Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!
Unmask a web of secrets & mystery with our new release, "The Heel" which stands at 7th place on Amazon's Hot new Releases! Grab your copy NOW!

susmIta Saha

Abstract

3  

susmIta Saha

Abstract

মাছ ভাজা

মাছ ভাজা

6 mins
827


#মাছ ভাজা #সুস্মিতা "মাছ"টা নিয়ে কি যে করা যায়? ভেবে ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছেনা সুনন্দিতা। ভোরবেলা ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে অন্ততঃ বারো-চোদ্দোবার রেফ্রিজারেটর খুলে মাছটাকে দেখেছে ও। গতকাল দুপুর থেকে মাছটা ঠান্ডা মেশিনের মধ্যে শুয়ে আছে। করার কিন্তু আসলে 'খুব বিশেষ' কিছুই নেই। একটা জিনিষই করে ফেলা যায়- সেটা হ'ল মাছটাকে নুন হলুদ মাখিয়ে, সরষে তেলের মধ্যে ডুবিয়ে দিব্যি কড়কড়ে করে ভেজে খেয়ে ফেলা। কথাটা হয়েও ছিল ওইরকমই... কিন্তু সুনন্দিতা কিছুতেই সেটা করে ফেলতে পারছে না। যতবার ফ্রিজ খুলে মাছটাকে দেখছে ততবারই ওর চোখদুটো কেন যেন জলে ভরে যাচ্ছে। মাছ খেতে ভালোবাসার জন্য সুনন্দিতাকে ছোটবেলা থেকেই বাড়ীর সকলে "বেড়াল" বলে সম্বোধন করতেন। সেই সুনন্দিতার একটা মাছ দেখে চোখে জল আসছে কেন? মাছটাকে সুনন্দিতা ভেজে খেতে পারছেনা কেন?... এর উত্তরটাই বড্ড গোলমেলে। কারণগুলো খুঁজতে বসলেই- আজকের পৃথিবীর প্রেক্ষিতে সুনন্দিতাকে ঠিক স্বাভাবিক মনে নাও হতে পারে। তা, যাই মনে হোক না কেন, আজ একটু কারণগুলো ব্যাখ্যা করাই যাক... সেগুলোই সুনন্দিতা ও তার মাছের গল্প...। প্রথমেই একটু সুনন্দিতার পরিচয় দেওয়া যাক। নাঃ ওর সম্পর্কে সেরকম বিশেষ ভাবে বলার কিছুই নেই। বরং বলা যেতে পারে বাস্তবিকই সুনন্দিতা একটু আহ্লাদী প্রকৃতির একজন খাঁটি অকাজের মানুষ। জীবনের দ্বিতীয় বয়ঃসন্ধিতে তার বয়স। অথ্যাৎ তিনি যৌবন ও বার্ধক্যের মধ্যবর্তী প্রৌড়ত্বে পা ফেলেছেন মাত্র । ভাগ্যদেবী এখনও পর্যন্ত সুনন্দিতার প্রতি মোটামুটি সুপ্রসন্ন। তার স্বামী ও সন্তানেরা স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। জীবনে খুব বেশি ঝড়-ঝাপটা মোকাবিলা না করার জন্য এবং মোটামুটি সুরক্ষিত একটি জীবন যাপনের কারণে সুনন্দিতার মন ও মস্তিষ্কে সর্বদাই একটি কিশোরীভাব বিরাজমান থাকে। তার মনের বয়স বাড়েনা। জীবনে শুধু একটি জিনিসেরই মানে তিনি বুঝতে পারেন, সেটি হ'ল "ভালোবাসা"। সেই ভালোবাসাও আবার এই পৃথিবীর শুধু মাত্র দুটি জিনিসের প্রতি। প্রথম ভালোবাসাটি মানুষের প্রতি। সুনন্দিতা পৃথিবীর প্রতিটি মানুষকেই অত্যন্ত সজ্জন বলে মনে করেন এবং প্রথম দর্শনেই যে কোনো মানুষকে প্রগাঢ়ভাবে ভালোবেসে ফেলেন। নিজের মধ্যে ঈর্ষা, রেষারেষি, ক্রোধ, বিদ্বেষের মত ব্যাপারগুলি কিছুটা কম থাকার ফলে অন্য মানুষের মধ্যেও সুনন্দিতা ওই ব্যাপারগুলি একেবারেই দেখতে পান না, বুঝতেও পারেননা। তিনি মানুষকে বিশ্বাস করে ভালোবাসার আনন্দেই মশগুল। সুনন্দিতার ভালোবাসার দ্বিতীয় বিষয়টি হ'ল... না, না... ফুল, গান, কবিতা, নাটক, শাড়ী , গয়না... সেসব কিছুই নয়। দ্বিতীয় বস্তুটি হ'ল "মাছ"। সুনন্দিতা বাঙালি। অতএব একজন বাঙালি হিসেবে সুনন্দিতার মৎস্য প্রেম নিয়ে খুব বিশেষ কিছু বলার ছিলনা । ঠিক কথা , কিন্তু এই মহিলাটির মাছের প্রতি ভালোবাসার পারদ গগনচুম্বি। সুনন্দিতার প্রাতরাশ, মধ্যাহ্ন ভোজন, বিকেলের জলখাবার, এবং নৈশভোজে প্রতিদিন মাছ চাই-ই-চাই। শুধু তাই নয়, তাঁর শয়নে, স্বপনে, জাগরণে হৃদয় জুড়ে শুধু মাছ আর মাছ...। এখন মুশকিলটা হ'ল ঠিক এইখানেই। সুনন্দিতার 'মানুষ' এবং 'মাছ'কে ভালোবাসার এই যে এক প্রায় পাগলামির জগত , সেই জগৎকে ধৈর্য সহকারে বোঝার মত মানুষজন বড়ই কমে যাচ্ছে। "ভালোবাসা" আজকাল আর খুব একটা কাজে লাগেনা। আজকের পৃথিবীতে ভালোবাসার এক্সপয়ারী ডেট হয়ে গিয়েছে। নুতন অভিধানে 'ভালোবাসা' 'আহম্মকি' এবং 'বোকামি'কে সমার্থক শব্দ হিসেবে ব্যবহার করা হ'ল বলে...। আর মৎস প্রেম? 'সুন্দরবনের বাঘ' আর 'জমিয়ে মাছ খাওয়া রসিক বাঙালী' দুটোই এখন পৃথিবী থেকে ক্রমশঃ অবলুপ্তির পথে । সুনন্দিতার জীবন থেকে তার মেয়েবেলার সাথে সাথে সেই সব মৎস্য-বিলাসী প্রিয়জন, যারা তাকে নিঃস্বার্থভাবে স্নেহ ও ভালোবাসায় ভরিয়ে রাখতেন, সবাই হারিয়ে যাচ্ছে। মোদ্দা কথা হ'ল এই মাছের কারণেই সুনন্দিতা মনে মনে কিছুটা একাকিনী ও দুঃখিনী। অধুনা তিনি প্রবাসী। কলকাতার মতো মাছের বাজার এখন শুধুই তার স্মৃতিতে । তার ওপরে সুনন্দিতার স্বামী ও সন্তান গুনে গুনে ঠিক পাঁচটি মাছ যেমন রুই, ইলিশ, পাবদা, চিংড়ি ও ট্যাংরা চেনে এবং অত্যন্ত বিরক্তির সাথে সপ্তাহে এক-দুদিন খায়। অথচ এর বাইরেও যে মাছদের কি বিশাল এক জগত আছে ওরা তার খোঁজ খবর রাখেনা বা রাখতেও চায়না। পার্শে, মৃগেল, চাঁদা, মৌরলা , খলসে, চ্যালা, চাপিলা, খয়রা, শিঙ্গি, মাগুর, কৈ, শোল, তেলাপিয়া, বাটা, বাচা, শিলং, পুঁটি, সরপুটি, গাং-ধরা, ভেটকি, আমোদিনী , ভোলা, বোয়াল, আড়, ঢাই, হালুয়া, পমফ্রেট, হলুদ,গুলে,লোটে ,বেলে, কাচকি, রূপচাঁদ, সুরমাই ... আর ও কত... কত মাছ... ওদের কথা কেউ বলেই না। মাছের ব্যাপারে সুনন্দিতার পরিচিত মানুষজনদের কারুর যেন কোনো উৎসাহই নেই, সময়ও নেই। হৃদয় উজাড় করে সুনন্দিতা আজকাল কারুর সাথে একটু মাছের গল্প করতেই পারে না। কিন্তু না, ভাগ্য দেবী সুনন্দিতার প্রতি সত্যি সদয়া। অবশেষে কলকাতা থেকে বহুদূরে ভারতবর্ষের একেবারে পশ্চিম প্রান্তে এসে সে এক সত্যিকারের মৎস্য প্রেমী বান্ধবী খুঁজে পেয়েছে। নুতন বান্ধবীটির সাথে আলাপ হয়েও ছিল এক মাছের দোকানে দাঁড়িয়েই। স্বামীর কর্মসূত্রে সুনন্দিতাদের সারাজীবনই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াতে হয়েছে। প্রত্যেকবারই নুতন শহরে পৌঁছে সুনন্দিতা প্রথমেই যে কাজটি করে ফেলে সেটি হ'ল -সেই শহরের মাছের বাজারগুলিকে আবিষ্কার করে ফেলা। এখানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। সেই মাছের বাজারেই এক সোনালী বিকেলে নুতন বান্ধবীর সাথে তার প্রথম দেখা। দূর থেকে দেখেই দুজনে দুজনকে বাঙালি বলে বুঝতে পেরেছিল এবং আলাপ করার জন্য দুজনেই এগিয়ে এসেছিল। প্রবাসে তো এরকমই হয়। সেই সাথে মাছ বাছা ও কেনার ধরণ দেখেই সুনন্দিতা বান্ধবীর মাছের প্রতি আবেগের বিষয়টা টের পেয়ে গিয়েছিল...একেবারে প্রথম দিনেই। যাইহোক আনন্দের কথা এই যে, আলাপ পরিচয় থেকে বন্ধুত্বে পৌঁছতে এর পরে আর বেশি দেরি হয়নি। তারপর থেকে মাঝেমাঝেই একসাথে বাজার করা এবং প্রায় প্রতিদিনই দুপুর বেলাটা দুই বান্ধবীর কেটে যায় টেলিফোনে শুধু মাছ এবং তার বিভিন্ন রেসিপি নিয়ে আলোচনা করে। আলোচনার সময় দুজনেরই চোখ দুটি চকচক করে, জিব লক্ লক্ করে। গল্পের মধ্যে দিয়েই ওরা যেন আঙ্গুলে চেটে চেটে কত হারিয়ে যাওয়া মাছ খায়। এইরকমই এক দুপুরে সুনন্দিতার বান্ধবী এক নতুন মাছের গল্প বলল। সে যেন এক রূপকথার রাজকুমারীর গল্প। বান্ধবী বললো সেই মাছের গায়ের রং পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মত, চোখদুটো ঈষদ নীলচে। পেট এবং লেজের দিকটা রাজকুমারীর গালের মতই গোলাপী আভাযুক্ত। আর ছুঁচলো ঠোঁটদুটো দেখলেই যে কোন রাজকুমার প্রেমে পড়ে যাবে। রাজকুমারী একটু ছোটখাট ধরনের, অনেকটা আমাদের ছোট কৈ মাছের মত। ভাজা করে গরম ভাতের সাথে লংকা দিয়ে খেলে, সে স্বাদে অসামান্যা। তবে তাকে পাওয়া যায় শুধু ভরা বর্ষায়, তাও খুব সহজলভ্য নয়। কিন্তু দুঃখের বিষয় হ'ল সুনন্দিতার বান্ধবী মাছটির নাম জানেনা। কোঙ্কণী মাছওয়ালী মাসিকে জিজ্ঞাসা করেও বিশেষ সুরাহা হয়নি। অতএব , নাম না জেনে সেই মাছ আবার এখন বাজার থেকে আনা যায় কি করে? এদিকে সুনন্দিতাকে সেই মাছ না খাওয়ানো পর্যন্ত বান্ধবীরও শান্তি নেই, সে অস্থির হয়ে পড়েছে। একা একা কি কোনো কিছু উপভোগ করা যায়? ভোগ আর উপভোগের মধ্যে সেটাই তো পার্থক্য। গত পনেরো দিন ধরে শহরে টানা বৃষ্টি হচ্ছে, প্রায় প্রাকৃতিক দুর্যোগের মত অবস্থা। চারিদিক থেকে ছোট বড় দুর্ঘটনারও খবর পাওয়া যাচ্ছে। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বেরোনোর কথা কেউ ভাবছেন না। এরকমই এক সময়ে হঠাৎ একদিন দুপুরবেলা সুনন্দিতার বাড়ির কলিংবেলটা বেজে উঠলো। "পোস্ট ম্যান এসেছে" ভেবে আধোঘুম জড়ানো চোখে সুনন্দিতা সদর দরজা খুলল। দরজার বাইরে সশরীরে এক চমক। আপাদমস্তক কাকভেজা, হাঁটু পর্যন্ত কাদা মেখে সুনন্দিতার বান্ধবী দাঁড়িয়ে... হাতে তার সেই নাম-না-জানা রূপালী রাজকুমারী। দুস্প্রাপ্য সেই মাছটি সে অনেক খুঁজে সুনন্দিতার জন্য মাত্র একটিই যোগাড় করতে পেরেছে। বৃষ্টির সময় ছাড়া ওটা পাওয়া যায়না এবং বাদলা দিনে ওই মাছটিকে ভেজে খাওয়ার স্বাদই আলাদা। অতএব প্রাকৃতিক দুর্যোগকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে, একটা ভাঙ্গাচোরা স্কুটিতে ঘুরে ঘুরে বন্ধুর জন্য একটা দুর্লভ মাছ যোগাড় করে এনেছে আর এক বন্ধু...। এই 'ভালোবাসা'টা সত্যি কিসের জন্যে?দুটি নারী হৃদয়ে এই ভালোবাসা কি শুধুই মাছের জন্য ? দুষ্প্রাপ্য এক মাছভাজা খাওয়ার লোভ? না কি দুই বন্ধুর এই আনন্দ , সুখ ভাগ করে নেওয়ার নামই বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা ? বান্ধবী চলে যাওয়ার পর থেকেই উত্তরটা খুঁজে চলেছে সুনন্দিতা। রেফ্রিজারেটর খুলে রূপালী রাজকুমারীর মতো মাছটাকে বারবার দেখছে সুনন্দিতা , কিন্তু সেটাকে কিছুতেই ভেজে খেতে পারছেনা ও। সুনন্দিতার দুচোখ ভ'রে যাচ্ছে জলে...।


Rate this content
Log in

More bengali story from susmIta Saha

Similar bengali story from Abstract