Arghya Sankar Mondal

Abstract Romance Tragedy

3  

Arghya Sankar Mondal

Abstract Romance Tragedy

"লাল কালোর রঙ্গীন জীবন"

"লাল কালোর রঙ্গীন জীবন"

29 mins
191


বাবলু দৌড়ে দৌড়ে নিয়ে এলো মাথায় করে খড়ের গাদাটা ,বাকিদের মতন তার দায়িত্ব ছিল এটা। সুভাষ বয়সে সবার থেকে বড়ো পিএইচডি করছে ইতিহাস নিয়ে , গ্রুপের সবাই দাদা বলে ডাকে । দেখে বললো বাহ্ পারফেক্ট এনেছিস এরকমি শুকনো লাগবে নেড়া পোড়ার জন্যে। বাকিরা আস্তে আস্তে আসছে কেউ শুকনো কাঠ কেউ বাকি শুক্নো কিছু কাঠগুরো আর এদিক সেদিক জিনিস আনছে, গল্প করতে করতে। বাবলু এদের মধ্যে সবচেয়ে ছোট আর ছটফটে ,দৌড়ে দৌড়ে এসেছে এই মার্চের হালকা গরমে ,তাই একটু ঘামছে সাথে হালকা হাফিয়ে গেছে ,শ্বাস নিচ্ছে জোরে জোরে। বাকিরা এসে কেউ মাথায় হালকা চাঁটি দিলো কেউ চুল টা ঘেটে দিলো ,বাবলু তুমি "ক পজেটিভ " পেয়েছো ,নাও এবারে একটু বসে যাও। 

রজত বললো আরে সুভাষদা বলছি কালকের জন্যে স্টক তুলতে হবে তো ,কয়েক পেটি খাম্বা লাগবে পুরো চিলড কিন্তু সাথে আইস বাক্স টা নিও ,সুনীল বললো ওসব তেতো জিনিস পোষাবে না আমার জন্যে বুড়ো সাধু তুলিস। 

সুভাষদা বললো আরে সব মিলিয়ে মিশিয়েই তোলা হবে ভাল্লুক ,বুড়ো সাধু ,গুলি সবগুলোই। বাইকগুলো বের কর তোরা । সবাই রেডি হচ্ছে যে যার বাইকের দিকে যাচ্ছে ,বাবলু ঘাসে বসেছিল উঠে পড়লো ,

আরে বাবলু মহারাজ তুমি কোথায় যাচ্ছ ? রজত হাতে চাবি রিং ঘোরাতে ঘোরাতে বললো। 

কেন এই তোমরা কি আনতে যাচ্ছ জিনিসপত্র সেখানে ,

ওখানে তোমার যেতে নেই বাবু ,গাল টিপে ধরে বললো রজত। 

সুভাষ দেখলো বাবলু একটু দুঃখ পেয়েছে ,কাছে এসে কাঁধে হাত রেখে বললো তোর জন্যে স্পেশাল কাজ আছে যেটা কেউ পারবে না। 

কি কাজ গো ?

বলছি তার আগে বল ,নেড়া পোড়া কেন হয়ে জানিস তো ?

না এমনি আগুন দিয়ে মজা করা হয় জানতাম দোলের আগের দিন। 

একটু হেসে সুভাষদা বললো নাহ শুধু ওটার জন্যে না কিন্তু এর পিছনে পৌরাণিক কাহিনী আছে । 

রজত বললো আরে সুভাষদা তোমার ইতিহাসের পেপার বানাবে এখন ? যাবে না নাকি ,

সুভাষ বললো হ্যান যাবো দাঁড়া পাঁচ মিনিট পরে গেলে তোর দোকান উঠে যাবে না ,আগে একে ছোট্ট করে বুঝিয়ে দি। 

হ্যান একদম অবজেক্টিভ স্টাইলে কিন্তু বেশি ডেস্ক্রিপটিভ হলে বেগতা মেপে নম্বর কমিয়ে দেব। 

সুভাষ বললো এখুনি একটা জেনারেল নলেজ ধরলে তো জলে ঝাঁপ দিবি ,মাইথোলজি টা আর ধরলমি না ওটাতে তো প্যান্ট বদলাতে হবে তাই চুপ চাপ দাঁড়া , বাকিরা বললো না সুভাষ দা ফচকের ফিচকেমী ইগনোর করো ,তুমি স্টার্ট করো। 

সবাই দাঁড়িয়ে গেলো ঘিরে ,কেউ কেউ বসলো একটু। 

বাবলু মনোযোগ দিয়ে পড়া শুনবার মতন দাঁড়িয়ে রইলো ,

সুভাষদা বাবলুর কাঁধে হাত রেখে বলতে শুরু করলো ,একটা গল্প আছে শোন্ ,হিরণ্যকাশিপু নামে একটা অসুরের একটা খুব নারায়ণ ভক্ত ধার্মিক ছেলে ছিল ,নাম ছিল প্রহ্লাদ। 

অসুররা তো শুনেছি দেবতাদের সবসময়ে উল্টোদিকে থাকে ,অসুরের ছেলে হয়ে কিকরে আবার ধার্মিক হলো ? বাবলু জিজ্ঞেস করলো। 

গুড কোয়েশ্চেন ,এটা জানতে হলে কয়েকধাপ পিছিয়ে যেতে হবে। 

হিরয়ানাক্ষ বা সংস্কৃতে উচ্চারণ Hiraṇyākṣa আর হিরণ্যকাশিপু দুই ভাই ছিল দুজনেই ডেঞ্জার ছেলে যাকে বলে। তার মধ্যে হিরণ্যাক্ষ আবার ব্রহ্মার বর পেয়েছিলো তাই বেশি ঝামেলা পাকাতো। তো একদিন সে ভূমি মানে পৃথিবীকে একেবারে নিচে পাতাল লোকের সমুদ্রে পাঠিয়ে দিয়েছিলো। 

এবার এসবে তো বিষ্ণু রেগে যায় ,তখন ব্রহ্মার বর কে কাটিয়ে ধরে দশাবতার এর তৃতীয় অবতার নিয়েছিল। 

এই যে সবসময়ে ফুট কাটা রজত ,বলতো দশাবতার এর তৃতীয় অবতার কে ছিল ?

উম দাড়াও হ্যান মনে পড়েছে পুরো বিদ্যা বালান স্টাইলে বললো "কামাল হাসান ,কামাল হাসান ,কামাল হাসান "

মারবো এক গাঁট্টা,কাল থেকে সাউথ এর সিনেমা কম দেখে একটু বই পত্তর পড়। 

কটমট করে তাকিয়ে দেখে বললো ,তৃতীয় অবতার মানে ছিল বরাহ। তো এবারে ব্রহ্মার আশীর্বাদ এর বর গুলো হতো পুরো বিশ্বনাথান আনন্দ এর দাবার চাল দেখে মনে হবে তুই জিতছিস কিন্তু বহুক্ষণ পরে বুঝবি পুরোটাই ছকে রাখা , এবার বিষ্ণু পুরো সেই সমস্ত শর্ত মেপে বুঝে লজিক্যালি পুরো মেসির মতন কাটিয়ে কাটিয়ে হিরণ্যাক্ষকে বধ করেছিল। 

এবার ,ভাই কে মেরেছে তো হিরণ্যকশিপু তো পুরো রেগে আগুন। 

রজত ফুট কাটলো আবার ,হ্যান পুরো নওয়াজ ভাই এর মতন ,"বাপকা ,দাদাকা ,ভাইকা সাবকা বদলা লেগা রে তেরা ফয়সল ".

হালকা সবাই হেসে উঠলো ,সুভাষদা বললো হ্যান আটিটুড টা ওরকমই ছিল " .

এবার শুধু রাগ হলে হবে না বদলা নিতে হলে পাওয়ার চাই ,তো হিরণ্যকাশিপু আবার ধ্যানে বসল। 

কোনো গেস কার ধ্যানে বসবে ,

পাশ থেকে পার্থ বললো এখন হলে একদম পাক্কা কুসু কুসু ষ্টার নোরা ফাতেহি হতো ,সেযুগের হলে সিওর উর্বশী ,রম্ভা বা মেনকার।

সুনীল বললো হ্যান সবাই তোর মতন নাকি ?,

বাবলু মাঝখান থেকে বললো আবার ব্রহ্মার নাকি। 

কারেক্ট ,এই সমস্ত ধ্যানে বর পাওয়ার রিকোয়েস্ট পেতে বেস্ট ক্যান্ডিডেট ছিল ব্রহ্মা। 

বাট এবারেও এক দাবি সবাইয়ের মতন অমরত্ব চাই। 

ব্রহ্মা স্যার ও পুরো এক কাট্টা , অমিতাভ বচ্চন স্টাইলে একবার যো কাহ দিয়া তো বাস কেহ দিয়া। 

অমরত্ব বাদ দিয়ে যা চাও পাবে বাট ওটি দেব না ,কবি মধুসূদন এর ভাষ্য প্রয়োগ করলে যা দাঁড়ায়ে 

 "জন্মিলে মরিতে হবে অমর কে কোথা কবে ,চিরস্থির কবে নির হায় রে জীবন নদে "

তখন বেশ কিছু জটিল শর্ত দিলো ,যেমন কেউ ভগবান সৃষ্ট জীবিত বা মৃত কোনো প্রাণী এর হত্যা করতে পারবে না ,

আবার ঘরে বা বাইরে ওর মৃত্যু হবে না ,দিনে বা রাতে মৃত্যু হবে না ,কোনো অস্ত্র দিয়েও তার মৃত্যু হবে না ,আকাশে জলে স্থলে কোথাও মৃত্যু হবে না । এতগুলো কঠিন কঠিন প্রায় অসম্ভব শর্ত দিয়েছিলো হিরিনাকাশিপু। 

তো এই বিল টা ব্রহ্মা পাস করিয়ে দিয়েছিলো ,বাস্ এখন হিরিনাকাশিপু ফুল কনফিডেন্ট ,পারলে তখনি পুরো কোট প্যান্ট গগলস পরে না বেরিয়ে পরে শত্রুদের উদ্দেশে গিয়ে বলবে ,"ডিড ইউ মিস মি ??" 

এবারে যখন এসব ধ্যান করে দাবি দাওয়া পেশ করছে ,তখন ইন্দ্র সুযোগ পেয়ে ওর বাড়িতে অসুরকুলে আক্রমণ করে দেয়। 

তখন হিরণ্যকাশিপুর স্ত্রী কায়াধু অন্তঃসত্ত্বা ছিল ,ওনার পেটে তখন প্রহ্লাদ আমাদের গল্পের মুখ্য চরিত্র । এসব যুদ্ধে অকারণে নিষ্পাপ একজন শাস্তি পাচ্ছে দেখে নারদ মুনি ওদের দুজনকে ওখান থেকে সরিয়ে নিজের আশ্রমে নিয়ে যান .

নারদ মুনি আবার আশ্রম বুঝতেই পারছিস পুরো ধার্মিক পরিবেশ আবার নারদ মুনি নিজেও সর্বক্ষণ নারায়ণ নারায়ণ মন্ত্র জপ করেন। তাতে প্রহ্লাদ গর্ভে থাকা অবস্থাতেই এসব শুনে শুনে পুরো সাব-কনসাস মাইন্ড এর মধ্যে নারায়ণ ভক্তি গেঁথে যায়। 

ব্যাস তখন থেকেই প্রহ্ললাদ বিষ্ণু ভক্ত। এবারে ভাই কে ,যে মেরেছে তার ভক্ত আবার নিজের ছেলে,তো স্বাভাবিক ভাবে খুবই রেগে থাকে হিরণ্যকাশিপু। 

সুযোগ পেলেই ওকে মেরে দেয়ার প্ল্যান করে অনেক গুলো কিন্তু কোনোকিছুতেই কোনো ক্ষতি হয় না ,ওই যে বাংলা প্রবাদবাক্য রাখে হরি মারে কে। 

এবার এরকমি একটা প্ল্যান করে ওর বোনের সাথে মিলে। 

ওর বোন হোলিকা ,ওর একটা আবার ট্যালেন্ট ছিল ,ওকে আগুন স্পর্শ করলে কিছু করতে পারবে না,ওর কাছে একটা চাদর এর মতন ছিল যেটাতে আগুন স্পর্শ করলে জ্বলবে না। 

তো এইটা নিয়ে আইডিয়া করলো প্রহ্লাদ কে সাথে নিয়ে আগুনে বসে যাবে ,তাতে ওর কিছু হবে না এদিকে প্রহল্লাদকেও মারা যাবে। 

এবারে এসব ভাবলে কি হবে ওদিকে তো বিষ্ণু আছে ,বিষ্ণুর সাথে এসব ছল চাতুরী করতে যাচ্ছে পারে নাকি। 

ভক্তের ক্ষতি কখনোই করতে দেবে না বস ,ওঁর আশীর্বাদে প্রহল্লাদের কিছু হলো না উল্টে হোলিকার জন্যে ব্যাকফায়ার করে গেলো। চাদর টা প্রহ্লাদ কেই ঘিরে ধরলো আর হোলিকা ওই আগুনে পুড়ে গেলো। 

এই হোলিকা দহন টাই আমরা পালন করি আমাদের এই চাঁচর ,নেড়া পোড়া যেমন বলিস সেটা নিয়ে। 

এবার বুঝলি তো বাবলু। 

হ্যান বুঝলাম ,কিন্তু ওই হিরণ্যকাশিপুর কি হলো শেষ অবধি। সেটা অন্য গল্প ,বিষ্ণুর আরেক অবতার এর গল্প নরসিংহ অবতার ,সেটা অন্য কোনোদিন হবে। এখন তোর একটা কাজ আছে। 

হ্যান বোলো না কি কাজ। 

তুই তো জানিস আমাদের চাঁচর টা এখানকার মধ্যে সবচেয়ে ভালো হয়ে,তাই পাশের পাড়ার ক্লাবের ছেলেগুলোর একটু হিংসে আছে। 

আমাদের হোলিকা দহন এর জিনিসগুলো ধর প্রহ্লাদ আর তুই হচ্ছিস আজকের জন্যে কৃষ্ণ। তোর ভালো নামটাও তো গোপাল ভগবানের সাথেই মিল পুরো। 

রজত বললো ও তো শুধু গোপাল না পুরো একটা "বাল -ওক" মানে বাল -গোপাল তাই আরো বেশি দায়িত্ব। বাকিরা শুনে হালকা হাস্তে লাগলো সুভাষদা ঘড়ি দেখতে দেখতে বললো যাই হোক তুই এখানে থাক যাবি না কোথাও, কাউকে ঘেঁষতে দিবি না। 

বাইক গুলো ধোঁয়া উড়িয়ে বেরিয়ে চলে গেলো ,একা বাবলু বসে রইলো। 

খানিক ক্ষণ এমনি বসে রইলো ,তারপর একটা ছোট কাঠির মতন নিয়ে খেলতে লাগলো আশপাশে জঙ্গলে ,তারপর একটা গাছের নিচে বসে গেলো একটা ছোট পাথরের টুকরো দিয়ে মাটি ঘষে ঘষে কুপাতে লাগলো। কি একটা যেন আছে একটা চকচকে। 

দূর থেকে ট্রেনের আওয়াজ আসছে মাঠের সাইড দিয়ে ট্রেনের হর্ন বাজাতে বাজাতে চলে গেলো ,বরাবরের অভ্যাসের মতন এগিয়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে ,জানে কোনো তুলনা হয়না তাও নিজেকে এই সময়টাতে পথের পাঁচালির অপুর মতন মনে হয়। ট্রেনটা আবার হর্ন বাজাতে থাকে ছেড়ে ছেড়ে শেষে একটা লম্বা টানে। .....


ট্রেনের হর্নের আওয়াজ টা শুনে অনামিকার তন্দ্রা কেটে যায় ,কাঁচের জানালাতে মাথা দিয়ে শুয়েছিল ,বাইরের দিকটায় জানালার কাছে আব্ছায়া খেলে যাচ্ছে ,দেখছে নিজের প্রতিচ্ছবি আর বাইরের প্রকৃতির ছবির তুলি গোলা জলের মিশেল। বাইরে টা দেখছে চেনা অচেনার মাঝামাঝি কোনো একটা জায়গা ,মনে হচ্ছে আগে কি এসেছে নাকি ? কে জানে সদ্য তন্দ্রাচ্ছন্ন মোহ থেকে উঠেছে বলে মনে হচ্ছে হয়তো এরকম দে যা ভূ। 

পাশে দেখলো অভিষেক মোবাইলে ব্যস্ত ,পিয়ালী আর রাহুল কানে হেড ফোন লাগিয়ে ঘুমাচ্ছে। 


ট্রেনের পাশের বগি থেকে ধীরে ধীরে শুনতে পাচ্ছে দোতারা নিয়ে ওঠা বাউলের গান, 


                       "ভূবনো মোহনো গোরা

                     কোন মণিজনার মনোহরা,

                    ওরে রাধার প্রেমে মাতোয়ারা

                চাঁদ গৌর আমার রাধার প্রেমে মাতোয়ারা,

                      ধূলায় যাই ভাই গড়াগড়ি।"


ট্রেন টা বোলপুর এর কাছে ঢুকছে , গান শুনতে শুনতে জানলার দিকে তাকিয়ে অনামিকা অন্যমনস্ক হয়ে গলার কাছের হারটা নিয়ে খেলতে লাগলো ,এতক্ষন যেটা ব্লাউসের খাঁজে গিয়ে আটকেছিলো। বাইরে হালকা পড়ন্ত বিকালের আলোটা হারের হৃদয় এর আকৃতির লকেটের হীরের উপর পড়লো চারিদিক টা হালকা আলোতে ভরে গেলো ,সেই কৃত্রিম আলোটা মনের পর্দায় পরিবর্তিত হয়ে আলোর তেজ বেড়ে গিয়ে দিনের আলোতে রূপান্তর হয়ে গেলো , সময়ের ঘড়িটা গেলো কয়েক বছর সময় পিছিয়ে। 


                                                 হর্তনের বিবি (কুইন অফ রেড হার্টস )


হ্যাপি হোলি ,পিছন থেকে এসে গালে লাল আবির লাগিয়ে দিয়ে ঘষে দিলো আর্য অনামিকার ফর্সা গালেতে। এই এই কি করছিস পুরো মেকআপ নষ্ট করে দিছিস তুই ,ধরে পিঠেতে হালকা হালকা ঘুসি মারলো অনামিকা। মোবাইল এ সেলফি ক্যামেরাতে দেখলো নিজের মুখ টা ,যা কত ভাবলাম ভালো করে ছবি তুলবো নেট এ দেব আর ঘেঁটে দিলি শালা। সাইডের পার্স থেকে ওয়াইপ বের করে মুখ টা মুছতে লাগলো। 

আর্য মুখ ভেঙ্গিয়ে অনামিকার নকল করে বললো "ভাবলাম ভালো করে ছবি তুলবো " ,সকাল থেকে সাড়ে চৌত্রিশ হাজার ছবি তোলা হলো ,ক্যামেরা টার ব্যাটারী টাও বলছে ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। 

"তুই চুপ কর এমন মার্ খাবি না "

আর মার্ খাবার জায়গা নেই ,সকাল থেকে তোর জন্যে যা খাবি খাচ্ছি ,সেই কখন ব্রেকফাস্ট করেছি খিদে পেতে পেতে খিদে টাই মরে গেছে। 

"খালি তোর খাই খাই ,সকাল বেলা কম করে হলেও ১০ খানা কচুরী খেলি রাহু কোথাকার " 

ওটা আমার জন্যে শুধু হালকা জলখাবার , আমার পাকস্থলিতে গিয়ে কোথায় হারিয়ে গেলো তারপর এতো হাঁটা হাঁটি করালী ,এখন তো ছুঁচো গুলো ক্লাসিকাল সুরে গজল গাইছে। 

চুপ কর তোর খাওয়ার জন্যে প্রভাতফেরির স্টার্টিং টা মিস হয়ে গেলো আমাদের। 

কোই আর মিস ওই তো গৃহবাসীদের দরজা খোলা হয়েছে সকাল থেকে লুপে। বেসুরো গলাতে গাইতে লাগলো "ওরে গৃহবাসী ,ওপেন ইওর ডোওওওওর " .

গালে একটা থাপ্পড়দিলো অনামিকা হালকা রেগে গেছে আঙ্গুল উঁচিয়ে বললো ,"রবি ঠাকুর কে নিয়ে একদম মজা করবি না ,ওটা একটা আলাদা ইমোশন তুই তোর রক আর বিদেশি গানে মাথা ঝাকিয়ে থাক শুধু ,যেদিন হৃদয় দিয়ে বুঝতে শিখবি সেদিন গানের লাইন গুলোর মানে অনুভব করতে পারবি " 


তখন পুরো বিশুদ্ধ সুরে ,হালকা করে গেয়ে উঠলো ,"নয়ন তোমারে পায়না দেখিতে রয়েছ নয়নে নয়নে "

অবাক করা চোখে বড়ো বড়ো চোখ পাকিয়ে ,পাজি এতক্ষন চ্যাংড়ামি করছিলিস কেন,হালকা করে কানটা মুলে দিলো। 

বাঙালি মধ্যবিত্ত পরিবারে বড়ো হলে কিছু হোক না হোক টুক টাক রবি কাকুর সাথে ইন্টারঅ্যাকশন থাকেই। 

"আবার !!!! ভদ্র ভাবে বল "

"তোকে কেউ কখনো বলেছে কি তুই রাগলে তোর নাক টা লাল লাল হয়ে যায় আর এক্সট্রা রং লাগে না গালে তে এমনিতেই আরো বেশি সুন্দরী লাগে "

"মুখ চিপে হালকা হাসি আটকে না কেউ বলেনি কারোর ওতো খেয়েদেয়ে কাজ নেই , অনেক হয়েছে তোর ,চল এখন ভালো প্রোগ্রাম হচ্ছে গিয়ে দেখি যদি জায়গা পাই " 

"ওহঃ কি কুক্ষনে বিশ্ব ভারতীর মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হলো কে জানে খাটিয়ে খাটিয়ে মেরে দিলো " , 

হ্যান সবে শুরু এখনো অনেক বাকি আছে গুরু। 

একটু এগিয়ে গেলো অনামিকা ,ক্রিম রঙ্গের সালোয়ার কামিজ টা থেকে হালকা কাঁধের কাছে এডজাস্ট করে নিলো ভিতরের অন্তর্বাসের স্ট্রাপটা । ওদিকে দেখেও মুখ টা ঘুরিয়ে নিলো আর্য হালকা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবলো ,বলা হোক না হোক আসলে তো সে জানে "হৃদয় তোমারে পায় না জানিতে হৃদয়ে রয়েছ গোপনে"। 

খানিকবাদে ফোন বাজলো হালকা জড়ানো গলায় অভিষেক বললো "কি রে তোরা কোথায় আছিস ? অনামিকা কে ফোন এ পাচ্ছি না " 

গানের আওয়াজে মনে হয় শুনতে পাচ্ছে না ,দাঁড়া দিচ্ছি গিয়ে। গিয়ে বললো এই না অভিষেক ফোন করেছে খুঁজছে তোকে ,ওহ দে। 

"তা মহারাজ এর ঘুম ভাঙলো এতক্ষনে , কত করে বললাম কালকে ওতো ড্রিঙ্কস করিস না তাও কথা শুনলে হয়ে একটাও "

"আরে বেড়াতে এসেছি একটু খাবো না নাকি ",

তাই বলে দোলের দিন শান্তিনিকেতন এর মতন জায়গায় এসেও খাবি ছি ছি । "

"শুরু হলো তোর জ্ঞানের ভান্ডার , হোলি তে ভাং একটা স্পেশাল জায়গা নেয় জানিস তো ,তোকেও বললাম খা "

"চুপ কর ,স্নান টান করে ফ্রেশ হো আমরাও ফিরছি হোটেলেই ,কুম্ভকর্ণেরও খিদে পেয়েছে বলছে গিয়ে লাঞ্চ করবো " , ফোন টা ফিরত দিয়ে দিলো আর্য কে। 


দুজনে ফিরলো হোটেলের দিকে ,হোটেলে ঢুকতে ঢুকতে দেখলো রাহুল আর পিয়ালী বসে আছে দোলনাতে, রাহুল ডাক দিলো "কি রে কলির কেষ্ট আজকে পেলি কোনো রাধাকে খুঁজে "

"আমার মতন কালোর আর কে রাধা জুটবে ভাগ্যে"

অনামিকা বলে উঠলো ,"আরে মেয়েরা এমনি লম্বা কৃষ্ণবর্ণ আর হ্যান্ডসম ছেলে পছন্দ করে , তুই চাপ নিস্ না "

আজকের দিনটার মিনিং জানিস তো ,"যশোমতী মাইয়া সে বোলে নন্দলালা ,রাধা কিউঁ গোরি মে কিউঁ কালা ,কৃষ্ণ পর্যন্ত একটু দুঃখ পেতো রং নিয়ে গানে কালো যদিও বলেছে আদতে গায়ের নীলচে রং নিয়ে ইনফেরিওর ছিল একটু " 

তখন যশোদা মা আইডিয়া দিয়েছিলো রং মাখিয়ে দিতে রাধা কে গিয়ে ,যাতে দুজনেই একই রঙের হয়ে যায় "

 

সামনে এসে রাহুল হাতজোড় করে মাথা নিচু করে বললো "জ্ঞানী মা আপনি কত জানেন ,এতো শত জ্ঞান আপনি রাখেন কোথায় ,এতো মনে হয় পাঁচ তলা মল পুরোটাই জ্ঞান ,কিছু আমাদের কেও পার্সেল করুন ",

"পিয়ালী হারালে আরেক পিয়ালী ,শ্যামলী ,মিতালি পাওয়া যায় রে পাগলা ,কিন্তু বুদ্ধি আর জ্ঞান হারালে আর পাওয়া যায় না রে শুধু পচা গোবর আর ঘুটে পাওয়া যায়।" সবাই সে শুনে হেসে উঠলো। 

হোটেলের রুমে ঢুকলো আর্য , ছেলেদের রুম টার বাথরুমে অভিষেক ঢুকেছে বললো দেরি হবে ,তাই ওদের গ্রপের মেয়েদের জন্যে বুক করা রুমে নক করলো ,বলছি একবার হাত মুখ ধোবো যাওয়া যাবে তোদের বাথরুমে ?

অনামিকা বসেছিল বিছানায় ,বললো হ্যান খালি আছে যেতে পারিস ,বাথরুমে ঢুকে চোখে মুখে জল দিয়ে ধুতে লাগলো। পাশে দেখলো হুকে কারুর একটা অন্তর্বাস ঝুলছে ,এদিক ওদিকে দেখে একটা তোয়ালে পেলো হুক টা ঢেকে দিলো কাপড় সমেত ,তারপর আবার মুখ পরিষ্কার করতে লাগলো ,এমন সময়ে দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ হলো ,এই একবার এসব ভিতরে আমার কিছু জিনিস নিতে হবে অনামিকা বললো বাইরে থেকে ,দরজা টা খুলে দিলো আর্য ,মুখেতে তখন ফেসওয়াশ লাগাচ্ছে ,অনামিকা একবার একটু ঠেলে পাশ কাটিয়ে হুকের কাছটা গেলো এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে ভাবলো তারপর তোয়ালের নিচে থেকে নিজের জামা টা নিয়ে নিলো ,নিয়ে বেরোতে যাবে সরু স্পেস খুব গা বাঁচিয়ে বেরোতে লাগলো ,তখন তার গলার লকেট টা আটকে গেলো আর্যর জামাতে ,ওহ সরি ,আর্য বলে উঠলো ,দুজনেই হাত দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টায় মুখ নিচু করলো ,মাথাটা হালকা করে ঠুকে গেলো , একে অপরের হাত টা টাচ হয়ে গেলো দুজনেই একটু সরিয়ে নিলো হাতটা ,আর্য বললো সরি দাঁড়া ,হাত দিয়ে জামার বোতামের সুতো টা ছাড়াতে লাগলো ,অনামিকার মুখটা আর্যর একদম কাছে ,দুজনের নিঃস্বাস প্রস্বাস অনুভব করতে পারছে দুজনে ,আর্য কখনো কোনো মেয়ের এতো কাছে আসেনি , হাত টাও কাঁপছে একটু। কোনো মতে ছাড়াতে পারলো। অনামিকা বললো একবার মাথা ঠুকলে শিং গজায় কিন্তু ,আর্য বললো " হাঁন ?কি ?" ও তখন অন্য জগতে ছিল প্রায় ,ঘেমেও গেছে। 

অনামিকা বললো "শিং রে শিং ,হাট্টিমাটিম টিম তাদের খাড়া দুটো শিং সেই শিং গজাবে একবার ঠুকলে"। 

আর্যর মাথা টা ধরে নিয়ে হালকা করে মাথা ঠেকিয়ে ধরলো ,দুজনে দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে খানিক্ষন। 

খেয়াল হলো বাইরের দরজার লক খোলার আওয়াজে ,পিয়ালী ঢুকছে। 

পিয়ালী দেখলো অনামিকা বেরোচ্ছে বাথরুম থেকে সাথে আর্য ,অনামিকার মুখে হালকা হাসি আর আর্যর মুখে বিষ্ময়। 

কি করছিলিস রে তোরা ,পিয়ালী আস্তে করে অনামিকা কে জিজ্ঞেস করলো ,কি আবার করবো এমনি বলে হেসে দিলো। 

হাসির শব্দ কল্লোল করে উঠলো চারিদিকে প্রকৃতির শান্ত সমুদ্রে অনাবিল ঢেউ খেলে ,আর্য দূর থেকে যেতে যেতে অনামিকার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো ,চোখের কালো মনির মধ্যে হারিয়ে হেঁটে যেতে লাগলো,কালো অন্ধকারের মধ্যে দিয়ে। 


                         


                        ********************************************************************


কালো অন্ধকারে চোখ সইয়ে নিচ্ছে একটু একটু এখন ,ওঃ বাইরে থেকে হটাৎ ঢুকেছে চোখে ধাঁধা লেগে যাচ্ছিলো। আজকে থার্টি ফার্স্ট এর রাত ,আজকে ভাবছে জানিয়ে দেবে মনের কথাটা। ঝেড়ে ঝুড়ে বাবার পুরানো কোট টা বের করেছে ,সুন্দর সাইজও হয়েছে , ব্যালকনির ছোট বাগান থেকে একটা গোলাপফুল এনেছে আজকে দেবে বলে। 


                             "মুঝে নিঁদ আয়ে যো আখরি , তুম খোয়াবো মে আতে রাহনা ,

                                            বাস ইতনা হে তুমসে কাহনা। "


                                           লাল রুইতন (রেড ডায়মন্ড) 

ঢুকতে দেখে অনামিকা দৌড়ে এলো ,ওঃ এলি এতক্ষনে খব মজা হবে আজকে ,হাতে কি রে তোর কি দেখা দেখি। 

হ্যান এই যে তোর জন্যে এনেছিলাম ,হাতে গোলাপ টা সামনে আনলো ,গোলাপ টা দেখে একটু আটকে গেলো ,ওহ তোর গাছের বুঝি দে ,মাথায় আটকে বলে ঘুরে গেলো ,গা থেকে সুন্দর গন্ধ আসছে ,এতো সুন্দর গন্ধ একমাত্র পায়ে তার ছোট বাগানে গেলে শীতের গোলাপ আর গ্রীস্মের হাস্নুহানার। ঘুরে যেতে মাথার পিছনে আটকে দিতে লাগলো ,এমন সময়ে ডিস্কো জকি গান থামিয়ে দিয়ে বলছে ,ফ্রেন্ডস একটা এনাউন্সমেন্ট ,আজকে এখানে একজন আশিক আছে ,যে আজকে নিজের হার্ট ওপেন করে পার্মানেন্টলি কাউকে দিতে চলেছে। 

চারিদিক থেকে হো ওও করে শব্দ হয় উঠলো ,

সবাই দেখছে এখন ডিজে র দিকে ,আর্যর বুক ধুকপুক করছে ওর ব্যাপারে জানলো নাকি ,ওর কথা কিভাবে বুঝলো। 

সো গাইজ ,আর দেরি না করে আমাদের লাইম লাইট ফোকাস করছি আমাদের হিরো ............


লাইট টা জাস্ট আর্যর গা ঘেঁষে বেরিয়ে গেলো ,তারপর স্থির হলো একটা ছেলের গায়ে উল্টো দিকে ঘুরে ছিল ,একটা মাইক নিয়ে ঘুরে দাঁড়ালো। 

অনামিকা আর্য দুজনেই হাঁ হয়ে গেলো ,সামনে দাঁড়িয়ে দেখলো অভিষেক। 


একটু একটু হেঁটে এগিয়ে আসছে অনামিকার দিকে ,স্পটলাইট সাথে নিয়ে ,এতো দিনের ফ্রেন্ডশিপ যার সাথে ,ঝগড়া ভালোবাসা যার সাথে ,তার জন্যে একটা প্রশ্ন ,হাটু গেড়ে সামনে বসে গেলো অনামিকার ,পকেট থেকে একটা আংটি বের করে বললো "তুমি কি আমার চিরদিনের ,সর্বক্ষণের ভ্যালেনটাইন হবে ? উইল ইউ ম্যারি মি অনামিকা ? "

অনামিকা মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল ,ওর কথা শুনে মাথা নাড়িয়ে বললো " ইয়েস ,ইয়েস,ইয়েস সব সময়ের জন্যে "গিয়ে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে লাগলো দুজনে ,অমনি ডিজে কংগ্রাটস তো নিউ এনগেজমেন্ট ক্যাপল্স বলে গান চালিয়ে দিলো হাই ভলিউমে। 

আংটি টা আঙুলে পরিয়ে দিলো ,তারপর পকেট থেকে একটা লাল ডায়মন্ড নেকলেস বের করলো ,অনামিকার গলাতে পরিয়ে দিতে লাগলো ,চুল টা খুলে দিয়ে পিঠের একপাশে করে সরিয়ে দিলো অনামিকা । লাল গোলাপটা মাটিতে পড়ে গেলো ,আজকে সত্যি লাল গোলাপের সত্যিকারের দাম বুঝতে পারছে ,একটা মৃত পাথরের সাথে জীবন্ত প্রাণের পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে। 

অনামিকার হাই হীল এর নিচে প্রথমে চিপে গেলো তারপর বাকি সবাইর নাচানাচিতে মাটিতে মিশে যেতে লাগলো । 

আর্য এসবে পুরো যেন বিদ্যুতের ঝটকা খেয়ে গেছে ,হটাৎ করে এই টা এক্সপেক্ট করে নি। 

এসব কিছু দেখে নিজেকে আড়াল করতে ওয়াশরুম চলে গেলো ,গিয়ে চোখে মুখে ভালো করে ঠান্ডা জলের ঝাপ্টা দিলো ,আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখলো চোখ টা না চাইতেই লালচে হয়ে যাচ্ছে। আরেকবার ওদের দিকে তাকিয়ে পার্টি থেকে বেরিয়ে গেলো আর্য। 

মাঝ রাত প্রায় ,দূরে কিছু জায়গায় এখনো কিছু বাজি ফাটছে আওয়াজ আসছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখলো হাঁটতে হাঁটতে , চোখে মুখে কয়েক ফোনটা বৃষ্টি পড়ছে , চোখের কোনের লালচে অংশ থেকে একটু খানি অশ্রু বেরিয়ে পথ খুঁজছিলো গালের শুস্কতার মধ্যে হারিয়ে যাবে বলে। আকাশ যেন সেটাকে হারাতে দিতে চায় না ,মেঘ থেকে ঝরে পড়ে গালের অশ্রুবিন্দু নিয়ে মাটিতে পৌঁছে দিতে চাইছে আবেগের খবর । 

পার্টিতে এখন গান বদলে গেছে ডিজে গান থেকে হালকা সুরে এর গান হচ্ছে সাথে সব কপোত কপোতীর মধ্যের উষ্ণ আলিঙ্গনে ভরা স্লো মোশন ডান্স, যাদের মধ্যে অনামিকা আর অভিষেকও আছে। 

আর্য্য ওখানে না থাকলেও আদতে মনের মধ্যে ওই গান টাই হচ্ছে ,জীবনের সিনেমা টা সেলুলয়েডের পর্দায় দু ভাগে ভাগ হয়ে গেছে পাশাপাশি ,যেন একদিকে আলিঙ্গনের স্পর্শে নতুনের ডাক প্রেমের জোয়ারে ভাসার ,অন্য দিকে শীতের ঘষা কাচের মতন ঝাপসা চোখে হৃদয় ভাঙার ছবি ,দুদিকেই একই গান যেন মিলিয়ে দিচ্ছে কখনো অনুরাগের স্পর্শ কখনো বিরহের স্পর্শ । 


                     "চাল, চাল ভে তু বান্দেয়া উস গালিয়ে, জাহাঁ কোই কিসিকো না জানে ,

                     কেয়া, রাহনা ওহান পার ,সুন্ বান্দেয়া জাহাঁ আপনে হি না পেহচানে। "


একটা ছোট চকোলেট কিনেছিলো আর্য ,পকেট থেকে বের করে রাস্তার ধারে একটা বাচ্ছা কোলে বসা ভিখারিনীর হাতে দিয়ে দিলো। ভিখারিনী টা অবাক চোখে তাকিয়ে দেখলো রাস্তা দিয়ে অন্ধকার এর মধ্যে হেটে হারিয়ে যাওয়া আর্যর দিকে ,ভিখারিনী টা অবাক চোখে চকোলেট টা দেখে ছোট্ট কামড় বসলো একটু ,তারপর খুশি হয়ে বাকি অংশটাও খেতে লাগলো আর কোলের বাচ্ছা কে পিঠ চাপড়ে দিতে লাগলো।


******************************************************************************



                                                    জ্যাক অফ ক্লাবস (চিঁড়ের গোলাম )


খাবার টা নামতে চাইছে না কোনোভাবেই ,বিয়ে বাড়িতে গিয়ে কষ্ট করে খেয়েছিলো আর্য ;মেনু অনেক কিছু ছিল হাসতে হাসতে মজা করতে করতে জোর করে অনেকটা খেয়ে নেয় ভেবেছিলো খেলে হয়তো মনটা অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া যাবে ,অনেক্ষন নিজের নরমাল ভাবটা ধরে রাখার চেষ্টা করেছিল যে মুহূর্তে দেখলো আংটি টা সিঁদুর দিয়ে অনামিকার মাথাতে ঠেকছে আর আটকাতে পারেনি নিজেকে ,গলার কাছে দলাপাকানো কান্না নিয়ে বেরিয়ে এসেছে ওখান থেকে তাড়াতাড়ি করে ,বাড়ির পথে। 

ঘরে এসে জামাকাপড় না ছেড়েই বিছানায় দু হাত ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে ,শীতের দিনেও ঘাম হচ্ছে। চোখ বন্ধ করে শুধু বিয়ের বিভিন্ন সময়ের ছবিটাই মাথায় ঘুরছে। ঘুমানোর চেষ্টা করছে পারছে না। শুধু এপাশ ওপাশ করছে , 

মনের মধ্যে ভাসছে কখনো সখনো কাটানো অন্তরঙ্গ মুহূর্ত ,শান্তিনিকেতনের সেই হোটেলের মুহূর্ত ,দোল খেলার স্মৃতি। 

কাঁদতে চাইছে কিন্তু পারছে না ,শরীরটা আর ভালো লাগছে না উঠে বাথরুমে চলে গেলো চোখ টা ভারী ভারী ,মাথা হালকা ঘুরছে কমোডের কাছে গিয়ে সব উগরে দিতে লাগলো যা খেয়েছিলো সাথে বেরিয়ে পড়ছে কিছু না পাওয়া ভালোবাসার ছবি , কিছু ভারাক্রন্ত স্মৃতি ,গলার কাছে যেটা জমাট বেঁধে ছিল। বমি হওয়ার পর চোখে মুখে জল দিলো ভালো করে ,একটু ভালো লাগছে এখন বারান্দার দরজা খুলে ফ্ল্যাটের ব্যালকনিতে চলে গেলো ,বাইরে হালকা হাওয়া চোখে মুখে লাগছে একটু ফ্রেশ ভাব। 

বারান্দা দিয়ে নিচে তাকালো একবার গগনচুম্বী অট্টালিকার চোদ্দো তোলার বারান্দা থেকে মাটির দিকে তাকালো ঝুকে ,এরকম উঁচু জায়াগতে এলে কেন এতো ইচ্ছা হয়ে লাফিয়ে যেতে ,চোখ বুজিয়ে জোরে স্বাস নিলো আর্য ,হাওয়ার মাধ্যমে মাটিতে যেন খবর ছড়িয়ে দিতে চাইলো ,



                            "তুমি আপন করে আমায় কাছে টেনে নাও ,মুক্ত করে দাও ,

                             আমার অসহায় চেতনার ঘুম ভাঙিয়ে দাও মুক্ত করে দাও "



চোখ বুজিয়ে একবার জোরে স্বাস নিতে মা বাবার মুখ টা মনে পড়লো ,ব্যালকনির রেলিং ছেড়ে বসে গেলো বারান্দাতে ,পাশের বসানো ছোট ছোট টবে ফুটে থাকা ফুল গুলো তখন মাথা নামিয়ে নীরবতা পালনে মগ্ন ,চোখ বেয়ে নিচে গড়িয়ে পড়তে লাগলো টপ টপ করে চোখের জল। সে তো কাঁদছে না ,ছেলেরা কাঁদে নাকি ? শুধু দুঃখ গুলো বাঁধে আটকাতে চায় না ,অশ্রু তো খুবই বোকা এসব সমাজের রীতি নীতি থোড়াই বোঝে ? নাকি মানে ?,শুধুই নিজের খেয়ালে বেয়ে যায় কখনো শিশিরের মতন আবার কখনো এঁকে বেঁকে বেয়ে চলা নদীর মতন। 

ওখানেই চোখ বুজিয়ে দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে শুয়ে পড়লো। 


গ্রীক দেবতা হেলিওস তার রথটা টানতে শুরু করেছে ,অন্ধকার পর্দাটা ধীরে ধীরে উন্মিলিত করে সূর্যের প্রথম কিরণ ফেলছে পৃথিবীর বুকেতে ,ঘোষণা হচ্ছে নতুন কিছু আরম্ভের ,চোখের উপর আলোর স্পর্শ আস্তে হালকা করে চেয়ে দেখলো বাইরের দিকে। উঠে পড়লো নিচে থেকে ,বাইরে শুয়ে থেকে হালকা মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। 

কে বলে গেছে জানা নেই তাও ঠিকই বলেছে ঘুম অনেক কিছুর ওষুধ কখনো শরীরের বেদনার কখনো মনের ,উঠে পড়ে একটু ফ্রেশ হয়ে হালকা করে সাউন্ড সিস্টেমে গান চালিয়ে ব্রেকফাস্ট বানাতে লাগলো। 


চিড়ে হালকা ভিজিয়ে পোহা রান্না করছে ,খেতে খেতে কফি বানানোর জন্য দুধ বসালো ,আবার এদিক ওদিক ভাবনা চিন্তা মনের মধ্যে আস্তে লাগলো ,গ্যাসের ওভেনে শব্দ হতেই তাড়াতাড়ি গিয়ে দেখলো দুধ উথলে পড়েছে। 


দুধের বাটির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে বাটি টা বদলে গেলো সময় টাও বদলে গেলো কয়েক মাস সামনে এগিয়ে ,



কংগ্রাটস ,এই তো দুধ উথলেছে সবাই হৈ হৈ করে উঠলো ,নতুন বাড়িতে গৃহপ্রবেশ করছে অনামিকা আর অভিষেক ,একই কমপ্লেক্স এ ফ্লাট আর্য যেখানে থাকে কাছাকছি। 

এতদিনে আর্য কাটিয়ে উঠেছে আগের সেই সময় টা ,রাহুল বললো আজকে রাতে বসা হোক তাহলে নাকি ,অনামিকা বললো একদম না তোরা নতুন ঘরটাকে পুরো ডাস্টবিন বানিয়ে দিবি। 

চাপ নেই এই ব্যাচেলর মালটা আছে কি করতে ওর ঘরে বসা হবে। আর্য বললো হ্যান চাপ নেই চলে আসিস সব ড্রিঙ্কস চাখনা সব নিয়ে । 


দোকানে গেলো সব , বোতল তুলছে ক্রেট ,ওদিকে অনামিকা একটা স্নাক্স পারার চেষ্টা করছে ,আর্য মজা করে প্যাকেট নিয়ে আরো উপরে করে দিলো ,আবার তোর বাঁদরামি শুরু করেছিস বলে লাফিয়ে লাফিয়ে হাত থেকে পাড়তে ট্রাই করছে ,শেষে জোরে একটা চিমটি কেটে দিলো ,বাপরে জংলী মেয়ে একটা , হালকা সরে ধাক্কা খেলো আর্য সাইডের একটা রেক থেকে কয়েকটা কৌটো পড়ে গেলো নিচে ,রাহুল কাছে ছিল ভাই তোরা কি করছিস এখানে কিছু ভাঙলে দোকানের মালিক আমাদের ঐটা মেরে দেবে পুরো। 

পিয়ালী দেখছে ওদেরকে ,অভিষেককে বললো আর কোথাও জায়গা পেলিনা শেষে এখানে ফ্লাট নিলি। 

কেন কি হয়েছে ? 

কিছু হয়নি ওই আরকি ,আর্য আর তোর ওয়াইফ একটু বেশি ক্লোস্ড কখনো সখনো মনে হয়ে। ওদের দিকে তাকিয়ে দেখতে দেখতে বললো ,দেখছে হাসছে ওরা নিজেদের মধ্যে। 

ধ্যাৎ কি যে বলিস,কতদিনের আমাদের সব ফ্রেন্ডশিপ সবাইর ,চল ব্যাগে তোল এগুলোকে। 

হ্যান অবশ্যই ফ্রেন্ডশিপ আমাদের সাথেও ,তাও ,কিছু কিছু চোখের এক্সপ্রেশন ওর একটু আলাদাই,যাই হোক আমার আর কি ?শুধু একটু সাবধানে থাকিস এই যা বলে একটা হাসি দিলো। 

অভিষেক দূর থেকে দেখছে অনামিকা হাসছে কি একটা শুনে হালকা চাঁটি মেরে পিঠেতে,ওর ঠোঁটের দিকে তাকালো ঠোঁটের কোনে হাসি টা গালের মাংসপেশিগুলোর এক্সপ্রেশন চেঞ্জ করে মেকি হাসি আর রিয়েল হাসির পার্থক্য টা ভালো করে বুঝিয়ে দিচ্ছে। 

চোয়াল টা একটু শক্ত হয়ে গেলো দেখে এসব। 

অভিষেকের চোখ ধীরে ধীরে জুম্ হয়ে অনামিকার সালোয়ারের ফ্লোরাল প্রিন্টের গোলাপের দিকে গেলো ,একটা পলক ফেললো। 


চোখ টা খুললো অভিষেক ,আর্যর ঘরে টেবিল ক্লোথ এর গোলাপের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে , অনেক খান ধরে আড্ডা চলছে বেশ কয়েক রাউন্ড চলেছে সবার। টেবিল ক্লোথ থেকে দৃষ্টিটা বাকিদের দিকে দিলো। 

রাহুল পিয়ালী কে কাঁধে জড়িয়ে রেখেছে ,অনামিকা বলছে তা রাহুল তোরা এবার অফিসিয়াল কবে করছিস ব্যাপার স্যাপার অনেকদিন তো হলো নাকি ,

রাহুল হালকা নেশার গলায় জড়িয়ে ধরে পিয়ালীর গালে চুমু দিয়ে বললো ,নে আজ থেকে অফিসিয়াল করে দিলাম ,পরশু ফুলশয্যা ব্যবস্থা কর । 

পিয়ালী গাল মুছতে মুছতে বলছে "যত ঢং অফিসিয়াল নাকি ,ফুলশয্যার জন্যে আর কিছু বাকি রেখেছে নাকি ,এতো জায়গায় এত দিনে ঘুরে " ,তারচেয়ে আমাদের কলির কেষ্টর জন্যে একটা কাউকে খুঁজতে হবে। 

ঠিক ঠিক হালকা নেশায় থাকা অনামিকা বললো একটা কাঁধে হাত দিয়ে আর্যর ,বল তোর কেমন মেয়ে চাই আমরা জোগাড় করছি। 

ওয়েট ওয়েট ,আমি জানি তোর একটা রাধা লাগবে ,লম্বা চুলের টানা চোখ হাসলে পুরো মুক্ত হাসির দাঁতের মাজনের মতন হিরে মানিক ঝরে পড়ে। ওহ সরি সরি ওটা সিক্রেট ছিল না ,সিইইইইই আমি কাউকে বলবো না মুখে আঙ্গুল দিয়ে বলতে লাগলো ,এই তোরাও বলবি না কাউকে। নিজের মনেই গান গাইতে লাগলো অনামিকা ,সদ্য দেখা হিন্দি সিনেমায় পাওলি দামের মতন স্টাইলে একটু নেশার গলায় ,


                                                   "মাইই হে কলঙ্কিনী রাধা (নিজেকে দেখিয়ে বলছে )

                                                        কদম গাছে .....না না এখানে কদম তো নেই ,

                                   সোফার উপর উঠিয়া আছে কানু হারামজাদা ( কাঁপা কাঁপা আঙ্গুল দেখিয়ে আর্য কে বলছে )

                                                                  মায় তহে জলে না যাইও। "


বসে বসে ইশারা করে আঙ্গুল দিয়ে নেড়ে দেখাচ্ছে আর হাসতে থাকলো পিছনে এলিয়ে পড়ে । 

শাড়ীর কাঁধে কোনো পিন ছিল না ,হাসতে হাসতে শাড়ীর আঁচল টা বুক থেকে খসে পড়ে গেছে ,


আর্য হালকা নেশাতে সাথে অনামিকার গানের গলাতে চারিদিক মায়াবী মনে করছিলো সামনে তখন তার এক যেন কোনো স্বপ্নপরী ,এক দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলো অনামিকার চোখের দিকে ,তাকিয়ে চোখের টানা কাজলে দেখে ভাবছিলো এই চোখেতেই হারিয়ে যেতে মন চাইতো ,সাগরে ডুবে গিয়ে। 

পিয়ালী হালকা করে অভিষেক এর পায়ে মেরে ইশারা করলো ,অভিষেক দেখতেই একটু রেগে গেলো। তার ঈষৎ নেশা চোখেতে অন্য এক জগতের গল্প খেলছে , মনে হচ্ছে আর্যর লোলুপ দৃষ্টি যেন তার অর্ধাঙ্গিনীর অঙ্গ প্রতঙ্গের স্পর্শ নিতে চাইছে , চন্দ্রলোকের অপ্সরীর শরীরের বিভাজিকার বিভঙ্গ ,কটিপ্রদেশের কিঞ্চিৎ মেদবহুল মোমের মতন অংশে যেন নিজের শরীরের উষ্ণতার পরশ লাগিয়ে গলিয়ে দিতে চায়ে। 

বোতলের বাকিটা একঢোকে শেষ করে দিয়ে হাত থেকে ইচ্ছা করে বোতলটা ফেলে দিলো ,মেঝেতে পরে চৌচির হয়ে গেলো। সবাইর ঘোর ভেঙে তাকালো ,কি আর্য বাবু কোন জগতে আছো এসো অন্য জগৎ থেকে ফিরে। 

আর্যর হাসি টা হালকা মিলিয়ে গেলো চিন্তার ভাবে জিজ্ঞেস করলো কি রে ভাই লাগেনি তো ,সাবধানে সরে বস ঐদিকে কাছে পা কেটে যাবে নইলে। 

অভিষেক টলতে টলতে উঠে দাঁড়ালো ,হ্যান কোথায় কোথায় যে লাগছে কি আর বলবো ,অনামিকা ফিরবি নাকি এখানেই থাকবি ?চল উঠ অনেক রাত হয়েছে। 

রাহুল ঘড়ি দেখে বললো হ্যান ফিরতে হবে ,চলো আমার ডার্লিং আস্তে আস্তে পা বাড়াই। 

সব হালকা হালকা কেউ পিঠে ট্যাপ করে বা হাত মেলালো বেরোবার সময়ে ,অনামিকা হাতটা অনেক্ষন ধরে বলছে লিস্ট কিন্তু শেষ হলো না ,তোর জন্যে কিন্তু আমি মেয়ে দেখছি ,হে হে আমার থেকেও সুন্দরী পাবি তুই , অভিষেক প্রায় টেনেই একপ্রকার নিয়ে গেলো অনামিকাকে,হ্যান চল চল অনেক হয়েছে। 

খানিক বাদে সোফা থেকে নেমে মেঝেতে বসলো আর্য হাতের ক্যান টা শেষ করছে ধীরে ধীরে ,মেঝেতে বেখেয়ালে হাতটা রেখে দিলো ,ওহঃ ভাঙা কাছের বোতলের টুকরোটা একটু ছড়ে গেলো। 

আঙ্গুল টা দেখছে একটু লালচে হয়ে গেছে রক্ত বেরোচ্ছে ,উঠে গিয়ে বাথরুমে গেলো হাতের কাটা জায়গাটা জল দিয়ে ধুয়ে দিচ্ছে পরিষ্কার করে ,তারপর একটা পাত্রে ঠান্ডা জল নিয়ে ভর্তি করলো ,আয়নার দিকে একবার তাকিয়ে হেসে মুখ ডুবিয়ে দিলো বরফ শীতল জলের মধ্যে চোখ বুজিয়ে দিয়ে। 


                                (কালো ইস্কাবন ) ব্ল্যাক স্পেড


মুখ টা জল থেকে উঠালো আর্য ,সূর্যের আলোটা ঠিকরে চোখে পড়ছে ,চোখটা বুজিয়ে রাখলো কিছুক্ষন ,চোখের কালো অংশে কখনো সাদাটে কখনো লালচে সুতোর টুকরো যেন ঘুরতে লাগলো ,

সবাই মিলে পিকনিক করতে এসেছে ,নাম না জানা এক নদীর ধারে দাঁড়িয়ে পড়ে ,

কিরে জলের মধ্যে দাঁড়িয়ে কি করছিস ? পিয়ালী এসে জিজ্ঞেস করলো পিছন থেকে। 

এমনি কিছু না এই একটু ঠান্ডা জল টা চোখে মুখে দিছিলাম। পিয়ালী স্কার্ট তা একটু উঁচু করে ধরে জলের মধ্যে নামলো ওর পাশে। ওঃ কি ঠান্ডা রে ,এর মধ্যে কিকরে নামছিলিস ? পাশে এসে হাত টা চেপে ধরলো। তুই নামলি কেন ,যা উপরে উঠে দাঁড়া জলে পড়ে গেলে এখুনি ঠান্ডা লেগে যাবে। কেন তুই আছিস তো কোলে করে তুলে নিবি ,বলে আরো চেপে দাঁড়ালো সাইডে ,ইচ্ছা করে বুকের পাশটা দিয়ে হাতের কাছে চেপে ধরলো। আর্য সরে গেলো একটু নিজের স্বভাব বসেই ,জল থেকে উঠে আসলো ,এসে গাছের নিচে দাঁড়িয়ে পা মুছে জুতো পড়ছে। 

জল থেকে উঠে এলো পিয়ালী ,কি হলো চলে এলি কেন ? 

না অনেক্ষন ছিলাম তুই বরঞ্চ রাহুল কে ডেকেনিয়ে নাম। কাছে এসে অনেকটা হাত টা ধরলো কেন তুই আছিস কি অসুবিধা ,ও তো এখন মাল খেতেই ব্যস্ত। 

হাত টা ছাড়িয়ে নিলো একটু ,দেন এমনি বসে থাক ওর সাথে কোম্পানি হবে। 

এবার তেরছা চোখে তাকিয়ে পিয়ালী বললো আচ্ছা অনামিকা থাকলেও কি একই বলতিস নাকি ?

জুতো টা বাঁধা বন্ধ করে সোজা তাকিয়ে রইলো পিয়ালীর চোখের দিকে এক ভাবে রাগ হলেও হালকা ছলছলে চোখ নিয়ে ,কিছু বললো না উঠে দাঁড়িয়ে ফিরতে লাগলো গাড়ির দিকে। কি রে উত্তর দিলি না ,গিয়ে ঠেলে ঠেলে দিতে লাগলো পিছন থেকে ধাক্কা মেরে মেরে ,কি দেখেছিস ওর মধ্যে যা আমার মধ্যে নেই ? ওর থেকে অনেক বেশি এট্রাক্টিভ আমি। হটাৎ একটা বাজে স্ল্যাং শুনতে পেলো কিছু পছন্দের মানুষ নিয়ে ,আর সামলাতে পারলো না ঘুরে গিয়ে থাপ্পড় মারতে গেলো টেনে ,পিয়ালী চোখ বুজিয়ে ফেললো। 


হয়তো মারতে পারতো না ,বিবেক আর ক্রোধের মধ্যে কে কাকে আটকে দিতো তা আর দেখা হলো না ,

তার আগেই দেখলো কনুই টা পিছনথেকে ধরে নিয়েছে রাহুল ঘুরিয়ে ধরে কোনো কথা না শুনেই ধরে মারতে লাগলো। অলরেডি কয়েক পেগ খেয়েছিলো ,আর সকাল থেকেই মেজাজ গরম হয় ছিল কোনো কিছু কারণ জিজ্ঞেস না করে সিচুয়েশন না বুঝেই ধরে মারতে লাগলো ,

নিজের বন্ধুরাই এমন করবে কখনো ভাবতে পারেনি খানিক বাদে সামলে জবাব দিতে লাগলো। 

দূর থেকে ঝামেলা দেখে অভিষেক ছুটে এসেছে অনামিকা তখনো গাড়িতে বসে। কাছে এসে দুজনে মিলে মারতে লাগলো। 

অনেক বেড়েছিস না শালা , অনেক ডানা বড়ো হয়েছে না ,মেয়ে দেখলেই সামলানো যায় না নাকি ,চুলের মুঠি করে ধরে ঠেলে মাটিতে ফেলে দিয়েছে ,আর্য কোনো মতে রাহুল কে ঠেলে সরিয়ে দিয়ে ফেলেদিলো সাইডে , 

পিয়ালী দৌড়ে গিয়ে অনামিকা কে বললো ,তাড়াতাড়ি চ দেখ আর্য অভিষেককে ধরে মার্ ধর করছে। 

অনামিকা শুনে তাড়াতড়ি দৌড়ে যেতে লাগলো ,গিয়ে দেখলো আর্য নিজেকে বাঁচানোর জন্য অভিষেকের গলা ধরে আছে চেপে ,অনামিকা দেখে ভাবলো বুঝি গলা টিপে মেরে দিতে চাইছে ,আর্য এক হাতে গলা টিপে অন্য হাতে মুখে ঘুসি মারলো একটা নেশা ভেঙে জ্ঞানে আন্তে। 

হটাৎ এটিকে পিঠে হাত পেলো কাঁধের উপরে এমন করিস না ছাড় ,এক মুহূর্তের জন্যে অন্যমস্ক হয়ে ঘুরে তাকালো হাতে মুঠি ধরে ,আটকে নিলো নিজেকে অনামিকাকে দেখে। 

এক মুহূর্ত দাঁড়িয়ে ঘুরে গিয়ে আবার মারতে গেলো অভিষেক কে ,তখনি একটা ঠঙ করে আওয়াজ হলো সাথে কাচ ভেঙে যাওয়ার শব্দ। আঃ শব্দ করে মাথাটা চেপে ধরলো আর্য ,মাথাটা ঘুরিয়ে দেখলো অনামিকার হাতে ধরা একটা ভাঙা মদের বোতল যেটা এই মাত্র গোটা পড়েছিল নীচেতে এখন অর্ধেক ভাঙা হয়ে অনামিকার হাতে ,আর্য একটা হাত বাড়িয়ে আকাশ টা যেন মুঠো করে ধরতে গেলো অনামিকার মুখের দিকের কাছ থেকে,হাতে এলো একটা শুধু লকেট। 

মাথা থেকে হাত টা নিয়ে একবার চোখের সামনে দেখলো ,দেখছে শুধু লালচে তারপর সব আস্তে আস্তে ধোঁয়া আর কালো হয়ে গেলো। 

শব্দ করে মাটিতে ঘাসের উপর লুটিয়ে পড়লো আর্য। 

একপাশে দাঁড়িয়ে তখন কাঁপছে অনামিকা ,কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা ,আর্য উঠছেনা মাটিতেই পড়ে আছে রক্তে জামা ভিজে যাচ্ছে ,ঘাস লালচে হয়ে যাচ্ছে ,দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলছে অনামিকা ভয়ে রাগে দুঃখে সব মিলিয়ে ,

পিয়ালী ওর হাত থেকে বোতল টা ফেলে দিলো ,ওকে গাড়ির কাছে নিয়ে যেতে লাগলো, চাপ সামলাতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে গেলো অনামিকা।  

অভিষেক ,রাহুল উঠে বসেছে কাছে এসে লাথি মারছে , রাগ টা উগরে দিতে চাইছে। 

রাহুল বললো ছাড় ,মালটা মনে হয়ে টপকে গেছে ,পিয়ালী কে বললো যা অনামিকা কে রেখে দিয়ে আয়ে এখানে ,অনেক দিন ধরে প্ল্যান করছিলাম শালা বড্ড বেড়েছিল। 

অভিষেক আর পিয়ালী অনামিকা কে কাঁধে করে ধরে গাড়ির সিটে শুইয়ে দিয়ে এলো। গাড়ির পিছনথেকে বের করলো একটা কালো বেলচা(স্পেড ) ,নিয়ে গিয়ে নদীর ধরে একটা গাছের নিচে নরম মাটি দেখে খুঁড়তে লাগলো। 


                     ----------------------------------------------------------------------------------------


বাবলু ওদিকে মাটি খুঁড়ে যাচ্ছে হাতের কাটা পাথরের টুকরো দিয়ে ,একটু বাদে দেখলো একটা চকচকে পাথরের মতন জিনিস হারের লকেটের মতন ,একটু ময়লা হয়েছে তাও বেশ ভালো খেলার জিনিস ,নিয়ে দেখতে লাগলো আরো খানিকটা খুঁড়তে লাগলো কিছু পেলোনা দেখতে ,একটু বাদে বাইকের শব্দ হতে উঠে দাঁড়িয়ে এগিয়ে গেলো ,সুভাষদারা চলে এসেছে। 

কি আমাদের বালগোপাল সব ঠিক ঠাক আছে তো ?

গিয়ে ওদের সাথে মিশে গেলো আবার হৈচৈ করতে করতে। 

রাত হয় এসেছে ,সবাই ঘিরে আছে এখন একটু বাদেই হোলিকা দহন হবে। একটুখানি কেরোসিনে কাপড় জড়িয়ে তীরধনুক করে রেডি করছে সুভাষ দা। কি রে একটা দেশলাই দে তো 


ওহ অনেকক্ষণ ধরে মাটি কোপানো হয়েছে লাইটার আছে ? দে তো ,একটা একটা করে সিগারেট ধরালো অভিষেক আর রাহুল। রাহুল নিচু হলো হালকা গোঙানির শব্দে ,ভাই মালটা টপকায়নি এখনো বেঁচে ,কি করবি ?

অভিষেক কয়েক টা লম্বা লম্বা সিগারেট টানতে থাকে আর আগের দিনগুলোর ভাবতে থাকে অনামিকার দিকে ওর তাকানো ,ওদের হাসি খুশি থাকার সময়ে গুলো। শান্ত গলায় বললো যা গাড়ির পিছনে পেট্রল এর জায়গা আছে নিয়ে আয়ে ,রাহুল বললো খেপছিস নাকি কি সব করবি। 

হাত দিয়ে আটকে দিলো অভিষেক কথাটা ,তোর যদি ফাটে তো তুই কেটে পড়। এতদিন ধরে করা প্ল্যান নষ্ট করবো না। 

ঠেলে ঠেলে নিচে গর্তে ফেলে দিলো ,গায়ে পেট্রল ছড়িয়ে দিলো ,তারপর শেষে শুধু একটা সিগারেটের শেষ টান দিয়ে ফেলে দিলো গর্তে তে। 



দাউ দাউ করে হোলিকা দহন হচ্ছে সবাই হৈ হৈ করছে ,সাথে চারিদিকে বাজি আর খড় পড়ার গন্ধ ,একই জায়গায় শুধু কয়েক মাস আগে চলছে আরেক দহন ,সেখানে গন্ধটাও উগ্র,জীবন্ত প্রদীপ কে নিভিয়ে দেয়ার পোড়া গন্ধ। অভিষেক দেখলো পাশে পড়ে প্রপোজের সময়ের আগে পরতে থাকা অনামিকার পুরানো হার্ট শেপের লকেট ,লাথিমেরে নিচে ফেলে দিলো আগুনের মধ্যে। 

বাবলু পকেটে হাত দিয়ে বের করলো লকেটটা ছুঁয়ে দেখছে ,উপরে ধোঁয়া উঁচু হয়ে গোল গোল হয়ে চলে যাচ্ছে ,আচ্ছা সব সময়ে কি হোলিকারা মারা যায় ? নাকি এযুগে মরতে হয়ে কখনো প্রহ্লাদদের ,বয়সের থেকে বেশি এই চিন্তা হটাৎ তার মাথায় এলো। 

আচ্ছা সুভাষদা নরসিংহ অবতারের বাকি গল্পটা বললে না যে ,

"হুম তো প্রহ্লাদকে বার বার মারার প্রচেষ্টা করেও যখন বার বার হেরে যেত ,একদিন রেগে গিয়ে প্রহ্লাদকে বললো এই যে তুই এতো বিষ্ণু বিষ্ণু করিস কোথায় তোর বিষ্ণু আছে ? 

প্রহ্লাদ উত্তর দিলো বিষ্ণু সব জায়গায় আছে ,এই ছোট গাছের ডালেতে আছে ,এই গম্বুজেও আছে। 

হিরণ্যকশিপু বললো বটে ,এই গম্বুজেও আছে নাকি তাহলে ডাক দেখি এখন কেমন আসে। 

প্রহ্লাদ সেখানে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে একমনে বিষ্ণুকে ডাকতে লাগলো। 

তারপর সেই গম্বুজ ভেঙে বেরোলো নরসিংহ অবতার। 

না কোনো ভগবান সৃষ্ট জন্তু বা মানব ,দুজনের মিশ্রণ ,সময়টা তখন সন্ধ্যা না দিন না রাত ,হিরণ্যকশিপু কে কোলের উপর শুইয়ে চেপে ধরলো তাতে হলো না এটা মর্ত না আকাশ। 

আর সর্বশেষ কোনো অস্ত্র ব্যবহার করলো না ,হাতের জান্তব আঙ্গুল আর নখ দিয়ে পেট চিরে হত্যা করলো নরসিংহ আর প্রহ্লাদের রক্ষা কর্তা হলেন ,


কথা আর ভাবনা ছেদ পড়লো ,বক্সে তখন গান বাজানো শুরু হয়েছে , " ও দয়াআআআল বিচার করো " ........



ট্রেনের মধ্যে এক নতুন বৈরাগী হটাৎ অখিলবন্ধুর গানটা ধরলো, 


                     "সে আমার মনের মানুষ বলে

                      মরেছি অনেক জ্বালায় জ্বলে

                    এবার দাও গো সমন, সাক্ষী দেবো

                           হব সর্বনাশী

                       আমায় গুম করেছে

                         আমায় খুন করেছে

                 আমায় গুম করেছে, খুন করেছে ও বাঁশি "


,গানের লাইন গুলো শুনে গানের অর্থগুলো যেন অনামিকাকে ধাক্কা দিচ্ছে অন্যভাবে ,

অনামিকা আস্তে পিষ্টে বুকের কাছের হারটা চেপে ধরে আছে ,একবার তাকালো গান গাওয়া বৈরাগীর দিকে বুকের কাছটা ছাঁত করে উঠলো ,

কেন জানি এক মুহূর্তের জন্যে মনে হলো ওটা কে আর্য নাকি ,এ কিকরে হয়ে। আরেকবার ভালো করে দেখলো না মনে হয় মনের ভুল এতো অন্য কেউ। 

উল্টো দিকে তাকিয়ে দেখলো পিয়ালী রাহুলের কাঁধে মাথা রেখে চোখ বুজিয়ে শুয়ে ওদের বলবে নাকি ,কে জানে বেকার বেশি হয়তো ভাবছে অন্যকিছু অকারণে। পাশে বসা অভিষেকের হাতটা জড়িয়ে ধরলো চেপে ভীতু মনটার আশ্রয় পাবার আশায়। 


অভিষেক বললো কি হয়েছে ? চোখ মুখ এমন কেন লাগছে ? ওয়াশরুম জাবি নাকি ?

অনামিকা বললো হ্যান ,বলে বাথরুমে গেলো ,অভিষেক উঠলো বাইরে দাঁড়িয়ে ট্রেনের গেটের কাছে সিগারেট ধরাবে বলে। 

বাথরুমের ভিতর চুল খুলে নিয়ে ভালো করে চোখে মুখে জল দিচ্ছে ,চোখ বুজিয়ে দিয়ে প্রে করার মতন জোরে জোরে নিঃস্বাস নিতে নিতে। 

পিঠের কাছে একটা হালকা ট্যাপ। ঘুরে তাকিয়ে দেখলো .......


এপাশে রাহুল এর সাইড দিয়ে একজন বেরিয়ে গেলো একটু গায়ে হালকা ধাক্কা লাগলো, যেতে যেতে বলে গেলো সরি ,এক মুহূর্তের জন্য অভ্যাসের উত্তরে ইটস অল রাইট বলে দিলো। তারপর হটাৎ কি খেয়াল হতে চোখ খুলে দেখলো ওই সেই স্টেশনের সেই ছেলেটা মনে হলো না ? যার জন্যে একটু দেরি হলো ট্রেনে উঠতে ,অন্য কামরায় উঠতে হলো । আচ্ছা করে কড়কে দেবে ভেবে উঠে পিছু পিছু যেতে লাগলো। কয়েকজন কে সরিয়ে কয়েকটা বগি পেরিয়ে দেখলো দাঁড়িয়ে আছে পিছন হয়ে ,গিয়ে কনুই টা চেপে ধরলো ,সঙ্গে সঙ্গে মুখের দিকে তাকালো .........


অভিষেকের বাথরুমের বাইরে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল একটা না ঝোলানো সিগারেট মুখে নিয়ে , সামনে একজন হালকা আঁধারের মধ্যে থেকে এসে বলছে "লাইটার হবে ?" অভিষেক দুপাশের পকেট খুঁজছে। সিগারেট খাবে বলে সব সময়ে পকেটেই রাখে ,এক্ষুনি তো ইউস করলো কোথায় যে রাখলো 

অভিষেক পকেট গুলো হাতড়ে বের করে ম্যাচিসটা জ্বালালো , নিজের সিগারেট টা ধরিয়ে অন্য লোকটার মুখের সামনে টা এসে দেখলো একবার মুখটা .........


পিয়ালী হালকা তন্দ্রা কেটে উঠে বসেছে আশপাশে দেখছে কেউ নেই ,মোবাইল নিয়ে এমনি ঘাঁটতে লাগলো ,বাইরে তাকিয়ে দেখছে অন্ধকার হয়ে গেছে ট্রেনটা গতি নিয়ে ছুটে চলেছে জঙ্গল পেরিয়ে ,একটা চেনা গন্ধ এলো নাকে চেনা কি যেন একটা ফুল ,হ্যান মনে পড়েছে হাসনুহানা পাশে জঙ্গল থেকেই আসছে হয়তো ,আর কোথায় যেন এই একই গন্ধ পেতো নাকে। শিরদাঁড়ায় শীতল স্রোত বেয়ে গেলো ,আর্যর বারান্দা থেকে আসতো এই গন্ধ ,ব্যালকনি তে কাউন্টারে সিগারেট ধরাতে গেলে পেতো এরকম ,আর একটা সময়ে সবচেয়ে বেশি পেয়েছিলো সেবারে অভিষেকের কথা মতন যখন জলে নেমে উত্যক্ত করছিলো আর্যকে ,কে জানে এখনো একই গন্ধ পাচ্ছে ,উপরের সিটে একজন শুয়ে ছিল পা টা সাইড করে নিচে নামছে। সেই গন্ধ টা যেন একটু তীব্র হচ্ছে একটু ঝাঁঝালো ,উপরে তাকিয়ে দেখলো একবার লোকটার দিকে যে নামছে চোখাচোখি হতে পুরো শিকারির মতন দৃষ্টি নিবদ্ধ হলো ......



 চার জনের জন্যে সময়টা ওখানেই স্থির হয়ে গেলো , কোনো কিছু নড়ছে না চড়ছে না পুরো শান্ত স্তব্ধ ,হটাৎ করে কেউ যেন পাওয়ার বাটন অফ করে দিয়েছে। 

চারজনের প্রত্যেকের চোখের সামনে একে একে ছবির সিনেমার মতন ভেসে যাচ্ছে ,সব পাপ একে একে ফুটেউঠছে চারিদিকথেকে ,মাথার মধ্যে শব্দেরা যেন কানের মধ্যে চিৎকার করে যাচ্ছে। কখনো কান্না ,কখনো বুক ফাটা আর্তনাদ। 

পারছেনা আর সহ্য করতে চারজনে চিৎকার করে উঠলো। 

তারপর একটা ঝলসানো আলোর ঝলকানি ,চারিদিক হলদে সাদা আলোতে ভরে গেলো। ট্রেনের ওই কামরাতেই একটা বোমা ব্লাস্ট ,সব যেন ছকে রাখা কারুর। 

অনেক দূর থেকেও দেখা গেলো ট্রেনের আগুনের গোলা আকাশে উঠে যাচ্ছে ,আগুনের ফুলকি আর ধোঁয়া টা অনেক উঁচুতে কুণ্ডলী পাকিয়ে উঠে গেলো আকাশের উদ্দেশে। সেই আগুনের মধ্যে থেকে একটা সাদা আলো জোনাকি হয়ে উড়ে চললো দূর প্রান্তে মুক্তির ঠিকানায় ,সব কিছু থেকে হালকা হয়ে সবাইকে ক্ষমা করে দিয়ে। 

চারিদিকের ছবি মুছে যেতে লাগলো , স্কুলের ব্লাকবোর্ডের উপর ডাস্টার বুলিয়ে পুরো ক্লিন স্লেট যেন। 


একটা ভারী গলা পাওয়া যাচ্ছে ,আমার তো শিফট শেষ এখন বাকি পরের টার জন্যে তুই দেখে নিস্ , দশ হাজার তিনশো সত্তর ঠিক আছে ? পরের বারেরটা থেকে একটু হালকা হবে। যার আসল জিনিস যাকে নিয়ে সে বললো অনেক হয়েছে আর লাগবে না ,কিন্তু কি করার আমাদের নিয়ম তো নিয়মি। 

তুই ওকে ছাড়াই এর পর থেকে শুরু করিস ,

আচ্ছা ঠিক আছে, চল টাটা।  

সাইরেন বেজে উঠলো নাও শুরু করো , দশ হাজার তিনশ একাত্তর শুরু হচ্ছে ,সবাই নিজের নিজের জায়গায় চলে যাও। লোহার বড়ো দরজা বন্ধ হয়ে গেলো ,সব লক গুলো সশব্দে চারিদিকে বন্ধ হতে লাগলো ,নাও হে ট্রেন ছেড়ে দাও ,হর্ন বাজিয়ে ,নিচের অধস্তন কে বললো দায়িত্বপ্রাপ্ত ছেলেটা ,

পরের চক্র শুরু হয়ে গেলো। 


ট্রেনের হর্নের আওয়াজ টা শুনে অনামিকার তন্দ্রা কেটে গেলো ,জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখলো ,জায়গাটা চেনা চেনা লাগছে যেনো। ....



                                          ইতি ?? ............








 



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract