শারদ সংখ্যা -"হৃদয়ের সঞ্চয়িতা"
শারদ সংখ্যা -"হৃদয়ের সঞ্চয়িতা"


অফিসে বসে কাজ করার সময়ে ফেসবুক এর কয়েকটা নোটিফিকেশন এসেছিলো, ক্যান্টিনে লাঞ্চ করতে করতে সেগুলোই দেখছিলো সঞ্চয়িতা ।
হটাৎ একটা ছবি দেখে থমকে গেলো। অনির্বান'স এনগেজমেন্ট ক্যাপশন দিয়ে বেশ কয়েকটা ছবি একসাথে আপলোড করেছে কলেজর এক বন্ধু। ব্লেজার পরে স্মার্ট লাগছে অনির্বানকে ,আংটি বদলের ছবি টা দেখে চোখ টা হালকা ভিজে গেলো ,গলার কাছের খাবার টা ঘিটতে যেন ব্যথা হতে লাগলো।
উঠে পড়লো সে ক্যান্টিন থেকে,বাকি খাবার টা বাইরে ঘোরা কুকুরটাকে দিয়ে অফিস ডেস্কে ফিরে গেলো।
সেদিন আর কাজে মন বসলো না ,বাড়ি ফিরেও মনমরা হয় রইলো। জানালার ধরে বসে পুরানো কথা গুলো মনে পড়ছিলো সঞ্চয়িতার ,সেই কলেজ বাংক করে অনিকেতের সাথে সিনেমা দেখতে যাওয়া ,ভয় পেলে হাত টা আঁকড়ে ধরা। এখন সেই স্মৃতিগুলো বেশি করে মনের জানালাতে টোকা দিচ্ছে।
"তুলি খেতে আয়ে", মায়ের ডাকে তন্দ্রা ভাঙলো তার ,ধীর পায়ে খাবার ঘরের দিকে এগিয়ে গেলো।
খাবার টেবিল এ বসে চুপচাপ খাচ্ছিলো সে ,টিভি তে খবরের চ্যানেল খোলা ছিল,যদিও তাতে খবর কম আর বিজ্ঞাপন বেশি চলছিল। মাঝে একটা বিজ্ঞাপন দেখে চোখ তা গেলো ,বিয়ের পাত্র পাত্রী নিয়ে ।
তার নিজের রুম এ ফিরে ল্যাপটপ নিয়ে গান শুনতে শুনতে একবার কি জানি মনে হতে ম্যাট্রিমনি সাইট খুললো।
অনির্বানের পাশের মেয়েটার কথা মনে হচ্ছিলো কতটা খুশি মুখ ,তার জীবনে কি এরকম খুশি আসবে ?
ভাবতে ভাবতে ঠিক করলো না তার এবার বিয়ে করে নেয়া উচিত হবে ,নইলে জীবনে বড্ডো একা লাগছে , ভাবতে ভাবতে নাম ঠিকানা মোবাইল নম্বর ভরতে লাগলো সে ম্যাট্রিমনি সাইটে। ।
পর দিন একই ভাবে চলতে লাগলো রোজকার রুটিন মাফিক। বিকালের দিকে একটা কল এলো অচেনা নম্বর থেকে ,"নমস্কার আমি ব্যাঙ্ক থেকে বলছিলাম।...."
কথা শেষ হওয়ার আগেই সঞ্চয়িতা বলে উঠলো "না আমার ক্রেডিট কার্ড চাই না , পার্সোনাল লোন চাই না বিরক্ত করবেন না "
করে কল কেটে দিলো।
পরে একই নম্বর থেকে আরো কয়েকটা কল এলো ধরলো না সঞ্চয়িতা ,আবার সন্ধ্যার সময়ে ব্যাগ গুছিয়ে অফিস থেকে বেরোতে যাবে আবার কল। ভাবলো কলটা রিসিভ করে দু চারটে ভালো মন্দ কথা শুনিয়ে দেবে ,কল টা রিসিভ করে বলতে যাবে ওদিক থেকে কণ্ঠস্বর "একমিনিট ম্যাডাম,একটু শান্ত হবেন ।"
সঞ্চয়িতা চুপ করলো ,
"ওহঃ আপনি তো পুরো রাজধানী এক্সপ্রেস চালিয়ে দিয়েছেন শুরু তো হলো থামার নাম নেই ,আমি ক্রেডিট কার্ড বিক্রি করতে কল করিনি ,আপনার ম্যাট্রিমনি তে প্রোফাইল দেখে কল করলাম।
সরি কিছু মনে করবেন না , আপনি যেভাবে নিজের পরিচয় না দিয়ে নিজের লোকেশন আগে জানাছিলেন তাতে সেটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক।
" আরে ম্যাডাম ওটা অভ্যাসের বসে হয় গেছে যতদিন জুনিয়র ছিলাম সারাদিন ধরে ওটাই টাস্ক থাকতো , কাস্টমার দের যত ওই প্রব্লেম রিপোর্ট নিয়ে কল করা "
অচেনা ব্যাক্তি :"যাগ্গে জাগ্ আপনার সাথে দেখা করা যাবে "?
সঞ্চয়িতা :"আমি অচেনা লোকেদের সাথে দেখা করিনা "
অচেনা ব্যাক্তি ,"একী দেখা না করলে কথাবার্তা এগবে কি করে "
মোবাইল কানে হাঁটতে হাঁটতে সঞ্চয়িতার প্রশ্ন "কিসের কথাবার্তা " ?
"আমাদের বিয়ের ,না মানে সেটা না, ওই বিয়ের আগের দেখা সাক্ষাতের মতন। মানে ওই পছন্দ হলে ব্যাট করতে নামার্ পরিকল্পনা হবে নইলে ব্যাট বগলদাবা করে প্যাভিলিয়ান ফেরত।"
"ঠিক আছে এই সানডে সিটি সেন্টার ২ তে চলে আসুন বিকাল ৫ টা। এসে কল করে নেবেন।বেশিক্ষণ সময় দিতে পারবো না , বলে কল কাট করে দিয়ে ফেরার গাড়িতে উঠে পড়লো।
ভিড় বাসে উঠে ভাবলো ,যাহ নামটাই তো জিজ্ঞাসা করা হলো না ,পরে জিজ্ঞেস করে নিতে হবে।
বাড়ি ফিরে খেয়ে নিয়ে রুম এ গিয়ে ভাবলো সাইট এ গিয়ে খুঁজে পাওয়া যেতে পারে , সাইট টা খুলে প্রথম নামটা দেখলো সুব্রত তালুকদার।
ভাবলো এ কি কল করেছিল ?
খুলে পরিচয় এর জায়গাটা দেখতে লাগলো।
সুব্রত তালুকদার
বয়েস : ৬৯ ,ব্যাবসায়ি
বয়েস শুধু একটা সংখ্যা আমার জন্য ,চিরতরুণ চিরনবীন, "দেভ আনন্দের" মতন প্রেমিক হৃদয়ের যুবকের জন্যে যুবতী পাত্রী চাই
উফফ এ কল করেছিল নাকি ? তাহলে সিসি ২ এর বারান্দা থেকেই ঝাঁপ দিতে হবে। কল করলো সঞ্চয়িতা সকালের আসা ওই ফোনে ,
"হেললোও " বেশ কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর ঘুম জড়ানো গলায় আওয়াজ এলো।
সঞ্চয়িতা ,"হাই! আপনি কল করেছিলেন ওই ম্যাট্রিমনি ....আপনার নাম টা কি জিজ্ঞাসা করা হয় নি।
"আমার নাম রঞ্জন চট্টপাধ্যায় ".
"ওহ ওকে , বাই "
"বাই মানে ?শুধু এটা জানতে এই রাত পৌনে বারোটায় কল করলেন? কালকে জানলে হতো না? মানে নাম তো আর তারিখ না যে বদলে যেত সকালে "
নিজের অপ্রস্তুতি আড়াল করে সঞ্চয়িতা বলে উঠলো ,"দরকার ছিল তাই কল করেছি এখন ঘুমান "
"আপনার ওই মিষ্টি মিষ্টি ছবি তা দেখে মা বললো খুব লক্ষ্মীশ্রী মুখ বাড়ির বৌ হলে খুব ভালো হবে" ,
পরের লাইন টা আস্তেকরে বললো , "কিন্তু নাহঃ মা কে ববলতে হবে গিয়ে এ লক্ষ্মী না দূর্গা "।
"এক্সকিউস মি ! কি বললেন ? "
" না না কিছু না , গুড নাইট , শুভ রাত্রি। টাটা বাই বাই ! রবিবারে দেখা হচ্ছে " ঝড়ের গতিতে বলে কল কেটে দিলো রঞ্জন।
ব্যাপার দেখে হালকা হেসে ফেললো সঞ্চয়িতা। নামটা দেখে প্রোফাইল এ খুঁজে দেখতে লাগলো।
রবিবার বিকালে বেরোলো সে একটা ক্যাব নিয়ে।
নামটা দেখে প্রোফাইল টা পেয়েছিলো বয়েস ২৮ চাকুরীজীবি ,একটাই লাইন লেখা ছিল , "একটু কম সুন্দরী ভালোবাসার পাত্রী চাই "
একটা সবুজ সিম্পল সালোয়ার কামিজ পরে চুল টা ক্লিপ দিয়ে বেঁধে ন্যাচারাল কালারের হালকা লিপস্টিক পরে বেরিয়েছে ছিমছাম ভাবে। হাতে বই দিলে দেখলে মনে হবে কলেজ স্টুডেন্ট।
৫টা থেকে দাঁড়িয়ে আছে সঞ্চয়িতা ১০ মিনিট বাদে কল এলো , "হ্যালো ম্যাডাম আমি এসে গেছি আপনি কতদূর ?"
-এসে দাঁড়িয়ে আছি অনেক্ষন !
রঞ্জন বললো ,"ওহ সরি সরি আসছি আমি"।
রীতিমতন দৌড়াতে দৌড়াতে এলো রঞ্জন।
সাধারণ একটা সাদা শার্ট আর ডেনিমকালারের জিন্স উস্কো খুস্কো চুল ,পাক্কা সেলস ম্যান লুক ।
সো সরি আপনাকে দাঁড় করিয়ে রাখলাম আসলে আগে যার সাথেই দেখা করতে গেছি সবাই ওই ময়দা মাখতে গিয়ে একঘন্টা দু ঘন্টা দেরিতে এসেছে।
দেরি করে না আসলে তাদের নাকি কদর থাকেনা ।
গম্ভীর গলায় সঞ্চয়িতা হাত দুটো ক্রস করে দাঁড়ালো ,"আমাকে যদি ওই ধরণের মেয়ে ভেবে থাকেন তো আসছি কথা বাড়িয়ে লাভ নেই "
আরে আররে আপনি তো খামোখা রেগে যান ,আমি কি তাই বললাম নাকী ?
আসুন বসে কথা বলি।
ফুড কোর্ট এর চেয়ার টেনে নিয়ে বসলো দুজনে ,কিছু খাবেন?
" না কিছু না " .
"কিছু খাবেন না? এরকম ফুড কোর্ট এ বসে কিছু না খেলে ঠাকুর পাপ দেন।
হালকা হেসে সঞ্চয়িতা জবাব দিলো ওকে আপনার পছন্দ মতন নিন আমার জন্য কোল্ড ড্রিংকস।
সামনের নামকরা আউটলেট থেকে বেশ খানিকটা খাবার এনে বসলো রঞ্জন।
এই নিন সঞ্চিতা ম্যাডাম আপনার কোল্ড ড্রিংকস আর বাকিটা আমার , আম্পনি অবশ্য চাইলে নিতেই পারেন।
ইটস "সঞ্চয়িতা" নট "সঞ্চিতা"।
কিছু বললেন?
হ্যাঁ বললাম আমার নাম সঞ্চিতা নয় , সঞ্চয়িতা।
রঞ্জন খাবার মুখে পুরে বলে উঠলো ওই একই তো হলো।
না মশাই দুটো এক না। সঞ্চিতা কাজী নজরুল এর লেখা আর সঞ্চয়িতা রবীন্দ্রনাথ।
এখন বিদ্রোহী কবি আর বিশ্বকবির লেখনীর ধারা এক করে দিলে চলবে?
আচ্ছা অতো গভীরে পড়াশোনা নেই বলতে পারেন আমার জ্ঞানের ভান্ডার ওই জটায়ুর উটের পাকস্থলী। রবীন্দ্রনাথ বলতে বুঝি ওই সেই পপুলার হয়েছে আজকাল চাঁদ উঠেছিল গগনে ওটুকুই ,তবে নতুন ভার্সন না শ্রাবনী সেন এর ভার্সন।
"আচ্ছা বুঝলাম ,আপনার সম্পর্কে বলুন কিছু" ,সঞ্চয়িতা বললো।
খাবার চিবোতে চিবোতে রঞ্জন বললো , আমি ওই একটা বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করি ,সংসারে শুধু মা আর বাবা।বাসস্থান সূর্য সেন
স্ট্রিট,হবি বা গুন্ সেরকম কিছু নেই ওই মাঝে সাঝে গান শোনা গল্পের বই পড়ার বাতিক আছে।
আপনার প্রোফাইল এ কেন লিখে রেখেছেন "একটু কম সুন্দরী পাত্রী চাই "
না মানে আমি তো আর ওই সিনেমা আর্টিস্ট নোই বা অনেক উঁচুদরের কেউ হোমরা চোমরা কেউ নোই , নিতান্তই সাধারণ। বেশি সুন্দরী আমাকে পছন্দ করবেই বা কেন। তাই সাধারণ কেউ হলেই চলবে আমাকে একটু ভালোবাসলেই হলো।
টিসু তে মুখ মুছতে মুছতে রঞ্জন বললো ,আপনার সম্পর্কে কিছু শোনান।
সঞ্চয়িতা উত্তর দিলো আমার সম্পর্কে সবই লেখা আছে , আমি একটা খোলা বই।
রঞ্জন বললো হুম কিন্তু বই খোলা থাকলেও ভিতরের লেখা বোঝা অতটা সহজ হয় না। ওই একটা কথা আছে না ,মেয়েদের হৃদয় গুপ্তধনে ভরা সাগরের মতন।
মুখস্থ করে এসেছেন নাকি সত্যিকারেই বলছেন ?
না মানে হোয়াটস্যাপ এ একজন শেয়ার করেছিল।
এবার হেসে ফেললো সঞ্চয়িতা,ঠিক আছে আর আপনাকে হোয়াটস্যাপ উনিভার্সিটির স্টাডি মেটেরিয়াল দিতেহবে না।
চলুন আমাকে ফিরতে হবে, রঞ্জন বললো আপনার সঙ্গে খানিকটা হেঁটে গেলে আপত্তি হবে?
"না চলুন।"
সঞ্চয়িতার ফোন এলো "কি রে তুলি কখন ফিরবি? "
"হাঁ মা এই আসছি ,রাস্তায়।"
কল কাটতে রঞ্জন জিজ্ঞেস করলো আপনার আদুরে নাম বুঝি তুলি ?
সঞ্চয়িতা তাকিয়ে বললো হাঁ ,কিন্তু লুকিয়ে অন্যের কথা শোনা ব্যাড হাব্বিট।
আরে আমি ইচ্ছা করে শুনিনি বিদেশি ফোন গুলো এতো জোরে বাজলে আমার কি দোষ ।
হুম ঠিক আছে।
"কথাটার জবাব দিলেন না তো ?"
ছোটবেলায় আঁকতে ভালোবাসতাম বলে দিদা রেখেছিলো ,
তো এখন আঁকেন না কেন ?
আঁকা?মনে পড়তে লাগলো কিভাবে অনির্বান ওর আঁকা নিয়ে মজা করেছিল সবার সামনে, অপমান করেছিল । তার পর থেকে আর ছুঁয়ে দেখেনি রং তুলি।
আরে কোথায় হারিয়ে গেলেন ভাবতে ভাবতে।
সঞ্চয়িতা জবাব দিলো কিছু না , জাস্ট সময় হয় না।
আরে সময়ে বের করে আঁকুন ,ভালো হলে ভালো, যদি ভালো না হয় লোকেদের বলবেন মডার্ন আর্ট।
স্মিত হেসে সঞ্চয়িতা বললো ঠিক আছে।
হালকা বৃষ্টি শুরু হয় গেলো দৌড়ে দুজনে সাইড এর শেড এর নিচে দাঁড়ালো। রঞ্জন বলে উঠলো "আগে থেকে বলা নেই কথা নেই হটাৎ বৃষ্টি "
"আমার মা কি বলেন জানেন? "
"কী বলেন উনি?"
"বলেন কেউ অকারণে দুঃখ পেলে প্রকৃতিও দুঃখ পায়ে ,সামলাতে পারে না কেঁদে ফেলে "
সঞ্চয়িতার মন তখন চলেগেছে কয়েক বছর আগে এরককমি এক নির্জন বাস স্ট্যান্ড এ বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যাতে অনির্বানের ঠোঁটের উষ্ণ স্পর্শে।
সময় পরিস্থিতি ভুলেহারিয়েগিয়েছিলো অন্য জগতে।
খেয়াল হলো চোখের সামনে রঞ্জন হাত নাড়তে থাকায়ে , আপনি আবার স্বপ্নের দেশে চলে গিয়েছিলেন ?
হাত বাড়িয়ে রঞ্জন বৃষ্টি দেখে বললো কমে গেছে। এখানে আর দাঁড়ালে আর বাস ধরতে হবে না ,মশারা আপনাকে উড়িয়ে বাড়ি পৌঁছে দেবে
আবার হাঁটা দিলো দুজনে।
তা আজকের সাক্ষাতের উপর "শেষ পর্যন্ত কি ঠিক হলো ? উইকেট আছে নাকি রান আউট ?;রঞ্জন জিজ্ঞাসা করলো
এখনো পর্যন্ত ডিসিশন পেন্ডিং বলতে পারেন ,তবে টিকে যেতেও পারেন " , সঞ্চয়িতা উত্তর দিলো।
বাস ধরার জন্য পৌঁছে রঞ্জন জিজ্ঞেস করলো ," একটা কথা জিজ্ঞেস করবো? "
সঞ্চয়িতা বললো হাঁ করুন আবার এতো সৌজন্য কিসের।
"আপনি সত্যিকারের বিয়ে করতে চান তো ? আপনার সাথে কথা বলে মনে হলো যেন
বেখেয়ালি মনে কিছু খুঁজছেন, কিছু থেকে পালানোর চেষ্টা করছেন "
থমকে গেলো সঞ্চয়িতা। এ প্রশ্ন সে নিজেকেই কতবার করেছে উত্তর পায়নি।
কিছু আর কথা উত্তর হলো না বাস এসে গিয়েছে। উঠে পড়লো সে।
-------------------------------------------------------------------------------------------------------
বেশ কয়েক দিনে বাদে , রঞ্জন বসে একটি রেস্টুরেন্টএ বিয়ের জন্য অন্য একজনের সাথে দেখা করতে এসেছে। মাঝে কয়েকটা মাস কেটে গেছে সেই দিনের পর সঞ্চয়িতার সাথে আর কথা হয় নি। নিজের পরিচয় দিয়ে মেয়েটি তার রান্নার গুণাগুণ বলছিলো ,এসব শুনতে শুনতে হটাৎ পিঠে ধাক্কা ,"আরে আপনি এখানে বসে আপনাকে আমি খুঁজে যাচ্ছি কত করে "
মুখ তুলে অবাক হলো ; সঞ্চয়িতা এখানে কি করছে?
খুব সুন্দর করে শাড়ী পড়েছে একটা ,মাথায় চুলের কাছে ফুলের খোঁপা দেখে মনে হচ্ছে এখুনি শান্তিনিকেন এ বসন্ত উৎসব থেকে এলো। হা করে রঞ্জন দেখছে শুধু।
মেয়েটির দিকে তাকিয়ে সঞ্চয়িতা বলে উঠলো সরি বোন ডোন্ট মাইন্ড তোমার এই বন্ধুটিকে আমার এখনই দরকার, নিয়ে যাচ্ছি।
মেয়েটি তখন সুক্ত শেষ করে সবে পাঁঠার ঝোল রান্নার গল্প স্টার্ট করেছিল। ,এসব দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছে।
কিছু বোঝবার আগেই হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে বাইরে ,ট্যাক্সি ডেকে সঙ্গে সঙ্গে চলুন দেরি হয় যাবে।
"আরে কোথায় যাচ্ছি আমরা ,আপনি জানলেন কিভাবে আমি এখানে "
"আপনার বাড়ির যে ঠিকানা দেয়াছিলো সেটা দেখে আপনার বাড়ি গিয়েছিলাম আপনার মা বললেন আপনি এখানে আর কোথায় যাচ্ছি সেটা একটু বাদেই বুঝে যাবেন "
একি মায়ের সাথেও দেখা হয় গেছে । বাড়ি গিয়ে শিওর মা নাওয়াজউদ্দিন সিদ্দিকী স্টাইলে ইন্টারোগেশন শুরু করবে আমাকে।
একটু বাদে গাড়ি টা একটা বিয়ে বাড়ির সামনে দাঁড়ালো।
হাত ধরে ভিতরে নিয়ে গিয়ে সোজা গেলো বর যেখানে বসে ,রঞ্জন দেখে বুঝলো কোনো বিয়ের রিসেপশন।
সোজা গিয়ে বরের সামনে দাঁড়িয়ে সঞ্চয়িতা বললো ,রঞ্জন বাবু আলাপ করিয়ে দি ইনি হচ্ছেন অনির্বান আজকের এই রেসিপেশন ,এনার বৌভাতের। এনার আরেক পরিচয় ইনি একজন মেরুদন্ডহীন ,স্বার্থানেষী পুরুষ ওহঃ আরেকটা বিশেষ পরিচয় ইনি আমার এক্স বয়ফ্রেইন্ড।
অনির্বান এসব দেখে ভয় পেয়ে গেছে , বলছে "তুলি শোনো সিন ক্রিয়েট করো না"।
থাক অনির্বান ওই নামে ডাকার কোনো দরকার নেই ,ভয় পেয়ো না তোমার বিয়ে তে কোনো প্রব্লেম ক্রিয়েট করবো না।
শুধু আলাপ করিয়ে দি এর সাথে এ হলো রঞ্জন ,আমার খুবই বিশেষ বন্ধু এবং অদূর ভবিষতে কোনো বিশেষ কার্ড এ এনার নাম তা দেখতে পাবে।
যাই হোক ভালো থেকো।
যেমন ঝড়ের গতিতে সঞ্চয়িতা ঢুকেছিলো তারচেয়ে বেশি গতিতে বেরিয়ে এলো।বেশ খানিকটা যাওয়ার পর রঞ্জন বলে উঠলো যা সব বলে এলেন ওনাকে রাগাবার জন্য আগে থেকে জানিয়ে দিতেন তাহলে আমিও সেই লেভেল এ অভিনয় করে দিতাম।
আধো অন্ধকার রাস্তায় দাঁড়ালো সঞ্চয়িতা ,যদি বলি যা যা বলেছি কোনোটাই মিথ্যে না সব সত্যি; তবে?
রঞ্জন দাঁড়িয়ে গেলো অবাক হয়ে।
সঞ্চয়িতা বলে যেতে লাগলো প্রথমে আমি বিয়ে করতে চেয়েছিলাম শুধু ওর স্মৃতিথেকে পালাবো বলে। কিন্তু এই কয়েক মাসে ভাবার অনেক সময়ে পেয়েছি ,আপনার মতন এরকম কিউট একজনকে না ভালোবেসে থাকা যায় নাকি।
রঞ্জন বললো ,আপনার মতো অসামান্যা এতো ট্যালেন্টেড ব্যাক্তির সাথে আমার মতন সাধারণ একটা ছেলের কি মিল হবে ?
সব কিছুর আড়ালে আমিও যে অতি সহজ একটা মেয়ে ,সাধারণের থেকেও সাধারণ।
তাছাড়া আপনিও যে নিজের সম্পর্কে সবকিছু বলেননি ,আপনি নিজে তো সাধারণ নন ,হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা কবিতার বই বের করে দেখালো সঞ্চয়িতা,এই বই টা যে আপনি লিখেছেন সেটা তো বলেননি।
রঞ্জনের এবারে অবাক হওয়ার পালা ,ওহ আপনি তো শার্লক কেও টেক্কা দেবেন।
হুম মাঝে মাঝে একটু করতে হয় বরের উপর গোয়েন্দাগিরি ,যাই হোক মেয়েদের হৃদয় গুপ্তধনে ভরা সাগরের মতন বলেছিলেন না?
তা ডুবে দেখার রিস্ক নেবেন নাকি?
আমাদের হাতে অনেক সময়ে সামনে মলমাস তারপর দুর্গাপুজো কোনো বিয়ের তারিখ নেই এখন তাই খুঁজে বেড়ান যত ইচ্ছা অতলস্পর্শী হৃদয়।
রাস্তার অন্ধকারের মধ্যে আস্তে আস্তে দুটো ছায়া একসাথে দূরে চলে যেতে লাগলো ,বাতাসে হালকা শিউলি ফুলের গন্ধ।
দূর থেকে একটা হাল্কা স্বরে গান ভেসে আসছে ,
দেখা হয়েছিল তোমাতে আমাতে কি জানি কি মহালগনে ,চাঁদ উঠেছিল গগনে।............................
প্রকৃতির কলমে পুনশ্চ : সঞ্চয়িতা আর রঞ্জনের বিয়ে খুব ভালোভাবেই হয়েছিলো ,ফুলসজ্জার রাত্রে তুলি গিফট করেছিল তার নিজের হাতে আঁকা রঞ্জনের ছবি ,আর রঞ্জন একটা কবিতা লিখে উপহার দিয়েছে ,কবিতার নাম আর কি বা হবে ,"হৃদয়ের সঞ্চয়িতা" !!!