ইস্ক কামিনা
ইস্ক কামিনা


বিক্রম আজ পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটার মত মেয়ে দেখে ফেলেছে।একটাও আর মনের মত লাগেনি।বাপের বড় বাজারে বিশাল গারমেন্টের ব্যবসা।সারা ভারতজুড়ে তাদের কাস্টমার ছড়িয়ে আছে।ইংলিশ মিডিয়ামে বারো ক্লাস পর্যন্ত পড়েছিল।তারপর আর ভাল লাগেনি।তবু কখনো,সখনো গাড়ি হাকিয়ে কিছু কিছু কলেজের ভোটে ডাং,গুলি খেলে আসে।ইদানিং তার বিয়ের জন্য বাড়ির লোক, উঠে পড়ে লেগেছেন।ভাল সে আজ পর্যন্ত কোন মেয়েকেই বাসেনি।তবে ফুর্তি অনেক করেছে।ভাল মেয়ে, খারাপ মেয়ে। তার লিস্টে সবাই আছে।সেটা তার বাবা ভাল করেই জানেন।তাই বাড়ির জন্য একটা সংস্কারি মেয়ের খোঁজ করছেন।বিক্রমের কোনটাই পছন্দ হচ্ছে না। যেখানেই মেয়ে দেখতে যাক না কেন সঙ্গে তার পুরো টিমটা যাবেই।সাধারণ ঘরের ভাল ভাল মেয়েগুলোকে উল্টো-পাল্টা প্রশ্ন বাণে আহত করে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায়।ধন কুবেরের একমাত্র পোলা।তাই সব মেয়ের বাবাই চান,বিক্রমকে ঘরের জামাই করতে।সেইভাবে মেয়েদেরও সাজিয়ে,গুছিয়ে বসিয়ে রাখেন।বিক্রম ইচ্ছে করেই তাদের অনেককে নাকচ করে এসেছে।এটা একটা তার নেশার মতো আর কি।
আজকেও একটা বাড়িতে এসেছে মেয়ে দেখতে।এই প্রথম সে মেয়ে দেখার জন্য একটা মফস্বলের বাড়িতে এসেছে।মধ্যবিত্ত ছিমছাম পরিবেশ।বাড়িতে সবকটি আসবাব পুরনো আমলের।বৈদ্যবাটির আদি বাসিন্দা।মেয়ের বাবা একজন সরকারী অফিসের ছোটখাট কেরাণী।ছেলেটা স্কলারশিপ পেয়ে দিল্লীতে পড়াশুনো করছে।আর মেয়েটা একটা কলেজে পার্ট টাইম লেরচারার।সেই মেয়েটাকেই বিক্রম দেখতে এসেছে।বন্ধুরা এক ঝলক দেখে নিয়েই নিজেদের মধ্যে চোখ টেপাটেপি শুরু করে দিল।মেয়ের বাবা তো ভীষণ খাতির যত্ন করছেন।আসলে ঘটকের হাতে,পায়ে ধরে তিনিই পাত্রের বাবাকে মেয়ে দেখতে আসার অনুরোধটা করেছিলেন।ছেলের,মেয়ে নাকচের জেরে এখন তিনি আগে থাকতে মেয়ের বাড়ি যাননা।ছেলের পছন্দ হলে তবেই যাবেন।এটাই মনস্থির করে রেখেছেন।বিক্রম এবং তার দলটির কারু মেয়ে পছন্দ হয়নি।এ তো একেবারে সাদামাটা ধরনের মেয়ে।আজকালকার আধুনিক ফ্যাশনের ধারে কাছেও ঘেঁষে না। সামান্য চুড়িদার আর একটা ওড়না জড়িয়ে টেবিলে চা নামাল।পরিস্কার চোখের নজর।বিক্রমের পুরো টিমটাকে ঠান্ডা নজরে একবার দেখে নিল।সেদিকে ওদের কারু নজর নেই।সবাই ফিনকি মেরে নিজেদের মধ্যে হাসাহাসি করছে।
একজন স্পষ্ট গলাতেই বলে উঠল।
---বিপাশা বসুও তো কালো।..কম সেক্সি নাকি?
মেয়েটা বুঝে গেল।ঈঙ্গিতটা তাকে দেখেই করা হল।মেয়ের বাবা এত শত বোঝেন না। তিনি তো পাত্রটি হাতছাড়া করতে নারাজ।মেয়ে একেবারে রাজরানী হয়ে থাকবে গো!
তাই তারা ওঠে যাওয়ার আগে সবার উদ্দেশ্যে হাতজোড় করে একটা অনুরোধ করলেন ।
----পাত্রবাবুর যদি একান্তে কিছু কথা বলার থাকে ।পাশের কামরায় যেতে পারেন।মেয়ে আমার সব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর দেবে ।
এই মাহেন্দ্রক্ষণের লোভটা বিক্রম ছাড়তে পারেনা।সে তো উঠেই গেছে। এবার সে উলঙ্গ কিছু প্রশ্ন বাণে মেয়েটাকে নাজেহাল করে কাঁদিয়ে ছাড়বে।তারপর এত ঠান্ডা আবহাওয়াতেও বন্ধুদের সাথে বিয়ার খেয়ে বাড়ি ফিরবে।
বিক্রম কামরায় ঢুকে এদিক,ওদিক তাকাল।মেয়েটা একটা ধুপ জ্বেলে চেয়ারের পাশে নামিয়ে রাখল।বিক্রম সব বোঝে।সেকেলে কালচার।স্বামীকে দেবতা ভেবে পুজো করবে।মন গলানোর বৃথা চেষ্টা! বিক্রম ভেবেই রেখেছে।এ মেয়েটাকে কাঁদাবে ওর শ্যামলা কালো গায়ের রঙটার সুঁচ ফুড়ে।বিক্রম কিছু বলতেই যাচ্ছিল।মেয়েটা হাত নেড়ে থামিয়ে দিল।
---আপনার চেনটা বন্ধ করুন।
বিক্রম কথাটা শুনে একটু কাচুমাচু হয়ে গেল।ফট করে দাঁড়িয়ে পিছন ঘুরে প্যান্টের জিপে হাত দেয়।চেনটা তো লাগান আছে।
----আপনার জ্যাকেটের কথা বললাম।...না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
বিক্রম গোপনে একটু জিভ কেটে সেভাবেই বসে পড়ল।
----আমি আবার মোজার গন্ধ একেবারে সহ্য করতে পারিনা।তাই আপনার পায়ের সামনে ধুপটা জ্বালিয়ে রাখলাম।
বিক্রম এতক্ষণ পর মেয়েটার দিকে ভাল করে চাইল।চোখে,মুখে কোথাও এতটুকু রেখা ফুটেনি।চোখের তারাদুটোও কাচের মত জ্বল জ্বল করছে।
----আপনার চেস্টটা মেয়েদের মত এত উঁচু কেন?.. ডাক্তার দেখাননি?.. প্লাস্টিক সার্জারি করেও নরম্যাল করা যায়।চেষ্টা করেননি?
বিক্রম এই প্রথম একজন মেয়ের সামনে মাথা উঁচু করতে লজ্জা পেল।মেয়েটা সত্যি কথা বলেছে।আসলে সে টাকার ছেলে বলেই কেউ বিদ্রুপ করার সাহস পায়না।তাই সমস্যাটা নিয়ে কখনও মাথা ঘামানো হয়নি।রয়েই গেছে।
----পর্ণ দেখাটা একটু কম করুন।...চোখের নিচে কালি ফুটেছে।
বিক্রমের তেজটা হঠাৎ কপ্পুরের মত উবে গেল কেন?.. ও নিজেও ভাবছে সে কথা।
---দেখুন আমি আসলে কোন ধনী ছেলেকে নিজের স্বামী করতে চাই না। বাবাকে কষ্ট দিতে চাইনি বলেই মানা করিনি।আপনি যদি আমাকে পছন্দ করতেন।আমি তবু এ বিয়ে করতে পারতাম না। আমি নিজের পায়ে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে একজন বেকার ছেলেকেই বিয়ে করব।আমার ব্যক্তব্য এইটুকুই। এবার আপনি চাইলে,কিছু জিজ্ঞাসা করতে পারেন।না হলে ওঠে পড়াই ভাল।আপনার বন্ধুরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছেন।
বিক্রম এই প্রথম কোন মেয়েকে কিছু না বলে বেরিয়ে গেল।বন্ধুরা বিয়ারের গন্ধটা যেন এখান থেকেই পাচ্ছে।তাই নাচতে নাচতে গাড়িতে উঠে পড়ল।মেয়ের বাবা মাকালী থানের দিকে একটা প্রণাম ঠুকে বলে উঠলেন।
---এই ছেলেকে আমার জামাই করে দাও মা।
মেয়েটা ধুপটা নিভিয়ে বাইরে ছুঁড়ে দিল।
গাড়ির মধ্যে বন্ধুরা ননভেজ জোকস মারতে শুরু করেছে।বিক্রমের এসব একদম ভাল লাগছে না।
---তোরা চুপ করবি।..শালা ...বালগুলো শুধু দাঁত কেলাচ্ছে!!
সবাই চুপ করে গেল।শুধু গাড়ির মিউজিক সিস্টেমটা ফুল সাউন্ডে বেজে চলেছে।
----কর দে মুস্কিল জিনা...ইস্ক কামিনা..।
সবাই ভাবছে এইবার বোধ হয় গানটাও বন্ধ হয়ে যাবে।..কিন্তু সবাই কে অবাক করে দিয়ে বিক্রম সারা রাস্তা জুড়ে ঘুরে ঘুরে ওই গানটা বাজিয়েই বাড়ি ফিরল।