অতিথি
অতিথি
নদীর অনিঃশেষ চলার শব্দের প্রবাহমনতার সঙ্গে ফেলে আসা দিনগুলোর কথা স্বর্ণলতার খুব মনে পড়ছে। আজ নদীর স্রোতের শব্দমালা যেন এক বিষন্ন সুর বয়ে নিয়ে যাচ্ছে। একদিন এসে ছিল কে যেন! তাকে চাক্ষুষ দেখেনি....তবে স্রোতের টানে উজ্জ্বল আলো ধীর লয়ে বয়ে যাচ্ছিল। ঠিক আজও তেমনটি মনে হচ্ছে..... কে যেন আসবে... নদীঘাটের পাশে বিশাল শিরীষ গাছটা নীচে সে চুপচাপ দাঁড়িয়ে। ফেলে আসা প্রত্যেকটি দিনের পাতা ওল্টাতে ওল্টাতে দেখে.... অজস্র ধারায় বাতাস তাকে পরিবাহিত করে সারা আকাশ ছড়িয়ে দিয়েছে.... অথচ স্বর্ণলতা তাকে চোখেই দেখিনি..... শুধু ছায়াছন্ন সন্ধ্যায় শিরীষের প্রগাঢ় ছায়াকে কিছু ঝুরো ঝুরো আলোর গুরো দিয়ে চলে গেছে। রোজ রাতেই অপেক্ষা করে স্বর্ণলতা..... যদি সেই অচেনা আলোর পথিক যদি আসে.....! কিন্তু প্রত্যেক দিনটিই কালকের দিন হয়ে যায়। আষাঢ়ে প্রবল বৃষ্টিতেও স্বর্ণলতা অপেক্ষা করছে.... শিরীষের কিছু পাতাও যেন তার দুঃখে মাথা নীচু করে টুপ টুপ করে চোখের জল ফেলছে..... অজস্র জল অক্ষর
ে মাটির বুকে স্বর্ণলতা লুটিয়ে পড়ে..... তবে কি তার সাথে কোনোদিনই দেখা হবে না!.... সে যে কত লতাপাতা দিয়ে সাজিয়ে ছিল তার ঘর.... নতুন অতিথির জন্য! অবশেষে রাত্রির চতুর্থ প্রহরে হঠাৎ স্বর্ণলতা ঘুম ভেঙে যায়...... বাতাসের সাথে ছুটে চলেছে জ্যোৎস্না...... খুব হিংসে হলো তার। সে কেনো দেখতে পারছে না অনুভবের সেই নতুন অতিথিকে! চোখ তুলে তাকাতেই..... - কে তুমি আগুন্তুক! তুমি কি আমার সেই অতিথি! যাকে শিরীষের ফাকফোকর থেকে কোনোদিন দেখিনি! - হ্যাঁ, স্বর্ণলতা! আমি তোমার সেই অতিথি..... এসো কাছে এসো! ক্ষনিক পরেই উত্তর পশ্চিম কোনে যাবো সরে সরে..... আজ আষাঢ়ে প্রথম পূর্নিমা। তোমার লতাপাতায় সাজানো ঘরে নয়.... এসো নদীপারে! স্রোত সাক্ষী রেখে তোমার ভালবাসা গ্রহণ করবো। লজ্জায় নত হয় স্বর্ণলতা। স্বয়ং চাঁদ তার ঘরেভ অতিথি হয়ে এসেছে.....!!!! আষাঢ়ের প্রথম পূর্ণিমায়...... চললো চাঁদ আর স্বর্ণলতা মান - অভিমান আর আত্মসমর্পণের পালা....... জ্যোৎস্না আর শিরীষ হেসে হেসেই লুটোপুটি যায়।