STORYMIRROR

Rima Goswami

Comedy Tragedy Others

3  

Rima Goswami

Comedy Tragedy Others

কিচেন পলিটিক্স

কিচেন পলিটিক্স

4 mins
253

“ইস্তাম্বুল গিয়ে, জাপান কাবুল গিয়ে

শিখেছি সহজ এই রান্না..

আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না”


নানা আমি ইস্তাবুল বা জাপান ও যাইনি আর আমি ভজহরি মান্না ও নয় । আমি এক আম বাঙালি যার আজকাল নস্টালজিক লাগে পেরিয়ে আসা দিন গুলোকে । একসময় প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস ছিল যে আমি রান্নায় বলতে গেলে ভজহরি মান্নাই বটে । এখন সময় পেরিয়ে সেই আত্মবিশ্বাস আর নেই । এখন তুলনায় যেতে বড় বাধ বাধ ঠেকে । মনে হয় যে অনেক কিছু বাকি আছে শেখার । রন্ধনে দ্রৌপদী হওয়াটা সহজ কাজ নয় মোটেই । খাবারে কেবলমাত্র স্বাদ নয় পুষ্টি ও স্বাস্থ্যকেও যুক্ত রাখতে হয় । শুধুমাত্র রসনার তৃপ্তি করতে হোটেলে খেতে যাওয়া নয় রোজ সংসারের হেঁসেলের রান্না । এখানে মাথায় অনেক কিছু রাখতে হয় । আর সেসব ব্যালেন্স করে আমাদের কিচেন পলিটিক্সটা চালাতে হয় । আমার বাবার বাড়িতে নিয়ম ছিল সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠা আর তাড়াতাড়ি শুতে যাওয়া । দুপুরে আমাদের দেড়টার মধ্য খাওয়া দাওয়া শেষ হয়ে যেত । কাক ডাকা বিকাল চারটে নাগাদ বাড়িতে চায়ের সসপ্যানে ও বসে যেত । আবার সন্ধ্যায় চপ মুড়ি বা মসলা মুড়ি উদরস্ত করে রাত নয়টার দিকে রাতের ডিনার ও করে ফেলতাম আমরা । মা কাকিমার তাড়া শুরু হতো খেয়ে হেঁসেলের ঝাঁপ বন্ধ করে ফেলার জন্য । খেয়েদেয়ে আমরা ছেলে পিলের দল মা বাবার সঙ্গে বা আলাদাভাবে মশারির ভিতরে পড়াশোনা করতাম তাও খুব বেশি হলে রাত এগারোটা ।


আমার যখন বিয়ে হয় তখন শ্বশুর বাড়ী এসেছিলাম এক গামলা আত্মবিশ্বাস নিয়ে । সেই আত্মবিশ্বাস জলাঞ্জলি হতে অবশ্য বেশিদিন লাগেনি দু চারটে দিনই যথেষ্ট ছিল । সদ্য সহপাঠী থেকে স্বামীতে রূপায়িত ব্যক্তির সঙ্গে যখন গৃহপ্রবেশ করলাম তখন বেলা বেশি নয় । তুই বলে অভ্যস্ত মানুষটার সঙ্গে এখন থেকে তুমি করে কথা বলতে হবে শুনেছি । মনে মনে প্র্যাকটিস করতে করতে দেখলাম পেটে ইঁদুর দৌড়ানো শুরু হয়ে গেছে । ঘড়িতে তাকিয়ে বিষম খেলাম । বেলা দুটো বাজে ! অথচ শুনতে পাচ্ছি এখনো রান্নাঘরে খুন্তি নাড়ার শব্দ । অপেক্ষার অবসান হলো আর সকলে মিলে খেতে বসলাম যখন তখন ঘড়িতে তিনটে বেজে গেছে । মনে মনে ভাবছি আমার দাদু একটু পরেই হয়ত মাকে বলবে বৌমা চা বানাও । নানা পদ দিয়ে খেতে দিয়েছে আমাকে শাশুড়ি মা । ননদ জানতে চাইল কোনটা খেয়ে বেশি ভালো লাগলো । সরল মনে বলে দিলাম লাউয়ের চাটনিটা বেস্ট আমি কোনদিন খাইনি । সকলে অবাক চোখে চাইলো ... শাশুড়ি মা বললেন ওটা লাউয়ের ঘন্ট । আমি বিষম খেতে খেতে সামলে নিলাম । গণতান্ত্রিক দেশে সবটাই চলে । এত মিষ্টি কি করে চাটনি না হয়ে ঘন্ট হয় জানতে চাইতাম যদি প্রজাতন্ত্র দেশে থাকতুম । সেদিনই রাত বেড়ে বেড়ে ঘড়িতে এগারোটা আর আমার ঘুম ও খিদে একবার দরজা দিয়ে এসে জানালা দিয়ে পালিয়ে গেছে । ওদিকে স্বামীর সংসারে হেঁসেলে তখন সদ্য রুটি সেকা চলছে । ওকে আস্তে আস্তে বললাম এত নিশুতি রাতে রোজ রোজ কি খাস তোরা রে ? শুনতে পেয়ে শাশুড়ি বললেন স্বামীকে তুই করে বলতে নেই । যাই হোক এত গুলো বছর পেরিয়ে সেই অস্বাভাবিক দিন গুলোকে আজ কেন জানিনা বড় স্বাভাবিক লাগে । রাত এগারোটা এখন পীড়া দেয়না । কথাতেই আছে মানুষ অভ্যাসের দাস । আমিও নিজেকে মিগ্রেট করে ফেলেছি সকলের সঙ্গে । এখন উল্টে মায়ের কাছে গেলে শুনতে হয় যে আমি বড্ড বেশি দেরি করে খাওয়া দাওয়া করি । রান্না নিয়ে ও মজার ঘটনা ঘটে গেছে আমার সঙ্গে বিয়ের পর পরই... কি হয়েছিল প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী আমি বাড়িতে মাকে রান্নাঘর থেকে বিতাড়িত করে মাঝে মাঝে রান্না করতাম মাসকাবাড়ি মুদিখানার অর্ধেক খরচের খাতায় ফেলে । সেসব খাবার খেয়ে বাড়ির লোকজন বাহ বাহ করত আমাকে । না করলে ও করতে বাধ্য করতাম আমি ওদের । তাদের রসনার তৃপ্তি করে আমি ছিলাম প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসী যে আমি শ্রী শ্রী ভজহরি মান্না ।


তো শ্বশুর বাড়ী এসে প্রথম দিন রান্না করে সেই আত্মবিশ্বাস তলানিতে গিয়ে ঠেকে গেল দুম করে । সেদিন খুব মনে আছে আমি রেঁধে ছিলাম আলুভাজা , কলাই ডাল , পোস্তর বড়া , ইচড় চিংড়ি , খাসির মাংস , চাটনি । সেসব খেয়েদেয়ে সকলে মিলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমাকে স্কোর দেওয়া হবে এবার । স্কোর পেলাম সঙ্গে রিভিউ ও । রিভিউতে বলা হলো রান্না অবশ্যই ভালো কিন্তু নিত্যদিনের জন্য এ খাবার নয় । অতিরিক্ত তেল মসলা দিয়ে বানানো খাবার না পকেটের জন্য স্বাস্থ্যকর না শরীরের জন্য । তাই আমাকে নতুন করে ট্রেনিং নিতে হবে কি করে রোজ দিনের রান্না করতে হবে । তো শুরু হলো আমার ট্রেনিং । আমি কিছুটা নিজের মতো করে শিখে নিলাম স্বাস্থ্যকর রান্নাবান্না । এখন আর কেউ কিছু বলেনা । আমি বা আমার শ্বশুর বাড়ী একে অপরের জন্য অনেকটাই মিগ্রেট করে গেছি । আজকাল আর লাউয়ের চাটনি হয়না ঘণ্টই হয় ওটা । আজকাল আর আমি তৈলাক্ত রসনা দিয়ে কাউকে তৃপ্ত না করে চেষ্টা করি উপযুক্ত পুষ্টিগুণ বজায় রেখে রান্না করতে । আসলে সংসারের হেঁসেলটা তো হোটেল নয় যেখানে আমরা মাঝে মধ্যে স্বাদ পাল্টাতে যাই । হেঁসেলে তো আমাদের স্বাস্থ্য ও স্বস্তি দুটোই বিরাজ করে । আচ্ছা আচ্ছা আর কিছু বলবো না আজ বরং এখানেই থাক অনেক ক্ষণ ধরে বকে যাচ্ছি । কেমন লাগলো আমার কিচেন পলিটিক্স জানাতে ভুলবেন না যেন ।।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy