STORYMIRROR

Maheshwar Maji

Abstract

3  

Maheshwar Maji

Abstract

মমতা

মমতা

2 mins
733



রোহন এ বছর দশে পড়ল। সে যখন দু বছরের ছিল তখনই তার মা মারা যান।তাই সে মায়ের আদর কী জিনিস জানে না।


তার জ্ঞানের পরিধি যত বিস্তৃতি লাভ করতে লাগল, মায়ের জন্য তত মন কাঁদতে লাগল।

তার বাবা আর দ্বিতীয় বিয়ে করেননি।তিনি পেশায় একজন ডেভেলপ ইঞ্জিনিয়ার। বিভিন্ন কম্পানির সাথে চুক্তিভিত্তিক কাজ করেন। বাড়িতে বসেই অনেক কাজ হয়ে যায়। তাই রোহণকে সময় দিতে কোন কষ্ট হয় না।

তাছাড়া একজন মাসি আসেন। বাড়ির যাবতীয় কাজ সামলে দেন।


মাঝে,মাঝে রোহনের মন খারাপ হয়ে যায়। ইস্কুলে, পথে, ঘাটে অন্যান্য ছেলে, মেয়েদের মাকে দেখে। কত আদর করেন!

ভালোবাসেন!...চোখ, মুখ মুছিয়ে দেন।

তার খুব ইচ্ছে হয় মায়ের আঁচলের গন্ধ নিতে।

কিন্তু তার যে মা নেই।

তার বাবা বলেন, মা নাকি ওপরে আছেন। সেখান থেকে সব সময় তাকে দেখছেন। সময় মত সে পড়ছে কিনা?

খাওয়া, দাওয়া ঠিক করছে কিনা?

অনিয়ম হলেই তার মা রাগ করেন।

তাই রোহণ কোনকিছুতেই কোনরকম ত্রুটি রাখে না। সে তার মাকে একদম কষ্ট দিতে চায় না।

কিন্তু আজ যে তার মাকে খুব করে দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে। আজ মাদার্স ডে।ইস্কুলে সকলের মা এসেছিলেন। শুধুমাত্র তার মা আসেননি।

রোহণ ঠিক করল, সে তার মাকে মনের কথাগুলো লিখে পাঠাবে।

সেইমত দোকান থেকে একটা ঘুড়ি আর সুতো ভর্তি লাটায় কিনে আনল।

তারপর বিকেলের দিকে ঘুড়ির এক পিঠে একটা হাতে লেখা কাগজ আঠা দিয়ে চিটিয়ে দিল।

এরপর সেই ঘুড়িটাকে উড়িয়ে দিল মুক্ত আকাশের বুকে।

ঘুড়িটা যখন একদম ছোট হয়ে এল।রোহণের

মনে হল তার মা হাত বাড়িয়ে ঘুড়িটা টেনে নিলেন।

সঙ্গে, সঙ্গে রোহণের মুখে একরাশ আনন্দ উছলে পড়ল। হাততালি দিয়ে বলে উঠল, থ্যাঙ্কু ম্যামি। আই লাভ ইউ।


চোখের জলটা মুছে বন্যা উঠতে গিয়ে লক্ষ্য করলেন, তার ঠিক পাশেই একটা ঘুড়ি লাটায় খেয়ে পড়ল।

ঘুড়িটা দেখে আবার তার মনটা ভারি হয়ে উঠল। তার মানিকও ঘুড়ি পাগল ছিল।

মন খারাপ হলেই ঘুড়ি আর লাটায় নিয়ে ওঠে যেত ছাদের ওপর।

এখনো তার পড়ার ঘরে পুরনো টেডি বিয়ারের মাঝে কতকগুলো ঘুড়ি থাক করে রাখা আছে।

আজ তিন বছর হয়ে গেল। মানিক পৃথিবীর সমস্ত মায়া ত্যাগ করে মৃত্যুলোকে পাড়ি দিয়েছে।

সেই দুর্ঘটনার দৃশ্যটা বন্যা আর মনে করতে চান না। বড় বীভৎস সেই দৃশ্য!

মৃত্যু যে কত নিষ্ঠুর হতে পারে বন্যা সেদিন জেনে ছিলেন। একটা পাঁচ বছরের নিষ্পাপ ছেলেকেও ক্ষমা করেনি।

বন্যা আবার নতুন করে ইস্কুলের পুরনো চাকরিতে জয়েন করেছেন। বাড়িতে থাকতে মন চায় না। সব সময় মনে হয় মানিক যেন মা, মা বলে ডাকছে।

বুকটা মরুভূমির মত খাঁ খাঁ করে ওঠে।

মানিকের ছায়া তাড়া করে বেড়ায় সর্বক্ষণ।


বন্যা ঘুড়িটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে দেখতেই একটা লেখা দেখতে পেলেন।


" আমি তোমার খোকন সোনা গো মা।তুমি ভাল আছো তো?

মাগো আমি এখন এতটুকুও দুষ্টুমি করি না। তুমি কষ্ট পাবে বলে। কিন্তু আমার যে খুব ইচ্ছে করছে, তোমায় একটি বার দেখতে। মাগো তোমার কী ইচ্ছে হয় না আমায় দেখতে?"


বন্যার বুকটা কান্নায় ফুলে,ফুলে উঠল।দুগাল ছাপিয়ে উষ্ণধারা তার আঁচল ভেজাচ্ছে।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract