Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

3  

Nityananda Banerjee

Horror Fantasy Thriller

ললন্তিকা ধারাবাহিক

ললন্তিকা ধারাবাহিক

5 mins
199


পর্ব বাইশ


রুদ্র গাড়ি বের করল । অভয়ঙ্করবাবু তাঁর বিশেষ ধরণের ব্রিফকেসে সালফার চূর্ণ, ময়দা, এবং ব্লিচিং পাউডারের শুকনো মিশ্রণ রেখে ব্রিফকেস বন্ধ করে দিলেন। 

এই ব্রিফকেস কব্জা স্ক্রু দিয়ে নয় পিছন দিক বরিবর একটি হাপরের মত বস্তু ফিক করে রাখা। ব্রিফকেস বন্ধ করলে হাপরে বায়ু পূর্ণ হয় ; আর খুললেই সেই বায়ু ঝড়ের গতিতে বের হয় ।

এর ফলে ভেতরে জমা করা মিশ্রণের গুঁড়ো ব্রিফকেস খুললেই চোখে মুখে নাকে ঢুকে যাবে আর সেই লোকটির নি;শ্বাস নিতে কষ্ট হবে, হাঁচি, কাশি তো হবেই ।

কিন্তু অভয়ঙ্করবাবু এই ব্রিফকেসের ভেতরে কি রাখা আছে তা' রুদ্র বা গোপাল বাবু কাউকে জানাননি।

যথাসময়ে হাসপাতালে গেলেন ওঁরা তিনজন। একে একে তিনজনই আরণ্যক বসুরায়কে দেখে এলেন। এখন অনেকটাই সুস্থ; বিছানায় বসতে বা পাশ ফিরে শুতে পারছেন । শুধু এখনও কথা বলতে গেলে জিভ আড়ষ্ট হয়ে আসছে ।

অভয়ঙ্করবাবু নিজের পরিচয় দিলেন। আরণ্যক জোড় হাত করে নমস্কার জানালেন । 

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - আমরা কয়েকদিন থাকছি। রোজ একবার করে এসে দেখে যাব । আর বড় কথা হল আপনি ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যাবেন ।

স্পেশ্যাল কেবিন থেকে বেরিয়ে ওঁরা রওনা দিলেন শাপুরজী পালনজীর নবনির্মিত আবাসনের দিকে । বাস স্ট্যাণ্ডে গিয়ে গাড়ি দাঁড়াল। গোপালকৃষ্ণ বাবুকে ব্রিফকেস দিয়ে অভয়ঙ্করবাবু বললেন - এটা নিয়ে ওই যে দেখছেন এসি-১২ বাসটা দাঁড়িয়ে আছে ; আপনি ধীরে ধীরে ওখানে যেতে থাকুন । আমরা গাড়িতে বসে আপনাকে লক্ষ্য রাখছি ।

গোপালকৃষ্ণ বাবু সভয়ে বললেন - কিছু হবে না তো ! দুষ্কৃতি তো, যদি গান স্যালুট দেয় ?

রুদ্র বলল - আপনার যদি ভয় করছে; আমাকে দিন, আমি যাচ্ছি ।

অভয়ঙ্করবাবু বাধা দিয়ে বললেন - না রুদ্র ! ওনাকেই যেতে হবে । সেদিন ফোন নাম্বারটা ওকে উনিই দিয়েছিলেন । আর ফোনে ওনাকেই টাকা নিয়ে যেতে বলেছে। সুতরাং এখন আর কোন রিস্ক নেওয়া যাবে না ।

রুদ্র বলল - সত্যি সত্যি যদি গুলি করে দেয় !

- মিছেই ভয় পাচ্ছ । এখন ওর চোখে দশলাখী স্বপ্ন। অযথা গুলি ছুঁড়তে যাবে না।

আবাসনে প্রচুর ফ্ল্যাট আছে। প্রবেশ পথে প্রাইভেট সিকিউরিটি বসানো আছে। আর তার বাইরে এই বাস স্ট্যাণ্ড । চটের বস্তা , ত্রিপল টাঙিয়ে সকাল থেকে বিকেল পর্য্যন্ত শাক সবজি, মাছ মাংসের দোকান খোলা থাকে । কিন্তু সন্ধ্যে নামার আগেই সবাই যে যার বাড়ি ফিরে যায় ।

এই জন্যই দুষ্কৃতি সাতটার মধ্যে আসতে বলেছে। ওই এক প্রকার ফাঁকা মাঠে গোল দেবার মত আর কি !

গোপাল বাবু একপা এঅপা করে এগোচ্ছেন; চারিদিক দেখে নিয়ে আবার ধীরে ধীরে হাঁটছেন। একটা বাসের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিল লোকটা। 

একটা খেলনা পিস্তল ধরে গোপাল বাবুকে নির্দেশ দিলেন ওর দিকে যেতে । গোপাল বাবুর তখনকার অবস্থা বর্ণনীয় নয় । একজন জাঁদরেল উকিল যে এত ভীতু হতে পারেন; নিজের চোখে তাঁর এই দশা না দেখলে কেউ বিশ্বাস করতে চাইবে না ।

ছেলেটির কাছে যেতেই গোপাল বাবুর হাত থেকে ছিনিয়ে নিল ব্রিফকেসটা । তারপর পিছু ফিরে চলতে যাবে গোপাল বাবু কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন - খুলে দেখে নাও বাবা। পুরো দশ লাখ রাখা আছে ।

- তা তো দেখতেই হবে । নইলে কি জানি ইট কাঠও তো ঢুকিয়ে রাখতে পারেন ।

অভয়ঙ্করবাবু এবং রুদ্র ওর উল্টোদিকে বাসটির কাছে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনছিলেন এবং ওকে ফলো করছিলেন ।

ছেলেটি মনের আনন্দে ঝপ করে ব্রিফকেসটা খুলতেঈ হাপরের হাওয়া বেরিয়ে সালফার ব্লিচিং এবং ময়দার গুঁড়ো দমকা হাওয়ার মত উড়িয়ে দিল। ছেলেটির চোখে মুখে নাকে সেই গুঁড়ো ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঢুকে গেলৎ। হাঁচি, কাশি, শ্বাসকষ্ট নিয়ে ছেলেটা ওখানেই পড়ে গেল।

আর তখনই রুদ্র , অভয়ঙ্করবাবু ও গোপালবাবু তিনজনে মিলে চ্যাঙদোলা করে ওকে ওদের গাড়িতে তুলে নিলেন। নিকটবর্তী ওহিও হাসপাতালে এনে ইমার্জেন্সিতে শুশ্রূষা করিয়ে আবার গাড়িতে এনে তুললেন । তারপর তার হাত পা মুখ বেঁধে রেখে সোজা থানায় গিয়ে উঠলেন ।

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসামী সমেত ডায়েরী নিলেন। অর্ডিও রেকর্ডগুলো হস্তান্তর করলেন অভয়ঙ্কর বাবু । সেইসঙ্গে প্রায় পঁচিশ বছর আগেকার ঘটনার একটি তৎকালীন আইনি অনুলিপিও জমা দিলেন ।

- দেখবেন স্যার , এই লোকটির সঙ্গে অনন্তমোহন সরখেলের সম্পর্কটা খতিয়ে দেখবেন । আমাদের তো কিছু বলতে চাইল না । এবার আপনারা যদি কিছু বের করতে পারেন । তবে আমার মনে হচ্ছে ছেলেটি ওই অনন্তমোহনেরই ।

থানার আই সি আসামীকে হেপাজতে নিলেন ঠিকই কিন্তু পঁচিশ বছর আগেকার কেস সম্বন্ধে টুঁ শব্দটি করলেন না ।

গোপাল বাবুরা ফিরে এলেন বাড়িতে। আর রুদ্র চলে গেল হাসপাতালে ।

অভয়ঙ্করবাবু বললেন - বুঝলেন বেয়াই মশাই ! ব্লকড নাম্বার থেকে বারবার ফোন আসার অর্থ একটাই। যে ফোন করছে ; ভালো মন্দ যাই হোক, তার একটা কোন উদ্দেশ্য থাকবেই । আপনারা ওর উদ্দেশ্য বোঝার চেষ্টা করেননি । উটকো ঝামেলায় জড়াতে চাননি । কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হয় ।

গোপালকৃষ্ণ বাবু বললেন - একদিক দিয়ে ঠিকই বলেছেন । স্বার্থান্বেষী জনের বিশেষত দুষ্কৃতিদের এ ভাবে জব্দ করা যায় না । ওরা প্রয়োজনে অন্য উপায় ঠিক বের করে নেয় । দুর্বৃত্তের ছলের অভাব নেই ।

- যাক্ অরবিন্দ সরখেল এখন পুলিশের জিম্মায় । আশা 

করি ব্যাপারটার এখানেই সমাপ্তি হয়ে গেল ।

অভয়ঙ্করবাবু বেয়াইকে আশ্বস্ত করলেন ।

ললন্তিকা সেন অরবিন্দের পুলিশি হেফাজতের কথা জানতে পারল পুলিশের কাছ থেকে । জেরায় নাকি বারবার ওর নামটাই বলেছে । 

আই সি বললেন - ছেলেটির ফোনবুকে আপনার নাম্বার পেয়েছি এবং এই নাম্বারে সে যে অনেকবার কথা বলেছে তার কললিস্টও বের করে নিয়েছি । আপনাকে কাল সকাল দশটায় থানিয় হাজিরা দিতে হবে । তা না হলে পুলিশ আপনার নামে ওয়ারেন্ট ইস্যু করবে ।

ললন্তিকা ফোনের অপর প্রান্ত থেকে বলল - দেখুন অফিসার ! আমি লেখালেখি করি । কিছু বইপত্রও ছাপা হয়েছে । সেই সুত্রে অনেকেই আমাকে ফোন করেন । 

- ও তাহলে আপনি বলতে চাইছেন আপনি ওকে চেনেন না ?

- এক্জাক্টলি তা' নয় । চিনতেও পারি।

এবার অফিসারটি বললেন - আপনি কি ওর স্ত্রী ?

ললন্তিকা বলল - কি যে বলেন স্যার ! আমি এখনও অবিবাহিতা ।

- আই সি । কেস তো দেখছি দারুন ইন্টারেস্টিং। ঠিক আছে কাল সকাল দশটায় আপনি আসছেন আমি ধরে নিচ্ছি ; তখন এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। 

ললন্তিকা ' গুড নাইট স্যার ' বলতে বলতে অফিসারটি ফোন কেটে দিলেন ।

ভীষঙ বিচলিত হয়ে পড়ল ললন্তিকা । এই পরিস্থিতিতে অরবিন্দ কেন যে বোকার মত এমন কাজ করে বসল!

অর্থের লালসা তারও তো আছে ; তাই বলে এ ভাবে কেউ নিজের বিপদ ডেকে আনে ? এখন তো দেখছি ললন্তিকা নিজেও অকারণে ফেঁসে গেল । রক্ষাকবচ নিজেই তো এখন ধরাশায়ী হয়ে পরিণামের দিকে এগিয়ে চলেছে। কি হবে এখন ?

ললন্তিকা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলল থানায় এটেণ্ড করবে না । প্রয়োজনে সে অন্য কোথাও গা ঢাকা দিয়ে থাকবে । এরপরও কলকাতা তার পক্ষে মোটেও নিরাপদ জায়গা নয় । ও ঠিক করল চোরাপথে বাংলাদেশে চলে যাবে । সেই মত আতাউর কামাল নামে এক বাংলাদেশী পরিচিত জনকে ফোন করতে পি সি ওতে গেল । 

( ক্রমশ )



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror