STORYMIRROR

গুলাল আবু বকর

Abstract Others

3  

গুলাল আবু বকর

Abstract Others

“ওপরওলা দিচ্চে"

“ওপরওলা দিচ্চে"

2 mins
433

হালিমা খাতুন সরকারি "আশা" স্বাস্থ্যকর্মীর কাজ করেন। যা শ্রম তিনি ব‍্যয় করেন সেই অনুপাতে পারিশ্রমিক বোধহয় পান না। তার ডিউটি দিনে ২৪ ঘন্টা। সুতরাং অন‍্যসব কাজে কিভাবে ফুরসৎ পান, সেটা এক আশ্চর্যের ব‍্যাপার! 'ইধার কা টাইম উধার' করতে হয়, ব‍্যাপারটা এরকমই। তিনি কাঁচকলা রান্না করতে চলেছেন সজনে ডাঁটা আর চিংড়ি সহযোগে। উনুনে বসিয়ে নাড়াচাড়া করে সবে কষতে শুরু করেছেন, এমন সময় ফোনে রিং হলো। ফোন ধরে জানতে পারলেন, স্থানীয় স্বাস্থ‍্যকেন্দ্রে একটি দরকারি মিটিং হবে ঠিক একঘন্টা পর। ডেঙ্গি এবং কুষ্ঠ রোগের সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর। বাড়িতে একা, কি করবেন ভাবতে থাকেন। ভাবনার কথা কে আর বুঝবে! 


      সেদিন রাত বারোটা যখন, তিনি জানতে পারলেন একজন পোয়াতির প্রসব-বেদনা শুরু হয়েছে, নিয়ে যেতে হবে হাসপাতাল। নতুবা ক'টি টাকা তার হাতছাড়া হয়ে যাবে আর আছে রোগীর তরফে চোখরাঙানি। কি যে ঝক্কি, তা কাকে বোঝাবেন! দিনটা ২৪ ঘন্টার হয়ে ভালোই হয়েছে, যদি ওটা ২৬ ঘন্টার হতো তবে কাজের পরিধি আরও দুটি ঘন্টা বেড়ে যেতো। ভাগ্য ভালো, তা হয়নি।


      ঘন বসতিপূর্ণ এলাকায় কাজ করে তিনি হাঁফিয়ে ওঠেন। দরিদ্রশ্রেণীর বাস। তাদের কাজ বলতে আর কি, হয় খাটাখাটনি নয়তো টোটো চালানো বা দর্জিগিরি। ঝুপড়ি মতন ঘরে চারখানা বাচ্চা, বছরে ১ টা করে। হালিমা খাতুন গত তিন বছর লেগে আছেন যাতে বাচ্চাগুলো ঠিকমতো ওষুধ ও পুষ্টি পেয়ে বড়ো হয়ে ওঠে। তাদের তিনি ধীরেসুস্থে বুঝিয়ে বলেন, "এইভাবে বাচ্চা নিলে তোমার শরীরের কিছু থাকবে?"


তারা উত্তর দেয়, "কি করবো দিদি, ওপরওলা দিচ্চে। বাচ্চাদের মারতে নেই।"


তিনি অবাক হন। বলেন, "ক'টা বাচ্চা নিতে বলেছে তোমার ওপরওলা...?" তাকে থামিয়ে দিয়ে তারা বলে, "দেখো দিদি, আমরা মুখ‍্যুসুখ‍্যু মানুষ তবে এটা জানি বাচ্চা ঠেকাতে নেই।"


হালিমা খাতুন বড়ই ভাবনায় পড়েন। মনে মনে বিড়বিড় করেন, কিসব ধারণা নিয়ে কাদের পাকেচক্রে পড়ে আছে এরা!


আপাতত তিনি শেষ চেষ্টা করেন এই বলে , "ওপরওলা যদি সব দেয়, তবে তোমরা বোধহয় কিছু জানোনা, তাই না! এদের মানুষের মতো মানুষ করা ― সেটাও কি ওপরওলাই করবে?" হালিমা খাতুন হয়তো তাদের উত্তরের প্রতীক্ষায় থাকবেন...।


      কাজের সময় দিনে ২৪ ঘন্টা তাই তার হাতে সবকিছু ভেবে দেখার সময় থাকেনা বললেই চলে। সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে আখেরে হালিমা খাতুনের সামান্য আর্থিক লাভ অথচ তিনি আন্তরিকভাবে চান এদের সংসারে সুসন্তান গড়ে উঠুক।

               || সমাপ্ত ||


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract