Pronab Das

Abstract

3  

Pronab Das

Abstract

খেলা ।

খেলা ।

3 mins
651


অনেক ডাকাডাকি, অনেক অনুনয় বিনয়ের পরও কুন্তল দরজাটা খুলছে না দেখে ইন্সপেক্টর অমিতাভ রায় কায়দা মতো সজোরে দুটো লাথি মারতেই সশব্দে খুলে গেল। প্রায় সাথে সাথে ঘরের ভেতর থেকে শবদেহ পচা দুর্গন্ধ বেরোতেই গা পাঁক দিয়ে উঠল। ঘুট ঘুটে অন্ধকার ছড়িয়ে ঘর ময়। একটা শীতল ঠান্ডা বাতাস শরীর ছুঁয়ে যেন ছুটে পালাল ভাঙা দরজার দিকে । অমিতাভ বাবু এক পা এগিয়ে শান্ত গলায় বলল,...

একটা টর্চ লাগবে। কনস্টেবল সুন্দরলাল চট করে একটা পাঁচ ব্যাটারির বড় টর্চ এনে আমিতাভবাবুর হাতে দিলেন। আমাদের উৎসুক চোখ গুলো সব উৎকণ্ঠায় অন্ধকার ঘরের দিকে চেয়ে। কিছুই বোঝার উপায় নেই ভেতরে কি হচ্ছে। তীব্র পচা গন্ধে মাঝে মাঝে এর তার ওক উঠে আসছে গলা থেকে। নাকে কাপড় চাপা দিয়ে শুধু একটাই কথা মনে হচ্ছে কি করছে কুন্তল এই ঘরে। অমিতাভবাবু জোরাল টর্চের আলোটা কুন্তলের মুখের উপর ফেলতেই যে ভয়ানক দৃশ্য চোখে পড়ল, তাতে উপস্থিত সবাই তো বটেই অমিতাভবাবুর টর্চ ধরা বজ্র কঠিন হাতটাও দু দু বার কেঁপে উঠল।


 ইন্দ্রা ও দেবরাজের সম্পর্ক প্রায় বছর পাঁচেক। সেই কলেজ লাইফ থেকেই প্রেম। ইন্দ্রার বাবা মস্তবড় ব্যাবসায়ী। তুলনায় দেবরাজ নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে। একপ্রকার অশান্তি, ঝুট ঝামেলা, আত্মহত্যার ভয় দেখিয়ে বাবাকে রাজি করায়। দেবরাজ কিন্তু বলেছিল নিজের পায়ে না দাঁড়িয়ে বিয়ে সে করবে না। বড়লোক বাবার আদুরে মেয়ের আবদার রাখতে দেবরাজ ইন্দ্রাকে নিয়ে প্রায়ই এখানে সেখানে, কাছে দূরে ঘুরে বেড়াত। যদিও খরচাপাতির দিকটা ইন্দ্রাই সমলাতো।


তাদের বিয়ের মাস তিনেক আগে ঝাড়গ্রামে গিয়েছিল বাবার একটা কাজ নিয়ে। বাবার নতুন স্কর্পিওওটা নিয়েছিল। ইন্দ্রা ও দেবরাজ পালা করে ড্রাইভ করেছে। চার দিনের প্রোগ্রাম। থাকার অসুবিধে নেই,ওখানে ওদের একটা বাংলো আছে। মাঝে মাঝে বাবা এখানে আসেন। একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে আটকে গেছে বলে বাবার কথায় এখানে আসা।


জায়গাটার প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারী সুন্দর। দুপাশের ঘন সবুজ গাছপালার মধ্যে দিয়ে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে যাওয়ার মজাই অন্যরকম। একটা ছোটো বাঁকের কাছে আসতেই ইন্দ্রা হঠাৎই কড়া ব্রেক মারল। একটা মাঝবয়সী বৃদ্ধা পোটলা সমেত পরে গেছে গাড়ির হালকা স্পর্শে। ভাগ্য খুব ভালো অল্পের ওপর দিয়ে গেছে। ইন্দ্রা ওই বৃদ্ধার ওপরে ভীষণ রেগে গিয়ে কয়েকটা গাল দিয়ে দিল। দেবরাজ কিছু বলার সুযোগ পেল না। লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে দেখল ওই অসহায় বৃদ্ধা কোনমতে উঠে দাঁড়িয়ে খোঁড়াতে খোঁড়াতে এগিয়ে গেল।


পরদিন সকালে বাংলার বারান্দায় বসে দুজনে কফি খেতে খেতে ফেরার প্লান করছে এমন সময় সেই বৃদ্ধা লাঠি হাতে গেট খুলে সামনে এসে একটা সেলাম ঠুকে কিছু সাহায্য চাইল। ওকে দেখে ইন্দ্রা কেমন যেন চিৎকার করে বেরিয়ে যেতে বলল,...

 

----শালা বুড়ী, …...কাল মরার জন্য কি আমার গাড়ি পেয়েছিলে? ভাগো এখান থেকে কোন সাহায্য হবে না….ঘাটের মড়া কোথাকার।


বৃদ্ধা ইন্দ্রার কথাশুনে চোখ মুছতে মুছতে বেরিয়ে গেল। যেতে যেতে বলে গেল,....

---অত মড়া মড়া করিস না মা। এই মড়াই এক দিন তোর নিন্দ কেড়ে নেবে।….দেখে নিস।


ফুলে ওঠা লাশটার ওপর ঝুকে কুন্তল হিংস্র চোখে তাকিয়ে আছে আমিতাভবাবুর দিকে। লালচে চোখ দেখে মনে হচ্ছে এক্ষুণি একলাফে তার টুঁটি ছিড়ে নিতে উদ্ধত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে শহরের একটা নামি মর্গ থেকে বেওয়ারিশ লাশ টাকা দিয়ে কিনেছে। সিসি টিভি ফুটেজে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে এক কর্মী মর্গের ট্রে খুলে দেখাচ্ছে আর কুন্তল মৃতদেহটার ওপরে তার নাকটাকে কাছে নিয়ে পরম তৃপ্তিতে বুক ভরে শ্বাস টেনে নিচ্ছে।সে দৃশ্য দেখলে যেকোনো সুস্থ ব্যক্তির নিশ্চিৎ রাতের ঘুম উড়ে যাবে।


ইন্দ্রা ছেলের চিকিৎসা করেনি তা নয়। আগেও স্কুল ব্যাগে ইঁদুর মড়া লুকিয়ে রেখেছিল। কলেজে পড়ার সময় রকি, পোষা কুকুরটা মারা যায়। ইন্দ্রা ও দেবরাজ তখন চিকিৎসার জন্যে বিদেশে। বাড়ি এসে তারা দেখে ছেলের খাটে রকির দেহাবশেষ।


কেন যে ও এমন করত ওই জানে। ওকে জিজ্ঞেস করলেই বলত ,......

মড়া নিয়ে খেলতে আমার খুব ভাল লাগে। মড়া আমায় টানে গো …....খুউব টানে।



Rate this content
Log in