ল ক ডা উ ন ষষ্ঠ পর্ব
ল ক ডা উ ন ষষ্ঠ পর্ব
সকাল থেকেই চিন্তায় মাথা খারাপ হবার অবস্থা। মেয়ের স্কুলে অ্যানুয়াল পরীক্ষা শেষ হবার পরের দিন থেকেই স্কুল থাকে। পরীক্ষা হয়ে গেছে বলে কোনও ছুটি থাকে না। তারপর থেকেই একে একে পরীক্ষার খাতা দেখানো শুরু হয়। ফলে রেজাল্ট বেরোনোর আগেই সব নম্বর জেনে ভারমুক্ত হওয়া যায়। কিন্তু এবার সব কিছুই ‘করোনা’ নামক ভাইরাসের জন্য আমদের জীবনের চেনা গতির পরিবর্তন হয়েছে। কয়েক মাস আগেও ভাবতে পারতাম না! আনবিক বোমা নয়, বিশ্বযুদ্ধ নয়। তবু সারা বিশ্ব এক অতি ক্ষুদ্রাদি ক্ষুদ্র ভাইরাসের ভয়ে আজ গৃহবন্দী। ছোট্ট ভাইরাস উন্নতদেশের অহংকার ধুলায় মিশিয়ে দিল। উন্নতদেশগুলোর মৃত্যু মিছিল দেখে আমাদের মত অতি জনসংখ্যা বিশিষ্ট দরিদ্র দেশগুলো চিন্তা বাড়তে থাকে। করোনায় মানুষ আক্রান্ত হতে থাকে। ভারতে করোনার জন্য লকডাউন শুরু হয়। পরীক্ষার রেজাল্ট মানে বাচ্চাদের মনে টান টান উত্তেজনা। উত্তেজনা শুধু রেজাল্ট কেন্দ্রিক নয়। কোন সেকশন হবে? বন্ধুদের মধ্যে কেউ কেউ অন্য সেকশনে চলে যাবে কিনা। ছোট ছোট মনে কত কত চিন্তা। এবার অবশ্য সেই সবের বালাই নেই। হঠাৎ আজ জানা গেলো বুকলিস্ট আপলোড হয়েছে। মাথায় হাত । আগেতো রেজাল্ট তারপর বুকলিস্ট । ঘণ্টা খানেক চেষ্টা করার পর রেজাল্টের দেখা পেয়ে মন প্রসন্ন হল। রেজাল্ট মানেই নতুন বইয়ের গন্ধ, নতুন ক্লাস ও নতুন উদ্দীপনা। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে নতুন বই কেনা সম্ভব নয়।
স্কুলের তরফ থেকে জানানো হল যেহেতু লকডাউন তাই বাড়ির বাইরে বেরোনো সম্ভব নয় কিন্তু সিলেবাস লকডাউন শুনবে না। তাই অনলাইনে পড়াশুনো চলবে। জীবন মানুষকে কতো রকম অভিজ্ঞতার সম্মুখিন করে। ক্লাস রুম নয় , ছাত্র –ছাত্রী ও শিক্ষক – শিক্ষিকারা একটা ছোট্ট যন্ত্রের সাহায্যে পুরো ক্লাস করবেন। আমার হঠাৎ মনে হল- মানব সভ্যতা বোধ হয় শেষ হয়ে যাবে। শুরু হবে যন্ত্র সভ্যতা। যে মানুষ একদিন নিজের বুদ্ধির জোরে যন্ত্র বানিয়েছে। যন্ত্রের আবেগ অনুভূতি নেই, মানুষ ও যন্ত্রের সঙ্গে সহবাস করে যান্ত্রিক হয়েছে। যাই হোক অনলাইনের ক্লাস শুরু হলে আমার জীবন থেকে চলমান দূরভাষকে সঙ্গে নিয়ে কাজকর্মের মাঝখানে হেড ফোন কানে গুজে গান শোনার যে আনন্দ সেটিও বিদায় নেবে। তা নিক মনে মনে গুণ গুণ করলাম ‘ছেড়েছো তো অনেক কিছুই পুরনো অভ্যেস অসুখ -বিসুখ হবার পরে জিলিপি সন্দেশ ’। আমি মেয়ের জন্য কিছুক্ষণের জন্য গান নাইবা শুনলাম।