কাক কাকের মাংস খায় না (২)
কাক কাকের মাংস খায় না (২)
[গল্পের শেষ অংশ]
তার অনিচ্ছাকৃত কিছু ভুল তার unconsciousness ভাবনায় তাকে ভুলপথে চালিত করছে। এখন তিনি এর কারণ ভাবার চেষ্টা করছেন কিন্তু মাথা কাজ করছে না।
ভুল স্টপেজে নেমে ঘুরপাক খেতে খেতে তিনি যখন কলেজে উপস্থিত হলেন, বুঝতে পারলেন অনেক দেরি হয়ে গেছে। এসময় তাকে বেশ বিধস্ত দেখাচ্ছিলো। তার এক সহশিক্ষক সন্দেহ করলেন, কোথাও কেমন একটা গোলমাল ঠেকছে। সন্দিগ্ধ হয়ে প্রশ্ন করেন, “কি ব্যাপার বলুন তো, দেখে মনে হচ্ছে আপনার শরীর ভালো নেই!” ডালিমবাবু মনে হলো তখনো ধাতস্থ হননি, বিড়বিড় করে বলেন, “না, মানে... একটা কাক...সে বসেছিলো একটা ইলেকট্রিক পোস্টের ওপর...” একথা বলে ডালিমবাবু অন্যমনস্ক হয়ে পড়েন। সহকর্মী এসবের মাথামুন্ডু কিছুই বুঝতে পারেন না। তিনি বলে ওঠেন, “থাক, বাদ দিন ওসব... আমার মনে হয়, আপনার বিশ্রাম দরকার। প্রিন্সিপালের কাছ থেকে আপনি লিভ নিয়ে নিন।” এই বলে তার নির্দিষ্ট ক্লাস থাকায় তিনি সেদিকে পা বাড়ালেন।
রাতে ডালিমবাবুর স্ত্রী তাকে বললেন, “আমার মায়ের বাড়ি থেকে আজ ফোন এসেছিলো। ভাইঝি’র দেখাশোনা রয়েছে, আমাকে যেতে বলেছে। দু’দিন থাকবো, তোমাকেও ঐদিন থাকতে বলেছে। চলো যাই...।” ডালিমবাবু বললেন, “না... ঠিক আছে। তুমি না হয় ঘুরে এসো, আমি পাকাপাকি অনুষ্ঠানে নিশ্চয় হাজির থাকবো, বলে দিও।”
পরদিন তার স্ত্রী সবকিছু গোছগাছ সম্পন্ন করে বেরোনোর আগে ঠিকা কাজের মেয়েটিকে উদ্দেশ্য করে বললেন, “তোর বাবুর যাতে কোনো অসুবিধা না হয়, ভালোভাবে লক্ষ্য রাখবি। আমি পরশু ফিরে পড়বো।” ঠিকা কাজের মেয়েটি তার কথায় সায় দিয়ে মাথা নাড়লো।
ডালিমবাবু এরপর আগামী দু’দিন একা থাকতে শুরু করলেন। স্ত্রী চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পর তৈরি হয়ে তিনি লেখার চেয়ার টেবিলের কাছে চলে এলেন। ঠিক করলেন মাথায় যা-ই আসবে তাই লিখবেন। বসার পর আর মাথায় কিছু আসেনা। উঠে দু’পা পায়চারি করতে শুরু করলেন। তখনই মাথায় কিছু আসতে শুরু করলো। আবার বসে পড়লেন। বসার পর আবার আগের অবস্থা। এবার চেয়ারে হেলান দিয়ে চোখ বুঁজে থাকলেন, এমন সময় একটি কুচকুচে কালো দাঁড়কাক শোঁ করে উড়ে এসে বারান্দায় রেলিংয়ের ওপর বসলো। দরজার ফাঁক দিয়ে তিনি সেটা দেখতে পেলেন। ঐ কাকের চোখের ওপর সাদা পর্দা পুট পুট করে লাফাচ্ছে। তিনি মনে মনে ঠিক করে আছেন, একেবারে হাতে কলমে কাকের মাংস ভক্ষণ করবেন। কাক হওয়ার অনুভূতি নিজের অজান্তে সবসময় অনুভব করে চলেছেন। এর জন্য অবশ্যই দায়ী সেই পত্রাঘাত। একটি মন্তব্য তার আমূল মানসিক পরিবর্তন সূচিত করে দিয়েছে। যেহেতু তিনি নিজেকে কাক ভাবছেন তাই দেখাতে চান, কাক হয়ে কাকের মাংস খাওয়া যায়। এটা তার চ্যালেঞ্জ! কিন্তু এই চ্যালেঞ্জ তিনি কার সাথে নিচ্ছেন, সেটা স্পষ্ট নয়—নিজের সাথে কী!...আস্তে আস্তে গিয়ে ঘরে রাখা নিজের আলাদা একটি আলমারি খুললেন। সেখানে একটি আনকোরা গুলতি গুছিয়ে রাখা আছে। কয়েকটি কাঁচের গুলি ও গুলতিটি বার করলেন। এই গুলতির কথাটা তিনি স্ত্রীকে কিছুই জানাননি। চুপি চুপি কিনে এনেছেন। যেখান থেকে কিনেছেন, সে দোকানদার তার অপরিচিত। ভদ্র পোষাক-আশাক, মানানসই চেহারা দেখে দোকানির কৌতুহল হয়, সেখানে সে একটা প্রশ্ন করে, “বাবু, আপনি গুলতি নিয়ে কি করবেন?” কথা শুনে ডালিমবাবু মনে মনে ভাবলেন, তার দিকে কটমট করে তাকাবেন। কিন্তু নিজেকে সংযত রাখলেন। তার মুখের দিকে চেয়ে মৃদু হাসলেন। ভাবছেন, “তোর এতো কৌতুহল কিসের! আমি এটা কিনে যে কাউকে দিতে পারি। তুই নাক গলিয়ে কি করবি!”
কাক বড়ো ছটফটে জীব। কাঁচের একটি গুলি নিয়ে গুলতিতে ভরে কালবিলম্ব না করে রবারে টান দিয়ে ছেড়ে দিলেন। আনাড়ি হাত। যা হবার তাই হলো। গুলি চলে গেলো দু’ফুট দূর দিয়ে। ছুটে গিয়ে সোজা লাগলো ওপারের বিল্ডিংয়ের বাথরুমের কাঁচের জানালায়। ঝনঝন শব্দে আশপাশ কেঁপে গেলো। কাকটা কিছু বুঝতে না পেরে মাথাটা এদিক ওদিক চক্কর মেরে সেখান থেকে পগার পার। এবার যে দৃশ্য সামনে এলো তার জন্য সচরাচর কেউ তৈরি থাকেনা। খালি গায়ে একটা ছোট গামছা পরে ওপারের বিল্ডিংয়ের শান্তিবাবু তড়াক করে ঝুল বারান্দায় এসে হাজির। শুরু করলেন তর্জন গর্জন, ”কোন্ আহাম্মক এই কাণ্ডটা করতে পারলো! এ পাড়ায় কি মানুষ থাকবে না, নাকি! ...” হম্বিতম্বি শুনতে পেয়ে অন্যসব প্রতিবেশীরা যে যার ঝুল বারান্দায় উৎসুক জনতার ভিড় লেগে গেলো, কারণ এমন তো কখনো ঘটেনি।
শান্তিবাবু সকাল সকাল অফিস বের হন। তার কপালে আজকের এই অশান্তি জুটবে ঘুনাক্ষরেও জানতেন না। বাথরুম ছিলো তারই দখলে। চোখের সামনে ঘটে যাওয়া আচমকা এই ঘটনায় তার পিলে চমকে যায়। ভয় পেয়ে দৌড়ে বাইরে আসেন। তার গলা এখনো কাঁপছে। নিচের দিকে উঁকিঝুঁকি দিয়ে বোঝার চেষ্টা করেন, এ কাজ কার হতে পারে...। “আমি অফিস থেকে ফিরে এসে এর হেস্তনেস্ত করবোই...” বলতে বলতে ভেতরে চলে যান তিনি।
দরজার একটা পাল্লা তখনও খোলা ছিলো, কেউ কিছু সন্দেহ করেনি বোঝা যাচ্ছে, অল্প মাথা বাড়িয়ে ডালিমবাবু দেখলেন সবাই যে যার বাড়ির মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে। এখন হুট করে পাল্লাটি বন্ধ করে ফেললেন। এতক্ষণ তিনি দরজার পাশে আড়ালে লুকিয়ে ছিলেন। কেউই ভাবতে পারেনি এটি তার কাজ হতে পারে। তাই এপাশে কেউ তাকায়নি। এবার তার হাঁটু কাঁপতে শুরু করলো, ভয়ে নয়... ঘটনার আকস্মিকতায়। একি করলেন তিনি! এই উদ্ভট কাণ্ডটি করতে পারলেন কিভাবে... এটা ভেবে তার প্রথমে কাঁদতে ইচ্ছা হলো, অতঃপর খানিক সামলে নিয়ে চেয়ারে ধপাস করে বসে পড়লেন।
পরদিনের ঘটনা। সকালে যখন তিনি বাজার করছেন, দেখেন একঝাঁক কাক হরদম এদিক ওদিক ওড়াওড়ি করছে। এখানে ওখানে তারা বসে রয়েছে— দোকানের চালে, গাছের ডালে। বাজারে অগুনতিবার তিনি এসেছেন কিন্তু এই প্রথম যেন কাকেদের সম্মেলন তার নজরে পড়ছে। তার জীবনে এই দিনগুলোতে এমন সব কাণ্ড ঘটছে যা তার কল্পনায় কোনোদিন আসেনি। তিনি অবচেতনে এসব ঘটনায় জড়িয়ে পড়ছেন। ঠিক ঐ প্রকার ঘটনা এখানেও ঘটলো।....
চারিদিক খালি মতো, লোকজন কম এমন এক জায়গায় দেখলেন একটি অল্পবয়সী ছোকরা বেঞ্চে বসে পা দোলাচ্ছে। পাশে চায়ের দোকানেও লোক কম। হাতের ইশারায় ছেলেটিকে কাছে ডাকলেন। কী মনে করে সেও চলে এলো। গলা নামিয়ে ছেলেটিকে বললেন, “আমার একটা উপকার করে দে...” এই বলে ১০০ টাকার একটা নোট হাতে ধরিয়ে দিলেন। খানিকক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে মুখের দিকে চেয়ে থেকে ছেলেটা চনমনে হয়ে উঠে বললো, “ঠিক আছে, এখনই ধরে আনছি!” মিনিট পনেরো সেখানে পায়চারি করলেন ডালিমবাবু। তাকে এখানে অনেকেই চেনে। সুতরাং কয়েকজনের সাথে হাসিমুখে শুভেচ্ছা বিনিময় হলো। অপেক্ষা শেষ হলে ছোকরাটা একটা কিছু নিয়ে কাপড়ে মুড়ে তার হাতে দিলো। সেটা নিয়ে হনহন করে বাড়ির পথে হাঁটা দিলেন তিনি। মুখের ওপর ছড়িয়ে পড়া হাসি দেখে মনে হলো বেজায় খুশি হয়েছেন।
ঘরের মেঝে মোছামুছি আর নিয়মিত মাজাঘষা শেষ হলে ঠিকা কাজের মেয়েটিকে ডালিমবাবু বললেন, “আজ আমি নিজে রান্না করে নেবো, তুই তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে যা—” এর আগে এমন কোনোদিন হয়নি। মেয়েটি আড়চোখে তার মুখের দিকে তাকিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। ব্যাপারটা তার কাছে অদ্ভুত মনে হয়েছে। ... এখন নির্দ্বিধায় তিনি ঝাড়া হাত-পা হয়ে রান্না ঘরে ঢুকবেন। আকাঙ্ক্ষার কাকের মাংস তার হাঁড়িতে চড়বে। তিনি খুশিতে ডগমগ। অবচেতনের এই অদ্ভুত নেশা তার মধ্যে যে একটানা সবসময় অবস্থান করছে তা কিন্তু নয়। যখন আক্রান্ত হচ্ছেন তখনই শুধু নিজেকে কাক ভেবে চলেছেন। কাঁচা হাতে কোনোমতে রান্না সম্পন্ন করলেন। জীবনে রান্নাঘরে পদার্পণ করেননি বলা যাবে না, তবে সেইভাবে অংশগ্রহণ করেননি। রান্নায় কেমন কেমন গন্ধ ছাড়ছে মনে হলো। সেই গন্ধে তার গা গুলিয়ে বমি এসে গেলো। দ্রুত বাথরুমে চলে গেলেন। পেটে যাকিছু ছিলো বেসিনের ওপর ছেড়ে দিলেন। শরীর বেশ খারাপ লাগতে শুরু করেছে। কোনোমতে পরিচ্ছন্ন হয়ে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। তিনি ভাবছেন, তার কেন এমন হচ্ছে! কেন নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না। কেন কাকের মতো একটি অবহেলিত.. বিরক্তিকর.. দুই ডানাবিশিষ্ট জীব তাকে নিরন্তর তাড়া করে বেড়াচ্ছে! ভাবতে ভাবতে তিনি নিদ্রামগ্ন হয়ে পড়লেন।
... এবার দিবাস্বপ্ন দেখলেন— প্রতিদিন একটি করে কাক, সেই ছোকরাটি তাকে এনে দিচ্ছে। কাকের পালক আর ফেলে দেওয়া অংশগুলো কালো পলিব্যাগে ভরে ডাম্পারে ফেলে আসছেন। ঘুনাক্ষরে কেউ তা টের পাচ্ছে না। এভাবে দেখতে দেখতে এলাকায় কাকের সংখ্যা কমে এলো। এলাকার পৌরসভার ঝাড়ুদার দেখলো তার বাড়তি খাটুনি হচ্ছে। চুপিচুপি ফলো করে একদিন তাকে হাতেনাতে ধরে ফেললো। রাস্তায় কতরকম বাজে জিনিস লোকে ছুঁড়ে ফেলে রেখে যায়। কত উচ্ছিষ্ট, কত নোংরা...মরা ইঁদুর, সাপ, পচা খাবার এই কাকেদের কল্যাণে সাফসুতরো হয়। ঝাড়ু পড়ে দিন গেলে একবার কিন্তু চব্বিশ ঘন্টায় কতরকম নোংরা জমে। ‘ঝাড়ুদার’ উপাধিপ্রাপ্ত কাক সেসব নিমেষে সাফাই করে দেয়। না হলে দুর্গন্ধে টেঁকা যেত না। সেই কাকের সংখ্যা যখন কমলো, ঝাড়ুদারের ওপর চাপ বাড়লো। সবাই তাকে বলতে লাগলো এলাকা ঠিকঠাক পরিষ্কার হচ্ছে না। এতে তার রাগ হলো। সে থানার দারোগা বাবুর কাছে ডালিমবাবুর নামে নালিশ করলো। ডালিমবাবু নাকি পাগল হয়ে গেছেন, আর রোজ একটা করে কাক ধরে নিয়ে মেরে ফেলছেন।
সত্য যাচাইয়ের জন্য একদিন ওসি সাহেব তার দরজায় উপস্থিত। “প্রোফেসর সাহেব —বাড়ি আছেন?”
“হ্যাঁ আছি, কে বলছেন?”
“আমি থানার বড়বাবু, দরজা খুলুন।”
“কেন কেন... বড়বাবু কেন...কি ব্যাপার !”
বলতে বলতে ডালিমবাবু দরজা খুলে দিলেন।
“আপনার নামে গুরুতর অভিযোগ জমা পড়েছে। এলাকার কাকগুলো আপনি নিকেশ করে ফেলছেন। আমরা তদন্ত করে দেখবো কোন্ ঝামেলায় আপনি জড়িয়েছেন, বিদেশি কোনো প্ররোচনা আছে কিনা।”
“এ সংবাদ কোথায় পেয়েছেন?”
“এখানকার সরকারি ঝাড়ুদার আমাদের জানিয়েছে।”
“শুনুন, আমি বিদেশে কাক পাচার করিনা। এমন নয় যে, কাক মেরে দেশকে আমি নোংরার মধ্যে ফেলছি আর কোনো শত্রু দেশ এতে মদত দিচ্ছে।”
“তাহলে আসল ঘটনা আমাদের জানান...”
“আমি এটা খাচ্ছি... দেশের কোনো আইনে বলা নেই, কাকের মাংস খাওয়া যাবেনা!”
দারোগাবাবু লাফ দিয়ে তিন হাত পিছনে চলে গেলেন। চোখ ভাঁটার মতো গোল গোল করে ফিসফিস স্বরে উচ্চারণ করলেন, “বলেন কী!! কাক মেরে খাচ্ছেন, এটা আপনার স্বাস্থ্যের জন্য ভয়ংকর!”
কোনো আইনে তাকে আটকাতে না পেরে দারোগাবাবু যাওয়ার আগে বলে গেলেন, “কোনোদিন যদি দেশে কাক-মারা আইন লাগু হয় তবে আমার মুখটা আবার আপনি দেখবেন, এখন চললাম...” এপর্যন্ত বলে তিনি গটগট করে বেরিয়ে গেলেন।
ডালিমবাবুর বুঝতে বাকি রইলো না বাড়িতে কোনোরূপ প্রমাণ ফেলে রাখা যাবে না। খুঁজে দেখেন পালকভর্তি একটি বড় কৌটা, বাতিল জিনিসপত্র রাখার জায়গায় খবরের কাগজের তলায় চাপা দিয়ে রাখা আছে। পরদিন ভোরে সকলের অলক্ষ্যে ডাম্পারের ভেতর কৌটোটা ফেলে এলেন। গোল বাঁধলো এরপর। যত কাক যেখানে ছিলো সবকটা সেই কৌটোর কাছে হাজির। অনেকে খবর দিয়ে সঙ্গে করে আরও সঙ্গীদের এনে হাজির করছে। চারিদিকে কাকেদের হাট বসে গেলো। কা—কা—রবে চতুর্দিক মুখরিত। গাছের ডালে ডালে, ঘরের ছাদে, পোষ্টের ওপর, পাঁচিলের ওপর সর্বত্র শুধু কাক আর কাক। তাণ্ডব শুরু হয়ে গেলো। সেখানকার লোকজন তাদের তাড়িয়ে দিতে গিয়ে হয়রান হয়ে পড়লো। কিভাবে যেন জানাজানি হলো এইসব হয়েছে ডালিমবাবুর কীর্তির জন্য। পাড়াসুদ্ধ সবাই তাকে চেপে ধরলো, “আপনি দমকলে কিংবা ত্রাণবিভাগে এখনই খবর পাঠান, আমরা অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছি। পাড়ায় কেউ ঢুকতে পারছে না, কেউ বেরোতেও পারছে না...না হলে আপনাকেও পাড়াছাড়া করা হবে ঐ কাকগুলো সমেত...”
“না_আ_আ_আ..” বলে তিনি চিৎকার করে উঠলেন। নিজেকে আবিষ্কার করলেন, বিছানার ওপর শুয়ে আছেন। অসময়ে শুয়ে একখানা দুঃস্বপ্ন দেখছিলেন। কাঁধের কাছটা চটচট করছে। অনেকটা ঘেমে গেছেন। বারান্দায় পায়চারি করার জন্য উঠে গেলেন। এখানে খোলা জায়গায় বুক ফুলিয়ে নিঃশ্বাস নিলেন কয়েকবার। হঠাৎ নজরে পড়লো বাঁদিকে সোজাসুজি একটা বিল্ডিং থেকে কেউ তাকে লক্ষ্য রাখছে। দ্রুত চোখ নামিয়ে নিলেন। আবার ঢুকে গেলেন ভেতরে। তারপর ফুলস্পিডে পাখা চালিয়ে দিলেন। হালকা বোধ করতে শুরু করলেন এই মুহূর্তে। ঘাম ক্রমশঃ শুকিয়ে আসছে। তার সাথে সাথে বেরিয়ে এসে বাতাসে মিলিয়ে যাচ্ছে তার অস্বস্তিবোধ ও মানসিক অস্থিরতা। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করছেন, “....যা ঘটে গেছে সকলকিছুকে একটা ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন বলে ভাববেন... এবার থেকে তিনি শুধু লেখালেখি নিয়ে থাকবেন... তবে সমালোচনামূলক লেখাগুলো আর লিখবেন না। কারো শত অনুরোধেও না। কাক সম্পর্কে তো নয়ই। এমনকি কাকের কোনো গল্পও নয়। উফ্ ঐ শব্দটা যেন তাকে ঠোকর মারছে!!”
|| কাকের বৃত্তান্ত সমাপ্ত ||
