Biplab Das

Comedy Drama Others

3.4  

Biplab Das

Comedy Drama Others

জলাতঙ্ক

জলাতঙ্ক

3 mins
245


কৌশিক সরকার একটি বেসরকারি অফিসে কাজ করেন, সেলস ডিপার্টমেন্টে। বয়স ৫৫-৫৬ এর মতন। ভীষণই ধার্মিক একজন মানুষ। দিনে দু’বার পুজা করা চাই। সকালে একবার স্নানের পর এবং বিকেলে আবার অফিস থেকে ফিরে। বাড়িতে তিনি বাদে স্ত্রী রয়েছেন।কৌশিকবাবুরা নিঃসন্তান। দুজনের সংসারে সমস্যা বলতে কিছু নেই। কৌশিকবাবু যা আয় করেন তাতে ওদের ভালই চলে যায়।

কিন্তু গত কয়েকমাস যাবত কৌশিকবাবুর মনে কোনও শান্তি নেই। কাজের জায়গায় কিছু সমস্যা হচ্ছে। গত ছ-মাস ধরে সে একটাও লিড কনভার্ট করতে পারেনি। বস চেম্বারে ডেকে দু-একবার এই ব্যাপারে কথাও বলেছে। দুই-পক্ষই – অফিস এবং কৌশিকবাবু এই ব্যাপারটা নিয়ে চিন্তিত এবং উদ্বিগ্ন। অফিসের তরফ থেকে তাকে দুমাসের সময় দেওয়া হয়েছে। এই দুইমাসের মধ্যে ব্যাবসা আনতে না পারলে অন্য উপায় খুজে নিতে বলেছে।

যখন কৌশিক বাবু এই সমস্যা থেকে কিভাবে বেরুবেন তার পথ ভেবে কুল-কিনারা পাচ্ছেন না, তখন তার স্ত্রী এসে উপায় দেন এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার। 

‘আচ্ছা, জ্যোতিষীর কাছে গেলে কিরকম হয়? আমি শুনেছি জ্যোতিষীরা ভবিষ্যৎ বলে দিতে পারেন এবং সমস্যার সমাধান করতে পারে।’

‘জ্যোতিষী?’

‘হ্যাঁ।’

‘কিন্তু আমি কোনও জ্যোতিষীকে চিনিনা।’

‘আমি খোঁজ নিচ্ছি।’

যেমন কথা তেমন কাজ। কৌশিক বাবুর স্ত্রী দু-দিনের মধ্যেই একজন জ্যোতিষীর ঠিকানা যোগাড় করে ফেললেন। সেই সঙ্গে ওনার সঙ্গে দেখা করার দিনও।

নির্দিষ্ট দিনে কৌশিকবাবু এবং তার স্ত্রী জ্যোতিষীর অফিসে গিয়ে হাজির। জ্যোতিষী সব দেখে-শুনে বললেন আগামী ১৫ দিনের মধ্যে একটা ফাঁড়া আছে, সেটা যদি কাটিয়ে দিতে পারেন তাহলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। ফাঁড়ার শুনে দুজনেই খুব বিমর্ষ হয়ে পরলেন। ফাঁড়া থেকে বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে জ্যোতিষী কৌশিক আগামী ১৫ দিন জল থেকে সাবধান থাকতে বললেন। জ্যোতিষীর এই কথা শোনার পর কৌশিকবাবু আরও ভয় পেয়ে গেলেন।

বাড়ি এসে কৌশিকবাবু প্রথমেই যেটা ঠিক করলেন আগামী ১৫ দিন অফিসে যাবেন না। যেমন ভাবা তেমন কাজ। জানিয়েও দিলেন অফিসে যে শরীর খারাপ, আসতে পারবেন না। এরপর নিজেকে একটা ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেললেন। জল থেকে বাঁচতে তিনি স্নান করা বন্ধ করে দিলেন। এর ফলে তার ধারনা হল তিনি জল থেকে দূরে আছেন। এই ভাবে কয়েকদিন চলল। এরপর তার মনে হল বাথরুমে গেলে তার জলের সঙ্গে সংস্পর্শ হতে পারে। তাই বাথরুম যাওয়া বন্ধ করে দিলেন। ঘরেই কাজ সারতে লাগলেন। এই ভাবে কয়েক দিন চলল। তার ভয় ক্রমাগত বাড়তেই লাগলো। তিনি বহির্বিশ্ব থেকে নিজেকে একবারে আলাদা করে দিলেন।

তবে এবার যেটা করলেন সেটা অভাবনীয়। তিনি জল খাওয়া বন্ধ করে দিলেন। স্ত্রী দিন তিনেকদিতে চাইলে সেটিও অস্বীকার করলেন। এই কাণ্ডটির পর স্ত্রীও খানিকটা চিন্তিত হয়ে উঠলেন। ওদিকে তিনি তখন দিন গুনছেন কবে ১৫ দিন শেষ হবে।

কিন্তু জল ছাড়া কোনও মানুষ বাঁচতে পারেনা। পরপর ৩ দিন জল না খেয়ে থাকার পর কৌশিকবাবু স্বাভাবিক ভাবেই অসুস্থ হয়ে পরলেন। মুখ-চোখ বেঁকে যেতে লাগলো। কৌশিকবাবুর বারণ উপেক্ষা করে, কৌশিক বাবুর স্ত্রী শেষপর্যন্ত একটি অ্যাম্বুলেন্স   ডেকে কৌশিক বাবুকে হসপিটাল নিয়ে যান।

হসপিটাল নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার বলেন যে ডিহাইড্রেশন কেস। রোগীর অবস্থা সিরিয়াস দেখে প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই ভর্তি নিয়ে নেওয়া হয়। সঙ্গে সঙ্গে কৌশিক বাবুকে স্যালাইন দেওয়া হয়। দু’দিন স্যালাইন টানার পরই কৌশিক বাবু একপ্রকার ফিট। ডাক্তার এসে দেখে বলনেন, ‘কাল আপনার ছুটি। আপনি এখন ঠিক আছেন। তবে কাল বাড়ি ফিরেই নিয়মিত ভাবে যে দুটো কাজ নিয়মমাফিক করবেন তা হল - এক প্রচুর পরিমানে জল খাবেন এবং অবশ্যই সাঁতার সাঁতার কাটবেন। সাঁতার হল এমন ব্যায়াম যা আপনাকে দ্রুত সারিয়ে তুলবে। তাই বাড়ি ফিরেই সাঁতারে ভর্তি হয়ে যাবেন’। এদিকে ১৫ দিন শেষ হতে তখনও দিন তিনেক বাকি।   

  


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy