লকডাউন পরের পর্ব
লকডাউন পরের পর্ব
আজ ভোর চারটে থেকে একটু পর পর ঘুম ভেঙে যাচ্ছে। ঘুমের আলস্য কাটিয়ে সকা সাড়ে ছটার ঘুম থেকে উঠেই চটপট রেডি হয়ে চললাম ঔষুধের দোকানে । মায়প্রেশারের ঔষুধ শেষ হয়ে গেছে। তাই সকাল সকাল চলেছি অ্যাপোলো ফার্মেসি। গেটের বাইরে বেড়িয়ে আজ চেনা রাস্তা অচেনা লাগলো। লকডাউন না থাকলে জায়গাটা একদম অন্য রকম থাকে।বিডি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের জন্য পুলকারও অটোর ভিড়ে রাস্তা দিয়ে হাঁটাই দায় হয়। আজ রাস্তায় লোকজন নেই বললেই চলে। ফ্লাইওভারের তলায় ট্যাক্সি স্ট্যান্ড ফাঁকা। প্রতাপগড়ের রাস্তায় কুকুর শুয়ে আছে। রাস্তায় খুবই কম লোক দেখা যাচ্ছে ।ক্যারাটে মাঠ চুপচাপ দাঁড়িয়ে। সপ্তাহের এক- দুদিন বাদে রোজই ছেলেমেয়েদের হৈ-হুল্লোরে মাঠটা অভ্যস্ত । আজ মাঠটা কেমন বিষন্ন লাগছে। অথবা আমার চোখের মনখারাপ মাখা দৃষ্টি দিয়ে দেখছি বলে সব কিছুই বিষন্ন লাগছে। অ্যাপোলো ফার্মেসির সামনে এসে দেখি আটজন লোক দূরত্ব বজায় রেখে মুখে মাস্ক লাগিয়ে দাঁড়িয়ে। আমিও লাইনে দাঁড়াই। বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে ঔষুধ নিয়ে বাড়ির পথে পা বাড়াই। রাস্তায় ফিরতে ফিরতে ভাবি, এই পথে ভিড়ের জন্য কতদিন কত বিরক্ত হয়েছি । আজ মনে হচ্ছে এই শ্মশানের নিঃস্তব্ধতা থেকে সেই ভিড় বেশী ভালো ছিল।
বাড়ি ফিরে সোজা ডেটল সহযোগে স্নান সারি। জামা কাপড় থেকে চুলের গাটার ডেটলের ছোঁয়ায় পরিশুদ্ধ করি। তারপর চায়ের কাপ হাতে নিয়ে ব্যালকনিতে খানিকক্ষণ দাঁড়াই। আজ বিডি স্কুলের মাঠে কত পাখি। দূষণ কমছে । এক দল সাদা বক স্কুলের পাঁচিলে উড়ে এসে বসল। মন ভালো হয়ে গেল। চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে দৈনন্দিন কাজে ফিরে যাই। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে চলে । জীবনের খাতায় আরেকদিন শেষ হয়।