চিলে কোঠার মানুষ
চিলে কোঠার মানুষ
এবারের উইক এন্ড টা ভালো কাটেনি রণজয়ের।পেশায় একটি পৌরসভায় অবর বাস্তুকার।কাজের ব্যস্ততায় হাতে সময় তো জোটে না তবু অনেক চেষ্টা চরিত্র করে এই উইক এন্ড টা কাটাতে এসেছে এই তালসারিতে।এসেই কি বিপদ দেখ তালসারির দ্বীপ তটরেখায় লাল কাঁকড়া ধরবার আকর্ষণে হাঁটতে হাঁটতে লাল কাঁকড়ার দেখা মিলছে কিন্তু ধরতেই পারেনি তার বদলে রণজয় তীরভূমির উপর পড়ে থাকা একটি ডাইরি পড়ে থাকতে দেখতে পেয়েছে।রণজয় চারিদিকে তাকিয়ে দেখল কেউ কোথাও নেই।অথচ আস্ত একখানা ডাইরি পড়ে থাকলে তা তো বিষ্ময় জাগায় তার মনে। রণজয় দ্বিধান্বিত হয়ে ও ডাইরি টি তুলে বেশ কিছু সময় জহুরীর মতো দেখতে থাকে। ডাইরিটায় বেশ আভিজাত্যের ছোঁয়া রয়েছে। ডাইরিটা একটা একজিকিউটিভ ডাইরি যা সাধারণত কোন আধিকারিক গোছের মানুষের কাছে দেখতে পাওয়া যায়।রণজয়ের মনে খটকা লাগে -এ ডাইরি এই একান্ত নির্জন দ্বীপে এলো কি করে!
এখানে কি এখন কোন সরকারি পরিসংখ্যান চলছে যার দরুন হয়তো কোনো আধিকারিক এখানে এসেছে,হয়তো এ ডাইরি টা তারই হবে!
রণজয় আরও বেশ কিছুটা এগিয়ে গিয়ে চোখ চালাল কিন্তু কাউকেই সে দেখতে পেল না।সে এই মুহুর্তে অপরের ডাইরিটা পড়ার দুঃসাহস ও দেখাতে পারল না পাছে ডাইরির মালিক যদি আড়ালে থেকে বিষয়টা দেখে ফেলে তখন নিজের মানসম্মান নিয়ে টানাটানি হবে ভেবে পরে পড়বে নিশ্চিত করে অগত্যা ডাইরিটা নিজের ব্যাগে ভরে এখানে বালিয়াড়িতে থাকা ঝাউগাছের সারির মাঝখান দিয়ে আরও বেশ কিছুটা গভীরে গেল। যদিও গভীর অর্থে আর সেরকম বেশি গাছ নেই। বিগত আম্ফান ঝড়ের দাপটে সমুদ্র উত্তাল হওয়ার ফলে বেশ কিছু গাছের জীবন্ত সলিল সমাধি ঘটেছে। তবুও এখনো যে গাছগুলো জীবিত দাঁড়িয়ে আছে তারই গভীরে যেতে যেতেই সে দেখতে পেল এক নারীকে যে সমুদ্রতীর থেকে উত্তাল সমুদ্রের বুকে ঝাঁপিয়ে জীবন বিসর্জন দিতে চাইছে।
রণজয় তাকে উদ্দেশ্য করে চিল চিৎকারের মাধ্যমে সাবধান করতে লাগল কিন্তু সে অজ্ঞাত মহিলা কোন কিছুর ভ্রূক্ষেপ না করে সমুদ্রের গভীরে ঝাঁপিয়ে তলিয়ে গেল। রণজয় দৌড়াতে দৌড়াতে সেই জায়গায় গিয়ে উদ্ধারের চেষ্টা করতে চাইল কিন্তু তার নাগালের মধ্যে কোন কিছুই পেল না।অগত্যা চেষ্টা করেও হতাশ হয়ে রনজয় সেখান থেকে ফিরে নৌকার কাছে এসে নুলিয়া কিংবা মাঝির খোঁজ চালালে একজনকে পেয়ে গেল।রণজয় তার কাছে সব ঘটনা বর্ণনা করে সাহায্য চাইলে মাঝি স্মিত হাসি হেসে রণজয় কে তালসারি ছেড়ে ফিরে যেতে বলল।রণজয় একজন পাগলের পাল্লায় পড়েছে ভেবে সে তাকে শুধু কোন রকম ওই পারে মাছের আড়তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য বললে মাঝি নৌকায় তাকে অপর পারে পৌঁছে দিতে নৌকা চালাল।যেহেতু কোরনার কারণে লকডাউন চলছে বিভিন্ন যায়গায় তাই এখন এখানে খুব বেশি লোকজনও আসে না মাঝিও দেখল ওই পারে গিয়ে যদি আর দু একটা পর্যটক পাওয়া যায় তবে হাতে কিছু পয়সা আসলেও আসতে পারে এই ভেবে তার সিদ্ধান্ত গ্রহণ।
রণজয় মাছের আড়তে এসে অন্যান্য মাঝিদের সাহায্য চাইলে সবাই এড়িয়ে যাচ্ছে দেখে সে কোস্টাল থানায় গেল থানার স্টাফেরা তার কাছে ডাইরিটা দেখতে চাইলে রণজয় ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজে তাদের ডাইরিটা দেখাতে পারল না।থানার আধিকারিকগণ নিজেরাই মুখ দেখাদেখি করতে করতে রণজয় কে বলল-আমরা বিষয়টি বুঝতে পেরেছি ওটা আমরা দেখে নেব আপনি বরং আপনার হোটেলে ফিরে গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে বাড়িতে ফিরে যান।রণজয় সবাইকে এতো করে বলার পরও সকলের নিঃস্পৃহ ব্যবহার দেখে অসম্ভব ক্রদ্ধ ও স্তম্ভিত হয়ে হোটেল থেকে সমস্ত ব্যাগপত্র নিয়ে সোজাসুজি বাড়িতে ফিরে এল।সেদিন রাতে সে বিছানায় ঘুমের ঘোরের মধ্যে ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে পেয়ে নিজের ব্যাগ হাতড়ে আবার ডাইরিটা খুঁজে পেল।সে ডাইরিটা নিয়ে তাদের বাড়ির চিলে কোঠায় গিয়ে ডাইরিটা পড়তে লাগল।রণজয় সেই যে ডাইরি নিয়ে পড়ার জন্য চিলে কোঠায় গিয়েছিল তার পর থেকে কেউ তার খোঁজ পায়নি।বেশ কয়েক দিন পর প্রতিবেশির অভিযোগ পেয়ে পুলিশ রণজয় কে তাদের বাড়ির দরজা ভেঙ্গে চিলে কোঠার ঘর থেকে রণজয়ের পচাগলা লাশ হিসেবে আবিস্কার করে।অথচ পুলিশের পুরো দল বিষ্ময়ে হতবাক সুরত হালের ক্ষেত্রে শরীরের কোথাও কোন ক্ষতচিহ্ন নেই আর আত্মহত্যার ও কোন লক্ষণই নেই কিংবা সে বাড়ির প্রতিটা রুম ও আনাচকানাচে ঘেঁটেঘুঁটে তার পোষাক তল্লাশি করেও কোন সুইসাইডাল নোট পাওয়া যায়নি! রণজয় শুধুমাত্র সেদিনের পর থেকে পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে চিলে কোঠার মানুষ হিসাবে একান্তই বিষ্ময় হয়ে রইল।

