গোয়েন্দা (ধারাবাহিক)
গোয়েন্দা (ধারাবাহিক)
পর্ব পঁচিশ
ডক্টর সৃঞ্জয় বসুর চোয়াল শক্ত হয়ে এল । ঢক্টর বৈশ্বানর মুখোপাধ্যায় যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেন না । আর মি. সেনশর্মার পিস্তল বাগিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে অতি সন্তর্পনে পা বাড়ালেন ।
কিন্তু তাঁরা কি দেখলেন সেখানে ?
অবিকল মানুষের মত দেখতে একটি শ্বদন্ত প্রাণী একটি মানুষের দেহ দাঁত দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করছে। শিকার নিতান্ত অসহায়ভাবে কারও সাহায্যের আশায় দূরে চেয়ে আছে । বিকট গোঙানীর আওয়াজে নিমগাছে চেপে থাকা জনৈক পুলিশ ঝুপ করে নীচে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে পুলিশের লোকজন সমবেত হয়ে একে তাকে জন্তু ভেবে বিচ্ছিন্ন হতে শুরু করল । অমনি ম্লান হারিকেনের আলোটা দপ করে জ্বলে উঠল । তার আভা এত উজ্বল যে সকলের চোখগুলো ধাঁধিয়ে গেল । মানুষরূপী শ্বদন্তযুক্ত জন্তুটি শিকার ছেড়ে পালাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল । মি. করালীপ্রসাদ সেনশর্মা জন্তুটির পা লক্ষ্য করে পরপর দুটো গুলি ছুঁড়লেন । জন্তুটি যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে পালাতে শুরু করল।
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু সেনশর্মাকে বললেন - সকলকে বলুন ওর প্রতি টর্চের আলো ফেলতে। নিমেষে গোটা জঙ্গল আলোয় আলোকিত হয়ে উঠল । সন্ন্যাসী শ্বদন্তের দিকে ধেয়ে গেলেন এবং গম্ভীর স্বরে পুলিশ দলের প্রতি বললেন - কেউ গুলি করবি না । মরে গেলে আসল ঘটনাই ধামা চাপা পড়ে যাবে । আমি ওর ব্যবস্থা করছি ।
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু, ডক্টর মুখোপাধ্যায় এবং মি. সেনশর্মা তিনজনে এগিয়ে গেলেন শিকর হওয়া লোকটির দিকে।
দুই ডাক্তার টর্চের আলোয় দেখলেন সে তখনও জীবিত। শীঘ্র তাকে হাসপাতালে স্থানান্তর করার অনুরোধ করলেন। একদল পুলিশ লোকটিকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা দিল ।
বিস্ময়ের এখানেই শেষ নয় । মিনিট দশেকের মধ্যেই একটি সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষকে টানতে টানতে নিয়ে এলেন সন্ন্যাসী । তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিয়ে কোথায় যে চলে গেলেন ; তাঁকে পরে আর তারাপীঠে দেখতে পাওয়া গেল না । যে গাছের নীচে তিনি সাধনা করছিলেন সেই গাছটিরও অস্তিত্ব নির্ণয় করা যায়নি ।
যাই হোক শিকর হওয়া মানুষ এবং শিকারী উভয়েই পুলিশের তত্ত্বাবধানে দুই ভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
ডক্টর বৈশ্বানর মুখোপাধ্যায় শিকার হওয়া ছেলেটির নাম জিজ্ঞেস করলেন ।
সে কোন উত্তর দিতে পারল না । তখনও সে যেন ঘোরের মধ্যে আছে।
এদিকে শিকারী লোকটির পায়ে গুলি লাগায় সে তখন যন্ত্রণায় ছটফট করছে। হাসপাতালের ডাক্তারদের চেষ্টায় ক্ষতস্থান পরিচর্য্যা করলেন । তাকে ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেওয়া হল ।
ডক্টর বসু, মুখোপাধ্যায় এবং সেনশর্মা সারা রাত এ হাসপাতাল সে হাসপাতাল করে রাত কাটালেন । সকাল বেলায় আবার যখন ওঁরা তিনজন হাসপাতালে গেলেন তখন দেখেন শিকার হওয়া লোকটি সুস্থ বোধ করছে। এবার ডক্টর বৈশ্বানর মুখোপাধ্যায় বললেন - কি হে ছোকরা ! আমায় চিনতে পারছ ?
ছোকরা কথাটা শুনে লোকটি নিজের প্রতি চেয়ে দেখল সে কোন বয়সী লোক নয় - একটি তরতাজা যুবক। লজ্জায় মুখ নীচু করে বলল - হ্যাঁ স্যার । সেদিন ট্রেনে তো আপনিই আমাদের জাগিয়েছিলেন !
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - তোমার নাম কি সূর্য্যকিরণ চৌধুরী ?
ঘাড় নেড়ে স্বীকৃতি জানাল সূর্য্য ।
ডক্টর বৈশ্বানর মুখোপাধ্যায় বললেন - তোমার একটা সারপ্রাইজ আছে।
সূর্য্য হাঁ করে চেয়ে রইল।
ভক্টর মুখোপাধ্যায় বললেন - ওই দেখ । দরজায় দাঁড়িয়ে কে তোমার জন্য অপেক্ষা করছে !
সূর্য্য যা দেখল নিজেকেই বিশ্বাস করতে পারছিল না ।
এক লাফে বেড থেকে উঠে গিয়ে ঠাম্মাকে জড়িয়ে খানিক কেঁদে নিল । তারপর বলল - ঠাম্মা, তোমরা আমায় ক্ষমা কর। আমি একজন অপরাধী। যা করেছি তাতে আমার জন্য উপযুক্ত শাস্তি ওয়েট করছে জানি ।
বিশ্বময়ী দেবী বললেন - তোর সব অন্যায়, সব অপরাধ ক্ষমা করে দিচ্ছি। ভালোয় ভালোয় তোকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যেতে পারলে আমার চেয়ে সুখী কেউ হবে না ।
মি. সেনশর্মা বললেন - ম্যাডাম , নাউ হি ইজ আণ্ডার অ্যারেস্ট , ম্যাডাম । আপাতত শ্রীঘরেই যেতে হবে ।
বিশ্বময়ী দেবী বললেন - সব শক্তি দিয়ে আমরা ঘরের ছেলেকে ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে যাব । আইনের চক্ষে সে যত বড় অপরাধীই হোক না কেন ।
ডক্টর সৃঞ্জয় বসু বললেন - ম্যাডাম, আমরা ওকেকিছু প্রশ্ন করব । আপনি এবার আসুন।
বিশ্বময়ী দেবী নিরুপায় হয়ে ফিরে গেলেন। ডক্টর মুখোপাধ্যায় বিশ্বময়ী দেবীকে বললেন - আজই আমরা ওদের নিয়ে কলকাতায় রওনা দেব । এখানে আপনাদের কতদিনের প্রোগ্রাম ।
- আমরাও এখনই বেরিয়ে পড়ব । ব্যারিস্টার ঠিক করতে হবে তো !
সেনশর্মাকে সূর্য্যের কাছে রেখে দুই ডাক্তার চললেন আর এক হাসপাতালে ।
মি. সেনশর্মা সূর্য্যকে প্রশ্নের পর প্লশ্ন করতে লাগলেন ।
- বাড়ির অমতে বিয়ে করেছিলে কেন ?
সূর্য্য বলল - অবান্তর প্রশ্ন করবেন না স্যার। অন্য প্রসঙ্গ বলুন ।
- বেশ বেশ । বিয়ে করা বউয়ের সাথে অশ্লীল ছবি তুলে কি করতে ?
- ঠিক মনে পড়ছে না সে ঘটনা । তবে এটুকু বলতে পারি কেউ যেন আমাকে জোর করে এ সব করিয়েছে।
- কে সে ?
- সে একটা ভ্যাম্পায়ার ।
- কোথায় কি ভাবে তার সঙ্গে পরিচয় করেছিলে ?
- আমি পরিচয় করতে যাইনি ; যেচে এসে সেই আমাকে হিপনোটাইজ করেছিল ।
( চলবে )

