হাসি পেলে হাসুন, কিম্বা...৪
হাসি পেলে হাসুন, কিম্বা...৪
•• ভাষা ••
এক অবাঙালি বাচ্চা মেয়ে বাংলা মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি হল। হাতের লেখা শেখানোর দিদিমণি কয়েকটি শব্দ লিখতে দিলেন। মেয়েটিকে চুপচাপ বসে থাকতে দেখে তিনি জিগ্যেস করলেন, —লিখছো না কেন?
সে উত্তর দিল,
—দিদি আমার পেনসিল না আছে।
দিদিমণি তার ভাষা সংশোধন করার জন্য বললেন,
—শোনো, কথাটা এইভাবে বলো, আমার পেনসিল নেই। তোমার পেনসিল নেই। আমাদের পেনসিল নেই। তাদের পেনসিল নেই। এবার বুঝেছো?
কী আর বুঝবে, ওটুকু বাচ্চার কাছে এটা এক অবাক করার মতো ব্যাপার মনে হলো। কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে দিদিমণির মুখের দিকে চেয়ে থেকে সে বলল,
—আজকে সবার পেনসিল কেন না আছে, দিদিমণি?
একবার এক ইংরেজ সাহেবের লিভার যায় যায় অবস্থা। অন্য আর এক সাহেব-ডাক্তার তাকে বললেন, গাধার দুধ খেতে হবে। তা ছাড়া এরোগ সারবে না। এখন ঐ সাহেব তার এদেশীয় আর্দালিকে (পিয়নকে) ডেকে বললেন,
—আমি দুধ খাবো। একটা গাধা চাই।
বোকা আর্দালি, সাহেবের ভাষা হয়তো ঠিকঠাক বোঝেনি, সে একটা পুরুষ গাধা নিয়ে হাজির। সাহেব ভীষণ রেগে গেলেন। একটা খালি গ্লাস উল্টিয়ে ইঙ্গিতে বোঝালেন, তিনি দুধ খেতে চান। তারপর নিজেকে দেখিয়ে বললেন,
—আমার মতো গাধা নয়...
এরপর মেমসাহেবের দিকে আঙুল দেখিয়ে বললেন,
—ওনার মতো গাধা চাই। জলদি আনো।
... এতে আর্দালি মুখে এমন হাসি হাসি ভাব করল যেন এবার সে পরিস্কার বুঝেছে, একদম জলের মতো।
ভাষা এমনই একটা বিষয় যা লেখার সময় কেবলমাত্র একটার সাথে আরেকটার গঠন-পার্থক্য দেখা যায়। অর্থাৎ লেখার অক্ষরগুলো আর কিছুই নয়, শুধু আকার আকৃতির পরিবর্তন। বিভিন্ন লেখ্য ভাষার মধ্যে এটাই একমাত্র তফাৎ।
ধরা যাক, অক্ষর-জ্ঞান নেই এমন কোন বাচ্চা বা বয়স্ক কাউকে যদি কোনো একটি আঁক বা দাগ কাটতে বলা হয় এবং সে তা কাটে, তবে এটা সম্ভব যে সেই আঁক কাটা দাগটা কোন না কোনো একটা ভাষার বর্ণ বা শব্দ হয়ে গেছে। এটা বলার পেছনে আমার একটা সহজ যুক্তি আছে। তা হলো, বর্তমান পৃথিবীতে প্রায় সাত হাজারের মতো ভাষায় মানুষ কথা বলে। এগুলোর মধ্যে বর্ণমালা আছে বহু সংখ্যক ভাষার। সেগুলোর বর্ণ বা অক্ষর সংখ্যা লক্ষের ঘর ছাড়িয়ে যাবে।
যুক্তাক্ষর সমেত তামিল ভাষার বর্ণমালায় অক্ষর সংখ্যা ২৪৭ টি। এই বর্ণমালা আয়তনে বেশ স্ফীত। আবার হিব্রু ভাষায় অক্ষর সংখ্যা মাত্র ২২ টি। এর বর্ণমালা স্বাভাবিক কারণে ছোট।
এতক্ষণ বর্ণ ও বর্ণমালা নিয়ে কথা হলো, এবার যদি উচ্চারণের কথা ধরি তবে এটি আরো বৈচিত্রময়। কিছু ভাষার মধ্যে উচ্চারণের কিছু মিল পাওয়া গেলেও সামগ্রিক বিচারে এই উচ্চারণ সংখ্যা বর্ণমালার সমষ্টিকে ছাড়িয়ে যাবে। শুনতেও অনেক সময় অদ্ভুত লাগে।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় একটি দ্বীপরাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনি। ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিমে এর অবস্থান। এবং জনসংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ। আশ্চর্যের ব্যাপার, এখানে আলাদা আলাদা ভাষার সংখ্যা ৮৩২ টি। হয়তো নানা জায়গা থেকে ভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ গিয়ে সেখানে আস্তানা তৈরি করেছে!
পৃথিবীর এই সাত হাজারের মতো ভাষার মধ্যে মাত্র ২৩ টি ভাষায় কথা বলে পৃথিবীর অর্ধেকের বেশি মানুষ।
বাংলা ভাষায় কথা বলে প্রায় ২৬ কোটি ৫০ লক্ষের মতো মানুষ। কথা বলার দিক দিয়ে বাংলা আছে ৭ম শীর্ষস্থানে।
তথ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে খানিক তথ্য রসিকতায় যাই।
আরবি বর্ণমালায় একটি অক্ষর আছে যা উচ্চারণে ‘তা’ এর মতো শোনায়। দেখতে অনেকটা হাসিমুখ কার্টুনের মতো। এটা হলো এইরকম দেখতে→ ت
জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি বা বার্থ কন্ট্রোল পিলকে জার্মান ভাষায় বলে ‘অ্যান্টিবেবিপিলেন’।
অন্যেরা যখন এইরকম বলেন :
১) আমি গাড়িটি ধরতে পারলাম না।
২) হাতখানা আমি ভেঙে ফেললাম।
৩) দুর্ঘটনাক্রমে একটা পাথরে গিয়ে ধাক্কা খেলাম।
আরব-রা তখন বলেন :
১) গাড়িটি আমাকে ছাড়াই চলে গেলো।
২) হাতখানা নিজে থেকে ভেঙে গেলো।
৩) দুর্ঘটনাক্রমে একটা পাথর আমাকে আঘাত করলো।
অনেক বন্ধু মিলে একজায়গায় জমিয়ে আড্ডা চলছে। তাদের মধ্যে একজনের বক্তব্য হলো,
— আমি খুব কঠিন একটা সময় পার করেছি। যদি সেদিন সফল না হতাম আজ আমার অবস্থা করুণ হয়ে পড়তো।
অন্য এক বন্ধু জানতে চাইলো,
— কেমন কঠিন সময় পার করেছো বন্ধু?
সে উত্তর দিলো,
— প্রথমে শুরু হলো ডায়রিয়া দিয়ে। এরপর এক এক করে টনসিলাইটিস, সোরিয়াসিস, নিউমোনিয়া, টিউবারকিউলোসিস এবং শেষ হলো নিউরোসাইকিয়াট্রিক ডিসঅর্ডারে।
এটা শুনে সকলের মুখ শুক্তোর শুক্তো মতো হয়ে গেলো। করুণ মুখে এক বন্ধু মন্তব্য করলো,
— বন্ধু, তাহলে তো অনেক লড়াই লড়েছো। বলা যায় একটা ঝড় বয়ে গেছে শরীরের ওপর দিয়ে। তা উদ্ধার পেলে কীভাবে?
সে উত্তর দিলো,
— হ্যাঁ, আমার প্রিপারেশন খুব ভালো করে নেওয়া ছিলো। তবে ঝড় শরীরের উপর দিয়ে যায়নি, গিয়েছে মনের উপর দিয়ে। একটিও বানান ভুল করিনি। প্রশ্নকর্তা যা যা জিজ্ঞেস করেছে সব ঠিক ঠিক উত্তর দিয়েছি। চাকুরী হয়ে গেছে।
এবার বাকি সবাই সমস্বরে বলে উঠলো,
— যাক্ বাঁচা গেছে...তার মানে ভুগতে হয়নি!
ভাষা নিয়ে আরও কিছু বলার আছে। ভবিষ্যতে কোনোদিন বলবো। আপাতত বিদায়ের অনুমতি চাইছি।
© নোটিশ :— বাঙলা বনধ
# এরপর লক্ষ্য রাখুন ৫ম পর্বের দিকে।