কোথায় পাবো তারে
কোথায় পাবো তারে


বইমেলায় গিয়ে রিয়ার আজ খুব ভালো লাগছে। কতদিন পরে এলো ও বইমেলায়। চারিদিকে কত নতুন নতুন বই,কি সুন্দর গন্ধ এইসব নতুন বইয়ের,নাড়াচাড়া করতেও ভাল লাগে। সেই দুপুর থেকে সমস্ত স্টলে স্টলে বই দেখে বের়ালো ওরা,তাও কি সব ঘোরা সম্ভব হয় একদিনে! কিছু বইও কিনল ওরা,কত ছবি তোলা হল। এরপর সুজাতা ওকে টেনে নিয়ে গেল ফুচকা খেতে। ফুচকা খেয়ে সুজাতা আর রিয়া সেলফি তুললো একটা বিখ্যাত প্রকাশনার স্টলের সামনে। দুজনেই নানারকম পোজ দিচ্ছে যাতে খুব সুন্দর দেখায় ওদের, এরপর দু'জনের হাসিমুখের সেলফি উঠল। সুজাতা বাড়ি ফিরে ছনি এডিট করে রিয়াকে হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার করলো সেই ছবি। রিয়া শুয়ে ছিল। সে সুজাতার পাঠানো ছবি দেখে সোজা হয়ে বসলো। "এ কার ছবি?" ছবিতে পিছনে যে তৃতীয় ব্যক্তি,সম্ভবত ছবি তোলার মুহূর্তে এসে পড়েছিল ওদের দুজনের পিছনে। না,রিয়ার চিনতে ভুল হয়নি কোনো। এ হলো রানা,যে তার সঙ্গে প্রেমের অভিনয় করে দিনের পর দিন তাকে ভোগ করেছে। রিয়া ভালোবেসে নিজেকে সমর্পণ করেছিল রানার কাছে,বুঝতে পারিনি রানার অভিনয়। বিয়ের কথা তুলতেই সেদিন পাখি উড়ে গিয়েছিল। অনেক খোঁজাখুঁজি করেও পাওয়া যায়নি তাকে। রিয়া সুজাতাকে ছবিটা ভাল করে দেখতে বলে,জিজ্ঞেস করে ওকে,"কি রে চিনতে পারছিস?" সুজাতা বলে,"কাকে রে?" "তুই ছবিটা ভাল করে দেখেছিস?আমাদের দুজনের মাঝে একটু দূরে একটা মুখ,চিনতে পারছিস না?" "কে বল তো?আমাদের চেনা কেউ?" সুজাতা জানতে চায়। রিয়া এবার বলে,"একদিন কত কেঁদেছি যার জন্য,মন কত কু গেয়েছে ওর অমঙ্গল চিন্তায়,ও সেই রানা। এখন দেখছি সে নিছকই আমার ভুল। বেশ তো বহাল তবিয়তেই রয়েছে ও। তাহলে এটাই ঠিক ও ইচ্ছে করেই সেদিন হারিয়ে গিয়েছিল।" এর উত্তর সুজাতার জানা নেই, চুপ করে থাকে সে।
অনেকদিন পর রিয়া আজ বাড়ি থেকে বেরোল। সুজাতাই ওকে টেনে বার করলো বলা যায়। বইমেলা যেতে বরাবরই ভালোবাসত রিয়া কিন্তু গত দু'বছর ও বইমেলা কেন কোথাওই বেরোয়নি। সুজাতা ওর বাড়ি যায়,ওর সঙ্গে গল্প করে,ওকে সঙ্গ দেয়,ওর মন ভালো রাখার চেষ্টা করে। এই দু বছরের চেষ্টায় সুজাতা আজ রিয়াকে বাড়ি থেকে বার করতে পারল। গ্রাজুয়েশনের পর একটা চাকরির জন্য ও বড় অস্থির হয়েছিল, বাড়ির অবস্থা ভালো নয়,বাবার পেনশনে কোনোরকমে চলে। ছোটবোনটা তখনও স্কুলের গণ্ডি পেরোয়নি,মা হার্টের রোগী। সব সামাল দিতে রিয়া হাল ধরতে চেয়েছিল কিন্তু কিছুতেই কিছু জোটাতে পারছিল না। এমন সময় ওর আলাপ হয় সুমনের সঙ্গে,সেও চাকরির সন্ধানে বিভিন্ন জায়গায় যায়,এভাবেই আলাপ হয় ওদের। ক্রমে তা বন্ধুত্বে ও পরে ভালবাসায় পরিণত হয়। ভালোবাসা মন পেরিয়ে দেহ ছোঁয় আর তা নিয়মিত চলতে থাকে। এরমধ্যে সুমন একটা ভালো চাকরি পায়। রিয়া সুমনকে ঘিরে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখতে থাকে। এরপর পোস্টিং দূরে বলে সেই যে সুমন চলে গেল আর কোন যোগাযোগই রাখল না সে।
আজ এতদিন পর সেলফিতে সুমনের ছবি দেখে রিয়ার বুকের ভেতর উথালপাথাল শুরু হলো আবার। রিয়া বুঝতে পারে সুমন তাকে ঠকিয়েছে তবু তার জন্য কেন যে ওর মন এত উচাটন বুঝতে পারে না কিছুতেই। সুমনের ছবি ওকে পাগল করে দিয়েছে। মনে মনে আপসোস হয় ওর,"সুমন আমার এত কাছে ছিল আর আমি জানতেও পারলাম না?আচ্ছা সুমন আমাকে দেখেছে? চিনতে পেরেছে? ওর একবারও আমার কাছে আসতে ইচ্ছে করলো না? বড্ড যে ওকে পেতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু শুধু এই ছবি দিয়ে তো আমি ওকে খুঁজে বার করতে পারব না। কোথায় পাব আমি আমার সুমনকে"। বুকের মধ্যে তোলপাড় সারাক্ষণ,সুমনের ছবি খুলে তাকিয়ে থাকে। ওর তখন পাগলের মত অবস্থা। হঠাৎই কি করে যেন ওর ফোনের সমস্ত ডেটা উড়ে গেল,অনেকদিন থেকে মেমোরি ফুল দেখাচ্ছিলো,কিছু ডিলিট করবে ভাবছিলো,তা আর হয় নি। রিয়া দিশেহারা হয়ে পড়লো। সেলফিতে সুমনের ছবিটুকু ছিল যেন পিছন থেকে উঁকি দেওয়ার মত। ওতেই ও খুশি ছিল,যেন নতুন করে সুমনকে পেয়েছে। সুজাতা রিয়ার মনের এই অবস্থার কথা বুঝতে পারে। ওর ফোন খারাপ হলে রিয়া সুজাতাকে বলে,"ফোনটা সারিয়ে নিলে তুই ছবিটা আবার আমায় পাঠিয়ে দিস"। সুজাতা মুখে বলে,"ঠিক আছে" কিন্তু বাড়ি ফিরে ছবিটা ডিলিট করে দেয়। ও বুঝতে পারে নাহলে রিয়াকে ঐ অবস্থা থেকে বার করা যাবে না।