হার মানব না
হার মানব না
২১ সালটাকে মনে করলে ওর মনে বেদনার বাঁশি বেজে ওঠে কখনও। হবার ই কথা। আসলে কার পক্ষে সম্ভব অকারণে অত্যাচার সহ্য করা। কিন্তু সহ্য করতেই হত। হত বলেই কখনও মনে হত আর বেঁচে থেকে কাজ নেই। মানুষ এখন হয়ে গেছে খুবই অমানুষ। অন্য কোন মানুষ বা পশুকে কষ্ট দিয়েই অজস্র আনন্দ পায় মানুষ। যেন মনে হয় মানুষের রূপ ধরে এসেছে অসুর। নারী ছাড়া স্বর্গলোক ও যেমন হয়ে যেত ধংস, মর্ত্য ও হয়ে যাবে ধংস। দুর্গা না এলে মহিষাসুরকে পারত না বধ করতে কেউ,,, সেই দুর্গাই কালী রূপ নিয়ে ধংস করল আরও অসুর। সেই অসুরের রক্ত খেতে হয়েছিল মাকে। কারণ ওর শরীরের এক ফোটা রক্ত পড়লে, সেখান থেকে জন্ম নিত আরক অসুর। মা রক্ত খেয়ে রেগে গিয়ে প্রচন্ড পাগলের মতন যখন নেচেই চলেছিল, থামছিল না, তখন মহাদেব মা-কালীর পায়ের সামনে শুয়ে পড়েন। স্বামীর গায়ে পা দিয়ে ফেলেছিল বলে মা লজ্জিত হয়ে থেমে গেছিল।
এতো কিছু বলে ফেললাম, কিন্তু দেখুন এটাই বলা হয়নি আপনাদের যে আমি কার গল্প বলতে
চলেছি।
মেয়েটার নাম ছিল মিমি। মিমি খুুব ভাল স্টুডেন্ট ছিল পড়াশোনাায়। এম এস সি পাশ করা।
কিন্তু মিমি কে যে একদিন এরম দিন দেখতে হবে সে কথা মিমি কখনও আন্দাজ ও করেনি।
সম্ববন্ধ করে সূর্যর সাথে বিবাহ হয়েছিল মিমির।দুজনেই ছিল খুবই খুশিতে।
কিন্তু কার জীবনে কখন কি হবে তা একেবারেই অজানা আমাদের কাছে।
"সুমি তুমি এবার আমার সন্তানের জীবন থেকে চলে যাও। আমার আর ভাল লাগছে না। তুমি ওর জীবন নিয়ে খেলছ। "
সুমি--" আপনি এরম কথা কি করে বলতে পারেন শাশুড়িমা? আমি কোথায় আপনার ছেলের জীবন নিয়ে খেলছি?? আপনার এই কথার মানে কি??"
শাশুড়ি--" সূর্য মন থেকে খুবই ভাল মানুষ বলেই তোমার মতন মেয়েকে মেনে নিয়েছে। নইলে,,,,"
সুমি--" নইলে কি???? নইলে আমি ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার মেয়ে।। আপনার এটাই মনে হয়,,, তাই না?"
শাশুড়ি--" আমি তো এই কথা বলিনি।"
সুমি--" আপনার মুখ দেখে,,, আর আপনার কথা শুনেই বোঝা যাচ্ছে, আপনি কি ভাবছেন আমার সম্বন্ধে।"
শাশুড়ি--" সুমি,, তুমি আমায় অপমান করছ।"
সুমি--" আমার দিকে কটমট চোখ করে তাকিয়ে আছেন কিসের জন্য?? অশান্তিটা শুরু করেছেন আপনি। আমাকে আজেবাজে কথা শোনাচ্ছেন। আপনার কি মনে হয়,, আমি চুপ করে থাকব?"
শাশুড়ি--" তোমার ভদ্র সভ্যতার জ্ঞান কোথায় আছে? খালি চেঁচাবে। কিছুই শেখনি।"
সুমি--" আর আপনি খুবই ভদ্র??? তাই নিজের ছেলের বউকে তাড়িয়ে দিতে চাইছেন। এটা ভদ্রতা??"
শাশুড়ি--" সূর্য ওর বাবার মনের ইচ্ছে পূরণ করতে তোমায় বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছে। তা বলে তুমি ওর জীবন নষ্ট করতে পার না।"
সুমি--" আমি ওর জীবন নষ্ট করছি?? এই জানত,, আপনি পাগলাগারদে গিয়ে থাকুন। আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।"
শাশুড়ি--" চুপ কর সুমি। তুমি ভাল মতন বুঝতে পারছ আমি কি বলতে চাইছি।"
সুমি--" তা খুলে বলুন না,, কি বলতে চাইছেন। নাটক করছেন কেন? নাটক করে, আমার সময় নষ্ট করছেন আপনি।"☹☹
শাশুড়ি-" আমি নাটক করছি,,, না তুমি নাটক করছ সেটা ভেবে দেখ।"
সুমি--" উফ!! কি পাগল মহিলা মাইরি। বকছে,, তো বকেই চলেছে।"
শাশুড়ি--" কতদিন তোমার খেয়াল রাখবে সূর্য?? তোমাকে কি সূর্য,, তোমার খেয়াল রাখার জন্য বিয়ে করেছে? আজীবন সূর্য পারবে না তোমার খেয়াল রাখতে। এবার তোমার উচিত,, সূর্যর জীবন থেকে চলে যাওয়ার"
সুমি--" আপনার নাটকটা শেষ হয়ে থাকলে স্পষ্ট ভাবে বলুন আপনি কি বলতে চান। "
শাশুড়ি--" তোমার মতন একজন নার্ভের রুগির পক্ষে সম্ভব নয় আমার ছেলের খেয়াল রাখা। আমি কি করে শান্তি পাব, সূর্যকে তোমার হাতে ছেড়ে ফেলে এ পৃথিবী থেকে চলে যেতে?? যে নিজের ই খেয়াল,,,,,"
সুমি--" চুপ করে যান। আপনার বাকি কথাগুল আমিই পূর্ণ করে দিচ্ছি। আমি মাইগ্রেনের রুগি বলে আপনি আমায় সহ্য করতে পারছেন না। এটাই আপনার মনের ভাবনা। তাই আপনি আমায় বাড়ি থেকে তারিয়ে দিতে পারলে,, বাচেন। তা আপনার ছেলে তো জেনেই বিয়ে করেছিল,, যে আমার নার্ভের রোগ আছে। নাটক করছেন কেন। আমি তো বাধ্য করিনি আপনার ছেলেকে আমায় বিয়ে করতে।
ও হ্যা,,,,,,এটা তো আপনার কথা,, আপনার ছেলের তো নয়। যেহেতু আপনার ছেলে আমাকে,, আপনার অমতে বিয়ে করেছে,, তাই আপনার গা জ্বলে। বুঝতে পেরেছি। তা আর কত গা জ্বালাবেন নিজের? ঠান্ডা হন। নইলে পুরে কাল হয়ে যাবেন। "
শাশুড়ি--" চুপ কর সুমি। তোমার ওই রোগের জন্য আমার ছেলে দিন রাত চিন্তত হয়ে যায়। আমি আর পারছি না ওকে এরম চিন্তার মধ্যে ডুবে আছে দেখতে। "
সুমি--" আপনার সমস্যাটা কি?? আমরা হাসবেন্ড ওয়াইফ তো ঠিক আছি। মাঝরাস্তায়, আমাদের জীবনে ফোরন কাটতে আসছেন কেন?? আপনার চাইটা কি??"
শাশুড়ি--" এই ডিভোর্স পেপারটায় সাইন কর।"
সুমি--" ডি,,ভো,,র্স,, পেপার?
না,,, আমি করব না,, যতক্ষণ না, সূর্য এসে ডিভোর্স চাইবে। আর আপনি ভাল মতন জানেন মা,, এই সময় ডিভোর্স দেওয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ দিলেই লোকে আমাদের পরিবারকে,,,,,,"
শাশুড়ি---" তোমার পরিবারকে কি বলবে তুমি ভাব। আমি শুনতেও চাইনা। চলে যাও। "
সুমি --" করব না,, মানে আমি করব না ওই পেপারে সই। ডিভোর্স দেব না সূর্যকে। কি এমন অসুবিধা জনক আমি,,, যে আমায় সূর্যর থেকেই আলাদা হয়ে যেতে হবে?"
শাশুড়ি--" কি অসুবিধা?? যখন তোমার ওই মাইগ্রেনের সমস্যা হয়,, তুমি দাত খিচাতে থাক, চাদর প্রায় ছেড়ার মতন অবস্থা হয়ে যায় তোমার। আর তখন সূর্যর চোখে জল এসে যায়।"
সুমি--" তো কি করব আমি? এর জন্য আমি আত্মহত্যা করে মরব?? ভেবে দেখুন আমার কত কষ্ট হয়। আর আপনি এতো নিষ্ঠুর যে আপনার মনে কোন মায়া দয়াও আসে না। আপনার কি কোন রোগ নেই মা?? হাইপ্রেশার, সুগার এগুলো কোন রোগ নয়?"
শাশুড়ি--" হ্যা, এগুলো ও রোগ,, কিন্তু তোমার মতন নয়। কারোর দরকার পরে না, আমার দিন রাত খেয়াল রাখার।"
সুমি--" আর নার্ভের রোগ জঘন্য??? অমানুষ আপনি একটা।"
শাশুড়ি--" চুপ কর। তুমি আমার বাড়িতে থাক আর আমার ছেলের কামান টাকায় খাও। আমরা না থাকলে তুমি রাস্তায় থাকতে।"
সুমি--" এটা তো আপনার বাড়ি নয় মা। এটা তো বাবার বাড়ি।"☹☹☹
শাশুড়ি--" তোমার শ্বশুর তো আমার স্বামী। তার সবকিছুর ওপর অধিকার আমার আছে।"
সুমি--" কিন্তু সূর্যর তো বাবা। এর মানে ওর বাড়িও এটা নয়।"
শাশুড়ি--" সূর্য আমার ছেলে,, যা যা আমার আছে সবকিছুই সূর্যর জন্য। "
সুমি--" তাহলে সূর্য আমার স্বামী। ওকে আর আমাকে বিচ্ছেদ করতে পারবেন না। এটা যদি সূর্যর ও বাড়ি হয়,,, তাহলে আমার ও বাড়ি। ডিভোর্স পেপারটা ডাস্টবিনে ফেলে দেব আমি।
" মা,,,, সুটকেস গোছাতে হবে। তারাতারি এস। "
সূর্যর মা--" বাবা, চলে এসেছিস,, খেয়েনে ভাল করে।
তবে সুটকেস গোছাতে হবে কেন?? তোকে কি ট্রান্সফার করিয়ে দিল। "
সূর্য--" মা,, আমি একজন নিউরলজিস্ট ডাক্তার, ডাক্তারকে কখনও ট্রান্সফার করে না। তবে তুমি বাড়ি থেকে ট্রান্সফার করিয়ে দিলে। "
সূর্যর মা--" মানে?? আমি কি করলাম???"
সূর্য--" আমি জানতাম মা,, তুমি সুমির সাথে এরম ই করবে। আজ যদি সুমি তোমার মেয়ে হত, তাহলে তুমি কি করতে? ওর পাশে আসতে, ওকে সাহায্য করতে, ওর মনে শক্তি দিতে, ওর মন খুশি রাখতে। কিন্তু যেহেতু, সুমি তোমার ছেলের বউ মা, তাই তুমি ওকে এরম কথা শোনাচ্ছ,, ওর মনের মধ্যে ব্যাথা দিচ্ছ। এতো কথা শুনিয়ে,,, তোমার মন যে খুব খুশি হয়েছে তাও নয়। আমি জানতাম মা তুমি একদিন এরমই করবে। সুমির মতন সৎ মেয়ে সত্যিই হয় না। বিয়ের আগে ও বলেই দিয়েছিল যে ওর নার্ভের রোগ আছে, প্রথম দিন দেখা করতে গিয়ে,, যাতে আমি অনেক কিছু ভেবে ফেলার পর,,, দুধওলির স্বপ্নের মতন স্বপ্নটা না ভেঙ্গে যায়।
ও কোনদিনও বলে না মা, আমায় ঘোরাতে নিয়ে চল। আমি তো দেখেছি,,, বিভিন্ন কারণে আমার অনেক বন্ধুর ডিভোর্স হয়ে গেছে। ও সংসারের কোন কাজ ও করতে বলে না।
আমাদের বাড়ির পাশেই একটা ফ্ল্যাট বাড়ি হচ্ছে,, আমি কিনব ২ bhk ফ্ল্যাট। যাতে আর এরম অশান্তি না হয় মা।
সূর্যর মা--" এরম করিস না, বাবা। তুই আমার হৃদয়। তোকে ছাড়া আমি একা কি করে থাকব। আচ্ছা আমি সুমির কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি,,, আর কোনদিনও এরম কথা বলব না। প্রমিস।
সূর্য--" মানুষের স্বভাব যায় না মরলে মা। তুমি আবার ও এরম করবে।"
সূর্যর মা--" শোনা এরম করিস না।"
সুমি--" দাঁড়াও। বড়দিন তো চলে গেল,, আর কিছুদিন বাদেই নতুন বছর আসবে। এই দুইদিন ই তো সবচেয়ে আনন্দ করার দিন। ওখানে গিয়ে তুমি কোন আনন্দ পাবে না,, মায়ের ও মন ভেঙ্গে যাবে। সংসার মানেই একটু অশান্তি হবেই। কখনও মানুষ হাসে কখনও মানুষ কাঁদে। সবসময় হাসেও না,, সবসময় কাঁদেও না। কেক আছে,, চল কেটে খাই। কাল তো খাওয়া হল না।"
সূর্য--" তুমি এনেছ??"
সুমি--" হ্যা। "
সূর্য--" আমিও তো একটা বড় কেক এনেছি।"
সুমি--" দেখেছ? তোমার মন একরকম ভাবে,, আর তোমার মুখ অন্যরকম কথা বলে। এনেছ,, তো চল,, আনন্দ করে খাই। "
সূর্যর মা--" আমি তোকে অনেক ভুল কথা বলে ফেলেছি সুমি,, আমায় ক্ষমা করে দিস মা।"
সুমি--" মা কখনও মেয়ের কাছে ক্ষমা চায় নাকি??ভুলে যাও কথাগুল। চল একসাথে আনন্দের সাথে থাকি।"
কোন মানুষকে তাঁর রোগের জন্য ব্যাথা দেওয়া উচিত না। তার তো কোন দোষ নেই।
