লাইন লাইন
লাইন লাইন
লাইন
-- জল নেবে গো জল ....!
--জল !
কথাটা শুনেই রুনি দৌড়ে ঘর থেকে বাইরে গেলো ।
-- কি জল ? কই দেখি ...।
-- ও মা- অনেক রকম জল আছে আমার
গাড়িতে । তুমি কোনটা নেবে ।
রুনি দরজা থেকে হাঁক পাড়লো । ....এদিকে এসো না...।
-- লোকটা বললো যাই ....যাই ।
বিরাট বড়ো একটা গরুর গাড়িতে বিশাল বিশাল
ড্রামে করে জল নিয়ে এসেছে লোকটা । কোথায়
থাকে কে জানে ....। লোকটা কাছে আসতেই ওকে
জিজ্ঞাসা করলো রুনি , তুমি থাকো কোথায়?
---লোকটা উত্তর দিল , আমি কোথায় থাকি
সেটা তোমার জানা দরকার না তোমার
জল দরকার ?
---- রুনি বললো জল
---- তাহলে জিজ্ঞাসা করছো আমি কোথায়
থাকি ।
---- কেন জানতে নেই ?
---- জানতে নেই কেন , জানতেই পারো ।
আমি থাকি ঐ পাহাড় তলিতে ।
ওখানে ঝর্না আছে । আর আমাদের
বড় ইন্দারা আছে । ওর জল কখনও
শুকোয় না,এই ড্রাম টায় ঝর্নার জল ।
আর এইটা তে ইন্দারার জল । যেটা
খুশি নাও ।
----- পাহাড় তলি ?
------হ্যা ।
------ সে তো অনেক দূর ।
---- ঐ জন্যই তো এতো দাম
---- ও তোমার জল দাম দিয়ে কিনতে হবে ?
---- তবে কি এমনি এমনি ? কতো গরম
বলতো । আমরা জল খেতে পাচ্ছি না। সেই জল বিক্রি করতে এসেছি ----- দাম নোব না ?
---- গরম তো অস্বাভাবিক ! তবে ঝর্নার জল -- তার স্বাদ আলাদা !
--- কতো করে দাম শুনি ।
------এক লিটার বোতলে ঝর্নার জল
দাম একশো টাকা । আর ইন্দারার জল
নব্বই টাকা ।
....... কি বলছো ।
------ ঠিকই বলছি । এ জলের গুন আছে মা।
এ জল খেলে সমস্ত রোগ সেরে যাবে ।
কথা বলতে বলতে অনেকে জড়ো হয়ে গেলো ।
এ বলে আমায় দু বোতল দাও । তো ও বলে আমায় তিন বোতল দাও । জল নিয়ে প্রায় কাড়াকাড়ি শুরু । রুনি পড়ল ফাপরে । কারণ ওর
মা তখন ঘরে নেই । মন্দিরে গেছে পুজো দিতে ।
এদিক ওদিক তাকাচ্ছে রুনি । এমন সময় ওর মা
কে দেখা গেলো আসছেন । রুনি হাত নেড়ে জানালো --তাড়াতাড়ি এসো মা । জলের তো খুব
টান । কিন্তু দাম টা যে বড্ড বেশী ।
এদিকে সবাই জল নিয়ে ছুটছে । রুনি ও ঘর থেকে
দুটো দু লিটারের বোতল এনে দাঁড়িয়ে । ওর মা
আসতেই রুনি বললো , মা জল নেবো ?
ঠিক তখনই মা ওকে ঠেলা দিলেন -- কি বলছিস ?
জল কোথায়? বিছানায় শুয়ে শুয়ে জল ?
সত্যি এক ডিগ্রি এক ডিগ্রি করে তাপমাত্রা প্রতি
ব্ছর বেড়ে চলেছে । আর বর্ষাও ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে । শুধু বাড়ছে বজ্রপাত । জল মিশনের লাইন
ঘরে ঘরে । কিন্তু সুতোর মতো জল কখনও পড়ে
কখনও তাও পড়ে না । পুকুর ডোবা তো মাঘ মাসেই তলানিতে । যে টুকু আছে গরু বাছুর কে
দিতেই শেষ । জল জল করে সারা দিন মানুষের
চিন্তার শেষ নেই । তাই ঘুমের মধ্যেও স্বপ্ন দেখছিল
রুনি । মা ঠেলা দিতেই উঠে বসলো । চোখ রগড়ে
বললো, মা -- ভোর তো হয়েই গেছে । চাপা কলে লাইন টা দিয়ে দোব । জল এলেই তো কাড়াকাড়ি
আর ঠেলাঠেলি ......কাল তো মন্ডল পাড়ার বৌটা
মার খেলো । মা বললেন , বালতি নামিয়ে দিয়ে চলে
আসলে চলবে না । ওখানে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে ।
রুনি বললো -- হ্যা , তাই থাকবো ।
ঝটিতি বালতি নিয়ে কল তলায় আসতেই দেখতে
পেলো তখন একশো মতো লাইন পড়ে গেছে ।
রুনি বালতিটা লাইনে রেখে ঠায় দাড়িয়ে রইলে ।
কেউ চাপা কলের হাতলে চাবি দিয়ে রেখেছে ।
ছটা বেজে গেছে । এক্ষুণি চালু হবে কল । সবাই এক বালতি করে জল নেওয়ার পর আবার এক বালতি পেতে পারে । এই রকম রেশনিং চলছে।
কোনো রকম ঝগড়া ঝাটি নয় ।
...................................................................
