STORYMIRROR

Manab Mondal

Abstract Drama Action

4  

Manab Mondal

Abstract Drama Action

মাভকা

মাভকা

4 mins
39

১৬ মাভকা


গ্রামটার নাম শুনেই জুঁই চোখে জল চলে এল।

আজ জুঁই বাংলা রূপালী পর্দার বহুল চর্চিত নাম। অথচ ও আজ ওর মা বাবা দেওয়া নামটা ভুলে গেছে। আমি জানি নিজের গ্রামের নাম শুনেই ওর চোখে জল পড়ছিল।

শীত জড়ানো রোমান্টিক বিকেলের নরম হাওয়া আদর এড়িয়ে গাড়ি ঠেলে অজানা একপথ। এক পথের পাশে স্বপ্ন আঁকা ফুলের মাঠে । যখন দাঁড়ালো আমি তখনো দিন ডুবে যেতে আরও কিছু বাকি । আকাশে কমলা রঙের সূর্য, হলুদ মাঠ গাঁদার ক্ষেতে তখন ফুল তোলার ব্যস্ততা, ঝুঁড়ি ঝুঁড়ি ফুল তোলা চলছে। ফাঁক ফোকর কথার কথা চললো, ভোরের গাড়িতে সব ফুল চলে যাবে, হাটে বাজারে তাই সন্ধ্যের অন্ধকার নামার আগেই যতটা সম্ভব কাজ গুছিয়ে রাখছে সবাই। এক পরিবারের বাবা - মা, ছেলে মেয়ে সবাই ফুল তুলছে । টুকটাক কথা হলো তাদের সাথেই ।ফুলের বাজার নাকি খুব খারাপ , এক কেজি গাঁদার দাম মোটে পাঁচ টাকা । তাই ছেলে বিভিন্ন কাজের বাড়িতে ফুল সাজাবার কাজে নেমেছে । বাড়তি কাজ না করলে শুধু চাষের কাজে সংসার চলে না । মনে আছে গোপাল বলে ছেলেটি বলেছিলো "জানাশোনা কারো বাড়ি ফুলের সাজ লাগলে বলবেন দাদা অনেক কমে করে দেব ।"

দীঘলগ্রাম , নদীয়ার গল্প এটা। যে ফুল সবার বাড়িতে খুশির আবহাওয়া তৈরি করে সেই ফুলের চাষীদের রাখেনা কেউই।গোপাল আমাদের কাজটা করে দিয়েছিলো বিনা পয়সায়।ওর বোন ছিল টেপি মানে আজকে জুঁই। জুঁই বৈষ্ণব পরিবারের মেয়ে। কিন্তু একটা মুসলিম ছেলের সাথে বিয়ে করে পালিয়ে ছিলো লাভ মেরেজ করে। কিন্তু মুম্বাই গিয়ে ছেলেটা রূপ বদলায়। ওকে বিদেশে পাচার করে দেবার চেষ্টা করে। তখন পালিয়ে চলে আসে ও আবার গ্রামে। তবে ওর একটা ছোট্ট মেয়ে জন্ম নিয়েছিল তখন কিছু দিন আগে।ও পড়াশোনা ভালো ছিলো দেখতেও সুন্দর ছিল। আমাদের মতো সিনামাওয়ালাদের সাথে আলাপ হতেই ও আবার নতুন করে বাঁচতে স্বপ্ন দেখলো। কারণ ও কলকাতায় কলেজ পড়েছে তখন টালিপাড়ায় ছোট ছোট কাজ করেছে সিনামায় সিরিয়াল। নিতান্ত ধর্মবিশ্বাসী মেয়ে ভাবলো ওদের রাধা মাধব আমাদের পাঠিয়েছেন আমাদের ওকে সাহায্য করতে।

চতুর পরিচালক ওকে দিয়ে কিছু বোল্ড সীন করিয়ে নিলো। এই দৃশ্য সুট করতে করতে ওর শরীর প্রতি আকর্ষিত হলো আমাদের প্রযোজক। কু প্রস্তাব দেওয়াতে ও আমাদের থেকে দূরত্ব তৈরি করলো। এতেই ওর বিপদ হলো। ওকে ওর মেয়ে সহ তুলে নেওয়া হল আমাদের গাড়িতে। ওর মেয়েকে ছুড়ে ফেলে দেওয়া হলো চলন্ত গাড়ি থেকে। ওকে ধর্ষণ করা হল। ওকে হয়তো ওরা খুণ করে ফেলতো। আমি বিশ্বজিৎ ওকে উদ্ধার করলাম। ও মানসিক ভাবে অসুস্থ ছিলো কিছুদিন। ঐসময় আমি ওর চিকিৎসা ব্যবস্থা করলাম। ঐ সময় থেকেই একটা সম্পর্ক তৈরি হয় আমাদের। আমার কাজে বাজার ভালো নয়। তাই আবার ব্লু রিবন প্রোডাকশন হাউস সাথে কাজ করতে রাজি হয়ে গেলো। আবার সেই দীঘল গ্রাম কাজ।

শুটিং চলাকালীন একটা বাচ্চা মেয়ে আমাদের সাহায্য করেছিলো। ও আবার জুঁইকে মা বলে ডাকছিলো। আমি ওর নাম জিজ্ঞেস করলাম ও বললো " মাভকা"...

মাভকা শুনে আমি অবাক হয়ে গেলাম।ইউক্রেনীয় লোককাহিনী অনুযায়ী মাভকা হল তারা মেয়েদের অপ্রাকৃতিকভাবে, দুঃখজনকভাবে বা অকাল মৃত্যু হয়েছিল, বিশেষ করে নামহীন অবস্থায় ,শৈশবে, যখন নামকরণ হয়নি, যদিও মাভকা প্রায়শই সুন্দরী যুবতী মেয়েদের চেহারা নিয়ে উপস্থিত হয়। তারা যুবকদের জঙ্গলে যাবার জন্য প্রলুব্ধ করে এবং বিপথে নিয়ে যায়। সেখানে তারা "পুলক রোমাঞ্চিত ক'রে" তাদের মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। জলের মধ্যে মাভকার কোন প্রতিফলন হয়না, তাদের ছায়াও পড়ে না। কিছু গল্পে দেখা যায়, তারা গবাদি পশুর দেখাশোনা করে এবং বন্য প্রাণীদের তাড়িয়ে দিয়ে কৃষকদের সাহায্য করে। এই মেয়েটি ফুলচাষিদের সাহায্য করে। লোকে জন বল ও গোপালদের পরিত্যক্ত ভীটে ও থাকে। জুঁই হারিয়ে যাওয়ার ওর চরিত্র নিয়ে অনেক গল্প কথা চালু হয়। তাছাড়া ব্লু রিবনের ছবিতে ওর করা বোল্ড অভিনয় ওদের আরো বিপদে ফেলায় ওরা এই গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।

তবে দিন তিনেকের মধ্যেই আমরা শুটিং বন্ধ করে দিতে বাধ্য হলাম। সুনীল সঞ্জু ফিরোজ তিনজন প্রথম দিন নিখোঁজ হলো। আমার ভেবেছিলাম ওরা ফুর্তি করতে গেছে কোথাও কিন্তু দ্বিতীয় দিন রফিকুল, মনিরুল নিখোঁজ হতেই আমাদের টনক নড়ে চড়ে উঠলো। একটা বিলে ওদের পাঁচ জনের শরীর খুঁজে পেলাম। অদ্ভুত ভাবে কেউ জেনো ওদের শরীরটা ছিড়ে ফেলেছে। হাত পা মাথা আলাদা করে ফেলেছে। কিন্তু কোন ধারালো অস্ত্র আঘাত নয় উপরে ফেলা হয়েছে। পুলিশ তদন্ত শুরু করলো। কিন্তু আমাদের প্রযোজক ভয় পেয়ে সেই দিনে রাতে পালিয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু পালানোর সময় যে দৃশ্য দেখলাম তা আমি নিজের চোখে বিশ্বাস করতে পারলাম না। 

মাভকা একটা সুন্দরী যুবতী রূপ নিয়েছে। কিন্তু সে পুরোপুরি নগ্ন । কিন্তু মাভকা কাহিনী সম্পর্কে আমরা সব কিছুই জেনে গেছে। তাই খান সাহেব গাড়ি চালাতে বললো। তখন মাভকা একটা বড় রূপ নিলো গাড়িটা হাতে তুলে দেশলাই বাক্সের মতো দুমরে মুচরে দিলো। তারপর সেই ছোট্ট মেয়ে রূপ নিয়ে ও জুঁই কাছে এসে জরিয়ে ধরে বললো 

 " মা আমাকে ছেড়ে যেও না।এই গ্রামে থাকো। আমি সবাইকে তো মেরে ফেলাম।"

শহরের সভ্যতার মিথ্যা বিলাসিতা জীবনের প্রতিটি এমনিতেই আমি বিরক্ত হয়ে গেছিলাম। তাই গোপাল জুঁই দের জমিতে আবার ফুলের চাষ শুরু করে নতুন জীবন শুরু করলাম। কিন্তু দুঃখের বিষয় মাভকা আমাদের ছেড়ে হারিয়ে গেলো কোথায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract