Alpana Mitra

Classics

2  

Alpana Mitra

Classics

বাঁশঝাড় উপরে ফেলে

বাঁশঝাড় উপরে ফেলে

4 mins
537


কদিন ধরেই ফুলির মা'য়ের জ্বর। কাজে যেতে পারছে না। পনেরো ষোলো বছরের ফুলিই বা ছবাড়ির কাজ কি করে সামলাবে। ফুলির বাপ প্রায় এক মাস হলো সুন্দর বনে গেছে মধু আনতে। প্রায় দুমাইল হেঁটে ফরেস্ট অফিসের বাবুদের বাড়ি কাজ করতে যায় ফুলির মা বেহুলা। ফুলিতো চেনেও না! তবু ফুলি যেতে চায় মা'য়ের কাজের বাড়ি, না হলে খাবে কি? মা'কেও তো পথ্যি দিতে হবে। আজ সাতদিন হলো.. … ঘরে একটাও দানা নেই। মুনিম চাচা সাবু দিয়েছিল, আগুনের অভাবে তাও জ্বাল দিতে পারে নি। এ পুকুর ও পুকুরের পাড় থেকে অনেক কলমি শাক তুলেছে কলমি। কিন্ত কাঠ নেই একটাও। কতবেল খাওয়া বন্ধু ওর মা'কে লুকিয়ে দুটো নারকেলের শুকনো ডাল দিয়েছিল। তাও শেষ। - মা! বাঁশঝাড়ের ওখানে গিয়ে দেখবো..... যদি শুকনো কঞ্চি লতাপাতার যদি পাই! - বেহুলা দুর্বল শরীরে সমস্ত শক্তি লাগিয়ে চিৎকার করে উঠলো.. … খপরদার না খেয়ে মরবি তবু বাঁশঝাড়ের দকে পা বাড়াবিনে। - ক্যেনে মা! সেই ত্যো দূরে দেখা যাচ্ছে বাঁশঝাড়! গেলি কি হইয়েছে। - ওখানে! ওখানেই তো ভূতের রাজত্ব! - দিনেও থাকে মা! বল না! - হ্যাঁ। যাবিনি বইলেছি তো যাবিনি। মুনিম চাচা চারটি খুদকুঁড়ো দিয়ে গেলো.... বললো... মা বেটিতে ফুট্টে খাস। জ্বরে জেরবার বেহুলা রোদে গা দিয়ে বসে। - মা একটু খুশি দের বাড়ি যাই না! যদি দুটো শুকনো ডাল দেয়! খুশিই দুকুর বেলা ওর মাকে লুকিয়ে মুনিম চাচার দেওয়া খুদকুঁড় কটা ফুইট্যে দেছিল। তাই মা মেয়েতে দুদিন ধরে খেয়েছে। - শোন ফুলি! দেরি করবিনে..….. এই বনবাদাড়ে খুব ভূতের উপদ্যোপ আচে..... তাই সক্কাল সক্কাল যা। জ্বর গায়ে মেয়েকে টাইট করে শাড়ি পরিয়ে দিলো.... শাড়ি উপরে ওর বাপের একটা ফতুয়া পরিয়ে দিলো। - মা! এটা পরালি ক্যেনে? - চারিদিকে অনেক পোকামাকড় আছে.…. গা'য়ে লাগলে ঘাঁ হতি পারে। আর শোন.... সাবধানে যাবি। আমার কিন্তু খোঁজ নিতে যাওয়ার সাধ্য নেই। ফুলি একটা ধারালো কাঠারি আর থলে নিয়ে চললো..… সব শুনে খুশির মা কিছু ডালপাতা দিলো। আশেপাশে লোকেরা কিছু খুদ, গাছের ফলপাকাড়ি দিলো। খুশির মা জোর করে দুটো ফ্যান ভাত খাইয়ে দিলো। দেখতে দেখতে সূয্যি পশ্চিমে যাবে যাবে কচ্ছিল... ফুলি বাড়ির দিকে পা বাড়ায়... মা বইলেছে..... দিন দুকুরে ও নাকি ভূত থাকে। পায়েচলা রাস্তা এঁকেবেঁকে ঢুকে গেছে এ গ্রাম ও গ্রামের মধ্যে..... নদীর ওপাড়ে মাথা উঁচিয়ে দাঁইড়ে আছে বাঁশ ঝাড়.... - মা ঠিকই বইলেছে.... তাকালেই ক্যেমন গা ছমছম করে। সন্ধ্যে হয়ে আসছে। ফুলি দ্রুত পা চালায়.... চলতে চলতে পা'য়ের শব্দ শুনতে পায়.....! থেমে যায় ফুলি....। 'নাঃ কোনো শব্দ তো নেই!' ফুলি আবার চলতে শুরু করে। ..... আবার সেই পা'য়ের শব্দ!...... তবে মা'য়ের কথাই কি সত্যি হলো!... তবে কি পিছনে ভূত! রাম রাম করতে করতে ফুলি আরও দ্রুত পা ফেলে.... কাঠারিটা হাতে শক্ত করে ধরে দোলাতে থাকে। মায়ের কাছে শুনে ছিলো.... লোহার জিনিস গা'য়ে থাকলে অপদেবতা ছঁতে পারেনা। তাই কোমরে কবে মা জালকাঠি পরিয়ে দিয়েছিল.... কোমরে হাত দিয়ে দেখলো.... না, সে কবে পড়ে গেছে ফুলি জানেই না। - যাক কাঠারীটা তো লোহার। একেই শক্ত করে ধরি। এমনিতে বাঁশঝাড়ে হাওয়া লাগলে এমন সব শব্দ হয় মনে হয় যেন কেউ কোথাও আছে! তাই এসব মনের ভুল। ফুলি চলতে চলতে শুনতে পায় তার পা'য়ের শব্দ.... কিন্তু ও পা ফেলো দেখলো... 'মচ' শব্দ। শোনা শব্দের সঙে তো মিলছে না! সন্ধ্যে নামবে কিছু পরেই... সূর্যি কে দেখা যাচ্ছে না তবে আলো এখন আছে।..... অসুস্থ মা'য়ের কথা মনে পড়লো। বাঁশঝাড়ের মুখে দুটি বাঁক.... দাঁড়িয়ে ফুলি ভাবলো.... দেখবে! কিছু শুকনো কঞ্চি পায় কিনা!.... না বাবা মা তারে বারণ কইরেছে.... শুকনো পাতার গাঁট্টিটা পিঠে ঝুলিয়ে কাঠারী হাতে হাঁটতে শুরু করলো.... রাস্তা নির্জন হয়ে আসছে। হাঠাৎ ফুলি হাঁটতে গিয়ে হোঁচট খায়.... পা'য়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো..... একটা বটের ঝুড়ি পা'য়ের কাছে.... চারিদিক তাকিয়ে দেখলো.... আশেপাশে তো বটগাছ নেই!.... নিঘ্যাত তারে ভূতে ধরছে....! কাঠারী দিয়ে সরিয়ে.... দৌড়াতে যাবে.... মুখ থবড়ে পড়লো ফুলি.... চোখ বন্ধ করে জোড়ে মা'রে ডাকলো.... একি সে উঠতে পারছে না কেনো? ভূত এতো ভারি হয়.... বুঝতে পারলো এখনো কাঠারী হাতেই আছে। আরো শক্ত করে ধরে রাম রাম করতে করতে চোখ খুলে উঠতে যাবে......!! ...... দেখে বুকের উপরে মুনিম চাচা..... - তোরে আজ রাতে গরম ভাত দেবরে.....! মুহূর্তের মধ্যে ফুলি বুঝতে পারে মা কোন ভূতেদের কথা বলছে... হাঠাৎ ফুলি কোথা থেকে যে শক্তি পেলো কে জানে... এক ঝটকায় উঠে দাঁড়ালো। একটা পা তুলে দিলো মুনিমের বুকের উপরে হাতের কাঠারীটা বসিয়ে দিলো মুনিমের গলায়। - কি রে এই ভর সন্ধ্যায় নেয়ে এলি যে! দেখতেছিস মোর জ্বর ছাড়তেছে না..... - ভূতে ধইরেছিলরে মা! তাই চান করে ভূতের গন্ধ দূর করলামরে.... মা! কলমি শাক খাবি! খুশি মা শুকনো পাতা দিয়েছে অনেক.... চাড্ডি শাক দেছে....! - দে! অনেক দিন পর রাতে মা'য়ের গায়ে জ্বর আসেনি। আসলে দুব্যলে বোধহয়.... হৈ চৈ শব্দে বেহুলার ঘুম ভেঙে গেলো.... - ও ফুলি! ফুলি ওঠ! শোন.... তোর মুনিম চাচারে কে যেন বাঁশবাগানে ধর থেকে গলাডারে আলাদা কইরে দিইয়েছ.... ও ফুলি....! ফুলি উঠে মা'য়ের মুখের দিকে এক দৃষ্টে তাকিয়ে থাকে। মেয়ের চোখের ভাষা বেহুলা বুঝতে পারে। বলে..... ফুলি আজ বাবুদের বাড়ি গিয়ে আমার পাওনা গন্ডা চেয়ে নিয়াসবি। তোকে কাজ করতি বললে স্বীকার যাবিনে। কালই শহরে যাবো.... তোরে ইসকুলে ভত্তি কইরে দেবো.... ওখানে কাজ খুঁজে নেবো!' - বাপ এলে যে মোদের খুঁজে পাবেনে.... - তোর বাপেরে বাঘে খেয়েছে। মেয়ের এক সোন্দর আর ভূতহীন জীবনের জন্য ফুলিকে মিত্যে বলতেই হোলো। বাঁশঝাড় পিছনে ফেলে মা মেয়ে শহরের দিকে পা বাড়ালো।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Classics