STORYMIRROR

Rima Goswami

Comedy Romance Inspirational

3  

Rima Goswami

Comedy Romance Inspirational

লালকেল্লায় লিটটি চোখা

লালকেল্লায় লিটটি চোখা

6 mins
239


মায়ের গলার স্বর চড়ছে এবার । বাবার দিকে এবার আক্রমণ চালায় মা । চিৎকার করে বলতে লাগে "ছেলে মেয়েকে অতুপাতু করে মানুষ করার ঠেলা বোঝো এবার ? বাইরে মেলামেশা করতে মানা করেছো এদের তারপরে একা একা বাইরে বেরোতে দাওনি । এরা তো আসলে মানুষ চিনতেই শেখেনি । "বাবা নির্বিকার বসে আছে , বাবা আসলে জানে কিছু বলা মানে নতুন ঝামেলার সৃষ্টি । মা এরকমই ছিলো ! না একদমই ছিলো না। মা তো বাবার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের দুই ভাইবোনকে আদরে বড় করেছিল । আমাদের সব ধরনের শিক্ষা ওরা দুজন মিলে দিয়েছে আজীবন । সেটা নিজের কাজ নিজে করা হোক , হাইজিন মেন্টেন হোক বা সেক্স এডুকেশন । তারপর আজ কেন মা এমন হয়ে গেল । ডাক্তার কাকু বলেছেন সাময়িক ডিপ্রেশন ধীরে ধীরে ঠিক হয়েই যাবে । তবু মন মানে না , মেয়ে হয়ে খারাপ লাগে মায়ের জন্য । মা হয়ত আমার বিয়ে ভেঙে যাওয়াতেই ডিপ্রেশনে চলে গেল । এই তো সেদিন ... কথার মাঝেই বাবাকে একটা ফুলদানি ছুঁড়ে মারলো । বাবা ভাগ্যিস সরে যায় ব্যাপারটা আন্দাজ করে আগেই । না হলে সেদিন একটা রক্তারক্তি কান্ড হতো । আমি মউপর্ণা সেনশর্মা , পেশায় একজন সোশ্যাল ওয়ার্কার । বেশ কাটছিল জীবন , মা বারবার বিয়ের পিঁড়িতে বসতে বললেও এড়িয়ে যেতাম । তারপর একটা সম্বন্ধ এলো গরিয়ার মাসি মারফত । ছেলের নাম সৌম্য রায় , পেশায় একজন আর্কিওলজিস্ট । সৌমকান্তি সৌমকে দেখেই বেশ ভালো লেগে যায় আমার । ইতিহাসের মানুষ , বেশ রাজা রাজা ভাব । আমার বিয়ে ঠিক হয় সৌম্য রায়ের সঙ্গে । তারপর বেশ কয়েকদিন হওয়ায় উড়লাম এদিক ওদিক । ডেট ও করেছি কয়েকবার , এখন অবশ্য সেসব কথা ভাবলে গা সুদ্ধ ঘিনঘিন করে ওঠে । মরুক গে , আমি কোন গামছা নাকি যে আমাকে কেউ নিজের শরীরে জড়ালে আর কেউ আমাকে জড়াতে পারবে না । শরীর নিয়ে ছুতমার্গ নেই আমার তবে একটা ঘেন্না ভাব আসে যখন সৌমকান্তি সৌম্যর আসল চেহারার কথা মনে পড়ে যায় ।


বিয়ের কেনাকাটা যখন প্রায় শেষ , নিমন্ত্রণ করাও শেষ .. একটা উড়ো ফোন এসে সবটা ঘেঁটে দিলো । শপিং থেকে জাস্ট ভাইকে নিয়ে ফিরে এসেছি আর মা বললো একটা ফোন এসেছিল আমাকে কেউ খুঁজছিল । আমি ব্যাপারটা গুরুত্ব না দিয়ে বললাম যার দরকার আবার ফোন করে নেবে খন । নিজের নতুন জিনিসপত্রর গাদায় আর পাঁচটা মেয়ের মতনই আমিও হারিয়ে গেলাম । তাল কাটলো আবার সন্ধ্যায় , উড়ো ফোনটা আবার এলো । ফোনের ওপারে একটি মহিলা কণ্ঠ । সে জানালো নাম বা স্থান গোপন রেখে একটি তথ্য এই আমাদে দিতে চায় , যা কিনা আমার জন্য উপকারী । আমি তেমন আগ্রহ না দেখিয়ে বললাম বলতে পারেন সেই স্বাস্থ্যকর তথ্য । মহিলা কন্ঠ বললো , বিয়েটা ভেঙে দিতে হবে । সৌম্য নাকি এক সন্তানের পিতা । সেই শিশুর ভবিষ্যত ভেবে আমাকে বিয়ে থেকে পিছিয়ে আসতেই হবে । আমি প্রতিপক্ষকে প্রশ্ন করলাম , আপনি কি সৌম্যর স্ত্রী ? মহিলা কন্ঠ সৌম্যর স্ত্রী হবার অস্বীকার করলো সঙ্গে এও জানালো সৌম্য অবিবাহিত । আমি বিরক্ত হলাম এবার । বিয়ের কয়েকদিন আর বাকি , এর মধ্যে এই ধরণের সস্তার নাটক বেশ বিরক্তিকর । স্বভাব বিরুদ্ধে গিয়ে বেশ ঝাঁঝিয়ে বললাম সৌম্য কি বিয়ে না করে , লিভ ইনে না গিয়েই সন্তানের পিতা হয়ে গেল । ওই পৌরাণিক যুগের কুন্তীর মতন ? মহিলা জানালো সৌম্য বিবাহিত না , কোন মহিলার সঙ্গে সম্পর্কে আছে তাও না । তবুও সৌম্য এক সন্তানের পিতা , আর এই মুহূর্তে নাকি আমার মানে পাত্রীর রূপের মোহে সেসব ভুলে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে আকুল । অবাক হয়ে যাচ্ছি তখন , প্রযুক্তির ব্যবহার করে ফোন মারফত এটা ষড়যন্ত্র নাকি ঠাট্টা বুঝতে পারছি না ? সৌম্যর সঙ্গে ততদিনে বেশ ঘনিষ্ঠ হয়ে গেছি ওকে অবিশ্বাস্ করতে মন চায় না । তবুও দৃঢ় হয়ে বললাম দেখা করো তবে । মহিলা কন্ঠ প্রথমে রাজি না হলেও , ওকে রাজি হতেই হতো ।


আমরা পার্ক সার্কাসের একটা হোটেলে মিট করবো স্থির করলাম ।বেশ কিছুক্ষণ বসে যখন মেয়েটি এলো না ব্যাপারটা একটা নিছক মজা বলে মনে হলো । বেড়িয়ে আসার জন্য পা দুটো বাড়িয়ে দেবো তখনই কোথা থেকে উদয় হলেন সেই রহস্যময় নারী । মহিলাকে চেনার কথা আমার নয় তবুও একজন ভালো পর্যবেক্ষক হওয়ার কারণে মহিলার অস্বস্তিকর হাবভাব নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ানোতেই আমি বুঝে যাই , সেই মহিলা কণ্ঠের মালিক এই মহিলা । আমি আশা করেছিলাম কোন মেয়ে হবে তবে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মহিলাকে মেয়ে বলা যায় না । বয়স আন্দাজ করলাম বছর পঁয়ত্রিশ বা তার বেশিই হবে । ব্যাপারটা একদমই বোধগম্য হচ্ছিল না । মহিলা সামনের চেয়ারটা টেনে বসলেন এবং নিজের পরিচয় দিলেন । উনি রুবেল রায় , সৌম্যর বৌদি হন । সৌম্যর সৎ দাদা শৌর্যর স্ত্রী রুবেল । মেজর শৌর্য বিয়ের পর পরই দেশের কাজে সিয়াচেন চলে যান । ওখানেই শৌর্য বীরগতি লাভ করেন । শৌর্য চলে গেলেও রুবেল শশুর বাড়ীতেই থেকে যায় । তখন থেকেই দেওর সৌম্যর সঙ্গে ওর একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে । সৌম্য রুবেলকে কথা দেয় , সে বৌদি রুবেল কেই বিয়ে করবে । তারপর একদিন রুবেল সন্তানসম্ভবা জানতে পেরে সৌম্যর মা পুরো ব্যাপারটা বুঝতে পেরে রুবেলকে তাড়িয়ে দেন বাড়ি থেকে ।


সৌম্য নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে । তবে রুবেলের সঙ্গে সম্পর্ক সে রেখেই যায় । সন্তান জন্ম নেবার পর ও সৌম্য রুবেলের কাছে আসত এবং তাকে এখনো প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায় যে সৌম্য তাকেই বিয়ে করবে । এখন তার মত পাল্টে গেছে আর তার রুবেলকে ভালো লাগছে না । তার এখন আসক্তির বিষয় মউপর্ণা সেনশর্মা । নিজেকে সামলে আমি প্রমান চাইলে রুবেল সৌম্য সম্পর্কে সেইসব কথা অনায়াসে বলে গেল যা তার একান্তই ব্যক্তিগত । রুবেলকে কথা দিয়ে এলাম এ বিয়ে হচ্ছে না । সেই গল্প মা শুনে থেকে ডিপ্রেশনে ভুগছে তার উপরে সৌম্য তার আসল রং দেখাতে শুরু করেছে । বিয়ে ক্যানসেল করছি শুনে তরপে ওঠে সৌম্য । কারণ জানতে চাইলে রুবেলের কথা বলি । সৌম্য বুঝে যায় সব জেনে গেছি আমি তাই এবার সৌম্য তার অসৌম্য রূপ সামনে নিয়ে আসে । আমাদের ধমকি দিচ্ছে বিয়ে না হলে ও আমাদের দেখে নেবে । বিয়ের কয়েকদিন আগে এভাবে বিয়ে ভাঙলে নাকি তার মান প্রেস্টিজ চলে যাবে ।


সৌম্যর কাছে আমি ভদ্র আচরণ আশা করিনি কারণ যে নিজের বৌদিকে মিথ্যাচার করে সম্ভোগ করে আর নিজের ঔরস জাত সন্তানকে সমাজের সামনে অস্বীকার করে তাকে কি আদতেও মানুষ বলা যায় ? মা এদিকে যত দিন এগিয়ে আসছে বিয়ের ততই ডিপ্রেশনে চলে যাচ্ছে । কিছুই যখন ভালো লাগছে না তখন গুগুল সার্চ করতে করতে একটা মজাদার ট্যুরের পরিকল্পনা মাথায় এলো । সপরিবারে বেরিয়ে এলাম গন্তব্য দিল্লি । ট্রেনে উঠেই দেখলাম মা বেশ ভালো আছে । চিন্তা , একঘেয়েমি পিছনে ফেলে মা বেশ চনমনে । এরই মধ্যে বারবার ফোন করেই যাচ্ছে অসৌম্য , আমি ধরিনি । দিল্লি ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি , এলাম লালকেল্লা দেখতে । বেশ কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরে আমরা বাইরে এসে দেখলাম কাছেই একটা লিটটি চোখার ঠ্যালা । খিদে পেয়েছে দমে , মা বাবা বললো তাদের দাঁতের জোর নেই তারা খাবে না । আমি ভাই গেলাম লিটটি চোখার স্বাদ নিতে । লিটটি খেতে খেতে ভাই খোঁচা দিলো , আমি খাবার থেকে মনোযোগ সরিয়ে সামনে দেখলাম । আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সম্পদ । অনেক দিন যোগাযোগ নেই তবুও সকলেই একে অপরকে চিনতে পেরেছি ।শুনলাম সম্পদ লাল কেল্লার কাছেই ডিউটি করে,ও দিল্লি পুলিশে আছে । এখানে লিটটি চোখা খেতে এসেছিল ডিউটির মাঝে । ব্যাস তারপর আর কি লাল কেল্লার লিটটি চোখা খেয়ে সম্পদকে ফিরে পেলাম ।


সম্পদ আর আমি যদি স্কুল লাইফে সাইন্স আর কমার্সের জন্য আলাদা না হয়ে যেতাম তা হলে হয়ত আমার জীবনে অসৌম্য আসতই না । পরে হোটেলে এসে আমার কাছে সম্পদ সব শুনে আমাকে বললো মায়ের মনটা বিয়ে ভেঙে যাওয়াতেই খারাপ তাই যদি আমার আপত্তি না থাকে নির্ধারিত দিনই আমরা বিয়ে করতে পারি । সম্পদকে না করার কোন কারণ নেই তবু জিজ্ঞাসা করলাম এতদিন সে বিয়ে করেনি কেন ? সম্পদ লাজুক লাজুক হেসে বলল মউপর্ণা সেনশর্মা ছাড়া কোন মেয়ে তার পছন্দ হয়নি । আমি কটমট করে তাকাতেই ও তাড়াতাড়ি বলে উঠলো , " লাল কেল্লার লিটটি চোখার দিব্যি । "


মা ও হেসে উঠলো ওর কথা শুনে , আরে বাঙালি আবার কবে থেকে মা কালীর দিব্যি ছেড়ে লিটটি চোখার দিব্যি দিতে শুরু করলো ?



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy