খাদ
খাদ
সব বরবাদ করে দিলে গো.....সব৷
হেমন্তের এই সাত সকালে বৈষ্ণবীর চিল চিৎকারে প্রায় পাড়ার লোক জেগে যাওয়ার অবস্থা৷ভোরের শীত শীত আমেজে চাদর মুড়ি দেওয়া বিমল কোন রকম ধড়ফড় করে বিছানা থেকে বেরিয়ে এলো আর বৈষ্ণবীকে জিজ্ঞাসা করল—কি হয়েছে বৌঠাকরুন?
আর কি হয়েছে? দ্যাখো গিয়ে জমিটার কি দশা হয়েছে৷
আরে এতো হেয়ালি না করে বলই না কি হয়েছে?
খাদ কেটেছে গো খাদ৷এতো সুন্দর জমিটার খাদ কেটে যা অবস্থা করেছে—
কে কেটেছে?
তোমার সাধের দাদা গো দাদা ৷যাকে আমি কোন কিছুটি বললেই তোমার গা পিত্তি জ্বলে যায় এখন দ্যাখ গিয়ে কি করেছে!আমার ছেলেপিলে গুলো কে পথে বসাবে গো.......৷
আর কত করি বৌ ঠাকরুন? তোমার কথা মত কেস করে একটা হেস্তনেস্ত করতে চেয়েছিলাম এখন তারও যা হাল!উকিল বাবুর ফিস বাকি তায় আবার কেসের দিনটাও এগিয়ে আসছে৷
বৌঠাকরুন তোমার গয়না গুলো আমায় একটু দাও দেখি৷
ওগুলো আবার কি হবে?
তুমি তো জানই এ সপ্তাহে উকিলবাবুকে পয়সা না দিলে কেসের শুনানীটা হবে না৷ উকিলবাবু বলেছে তার ত্রিশ হাজার টাকা বকেয়া পাওনা তার উপর আবার এবারের ফিজ! আমার বুঝি মরণ দশা চলছে৷ কই দাও ৷
তোমার করা জিনিস তোমাকে দিলে আমার কিছু যায় আসবে না৷তবে—
আর তবে কি ! যুদ্ধ যখন লেগেছে তার সমাধান তো করতেই হবে৷ এভাবে হাত গুটিয়েতো আর বসে থাকা যায় না৷বরং তার চেয়ে কপর্দক শূন্য হয়ে লড়াই করাটাই শ্রেষ্ঠ হবে৷বলেই বিমল বৈষ্ণবীর হাত থেকে গয়নার পুটুলিটা নিল আর পুটুলিটা নিয়ে বিমল বলল—আমি আসছি বৌঠাকুরুন৷ বাড়ির থেকে বেরিয়ে সে গেল শ্যাকরার দোকানে৷সেখানি পুটলির গয়নাগুলি বের করে দেখালো৷আর শ্যাকরাকে বলল— আমার এই গয়নাগুলি বেচতে চাই আর এর দরুণ আমাকে ত্রিশ হাজার দিতে অনুরোধ করছি৷
সঞ্জিত শ্যাকরা পোড় খাওয়া জহুরী৷সে গয়না গুলি নাড়াচাড়া করে বলল কি বল হে ছোকরা?তোমার এই গয়নায় ত্রিশ হাজার তো দুরের কথা মাত্র পাঁচ হাজার টাকার সোনা আছে কিনা আমার সন্দেহ হচ্ছে৷সঞ্জিতের কথায় বিমল একেবারে থ মেরে গয়নার পুটুলি নিয়ে বাড়ির পথে ফিরে গেল৷বাড়ি পৌছে বিমল ধপাস করে দাওয়ায় বসে পড়ল৷
তার শরীরটা যেন থরথর করে কাঁপছে৷বৈষ্ণবী বলল তুমি এরকম করছো কেন?
বিমল বৈষ্ণবীকে উদ্দেশ্য করে বলল—খাদ
খাদ?
হ্যাঁ শ্যাকরা বলল তোমার গয়নায় পাঁচ হাজার টাকার বেশী দিতে পারবে না৷তোমার গয়নায় নাকি অর্ধেকেরও বেশী খাদ৷এই খাদের জ্বালায় পড়ে আজ আমি নিঃস্ব হতে বসেছি বৌঠাকরুন নিঃস্ব৷
