায় যাবে? সেদিন যদি অতিনেরর ডাকে সারা দিতো। হয়তো আজ তাদের আরেকটা সন্তান থাকতো। আটদিন বাদে অতসী মেয়ে কোলে করে বাড়ি ফিরলো। ...... দুধের মতো ফর্সা মেয়ে দেখে সবাই বললো...... 'কাকার গা'য়ের রঙ পেয়েছে! কি নাম রাখলে গো নাতনীর! সুধা দৌড়ে এসে অতসী কোল থেকে মেয়েটাকে কোলে নিয়ে আঁচল চাপা দিয়ে বললো...... ' ওর নাম হতশ্রী' .....সবাই অবাক। ভাবলো, এবার সুধার মাথাটা গেছে। পনেরো বছর আগে সুধা যখন টিভি দেখছিলো ...... শ্রীময়ি! পনেরো বছর পর ফর্সা ঠাম্মির পাশে শুয়ে শুনছিলো কেনো তার নাম রেখেছিলো শ্রীময়ী। শ্রীময়ি সুধাকে ফর্সা মা ডাকে। ঠাম্মিকে মা ডাকে.....ডাকুক। এই নিয়ে অতসী সবাইকে কিছু বলতে বারণ করে দিয়েছে। শ্রীময়ির আজ চব্বিশ বছর বয়েস। বিয়ে করতে চায় না। বৃদ্ধা ফর্সা মা'কে ছাড়া তার যে ঘুম আসে না।


Rate this content
Log in

More bengali story from Alpana Mitra

Similar bengali story from Fantasy