ল ক ডা উ ন ( বারো )
ল ক ডা উ ন ( বারো )


এখন অন্যান্য বছরের তুলনায় গরম নেই বললেই চলে কিন্তু পারিপার্শিক পরিস্থিতির কারণে মাঝে মাঝে আমার হার্ডডিক্স গরম হয়ে যাচ্ছে। গতকাল মেয়ের জন্য গুলাব জামুন রান্না করেছিলাম । সে ভারি খুশি হয়ে খেয়েছে এখন রান্না ঘরে আমার সামানে দাঁড়িয়ে আমার প্রাণনাথ সেই অবশিষ্ট গোলাপজামুন থেকে একটা গোলাপজামুন মুখে দিয়ে (খাওয়া শেষ হয়নি) জানালো, মিষ্টি সেরকম ভালো হয়নি। অনেক দিন মিষ্টি খাওয়া হয়নি তাই মিষ্টি খাওয়ার জন্যই খাওয়া। কথা বলতে বলতে আরেকটা মিষ্টি মুখে চালান করে দিয়ে সে জানায়, এটা তৈরী করা মানে, জিনিসের অপচয় +পরিশ্রম = কোনও মানে হয়না। ময়দা থিকথিক করছে। ছেলের এতোটা ভুলে লজ্জিত মাতা এবার সংসারের রঙ্গমঞ্চে অবতরণ করলেন। ছেলেকে বললেন ‘খাচ্ছ খাও। কী দিয়ে তৈরী জেনে কী হবে ?’
দেশটা ভারতবর্ষ। এখানে মানুষের উপদেশ শুনতে চাইলেও শুনতে হবে। না চাইলেও শুনতে হবে। বাক্ স্বাধীনতা মানুষের সাংবিধানিক অধিকার। লগ ডাউন দিয়েছে অফুরন্ত সময়। তাই সারাদিন কথারা কখনো টিপ্ টিপ্, কখনো ঝিরঝির করে আবার কখনো প্রচণ্ড গর্জনে বাড়ির দেওয়ালে এসে ধাক্কা দিচ্ছে। একটা পাখি নিশ্চিন্ত মনে ব্যালকনিতে এসে বসেছিল, বেচারা শব্দ দূষণের চোটে পালিয়ে বাঁচলো। যাই হোক প্রাণনাথের বোধোদয় হওয়ায়, মিষ্টি ময়দা নয় সুজি দিয়ে তৈরী শুনে তাঁর মিষ্টি আগের মত খারাপ লাগলো না। প্রাণনাথ পরিস্থিতি খানিকটা নিয়ন্ত্রণে এনে বাড়ির আবহাওয়াকে মনোরম করার উদ্দেশ্যে যে কান্ডটা করলো তার ফলে আমার মাথায় যদি ভাতের ডেকচি বসানো হোতো তাহলে দেখা যেত ভাত ফুটে গেছে আমায় চমকে দিয়ে হঠাৎ সে রান্নাঘরের ক্যাবিনেট থেকে সব জিনিস বের করে হিট স্প্রে করলো । রান্না শেষ হয়নি কিন্তু এখন নাকি আরশোলা নিধনযজ্ঞ চলবে। শাশুড়িমা জানালেন আরশোলা নিধন রাতে রান্নাঘরে সব কাজের শেষে করতে হয়। পুত্র একটুও বিচলিত না হয়ে জানায়, আরশোলা নিধনের উপযুক্ত সময় এখনি। যখন তারা নিশ্চিতে আছে , মনে ভয়ের লেশ মাত্র নেই কারন এই সময় কেউ আক্রমণ করেনা ঠিক সেই সময় আক্রমণ করতে হয়। আমি এতক্ষণে জিগ্যেস করি, ‘ স্প্রের গন্ধে রান্না করা উচিৎ নয় আর আমার পক্ষে এত গন্ধে রান্না করা সম্ভব নয়’। প্রাণনাথ ভুবন ভোলানো হাসি হেসে জানায় কেউ থাকবে না, সব গন্ধ উড়ে যাবে। দুপুরের রান্না মাস্ক পরে শেষ করি। আজ দুপুরের খাওয়া শেষ হতে বিকেল হয়ে যায়। এখন রাত হয়েছে ।
আমি ও কন্যা মিলে বাড়ির দেওয়ালে পোষ্টার সাটাচ্ছি –‘ গৃহে শান্তি বজায় রাখার জন্য, যে কোনো গৃহ কাজে অংশগ্রহণ করার আগে অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। বাসন মাজা, চা করা এই সব কাজে অনুমতি নিষ্প্রয়োজন’।