Rima Goswami

Horror

4.0  

Rima Goswami

Horror

@কোভিড

@কোভিড

4 mins
275


ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে আজ কাল একটু বেশী সতর্কতা । রোগীর সংখ্যা বাড়ছে দিনে দিনে , সামলানো কঠিন হচ্ছে পরিস্থিতি । লকডাউন বাড়ছে তাল দিয়ে কোভিড 19 এর রোগীর সংখ্যা । সনকা হসপিটালে লকডাউন এর আগেই জয়েন করেছি আমি অর্ঘ্যদীপ গাঙ্গুলি । আমি কলকাতার ছেলে ডাক্তারি পরীক্ষা দিয়ে সদ্য জয়েন আর তার পরই এই লকডাউন । রাতের ডিউটিতে আছি , নানা রকমের রুগী আসছে কেউ ভর্তি হচ্ছে আর কেউ প্রাথমিক ট্রিটমেন্ট নিয়ে ফিরে যাচ্ছে । পিপিই সুট পরে মুখে মাস্ক হাতে দস্তানা পরে আট ঘন্টার ডিউটি যে দেয় সেই বোঝে মর্মটা । সরকারি হসপিটাল তাই এসি দিয়ে মোড়া নেই , গরমে নাজেহাল অবস্থা । তার মধ্যেই কে জ্বর নিয়ে আসছে , কেউ বা ডায়রিয়া , কেউ হাত পা ভেঙেছে । তবে হ্যাঁ একসিডেন্ট কেস গুলো ইদান্তে একটু কম হচ্ছে লকডাউনের প্রভাব । একজন জ্বর নিয়ে এসেছে , ট্রাভেল হিস্ট্রি নেই তার মানে গণ সংক্রমণ হতে পারে আবার নরমাল জ্বর ও হতে পারে । যাই হোক সকালে ওনার টেস্ট হবে কোভিভ এর তার আগে ওনাকে আইসোলেসন ওয়ার্ডে পাঠানো হলো । রাত প্রায় দুটো , এক কাপ চা না হলে আর বাকি রাত টানতে পারবো না তাই হাত ধোবার প্রস্তুতি নিতে এগিয়েই যাচ্ছিলাম কেউ যেন আমার নাম ধরে ডাকলো । পিছন ফিরে দেখি ইমার্জেন্সি ডোর এর কাছে দাঁড়িয়ে আসে আমার মা । এত সব পড়ে আছি তাই চোখ কচলে দেখবো তার উপায় নেই । বিশ্বাস হচ্ছে না আমি কি ভুল দেখছি ! আমার মা দাঁড়িয়ে আছে সামনে ! এগিয়ে গেলাম , মা আমাকে বললো কি রে সদু চিনতে পারছিস না নিজের মাকে ? আমি গলাটা ভারী করে বললাম চিনতে পারবনা কেন ? বেশ চিনতে পারছি , তো এখানে কি কারণে ? আর এত কিছু পরে নিজেকেই চিনতে পারিনা আমি তুমি কি করে চিনলে আমায় ? মা হাসলো , কেমন যেন ভাবনা চিন্তার কালো মেঘ ঘিরে রেখেছে মায়ের হাসিকে । মা বললো জানি সদু তুই আমায় ভালোবাসিস না , দোষ আমার তোকে ছেড়ে এসেছিলাম ভালোবাসার টানে । লোকে বলে পরকীয়ার , হুম হয়ত তাই ! হয়ত একজন বিবাহিতা , একজন মায়ের প্রেমের অধিকার নেই তবু মন যে অবাধ্য তাই তোর জীবনে তোর মা রইল না । কি জানিস বাবা তোকে আমি কোনদিন ভুলিনি আমি বাধ্য ছিলাম তোকে তোর বাবার দায়িত্ব রেখে আসতে । আমি পারতাম তোকে ডাক্তার করতে ! পারতাম না রে বাবু । তুই যে ভাবেই নিজের শরীর ঢেকে রাখিস না কেন আমি তোকে দেখেই চিনে নিয়েছিলাম । সঙ্কোচ হচ্ছিল তোকে ডাকতে , তার পর ভাবলাম কি আর হবে অপমান করবি ? অস্বীকার করবি ? তার বেশি তো কিছু না । তাই তোকে একবার সামনে থেকে দেখার লোভে ডেকেই ফেললাম তোকে সদু । মায়ের চোখে জল , খারাপ লাগছে খুব কেন জানি না । নিজেকে মনটাকে অগোছালো লাগছিলো , মনটাকে সামলিয়ে চোখের জল চেপে বললাম , ভালো আছো মা ? এখন এখানে কি করছো ? মা বললো ভালো ! হয়ত ভালো আছি বাবু , তোকে দেখবো কোনদিন ভাবিনি জানিস । তুই ডাক্তার হয়ে এখানে এসেছিস জানতাম , তোর বাবা আমাকে সব জানতেন তোর বিষয়ে ।


আমি মাঝে মাঝে ফোন করে খবর নিতাম তোর , তবে তোকে উনি আমার সবকিছু থেকে দূরে রেখে মানুষ করছিলেন তা আমি বুঝেছিলাম । আজ এই মাত্র যাকে নিয়ে গেল জ্বর আছে বলে ওকে চিনলি না ? ওই তো সুকুমার আমাদের বাড়ির নীচে তলায় ভাড়া থাকত । ওর সাথেই তো ঘর ছেড়েছিলাম । তোর হয়ত মনে নেই রে , ছোট ছিলি । যাই হোক ডাক্তার তুই , তাই ব্যক্তিগত সব ভুলে তুই নিজের কাজ করিস বাবু । ভালো থাকিস সোনা , অনেক বড় হও । দেখিস রে মানুষটাকে দেখিস , মা আমাকে কিছুবলার সময় না দিয়েই বেরিয়ে গেল ওখান থেকে । আমি ছুটে বেরিয়ে এলাম ইমার্জেন্সি থেকে , কিন্তু বাইরে অন্ধকার কেউ নেই । মা যেন হওয়ায় অদৃশ্য হয়ে গেল , যাই হোক আজ নিজের বুকের উপর থেকেও যেন একটা পাথর নেমে গেল । আবার ছুটে গেলাম আইসোলেস ওয়ার্ডে , সিনিয়র ডক্টর বললেন ওই ওয়ার্ডে গেলে কিন্তু ইমার্জেন্সির ডিউটিতে আজ যোগ দিতে পারবে না । তবু গেলাম , সুকুমার বলে সেই লোকটাকে দেখতে । বেডের কাছে গেলাম , উনি শুয়ে ছিলেন । আমি নিজের পরিচয় দিলাম , উনি আমার গ্লোভস পড়া হাত দুটো ধরে ক্ষমা চাইলেন , উনি কেঁদে ফেললেন । আমি বললাম আমার কোন রাগ নেই , আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন রেস্ট নিন সুস্থ হয়ে যাবেন । মায়ের সাথে আমার কথা হয়েছে একটু আগে , মা বললেন আপনার খেয়াল রাখতে কাকু । সুকুমার কাকু যেন আকাশ থেকে পড়লেন । আমায় বিড় বিড় করে বললেন মরেও আমার জন্য ভাবে এখনো , মরেও ভাবে । তোমাকে শেষ সময়ে দেখতে চেয়েছিল , জানত তুমি এখন দুগ্গাপুরে আছো । সময় পেলো না গো , তোমার মা সময় পেলো না তাই অশরীরী হয়েও তোমাকে দেখে গেল শেষ বার , আর তোমার অজান্তে আমার দায় তোমার উপর চাপিয়ে দিয়ে গেল । আমার মাথা কাজ করছে না , আমি কিছু না বলেই টলমল করে বেরিয়ে এলাম । ফোন করলাম বাবাকে , কটা রিং হয়ে যাবার পর বাবা ফোন ধরলো । বাবাকে এক নিঃশ্বাসে সবটা বলে থামলাম , আমি হাপাচ্ছি । বাবা বললো বাবু তুই এখন ব্যস্ত আছিস তাই বলিনি রে , ও তো গত সোমবার মারা গেছে । শুনছি করোনা পজিটিভ ছিল , সুকুমার ও হয়ত ইনফেক্টেড হয়েছে । তুই তোর মায়ের শেষ ইচ্ছা পূরণ করতে পারবি তো বাবু ? আমার উত্তর দেবার ক্ষমতা নেই , ফোনটা হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেল । ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে আমার রাতটা আজ এভাবেই কেটে যাবে , অনুভুতি গুলো ভিড় করে এসেছে মনে । আমি ক্লান্ত , পরাজিত সৈনিকদের মত স্থানু বসে আছি ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Horror