STORYMIRROR

Nikhil Mitra Thakur

Abstract Classics Others

3  

Nikhil Mitra Thakur

Abstract Classics Others

গোয়েন্দা টিয়া

গোয়েন্দা টিয়া

3 mins
207

-- পুলিশ তল্লাশি চালানোর সময়ে একটা টিয়া পাখি উড়ে আসে এবং তদন্তকারী অফিসারের কাঁধে বসে। পাখিটার মুখে হালকা রক্তের দাগ দেখা যায়,আর পায়ে কয়েকটা চুল লেগে থাকতে দেখা যায়।

--বিপত্নীক সুবলবাবুর আত্মীয় বলতে ওই একটা টিয়া পাখি আর একটা দেশি কুকুর। ওদের নিয়ে ইদানিং

সারাদিন সময় কাটান সুবল ঘোষ।

-- চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর সন্তান সন্ততি হীন ঘোষ দম্পতির ঠাকুর দেবতা,আশ্রম ও পুজা অর্চনা নিয়ে সময় কেটে যাচ্ছিল।

-- হটাৎ করে সুবল বাবুর স্ত্রী এক অজানা জ্বরে কয়েক দিন ভোগার পরে মারা গেলেন ।

-- নিঃসন্তান সুবলবাবু চাকরি জীবনে প্রচুর সম্পত্তি করেছেন সেটা উনার অত্মীয় বন্ধুরা সবাই জানে। তাই স্ত্রী বিয়োগের পরে যে যার মতো ধারনা নিয়ে সুবল বাবুর কাছের লোক হতে থাকেন।

-- সুবলবাবু ওই টিয়া পাখি ও দেশি কুকুর ছাড়া কাউকে নিজের ভাবতেন না। সেকথা তিনি আকার ইঙ্গিতে সকলকে বোঝাবার চেষ্টা করতেন। 

-- কিন্তু,এক অজানা লোভে অনেকেই তা বুঝতে চাইতেন না। নাছোড়বান্দা হয়ে চিটিয়ে সুবলবাবুর কাছে পড়ে থাকার চেষ্টা করতো।

-- এই সমস্ত উপদ্রব থেকে বাঁচার জন্য সুবলবাবু তার অবর্তমানে সমস্ত সম্পত্তি গুরুদেবের আশ্রমে দান করে দেন।

-- সুবলবাবুর দিদির ছেলে জগাই ও মাধাই এইভাবে সম্পত্তি দান ভালো মনে মেনে নিতে পারেনি। আশা ভঙ্গের তীরে তারা রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত হয়ে পড়ে।

-- উইল বা দানপত্র আশ্রমের কাছে পৌঁছানোর পূর্বেই নষ্ট করে দিতে উঠেপরে লাগে।

-- ওরা দুই ভাই কিছু প্রফেশনাল ডাকাত পাঠিয়ে সুবল বাবুকে খুন করে কাগজপত্র ছিনিয়ে আনতে চান।

-- প্রফেশনাল লোকজন সুবলবাবুর কাছে কোন কাগজ আনতে পারে না। কিন্তু, নিঃসন্তান বিপত্নীক সুবল বাবুকে খুন করে।

-- ডাকাতদল প্রথমে কুকুর টাকে মাংস খেতে দিয়ে পরে কাটারি দিয়ে গলা কেটে দেয়।

-- সুবলবাবু কে দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখে অত্যাচার করতে থাকে উইল দেওয়ার জন্য।

-- এই সময় টিয়া পাখি টা চিৎকার করে বলতে তুই কে? কি নাম তোর? 

-- চিৎকার সহ্য করতে না পেরে একজন খাঁচা খুলে টিয়া পাখি মারতে যায়।

-- সেইসময় টিয়া বাইরে বেরিয়ে যে লোকটি বারবার সুবলবাবুর উপর অত্যাচার করছিল তার মাথায় গিয়ে বসে এবং ওর চোখে খুবলে দিয়ে উড়ে বেরিয়ে পালায়।

-- টিয়া পাখিটি উড়তে উড়তে গিয়ে আশ্রমে পৌঁছায়।

-- আশ্রমের গুরুদেব পাখিটা দেখেই চিনতে পারেন যে এটা সুবল বাবুর পাখি।কেননা, সুবলবাবু বহুবার পাখিটা নিয়ে আশ্রমে গিয়েছেন। 

-- তিনি বুঝতে পারেন তার শিষ্যের বড় কোন বিপদ হয়েছে। তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন পাখি টাকে কেউ যেন বিরক্ত না করে এবং তিনি নিজে পাখিটাকে খাবার দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।

-- গুরুদেব ঠিক করেন সকাল বেলায় সুবলবাবুর বাড়ি যাবেন। কিন্তু, সকাল বেলায় উঠে তিনি দেখেন পাখিটা নেই।

-- পাখিটা সাত সকালে বাড়িতে ফিরে সুবল বাবুকে মৃত দেখে উঠানের পেয়ারা গাছে বসে আত্মীয় স্বজন দের আসার অপেক্ষা করতে থাকেন।

-- আসলে রাতে সুবলবাবুর আর্তনাদে পাড়ার কেউ কেউ বুঝতে পারেন বাড়িতে ডাকাত পড়েছে। লোকজন এসে দেখে সুবলবাবু মৃত। তারা পুলিশে খবর দেয়।

-- পুলিশ কুকুর নিয়ে সুবলবাবুর বাড়িতে হাজির হয়। পুলিশ কুকুর বারবার পেয়ারা গাছের তলায় চিৎকার করতে থাকে।

-- তখনই পাখিটি পুলিশ অফিসারের কাঁধে গিয়ে বসে। পুলিশ অফিসার ওর ঠোঁটে রক্ত ও পায়ে দুটো চুল দেখতে পান।

-- পুলিশ অফিসারের বুঝতে অসুবিধা হয় না যে মুনিবের উপর অত্যাচার করতে দেখে পাখিটি ডাকাতকে ঠোঁট দিয়ে ঠুকড়েছে তাই ঠোঁটে রক্ত লেগে আছে। পাখিটি দুস্কৃতির মাথায় বসেছিল। তাই উড়ে পালাবার সময় দুটো চুল পায়ে আটকে যায়।

-- তদন্তকারী অফিসার পাশাপাশি সমস্ত নার্সিংহোমে খবর পাঠিয়ে জানতে চান রাতে কেউ পাখি ঠুকড়ে দেওয়ার চিকিৎসা করাতে এসেছিল কি না? 

-- অনেক দূরের একটা নার্সিংহোম থেকে খবর মেলে যে একজনের চোখে পোষা পাখি কামড়ে দিয়েছে চিকিৎসা করাতে এসেছিল।

-- নার্সিংহোমে দেওয়া ওই ঠিকানায় পুলিশ গিয়ে দেখে ঠিকানা ভুল। পুলিশের সন্দেহ আরো গাঢ় হয়।

-- নার্সিংহোমের ডাক্তার ও নার্সের বর্ণনার ভিত্তিতে শিল্পী দিয়ে পুলিশ দুস্কৃতির ছবি আঁকায়।

-- ওই ছবি পার্শ্ববর্তী সব থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

-- পার্শ্ববর্তী একটা থানা থেকে জানা যায় লোকটি একজন দাগি অপরাধী। পুলিশ গিয়ে লোকটিকে গ্রেপ্তার করে। 

-- গোয়েন্দা টিয়া পাখিটির মুখের রক্ত ও পায়ের চুলের সাথে টেস্ট করে দেখা যায় এই লোকটির সাথে মিলে যাচ্ছে।

-- ডাকাত দল পুলিশের জেরার মুখে স্বীকার করে জগাই ও মাধাই সুবল বাবুকে খুন করে উইল আনতে তাদের নিয়োগ করেছিল।

-- পুলিশ জগাই ও মাধাই কে গ্রেপ্তার করে। আদালতের বিচারে ওদের দুই ভাইয়ের যাবৎজীবন কারাদণ্ড হয়।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Abstract