বিজয়া
বিজয়া
গতকাল অলয়ের বাড়িতে কোজাগরী লক্ষীর পূজো হয়েছিলো৷ গজবাহিতা কমলাসনা লক্ষীর প্রতিমাটা যেন জীবন্ত মনে হল৷ যাই হোক বেশ ধূমধাম করে অলয়দের বাড়ির পূজোটা সমাপন হলো৷
প্রত্যেক বছর অলয়দের বাড়ির লক্ষী পূজোটা এ ভাবেই পালন করা হয়৷অলয়দের বাড়িটা সমস্ত আত্মীয় বন্ধুবান্ধবে ভরে থাকতো৷ এবারের পূজোয় যদিও কোন আত্মীয় বন্ধুবান্ধব খুব একটা নেই৷ অলয়দের বাড়ির চারিদিক বন্যা প্লাবিত তায় আবার কোথাও একগলা জল তো কোথাও হাঁটু সমান৷এই বন্যার কথা শুনে অনেক আত্মীয়ই আসতে অস্বীকার করেছে৷কেউ কেউ তো বলেই ফেলেছে—অলয় তোদের বাড়ি যাওয়ার ইচ্ছেটা প্রচুর ছিলো রে,কিন্তু বন্যাটাই মনটা কে ভেস্তে দিলো৷এখন যেতে পারলাম না তো কি হয়েছে বন্যাটা এড়িয়ে যাক তখন পাত পেড়ে খেতে যাবো৷
আসলে অলয়রা বর্তমানে একটু দুর্বল হয়ে গেলেও তারা এক সময়ের জমিদার বাড়ি৷ প্রায় ছয় শত একর জায়গার মালিক ছিলো৷ অলয়রা তার কিছু অংশ স্কুল হাসপাতাল সহ বিভিন্ন সেবা প্রতিষ্ঠানে দান করেছে৷কিছু জায়গা বর্গাপাট্টার কবলে কিছু সরকারি ভেস্টেড৷ সরকারের সঙ্গে এখনও অলয়দের আইনি লড়াই চলছে৷যাক সে সব কথা৷এই অলয়দের বাড়ির পূজায় ধূমধাম হবে না তো কি হবে!
এমনিতেই বন্যা কবলিত এলাকার কিছু মানুষের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা অলয়রা করেছে৷
তারাই অলয়দের বাড়ির কাছের প্রাথমিক স্কুলটাতে থাকে৷এবার সেই সকল প্রজারাই পূজার দ্বায়িত্ব নিয়ে কলার মান্দাসে ভেসে ভেসে বাজার করা ঠাকুর আনা সাজানো গোছানো সব কাজ করেছে৷অলয় কে এ যাত্রায় খুব একটা বেগ পেতে হয় নি৷পূজা শেষে নিয়ম মেনে সারারাত জাগারপালা৷অলয় সবার সঙ্গে গল্পে সারারাত জাগলো৷অন্যবারের মতো নাচ,গান,যাত্রার আসর আনতে পারে নি৷ গল্পের মধ্যেও অলয়ের মনে চিন্তা এলো৷এ বছরতো বন্যায় সবার পুকুর ডুবে গেছে কোন প্রজাই তো আগামীদিনের বিজয়ায় মাছ দিতে পারবে না৷তবে এতো গুলো মানুষ কে কি দিয়ে খাওয়াবো৷ভাবতে ভাবতেই ভোররাতের দিকে কখন যে অলয়ের চোখ দুটি জড়িয়ে এলো সে বুঝতে পারে নি৷তবুও সে ঘুমের মধ্যে দেখল—মা লক্ষী হেঁটে হেঁটে তার দিকে এগিয়ে আসছে৷তার পায়ের নুপুরের নিক্কন মধুর লাগছে৷মা লক্ষী অলয়ের কাছে এসে বলল—প্রভাত হয়ে আসছে এবার আমায় বিদায় দে বাবা৷তুই কোন চিন্তা করিস না আমি বিজয়ায় গেলেও তোর সংসারে কোন অভাব থাকবে না৷আর তুই সাধারণ মাছ নিয়ে এতো চিন্তিত৷
দুম করে অলয়ের ঘুমটা ভেঙে গেল৷চোখ খুলে সে দেখলো ধারে কাছে কেউ কোথাও নেই৷যাই হোক সকাল বেলাই পুরুতমশাই বাড়িতে এসে বিজয়ার কাজে ব্যস্ত হয়ে গেলেন৷অলয় বাড়ির বাইরে এসে প্রজাদের জিজ্ঞাসা করল তোমরা মাছের জোগাড় করে ফেলেছো?
প্রজারা মুখ হা করে অলয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো৷
অলয় তাদের অবস্থা দেখে বলল—জানি ওটা পারবে না৷আমরা বাঙালি একটু মাছে ভাতে না হলে কি করে মনে আনন্দ আসবে?
তোমরা এক কাজ কর—উত্তর পুকুরে একবার জাল ফেলার ব্যবস্থা কর৷তবে তোমাদের একটু কষ্ট হবে৷পুকুরটায় আজ পঁচিশ ত্রিশ বছর জাল ফেলা হয়নি তাতে আবার পুকুরটা পানায় ভরে আছে৷আগে সেগুলির একটা ব্যবস্থা করতে হবে৷প্রজাদের মধ্যে থাকা কিছু লোক বলল—ও নিয়ে আপনাকে চিন্তা করতে হবে না বাবু,আমরা ঠিক ব্যবস্থা করে নেব৷
জেলেরা পানাগুলোকে খড়ের ব্যাজনা পাকিয়ে পানা গুলি একদিকে টেনে ডাঁই করে পুকুরটাতে জাল টানলো৷যেই না জাল টানা শেষের পথে জেলেরা জাল ধরে রাখতে পারছে না৷মাছেদের গুতোঁগুতি,লাফালাফি শুরু৷অলয় সহ জেলেরা অবাক৷উত্তর পুকুরে এতো মাছ কোথা থেকে এলো তায় আবার প্রমান সাইজের৷অলয় তার থেকে দুটি মাছ নিতে বলল৷জেলেরা দুটি মাছ তুলতে পারছে না৷মাছগুলি লালবর্ণের হয়ে গিয়েছে৷তাদের ওষ্ঠাধরে কেউ যেন লিপস্টিক পরিয়ে দিয়েছে৷সেই মাছগুলি এক একটি পঁচিশ ত্রিশ কেজির উপরই হবে৷
জেলেরা মাছগুলি কাটাকাটি করে দিয়ে গেল৷ রান্নাবাড়ির কাজ শেষে খাওয়া দাওয়া হবে
অলয়দের বাঙালির মাছে ভাতে বিজয়া যে এমন হবে ভাবে হবে অলয় এখনও ভাবতে পারছে না৷
***আমার এই গল্পের সঙ্গে কোন ব্যক্তি বা চরিত্রের বা স্থানের ও কালের সঙ্গে মিল থাকে তা নিছক কাকতালিয় ও অনিচ্ছাকৃত৷লেখক কোনভাবেই এর জন্য কোনরকময় দায়ভার গ্রহন করবে না৷
