লকডাউন (নবম পর্ব)
লকডাউন (নবম পর্ব)


আবার একটা নতুন দিন। মেয়ে ঘুমোচ্ছে। গতকাল অনেক রাত অব্ধি বাড়ির সবাই মিলে প্রথমে লুডো এবং তারপর চোর-পুলিশ,খেলা চলেছে।অনেকদিন আগে নিয়মিত এই খেলা হত। যখন আসানসোলের বাড়িতে মেয়েকে নিয়ে হঠাৎ পৌঁছে যেতাম। সবাই মিলে লুডো অথবা চোর-পুলিশ খেলা চলত। আমার মা নাতনীকে ছাদে চক দিয়ে দাগ কেটে এক্কা দোক্কা খেলা শিখিয়েছিলেন। আমাদের আসানসোলের বাড়িটা আজ আর আমাদের নেই। বিক্রি হয়ে গেছে। বাবা- মা কলকাতায় থাকেন। মেয়ে আগে প্রায় দিদিয়া ও দাদাইয়ের (মা-বাবা) কাছে খেলার বায়না জুড়ত। সব কাজ ফেলে মা-বাবা আদরের নাতনীর সঙ্গে খেলায় মেতে উঠতেন। তারপর পড়াশুনোর চাপ বাড়লো। হাতের মুঠোয় চলমান দূরভাষের ব্যবহার শিখল। সুযোগ পেলেই মেয়ে মা অথবা বাবার ফোন নিয়ে মেতে ওঠে লকডাউনের সময় আবার মেতে উঠেছে লুডো অথবা চোর- পুলিশ খেলায়। আবার কখনো মা অথবা মাম্মামের কাছে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় অথবা উপেন্দ্রকিশোরের গল্প শোনে মন দিয়ে। বৈচিত্র্যহীন দিনে বৈচিত্র্য আনার কী আকুল চেষ্টা।
তবে খুব তাড়াতাড়ি স্কুলের পড়াশুনো শুরু হয়ে যাবে। তখন সময় হুহু করে ছুটবে। ঘরের মধ্যে বসেই মোবাইলে পড়াশুনো চলবে। এক অভিনব ক্লাস রুম। সবাই নিজের বাড়িতে বসেই ক্লাস করবে। স্কুলের ইট- সিমেন্টের দেওয়ালগুলো বাচ্ছাদের পরিচিত কিচিরমিচির শুনতে না পেয়ে হয়ত দীর্ঘশ্বাস ফেলবে। নতুন ক্লাস, নতুন বন্ধু, নতুন বইয়ের গন্ধের বদলে বইয়ের পাতার স্কিনশর্ট তুলে চলবে অনলাইনে পড়াশুনো।আমাদের স্বাভাবিক অভ্যস্ত জীবনের গতিপথের পরিবর্তন হচ্ছে।