অন্তিম পর্ব
অন্তিম পর্ব


তোমাদের কবি-মনগুলো বড়ই বিচিত্র। শুধু সুড়সুড়ি দিয়ে দেহ মনে শিহরণ জাগাতে ব্যস্ত। আকাশের চিল আর মনের কবুতরের গুমরানিকে ধরে রাখতেই তৎপর। তার থেকে কর্মচঞ্চল চড়ুইপাখি নিয়ে তো অনেক কথা তো লেখা যায়! যদি কেউ ওই কর্মবীর পাখিটার কথা তাদের কাব্যে- কবিতায় কোথাও লিখত! তা হলে নতুন একটা উপাদান পাওয়া যেত। - আমাকে আক্রমণ করে শ্রাবণী এমন সব কথার কলরবে। বলে.....! 'বেগবানকে কেমন করে ধীরে ধীরে সমাহিত করা যায় সেই আমি অমিয় সান্যাল নাকি একজন পাকা কুশীলব' ....... কিন্তু আমি নিজে তার ধাক্কা সামলাতে থর থর ধরণীতল । তা বোঝার ভান করতে শরৎচন্দ্রের সব থেকে প্রিয় নায়ক শ্রীকান্ত যেমন কোনোদিনও রাজলক্ষ্মীর কাছে স্বীকার করলো না যে রাজলক্ষ্মী তার মনের আয়নায় একমাত্র নারী.... তেমন আমারও নাকি এক দশা!!.... ওকে ভালবাসি.... 'ও' মানে শ্রাবণী নাকি টের পায়। ভালবাসি সে কথা ঠিক। এই ঠিক যে কোনো দিন সম্ভব নয়.....। শ্রাবণীকে অনেকে বার বলতে চেয়েছে. ….. পারেনি এই অমিয় সান্যাল.....! সেদিন সে কথা বলতে। মা এসব দেখে বধির প্রায়.... একদিন শ্রাবণী ঝড়ের মতো এসে কত কথা শুনিয়ে গেলো..... মা সেদিন বুঝতে পেরেছিল.... শ্রাবণী অমিয়কে ভালবাসে.... বোঝতে চেষ্টা করে ছিল তা অনেক ভাবে..... মা বলেছিল...... কেন কাঁদাস মেয়েটকে! কিন্তু বোন সুলেখার বিয়ের দুতিন মাস পর থেকে সুলেখার নামে নানা কথা শোনে জয়ের মুখে। মা নিঃশব্দে চোখের জল ফেলতে ফেলতে অমিয়কে ভাত খেতে দেয়। অমিয় একদিনও গোলাপের পাঁপড়ি ছুঁয়ে দেখেনি!! তাই শ্রাবণীর কথায় আমি..... নাকি সাহারার কবি। .…... সবুজের কবি হতে গেলে যে অনেক পথ পাড়ি দিতে হয়....! গত কয়েক বছর ধরে আমি কোনো ফুলের পাঁপড়িতে হাত দিতে ভয় পাই..... পাছে হাত দিলে গোলাপ মলিন হয়ে যায়! বাবা দাদা দুজনেই অ্যাসাইলামে..... একমাত্র ছোট বোনকে বিয়ে করেছিল বন্ধু জয়..... হঠাৎ ফোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়..... হ্যালো...... ! - অমিও! ভেবেছিলাম বোলব না...... একবছর হলো সুলেখার মধ্যেও তো বাবা ও দাদার রোগের লক্ষনগুলো প্রকট হয়েছে..... তবে ওকে আমি অ্যাসাইলামে পাঠাবো না। - অমিয় বিয়ে করিস না - না মা! আর পাগলের বংশকে আর বাড়াতে চাইনে। শ্রাবণীর বিয়ে হয়ে গেল ফাল্গুনে। দু'বছর বাদে শ্রাবণী বরের সঙ্গে কলকাতায় ফিরেছে। রাস্তায় একটা লোক মাথা নীচু করে মাটিতে কি সুন্দর একটা নারী মূর্তি এঁকেছে.... সবাই দেখে দেখে চলে যাচ্ছে.... আর বলছে ' এমন সুন্দর নারী মূর্তির আদলে আমাদের আশেপাশে কেউকেই দেখা যায় না! পাগলটা কার প্রেমে পাগল হলো?' ......শ্রাবণী আস্তে আস্তে সামনে গেলো মূর্তিটা দেখতে...... পাশ দিয়ে শ্রাবণীর স্বামী অঙ্কুর বলে উঠলো..... ' ছবিটা তো তোমার মুখের আদলই স্পষ্ট! ' ......অমিয়দা! অমিয়দা.....! আমি শ্রাবণী...... অমিয়দার মা একটু দূরে একটা থালায় ভাত মাখা নিয়ে বসে....... ......অঙ্কুর তুমি বাড়ি চলে যাও...... আমি একটু পরে যাচ্ছি। অমিয় শ্রাবণীর মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে থাকতে সব ভাত খেয়ে নিলো।