সম্পর্ক
সম্পর্ক
সকাল বেলায় ঘুম থেকে উঠে মৃগাঙ্ক কফি নিয়ে বসে খবরের কাগজটা উল্টে পাল্টে দেখছিলো ,তখনি মোবাইল এ একটা ফোন এলো ,সুনয়না করেছে।
সুনয়নার সাথে কথা নেই বেশ কয়েক মাস ,মাঝে শুধু কথা হতো দুজনের ল-ইয়ারের মারফত।
রিসিভ করে বললো "হ্যালো "
উল্টো দিক থেকে এক নিঃশ্বাসে সুনয়না আগে থেকে ঠিক করে রাখা কথাগুলো বলে গেলো।
"আমাদের ম্যারেজ সার্টিফিকেট টা আর সাথে বিয়ের ছবির অরিজিনাল পিকচার গুলো লাগবে ,ডিভোর্সের জন্যে ডকুমেন্টস জমা দিতে হবে।"
এপ্রান্ত থেকে শুধু বললো "ওকে "
"আর দয়া করে মনে রেখো অফিসিয়াল ব্যাপার সেই মতন ছবি দেবে নইলে লোকেদের সামনে স্ত্রী কে অপমানিত করা তো কারুর কারুর রক্তেই আছে "
মৃগাঙ্ক মাথা টা একটু গরম হলো তাও শান্ত ভাবে শুধু বললো "আচ্ছা ঠিক আছে ".
ফোন টা রেখে দিয়ে আলমারি টা খুলে ,কাগজপত্র ঘটতে লাগলো।
বিয়ের সার্টিফিকেট আর ছবিগুলো দেখতে দেখতে ফিরে গেলো সেদিনের বিকালবেলায় ।
মৃগাঙ্ক সূর্য কে বললো "হতভাগা ধীমানটা কোথায় গেলো ,বিয়ের মালাটা নিয়ে এখনো এলোনা "
সূর্য উত্তর দিলো , "দাঁড়া তুই টেনশন করিস না ,আমি দেখছি "
সূর্য ধীমানকে কল করলো ," কিরে ছাগল বেঁচে আছিস না মারা গেছিস "
ধীমান উত্তর দিলো , "আরে দাঁড়া না মালা কিনছি "
" তুই কি গাছে চড়ে ফুল পেড়ে তারপর ছুঁচ সুতো কিনে মালা বানাচ্ছিস নাকি "
" আরে আসছি দু মিনিটে ,বন্ধুর বিয়ে বলে কথা একটু স্পেশ্যাল মালা না হলে চলে "
ক্ষণিকবাদে ঘেমে নেয়ে ধীমান এলো মালা নিয়ে ,"মৃগাঙ্ক এই নে একেবারে স্পেশাল বিয়ের ইস্পেশাল মালা "
মালা টা মৃগাঙ্ক নিয়ে বললো "কি যেন একটা পচা পচা গন্ধ আসছে "
ধীমানের মুখ চোখ অবাক হচ্ছে "গন্ধ কোই নাতো "
সূর্য নাক টেনে বললো "মনে হচ্ছে এই মালা থেকে আসছে ;দেখি তো "
" হ্যান ঠিকই তো" সূর্য মালা টা দেখে বললো "এই মালার মাঝের গোলাপ ফুল গুলো থেকে আসছে পুরো পচা "
মৃগাঙ্ক রেগে বলে " শালা আমার বিয়ের জন্যে বেছে বেছে পচা ফুলের মালা "
ধীমান নাক টেনে বললো "কি করবো সকাল থেকে নাকটা জ্যাম সর্দি হয়েছে কিছু গন্ধ আসছে না "
সূর্য তেড়ে গেলো "দেব এক কানের গোড়ায় ;নাকটার সাথে সাথে চোখটাও গেছে নাকি ,দেখে নিতে পারিস না "
ধীমান বললো "সরি এবারের মতন এডজাস্ট করে নে ,পরের বার ঠিক করে দেব "
মাথায় চাঁটি মেরে সূর্য বললো "এটা ওর বিয়ে ; পাঁঠাটা জন্মদিন না , পরেরবার ঠিক করে দেব " ধীমানকে ভেঙ্গিয়ে বললো।
মৃগাঙ্ক বললো থাক ঝগড়া করতে হবে না ভিতরে চল দেরি হয় যাচ্ছে।
বলছি সূর্য আমার কাছে ভালো পারফিউম আছে একটু ফুলে মেরে দেব ? বেশ ফুরফুর করে গন্ধ বেরোবে " ;ধীমান আস্তে করে বললো সূর্যকে।
সূর্য দাঁত চিপে চিপে উত্তর দিলো "তুই কি চাস বন্ধুর বিয়ের দিন তোর মৃত্যুদিন হোক"
"না না সেটা চাই না ,তুই তো জানিস আমার এখনো বিয়ে আর ইয়ে দুটোই বাকি "
তাহলে চুপ চাপ দাঁড়া।
আরে তোমরা কোথায় ছিলে রেজিস্ট্রার ,ম্যাডাম বসে আছেন কতক্ষন " সুনয়না এসে জিজ্ঞেস করছে।
ভিতরে গিয়ে সমস্ত নিয়ম কানুন চলতে লাগলো।
তুমি এখানে আর তুমি এপাশে সিগনেচার করো ,রেজিস্ট্রার ম্যাডাম মৃগাঙ্ক আর সুনয়না কে বললেন।
সুনয়না সই করতে গিয়ে থমকে গেলো একটু ভাবতে লাগলো মা বাবার অমতে বিয়ে কি ঠিক হচ্ছে।
মৃগাঙ্ক পাশ থেকে হাত টা ধরে বললো "পাশে আছি পাশে থাকবো কথা দিলাম ,চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে "
সুনয়না স্মিত হেসে সই সম্পূর্ণকরলো।
পাশ থেকে সবাই হাততালি দিয়ে উঠলো , পিছন থেকে ধীমান সিটি মেরে দিলো।
এবার যারা সাক্ষী তারা সই করুন।
ধীমান সই করতে গিয়ে দেখে কালি পড়ছে না।
চেপে চেপে কয়েকবার চেষ্টা করছে , আরে আস্তে চাপুন ছিড়ে দেবেন নাকি কাগজ।
মৃগাঙ্ক বলছে কি পেন এনেছিস ,দেখে নিস্ নি।
"আরে আমি তো অফিসে ডাইরেক্ট বস এর টেবিল থেকে ঝেপে দিয়েছিলাম ,এ শালা কিপ্টে বস পেনের কালি ভরে না এখানেও কস্ট কাটিং এর ধান্দা "
পেনটা নিয়ে জোরে জোরে ঝাড়তে লাগলো ,সুনয়নার বান্ধবী নবনীতা বললো অরে করছেন কি কারুর চোখে ঢুকিয়ে কানা করে দেবেন তো ,এই নি আমার্ পেন।
একগাল হেসে পেন নিয়ে সই করলো সে।
"সূর্যরে নবনীতাকে দেখলি আমাকে পেন দিলো ,আজ পেন দিয়েছে কালকে হৃদয়টাও দিয়ে দেবে।"
এইটা যদি ওর কানে যায় না তাহলে হিল ওয়ালা স্যান্ডেল টা দেখে নে ওটা খুলে উত্তম মাধ্যম দেবে।
এবারে একটা গ্রুপ ফটো ,এই একটু চেপে দাঁড়া ছবি উঠছে তো.
অটো টাইম সেট করা ক্যামেরা তে ছবি উঠলো , ত্রি টু ওয়ান স্মাইল।
ফ্লাশের আলোর সাথে সাথে আবার মনটা বাস্তবে ফিরে এলো মৃগাঙ্কর।
হাতে ধরা তখন সেদিনের ছবিটা।
এক দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে ছবিটা রেখে দিলো
পিটিশন জমা দেয়ার পর হিয়ারিং ডেট পড়েছে ,দুজনে হাজির নিদৃষ্ট দিনে। উকিল এসে বললো এক ঘন্টা দেরি হবে। দুজনে বাইরে বেরিয়ে এলো। দুজনে দুটো আলাদা চায়ের দোকানে গিয়ে দাঁড়ালো।
চায়ের দোকানে একটা চা অর্ডার দিয়ে বসলো সুনয়না। পাশে বসা এক পৌড় স্বামী -স্ত্রী যুগল বসে।
বয়স্কা ভদ্রমহিলা দোকানদারকে বলছেন ,"ভাই ,দুটো চা দেবে তো ,একটা চিনি ছাড়া ওনার জন্যে "
মাসিমা চিনি ছাড়া চা টা শেষ হয় গেছে দেরি হবে ,তাহলে একটা দিয়ে দি ?"
"না না থাক ",চা লাগবে না আমার একার জন্যে ,তুমি বরঞ্চ একটা বিস্কুট এর প্যাকেট দাও।
সুনয়না দেখে ভাবলো কেন মেয়েদেরই স্যাক্রিফাইস করতে হবে ,মৃগাঙ্কর সাথে ঝগড়ার শুরু তো ঐভাবেই " ভাবতে লাগলো পুরানো ব্যাপারগুলো।
লাঞ্চ করতে বসেছিল দুজনে একটা রেস্টুরেন্টে, সুনয়না বলছে ," কি অর্ডার দি বুঝতে পারছি না !"
দেখো যে নামটা পছন্দ হয়ে ,
"ব্লু লেগুন অর্ডার দি ,বেশ সমুদ্রের ফিলিং আছে।
আচ্ছা সমুদ্রের ফিলিং আরো একটাতেও আছে নিচের নামটা দেখো ,ওটা আরো বেটার " ইয়ে অন The বিচ লেখা দেখো "
মেনু কার্ড টা দেখে মাথায় মারলো "খালি এসবি মাথায় ঘরে একেবারে ছোটোলোক "
খাবারের অর্ডার দিয়ে সুনয়না বললো ,"তা আজকের এই খাওয়াদাওয়ার অকেশন টা কিসের"
খাবার একটা তন্দুরি চিকেনের লেগ পিস চিবোতে চিবোতে বললো ,গুডনিউস আছে প্রমোশন হয়েছে।
"এতো ভালো খবর চেপে রেখেছিলে ,শুধু treat এ হবে না আমাকে ভালো একটা নেকলেস কিনে দিতে হবে "
এই দেখো "গাছে কাঁটাল গোঁফে তেল দেয়া শুরু " ,এখনো মাইনে পেতে কয়েকমাস লাগবে এর মধ্যে নিজের ধান্দা শুরু ।
"থাক লাগবে না থালাতে চামচ টা রেখে ",সুনয়না রেগে বললো।
"আরে আরে খালি রাগ ,বউরা কিছু দাবি করলে বর না মেনে যাবে কোথায় ,নইলে ঘরের ঝাঁটার মার থেকে বাঁচা যাবে না।
পরে আস্তে করে মৃগাঙ্ক বললো ,"জানোই তো তুমি রাগলে গাল টা টমেটোর মতন লাল হয় যায় ,তখন সবার সামনে যদি চুমু খেয়ে নিলে কিছু দোষ দিও না "
মুখ টিপে হাসি চেপে হাতের ফর্ক দিয়ে খোঁচা মারলো মৃগাঙ্ক কে।
খাওয়া শেষে ফেরার সময়ে মৃগাঙ্ক বললো ,এই দেখো বলতে ভুলে গিয়েছিলাম " আমাকে হয়তো কলকাতার বাইরে পোস্টিং দেবে , তুমি কথা বলে রাখো তোমার অফিসের সাথে রেসিগনেশন ফর্মালিটি শেষ করতে কদিন লাগবে "
"রেসিগনেশন কেন , আমার তো সবে কিছু দিন হলো চাকরি " সুনয়না জিজ্ঞেস করলো।
"দেখো আমি বাইরে থাকলে তুমি এখানে একা থাকবে ?
"তাছাড়া ওখানে তুমি গেলে আমার থাকা খাওয়ার কি হবে বলো "
সুনয়না একটু রাগতস্বরে বললো "আমার পরিচয় টা কি তোমার স্ত্রী নাকি চাকরানী?
মৃগাঙ্ক বললো "কি ছোট খাটো ব্যাপারনিয়ে সিনক্রিয়েট করছো,বেশি অসুবিধা হলে বাপের বাড়ি চলে যাও "
মৃগাঙ্ক কথা টা বলেই চুপ করে গেলো রাগের মাথায় ভুল বলেফেলেছে।
চোখের কোনটা মুছে সুনয়না বললো "সত্যি তুমি বদলেই গেছো ,এই মৃগাঙ্ক কে আমি চিনি না "
"মিসেস সুনয়না সেন কোর্টে নামটা শুনতে তন্দ্রা ভাব কেটে গেলো ,
জজ বলে চললেন ,"Section 13B of Hindu Marriage Act 1955......" আর কিছু কানে আসছিলো না ,কয়েকটা কোর্টের কাগজ দিয়ে শুরু হওয়া এতদিনের স্বপ্ন আশা আস্তে আস্তে কয়েকটা নতুন কাগজে শেষ হয় যাচ্ছে।
"আপনার কোনো দাবি আছে ?" -প্রশ্ন শুনে সুনয়না বললো "না, শুধু মুক্তি চাই " .
সবকিছু ফর্মালিটি করে জজ বললেন ,"ফার্স্ট পিটিশন, এর পরে ৬ মাস কুলিং পিরিয়ড দেয়া হলো পুনরায় আপনাদের ভাবনাচিন্তার জন্যে ,৬
মাস বাদে সেকেন্ড পিটিশনে বাকি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।
সুনয়না আর মৃগাঙ্ক বেরিয়ে গেলো ,তাদের গাড়ি দুজনের দুদিকে চলে গেলো ধোঁয়া উড়িয়ে।
কয়েকটা মাস পেরিয়ে গেছে ,দুজনেই দুজনের মতন করে নদীর বানে ভেসে যাওয়া জীবন এর আসবাব গুছিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টা করছে।
এমন সময়ে ফোন এলো মৃগাঙ্কর কাছে ,"আমি কি সবজান্তা হনু সেন এর সাথে কথা বলছি "
"এইভাবে একজনই সম্বোধন করতে পারে ,"শালা ধীমান ,ছাগল এতদিন বাদে মনে পড়লো ,সেই কবে বাইরে পড়তে গেলি আর খবরই নেই "
"হাঁ রে একদম টাইম পেত
াম না ,এখন এই ফিরেছি এক সপ্তাহআগে,"
"ফাটাফাটি তো ,একসাথে দেখা করি চ "
"আরে ওই জন্যেই ফোন করলাম রে ,সামনে আমার বিয়ে তাই চলে আসিস সূর্যকেও বলেছি আসছে "
"হায় রে তা কার এতো ভাগ্য খারাপ হলো যে তোকে বিয়ে করছে "
"নবনীতা কে মনে আছে তো ? সেই পেন দিয়েছিলো এখানে উনিভার্সিটি তে এসে দেখি আমার সাথে একই ব্যাচ,তারপর হয় গেলো হালকা করে প্রেম "
"শেষে সত্যি তোর মতন একটা বাঁদরের গলায় মুক্ত জুটলো "
হাসি থামিয়ে ধীমান বললো একটু সিরিয়াস গলায় , "একটা ব্যাপার তোকে একটু জানিয়ে রাখি বুঝলি। আমাদের বিয়ে একটা নিউট্রাল লোকেশন এ হচ্ছে ডেস্টিনেশন ওয়েডিং ,নবনীতা সবাইকে বলেছে হয়তো সুনয়না ও আসবে ; নবনীতার মুখে তোদের ব্যাপারটা জানলাম হোপ এই দু তিন দিনের জন্যে এডজাস্ট করে নিস্ একটু "
মৃগাঙ্ক বললো ,"এসব পাস্ট ;কোনো ব্যাপার নেই ও যাবে ওর বান্ধবীর বিয়েতে আমি যাবো আমার বন্ধুর বিয়েতে ,ব্যাস হয় গেলো "
টেবিল এ বসে চায়ের পেয়ালাতে চুমুক দিতে দিতে তিন বন্ধুতে গল্প করছিলো ,এমন সময়ে পিছনে সেই চেনা গলার স্বর পাওয়া গেলো ,"কি রে নীতা ডুবে ডুবে জল খাচ্চিলিস এতদিন জানাস নি কিছু "
নবনীতা দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো সুনয়নাকে ,ঘাড় ঘুরিয়ে দেখলো একবার মৃগাঙ্ক।
কাকে দেখছে সে ,আগের সেই শাড়ী পড়া লম্বা চুলের মিষ্টি মেয়েটা কোথায় ,দেখলো চুল ছোট ছোট করে কাটা চুল পরনে টপ আর জিন্স ,ওয়েস্টার্ন পড়লেও এখনো সেই একই ভাবে মার্জিত আর সাথে মিষ্টি হাসি। দেখে হালকা বুক তা চীন চীন করে উঠলো। একবার চোখে চোখ পড়তে মৃগাঙ্কউঠে চলে গেলো সেখান থেকে।
সুনয়না দেখতে পেলেও কিছু বলল না বান্ধবীদের সাথে ব্যাস্ত হয় গেলো।
সন্ধ্যের সময়ে সবাই বসেছে বাইরে একসাথে বসেছে হালকা আড্ডা চলছে আর সাথে মাঝে মাঝে গিটার হাতে গান।
সূর্য বললো তা আজকের স্পেশাল পারসন একটা গান হবে নাকি ?
সবাই ধীমানের দিকে চাইলো ,ধীমান বললো, "ভাই তুই জানিস আমি বাথরুম সিঙ্গার এখন এখানে সেই বাথরুমের ফীল পাওয়া যাবে না "
সূর্য একটা বোতল থেকে কোল্ড ড্রিঙ্কস গায়ে ছুড়ে বললো ,"নে তোর শাওয়ারের জলের বন্দোবস্ত করে দিলাম এবার গা "
ধীমান একটা "আআআ করে উঠতেই নবনীতা এসে মুখ চাপা দিয়ে বললো ,থাক বাবু আর গান গেয়ে কাজ নাই ,এখুনি গাধা গুলো দৌড়ে আসবে মেলায় হারিয়ে যাওয়া ভাই পেয়েছে ভেবে "
সূর্য গিটারটা হাত বাড়িয়ে মৃগাঙ্ক কে দিয়ে বললো "ভাই যায় যাক ছোট্ট করে সেই ক্যান্টিন এর মতন "
মৃগাঙ্ক একবার সুনয়নার দিকে তাকালো দেখলো বসে আছে চুপ চাপ,
গিটার টা নিয়ে হালকা স্বরে গাইতে শুরু করলো ,
ইয়াদ হে মুঝকো তুনে কাহা থা ,
তুমসে নাহি রুঠেঙ্গে কাভি ,
দিল কি তারাহ সে হাত মিলে হেন
ক্যাইসে ভালা ছুঠেঙ্গে কাভি
তেরি বাহো মে বীতে হার শাম
বেয়াফা এভি কেয়া ইয়াদ নাহি। ..
গিটার এর তালে সবাই একসাথে গেয়ে উঠলো কেয়া হুয়া তারা ওয়াদা। ....
দেখলো সুনয়না উঠে চলে গেছে। খানিক বাদে ছাদে গেলো মৃগাঙ্ক একটা সিগারেট ধরাতে গিয়ে দেখলো একপাশে সুনয়না বসে ,ওকে দেখে চোখ মুছতে মুছতে চলে যেতে গেলো ,পাশ দিয়ে যেতে যেতে বললো সবার সামনে অপমানটা না করলেও হতো ।
মৃগাঙ্ক অনেক কিছু বলতে চাইছিলো শুধু বললো ,"সরি !"
পরদিন সকালে খুব হৈচৈ হচ্ছে ,সবাই বাইরে যাচ্ছে এখানে একটা মন্দির আছে সেখানে পুজো করবে বিয়ের আগে। সবাই বেরোচ্ছে আলাদা আলাদা গাড়িতে উঠতে যাবে। এমন সময়ে হটাৎ নবনীতা বলে উঠলো "এই ধরো ধরো "
মৃগাঙ্ক এগিয়ে গিয়ে দেখছে সুনয়না মাথা ঘুরে অজ্ঞান হয় গেছে , তাড়াতাড়ি গিয়ে ওর কাছে গিয়ে দেখছে।
ওর হ্যান্ড ব্যাগ টা দাও ,"তাড়াতাড়ি ওর হ্যান্ড ব্যাগ থেকে একটা ওষুধ বের করে মুখে ধরলো ,আজকে শিওর সুগারের ট্যাবলেট টা খায় নি "
খানিকবাদে চোখ মেলে তাকালো সুনয়না,সবাই উদ্বিগ্ন ভাবে দেখছে। সুনয়না উঠে বসে বললো "আমি ঠিক আছি ,তোমরা যাও ঘুরে এস অসুবিধা হবে না "
মৃগাঙ্ক উঠে দাঁড়িয়ে সরে গেলো ,
সূর্য বললো "একটা ডাক্তার ডাকি "?
" না না তোমাদের ব্যাস্ত হতে হবে না, একটু বিশ্রাম নিলে ঠিক হয়ে যাবে "
সুনয়না কে ঘরে পৌঁছে দিয়ে ওরা বেরিয়ে পড়লো।
খানিকবাদে সুনয়নার ঘরের দরজায় টোকা ,দেখলো মৃগাঙ্ক দাঁড়িয়ে।
মৃগাঙ্ক কাছে এসে এক গ্লাস শরবত রাখলো ,"খেয়ে নাও "
"না আমার কিছু লাগবেনা আমি ঠিক আছি "
"হাঁ ,সে তো জানি কোনো বারেই সেটা লাগে না ,নিজেকে তো ক্যাপ্টেন মার্ভেল মনে করো ,চুপ চাপ খেয়ে নাও "
গ্লাসে চুমুক দিয়ে সুনয়না বললো নীতাকে বললাম চিন্তা না করতে তও এসব বানাতে গেলো।
"এটা নবনীতা বানায়নি আমি আনলাম "
"জীবনে তো নিজের হাতে জল গড়িয়েখেতে পারতে না ,এসব কবে শিখলে "
"বৌ না থাকলে একটু আধটু শিখে নিতে হয় " . পাশে বসে মৃগাঙ্ক দেখলো একবার হালকা করে কপালে হাত বুলিয়ে দিতে গিয়েও হাত তা গুটিয়ে নিলো ,হালকা হেসে বললো "তুমি বিশ্রাম নাও , কিছু লাগলে বোলো "
*
সন্ধেয় বেলায় বিয়ে হচ্ছে ,সবাই রেডি হয়ে নিচে এসেছে। মৃগাঙ্ক দেখলো সিঁড়ি দিয়ে নেমে
আসছে সুনয়না ,খুব সুন্দর লাগছে শাড়ী পরে।
কাছে এসে সুনয়না পাশে দাঁড়ালো ,মৃগাঙ্কর পাঞ্জাবি তা ধরে বললো "নিচু হও" , বলে পিঠের কাছে নতুন পাঞ্জাবির কোম্পানির ট্যাগ তা দাঁত দিয়ে কেটে দিলো ,তারপর মৃগাঙ্ককে দেখে বললো এখনো বৌ ছাড়া সব কিছু শিখতে পারোনি।
মৃগাঙ্ক কিছু বললো না ,খানিকবাদে বললো "দেখো যা সেজেছো আজকে বেশ কয়েকটা প্রপোসাল পেতে পারো "
তখন ধীমান আর নবনীতা সাত পাক ঘোরা শুরু করেছে ,সবাই ফুল ছুড়ছে।
কয়েকটা ফুলের পাপড়ি সুনয়নার চুলে আটকে গেছে ,মৃগাঙ্ক আগের পুরানো অভ্যাসের বশে হাত দিয়ে ফেলে মাথাতে,ফুল সরাতে।
এই সময়ে সূর্য একটা ফুল ধীমানের মাথায় জোরে ছুড়ে মেরে বলে "দেখ হতভাগা টের জন্য ভালো ফুল এনেছি ,তোর মতন পচা না যেটা মৃগাঙ্ককে দিয়েছিলিস "
ধীমান বললো "এই গুলিয়ে দিসনা , কপাক ঘুরেছি ভুলে যাবো "
মাথায় হাত পড়তে সঙ্গে সঙ্গে সুনয়না মুখ ঘুরিয়ে তাকালো ,"নিজের বিয়ের কথা মনে হতে হাত টা নামিয়ে চলে গেলো বাইরে "
সিগারেট ধরিয়ে বাইরে চলেগেলো বিয়ের মণ্ডপ থেকে দূরে,সুনয়না কয়েকবার খুঁজলো দেখতে পেলো না "
কয়েকদিন বাদে ,আজকে পিটিশন এর ছয় মাস শেষ হয়েছে "মৃগাঙ্ক রেডি হলো কোর্টে যেতে "
সব সুখ দুঃখের স্মৃতিগুলো এসে জমা হচ্ছে।
কোর্টে জিজ্ঞেস করলো ,পুনর্বিবেচনা করার পর শেষ পর্যন্ত কি সিদ্ধান্ত হয়েছে ?
মৃগাঙ্ক উঠে বললো "আমার নতুন করে কিছু বলার নেই " ;সুনয়না একবার তাকালো বললো "আমার কিছু বলার নেই, শুধু বিবাহবিচ্ছেদ মঞ্জুর করুন "
জজ তখন বিবাহবিচ্ছেদের কাগজে স্বাক্ষর করে ,স্ট্যাম্প মেরে ডিএলেন "
বাইরে বেরিয়ে মৃগাঙ্ক দেখলো বৃষ্টি শুরু হয়েছে ,ধীর পায়ে ফিরে যেতে লাগলো ফ্ল্যাটের দিকে।
এর পর আরো দু তিন দিন কেটে গেছে ,একদিন সকালে দরজায় কলিং বেল।
গিয়ে দরজা খুলতে দেখে সুনয়না দাঁড়িয়ে হাতে সেই ব্যাগ নিয়ে যেটা নিয়ে বেরিয়ে গেছিলো বাড়ি থেকে।
"কি-ব্যাপার তুমি " মৃগাঙ্ক প্রশ্ন করলো।
"হাঁ , চলে এলাম , ভাবলাম একসাথে থাকলে খরচ কম হবে,কেন থাকতে দেয়া যাবে না ?"
"কিন্তু আমাদের ডিভোর্স ...."
হাঁ ,আমাদের ডিভোর্স হয়েছে আমরা এখন আর স্বামী স্ত্রী নোই তাই বলে কোথাও লেখা নেই আমরা বন্ধু নই "
"আমি এখানেই থাকবো ,তোমাকে ভালো করে রান্না টাও শিখিয়ে দেব,মাঝে মাঝে আমাকে খাওয়াতে নিয়ে যেও কিনতু , বিয়ের চক্করে ভালো করে প্রেম টাই হয় নি ,এবারে ভাবছি ওটা ভালো করে করবো "
"কেন আপত্তি আছে তোমার "সুনয়না চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো।
মৃগাঙ্ক খানিক্ষন তাকালো সুনয়নাকে আর কিছু বলার সুযোগ দিলো না ,তারপর মুখ নিচু করে তিরতির করে কাঁপা লালচে ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।
"এই শালা এবারেও লেট করবি মালা আন্তে ",সূর্য ফোনে বলছে।
ধীমান পিছনে এসে বললো প্রেসেন্ট প্লিজ সূর্য স্যার। এই দেখ মালা নিয়ে এসেছি।
মৃগাঙ্ক জিগ্গেস করলো "কিরে, আজকেও নাক জ্যাম নাকি "
"নো চান্স ব্রাদার, এই দেখ নাসাল স্প্রে নিয়ে ঘুরছি "
ভিতরে আবার নতুন করে বিয়ে শুরু হয়েছে মৃগাঙ্ক আর সুনয়নার ,এবারে শুধু বন্ধুরা না সব রেলটিভরাও এসেছে।
নতুন জীবনে দুজনের কাউকেই স্যাক্রিফাইস করতে হয়নি শুধু চলার পথে কয়েক পা করে রাস্তা এডজাস্ট করতে হয়েছে,
মৃগাঙ্ক চাকরির লোকেশন টা এডজাস্ট করেছে যাতে সুনয়নার অফিসের অন্য একটা ব্রাঞ্চ এর কাছে পাওয়া যায়,আর সুনয়না এডজাস্ট করেছে তার পরিবারের সাথে।
বছর খানেক মনের সুখে প্রেম করে, বিয়ের ডেট পেয়েছে দুজনে ,এবারের টা একেবারে সুনয়নার মনের মতন।
আংটি বদলের পর ,মালা বদল হচ্ছে দুজনের ,ধীমান পিছইনথেকে বলে উঠলো " কিরে মৃগাঙ্ক বলেছিলাম তো পরের বার ঠিক করে দেব..............."