Sanghamitra Roychowdhury

Comedy Drama Others

3.4  

Sanghamitra Roychowdhury

Comedy Drama Others

লকডাউনের রোজনামচা ২

লকডাউনের রোজনামচা ২

2 mins
1.5K


ডিয়ার ডায়েরি, ২৬শে মার্চ, ২০২০... লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে "আমার খাদ্যরসিক কন্যা" ----------------------------------------------------------------------


আমার একমাত্র কন্যা খাওয়া দাওয়া নিয়ে এতটাই খুঁতখুঁতে এবং এত পরিমাণে তার বাছবিচার যে আমি একদম তটস্থ হয়ে থাকি। সকালে ঘুম ভাঙলেই চোখ মেলেই আমার মনে হয়, কি রান্না করবো সকালের জলখাবারের জন্য, কি করবো দুপুরের খাওয়ার জন্য, কি নতুন মুখরোচক করবো সান্ধ্য টুকিটাকিতে আর কিইবা করবো রাতের খাবার। নাভিশ্বাস ওঠা দমবন্ধ অবস্থা হয় আমার এই নিত্যনতুন মেন্যু ঠিক করতে। তারপর তা আবার রান্নার লোককে বুঝিয়ে সুঝিয়ে তৈরি করানো। অবশ্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কন্যার মতো কিছু একটা আমি নিজেই আলাদা করে বানিয়ে নিই। তাও আবার রিপিট চলবে না। কান মাথা ভোঁ ভোঁ অবস্থা হয় একেকদিন। তবুও করেই দিই, একটামাত্র মেয়ে! তাছাড়া বাড়ীতে করে না দিলে বাইরে ফাস্টফুড খেতে ছুটবে। ঐ কারণেই ঝকমারিটা সহ্য করি। আমার কন্যারত্ন গ্রীষ্মকালীন সবজিগুলো... যেমন পটল, ঝিঙে, এঁচোড়, করলা, মিষ্টি কুমড়ো ইত্যাদি ভয়ানক অপছন্দ করে। শুধু আলু সেদ্ধ ঘি দিয়ে ভাত খাবে, তবু ঐ সব সবজি খাবে না। কে রোজ রোজ অশান্তি করবে খেতে বসে? সুতরাং, কন্যার বাবাও বেশি দাম দিয়ে হলেও বাজার থেকে খুঁজেপেতে কপি, গাজর, ক্যাপসিকাম, কড়াইশুঁটি, পালংশাক ইত্যাদি কিনে আনতে চেষ্টা করে। কিন্তু লকডাউন ঘোষণা হওয়ার আগে কন্যার বাবা বেচারা বাজারপত্তর করার তেমন সুযোগ পায়নি। বাইশ তারিখ চোদ্দো ঘন্টার জনতা কারফিউ সামলে, তেইশ তারিখ বিকেল চারটের মধ্যে জোগাড় করেছে সামান্য কিছু সবজি... যেমন আলু, পটল, ঝিঙে, পেঁয়াজ, কাঁচালঙ্কা, টমেটো আর জাম্বো সাইজের এক মিষ্টি কুমড়ো। মাত্র তেরোটি ডিম আর সাড়ে সাতশো মাছ। বাজার বসলেও ঘন্টা খানেকের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে। বিরাট সমস্যা। প্রথমে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের কিছু শহর লকডাউন ছিলো একত্রিশে মার্চ অবধি। তার মধ্যেই আমাদের শহর তো ছিলোই, তার ওপরে চব্বিশেই ঘোষণা হলো আরো কঠোরভাবে গোটা ভারত জুড়ে লকডাউন... টানা একুশ দিনের। কন্যার বাবার তো মাথায় হাত, "মেয়ে খাবে কি?" সারারাত ভেবে আবিষ্কার করলাম, মিষ্টি কুমড়োর ভর্তা আর পটল ও পোস্তবাটার পাতুরি... বুক ঢিপঢিপ করছে দুপুরের খাবার বেড়ে দিয়ে। পরীক্ষা দিয়েও জীবনে এমন টেনশন হয়নি কখনো। তা খেতে বসে কন্যা আমার প্রথমে আঙুলে করে একটু জিভে ছোঁয়ালো। তারপর গরম ধোঁয়া ওড়া ভাত দিয়ে ঐ দুটি সবজি মেখে খেয়ে নিলো অতি তৃপ্তি সহকারে। তারপর হাসিমুখে বললো, "এবার থেকে গাজরটা এরম করেই রেঁধো, আর ভাই দ্য ওয়ে এই সবজিটাও বেশ ভালোই লাগলো। ভাত দিয়ে তো ভালোই লাগলো, তবে গরম গরম পরোটা দিয়ে আরো ভালো লাগবে।" কন্যার বাবা কিছু একটা বলতে গিয়ে নিজেই থেমে গেলো। আর আমি? পাশ, পরীক্ষায় শত শতাংশ নিয়ে পাশ। রান্নাঘর গুছোতে গুছোতে একপাক নেচে নিলাম, "মেয়ে কুমড়ো আর পটল খেয়ে নিয়েছে দিব্যি, বুঝতেই পারেনি কি খেলো! হা হা হা হা....!"


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy