Sanghamitra Roychowdhury

Comedy Romance Classics

3  

Sanghamitra Roychowdhury

Comedy Romance Classics

হানিমুন ফেজ (ধারাবাহিক) ১

হানিমুন ফেজ (ধারাবাহিক) ১

2 mins
735



মিছরির বয়স সাড়ে সাতাশ বছর। কিন্তু হলে কী হবে, মুখচোরা ভীতুর ডিম মেয়ে একটা। এমনকি স্কুলের বড় ক্লাস পর্যন্ত রাতে একা বাথরুমে অব্দি যেতে ভয় পেতো। মা বা দিদিকে ঘুম থেকে উঠতেই হতো ওর ডাকে বাধ্য হয়ে। দিদির বিয়ের পরে উৎপাতটা ওর মা'কেই সহ্য করতে হতো। মেয়েটা শুধুমাত্র এই এক ভয়ের কারণেই কখনো রাত জেগে পড়াশোনা করার ঝুঁকি পর্যন্ত নিতে পারে নি। দু-একবার যে একেবারে চেষ্টা করে নি তা নয়। কিন্তু যেই বাড়ির অন্য সব ঘরের আলো নিভে যেতো এবং বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়তো, তখন মিছরির খালি মনে হতো এই বুঝি কেউ এসে ওর পিছনে দাঁড়িয়েছে। এমনকি ভর দুপুরেও মিছরির ভয়ানক ভয় পাওয়ার রেকর্ড আছে। ঐতো দিদির বিয়ের ক'দিন আগে, ফার্স্ট ইয়ারে পড়ার সময়, বাবা-মা আর দিদির সঙ্গে রাতের খাবার খেতে গিয়েছিলো, সঙ্গে হবু জামাইবাবুও। খেয়ে হাত ধুতে গিয়ে রেস্তোরাঁয় ওয়াশরুমের পাশে কারুর ছায়া দেখে ভয় পেয়ে দাঁত কপাটি লেগে, সে এক মহা বিচ্ছিরি কাণ্ড হয়েছিলো। জামাইবাবু এখনো ক্ষেপায় তাই নিয়ে। স্কুল কলেজ তো ছেড়েই দেওয়া গেলো, ইউনিভার্সিটি ও বিএড শেষে এমনকি স্কুলে চাকরি পাওয়ার পরেও এই ভয়ঙ্কর ভয় পাওয়ার রোগ কাটে নি মিছরির।


এহেন মিছরির বিয়ে হয়েছে সদ্য। সবে মাস দুয়েক।মিছরির বর হলো আদ্যোপান্ত শান্তশিষ্ট ভদ্রলোক। তুলনায় মিছরির থেকে বয়সটা একটু বেশিই। তবে শান্ত সৌম্য এবং সদালাপী কণিষ্ককে মিছরির বাবার ভারী পছন্দ হয়েছিলো, ছোট মেয়ের জামাই হিসেবে। ধীরস্থির কলেজের প্রফেসর কণিষ্ক মিছরিকে ভালো রাখতে পারবেই, এমনই ধারণা ছিলো মিছরির বাবার। হয়তো সারাজীবনের ছাত্র পড়ানোর অভিজ্ঞতায়। মিছরির সাথে বয়সের বেশ অনেকখানি পার্থক্য নিয়ে মিছরির মা, দিদি, জামাইবাবু সবাই গাঁইগুঁই করলেও, একমাত্র মিছরিরই কোনো হেলদোল নেই। বরং বিয়ের কথাবার্তা শুরু হতেই মিছরি মহা দুশ্চিন্তায়। বিয়ের পরে রাতে বাথরুমে যেতে হলে কাকে ডাকবে? ওখানে তো মা সঙ্গে থাকবে না! এই দুশ্চিন্তায়... কণিষ্কর বয়স বেশী, মাথার চুল পাতলা, মিছরির মোমের পুতুলের মতো চেহারার পাশে যে কণিষ্ক দেখাশোনায় কিঞ্চিৎ বেমানান, তা মিছরি ধর্তব্যের মধ্যেই আনে নি। মিছরি কী করে ম্যানেজ করবে ভয়ের ব্যাপারটা, তাই নিয়েই ভয়ে অস্থির। যাই হোক মিছরির বাবার মত অনুযায়ীই নির্বিঘ্নে মিছরি কণিষ্কর বিয়ে মিটেছে। তবে মিছরি দেখছে একেবারে বিয়ের পর থেকেই, কণিষ্ক যথেষ্টই খেয়াল রাখছে ওর। এমনকি ফুলশয্যার রাতে খানিকক্ষণ আগডুম বাগডুম গল্প করার পরেই কণিষ্ক মিছরিকে বলে দিয়েছে কোনো বিষয়ে সামান্যতমও সঙ্কোচ না করে অসুবিধা হলেই যেন সবকথা কণিষ্ককে বলে মুখ ফুটে। লজ্জা পাবার কিছু নেই। এই কথা শুনেই হোক নাকি অন্য কোনো কারণেই হোক, রাতে বাথরুমে যাবার দরকার হলেও মিছরি কণিষ্ককে নিঃসঙ্কোচেই ডাকে। মিছরির আতঙ্ক কমে গেছে, কণিষ্কর ওপরে অগাধ ভরসায়।


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy