গণ্ডি:-
গণ্ডি:-
টি. ভি তে তখন রামায়ণ প্রদর্শিত হচ্ছে। মধুজা আর তীর্থঙ্কর তখন টি.ভির সামনে বসে রামায়ণ দেখে সেই ছোটবেলার দিন গুলো স্মরণ করতে ব্যস্ত। সহসা তাদের ৬ বছরের ছোট শিশুকন্যা বিন্নি এসে বায়না করছে পিৎজা খেতে বাইরে যাওয়ার জন্য। মধুজা সারাদিনের খাটা খাটনির পর এমনিতেই ক্লান্ত। এর মধ্যে লক ডাউনের কারণে বাইরে বেরোনো নিষেধ কিন্তু বিন্নি কে প্রত্যেক দিন এক কথা বুঝিয়েও কোনো ভাবে ক্ষান্ত করা যায় না। সর্বক্ষণ জেদ করছে হয় খেলতে নিয়ে যেতে, নাহলে পাশের ফ্ল্যাটের বন্ধুদের ওখানে যেতে, নাহলে বাপির সঙ্গে স্কুটারে করে ঘুরতে যেতে, নাহলে রেস্তরাঁতে নিয়ে যেতে। মধুজা আর তীর্থঙ্কর অনেক বুঝিয়েও বিন্নি কে শান্ত করতে পারে না। আজকেও সেই রকমই বায়না করছিল বিন্নি। মধুজা প্রথমে আদর করে বিন্নি কে বোঝাতে চাইলেও বিন্নি শুনতে নারাজ। আজ সে বাইরে যাবেই। আজ আর কোনো কথা শুনবে না। বাকি দিন মা বাপি তাকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে ঘরে আটকে রাখতে সক্ষম হয়। কোনো করোনা বা ক ডাউন সে মানবে না আজ, সে অতিষ্ঠ হয়ে গেছে বাড়িতে থেকে থেকে।
তখুনি তীর্থঙ্কর বিন্নি কে পাশে ডেকে বললো টি.ভি তে কি প্রদর্শিত হচ্ছে সেটা দেখতে। বিন্নি মুখ ঘুরিয়ে কিছুক্ষন চেয়ে রইলো টি.ভির দিকে।
-- এটা কি রামায়ণ হচ্ছে বাপি? যেটা আমি গল্পের বইয়ে পড়েছি?
-- হ্যাঁ মামনি। সেটাই। দেখে বলো তো কি হচ্ছে ওখানে?
-- ওখানে দেখাচ্ছে যে সীতা যিনি তিনি কান্না করছেন আর ওই যে লক্ষ্মণ যিনি তিনি কিছু একটা লাইন ড্র করছেন।
-- ঠিক, এবার বলো তো ঐ যে লাইন ড্র করছেন ওই লাইনটা কে কি বলে?
-- হমম, লক্ষ্মণ রেখা বলে তাই না?
-- একদম ঠিক। এবারে বলো দেখি বিন্নি লক্ষ্মণ রেখা কেনো একেছিলেন?
-- ওই যে সীতা যে, উনি যেনো বেরিয়ে না যান ওখান থেকে, তাই তো একটা বাউন্ডারির মত একে দিয়েছে লক্ষ্মণ সীতার জন্য। সীতা যেনো ওই বাউন্ডারির ভেতরে থাকে, বাইরে গেলে যদি সীতার যদি কিছু খারাপ হয়, তাই না বাপি?
-- একদম ঠিক। আর এই একই অবস্থা এখন আমাদেরও। আমরাও এখন করোনা থেকে বাঁচার জন্য নিজেদের কে ঘরের মধ্যে আটকে রাখবো। এই ঘরটাই আমাদের বাউন্ডারি। এইটাই আমাদের গণ্ডি, এই গণ্ডির বাইরে যাওয়া বারণ। বুঝলে বিন্নি? এই ঘরের বাইরে গেলে সীতার মতন আমাদের বিপদের আশঙ্কা। তুমি কি চাও বিপদে পরি আমরা সবাই?
-- না বাপি চাই না তো। আমি বুঝেছি বাপি। আমিও এখন করোনা থেকে বাঁচার জন্য ঘরেই থাকবো। ঘরের বাইরে যাওয়ার জেদ করবো না। আমি ঘরেই থাকবো।