জাঁতাকলে বন্দী:-
জাঁতাকলে বন্দী:-
সকাল সকাল উঠেই টি.ভি টা চালালো অম্বরিশ। টি.ভি তেও তো খবরের চ্যানেল গুলিতে খালি করোনা নিয়ে খবর দেখায়। এক ভাইরাসের প্রভাবে যা চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা তো বলাই বাহুল্য। টি.ভি টা চালিয়ে দিয়েই ফোন করলো নিজের দিদি অমৃতার কাছে, অমৃতা এখন থাকে করিমগঞ্জে, বিয়ে হওয়ার পর থেকেই অমৃতা ঐখানে থাকছে। অমৃতা আর অম্বরিশের মধ্যে কথা হচ্ছে এরূপ,- দিদি তোরা সবাই ঠিক আছিস তো? জামাই বাবু আর আমার ভাগ্নি ভালো তো রে?
- হ্যাঁ রে অম্ব। আমরা তো ঠিক আছি, কিন্তু ভয় যে কাটছে না রে। তুই বল? তুই ঠিক আছিস তো? বাবা মা ভালো তো?
- ঠিকই রে দিদি। তবে আমরা সবাই একদম ভালো আছি, তুই চিন্তা করিস না। তুইও সাবধানে থাকিস দিদি। কি করে যে কি হবে কিছু বুঝি না। ভয়ই লাগে, আর সারাদিন ঘরে বসে বসে এত্ত বিরক্ত হচ্ছি যে কি বলবো! কতোক্ষণ গল্প করবো? কতো ঘুমোবো? কত টি. ভি দেখবো ধুর ভালো লাগে না।
- বুঝতে পারছি অম্ব। কিন্তু কি করা যাবে বল?
- সে তো জানি! এখন লক ডাউনটা মানে মানে উঠলে হয়, উফ্ আর যে পারছি না।
- উঠলে পরেও কি করোনার আশংকা কমে যাবে? তা তো নয় রে ভাই। সাবধানে যে থাকতেই হবে তখনও। নিজেদের কে সুরক্ষিত রাখতে তো হবে আমাদেরই।
- তা ঠিকই বলেছিস, আশঙ্কা তো একটা থেকেই যাবে। যাই হোক তোরা সবাই খুব সাবধানে থাকিস, জামাই বাবু আর আমার ভাগ্নির যত্ন নিস, আমরা এখানে সাবধানে আছি সব নিয়ম মেনে। আর শোন, তুই বেরোবি না কিন্তু বাড়ি থেকে। চল পরে কথা বলবো, রাখছি এখন।
ফোনটা রেখে দেয় অমৃতা। ফোনটা রেখেই গুম হয়ে চেয়ে থাকে বাইরের দিকে। বার বার মনে পড়ছে ছোট বেলায় তারা দু ভাই বোন স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে কত কত জায়গা ঘুরে বেড়িয়ে নতুন রাস্তা আবিষ্কার করে তবে বাড়িতে আসতো। ছোটবেলা থেকেই তো ভাই বোন দুটিতে কত ভাব। কিন্তু এখন বিয়ে হওয়ার পরে কালেভদ্রেই দেখা হয় ভাইয়ের সঙ্গে। তার ভাই আজ বন্দী দশায় থেকে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছে কিন্তু ভাই কি জানে দিদির মনের গোপন ব্যথা? অমৃতা বিয়ে হয়ে এই নতুন জায়গায় আসার পর থেকে খুব কমই বেরিয়েছে বাড়ি থেকে। অনেক সময় ইচ্ছে থাকলেও নিজের কর্তা তথা শাশুড়ির অনিচ্ছা থাকায় নিজেকে ঘরেই আটকে রেখেছে সে। লকডাউনের কারণে অধিকাংশ লোকেরাই যখন ঘরে বন্দী তখন অমৃতা ভাবে তোমরা এই হাতে গোনা কয়েকদিনের বন্দীদশা নিয়ে এতো চিন্তা করছো, আমি তো বিয়ে হয়ে আসার পর থেকেই এই বাড়িতে আবদ্ধ, সংরারের জাঁতাকলে বন্দী