গঙ্গাসাগর স্নান - ২
গঙ্গাসাগর স্নান - ২


মা-বাবার অমতেই প্রেমিকা সুনন্দাকে বিয়ে করেছিল বাইশ বছর বয়সী অনিকেত। ছেলে তখনও বেকার থাকার কারণেই এই বিয়েতে ওর বাবা রিটায়ার্ড ব্যাঙ্ক ম্যানেজার অনিন্দ্য রায় চৌধুরীর প্রবল আপত্তি ছিল। একমাত্র ছেলেকে তিরস্কার করে বলেছিলেন, "কেরিয়ার তৈরী না করেই সংসার করার স্বপ্ন দেখছ! বাবার হোটেলে আছ তো, তাই সংসার চালানোর মর্মটা বুঝতে পারোনি এখনও।" পরিবারের সকলের আপত্তিকে উপেক্ষা করেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিল ওরা। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ছেলের এই ব্যাভিচার মেনে নিতে পারেননি অনিকেতের মা। তাই ছেলে বিয়ে করে বাড়িতে বৌমা আনার সাথে সাথে নিজেকে বেনিয়মের বেড়াজালে মুড়িয়ে ফেলেছিলেন অনিমা রায় চৌধুরী। তখন মায়ের শরীরের প্রতি খেয়াল রাখার সময়ও ছিল না সদ্য বিবাহিত ছেলের। অনিন্দ্যবাবু বহু চেষ্টা করেও শেষ রক্ষা করতে পারলেন না। একদিন ঘুমের মধ্যেই হার্ট অ্যাটাক করে চির না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন অনিমা দেবী।
ধীরে ধীরে এই সংসারের প্রতি সব মোহ মুছে যাচ্ছিল অনিন্দ্যবাবুর। নিঃসঙ্গ জীবনের একাকীত্ব গ্রাস করত তাকে। এরই মধ্যে শরীরে একের পর এক রোগ বাসা বাঁধতে শুরু করেছে - সুগার, প্রেশার, হৃদরোগ সহ ক্রমশ স্মৃতিভ্রংশ। এই সংসারে নিজেকে বড় অসহায় বলে মনে হত অনিন্দ্যবাবুর। হঠাৎই এক বছর পরে নাতি অঙ্কুশের এই বাড়িতে আগমন। সহায়হীন জীবনটাকে খড়কুটোর মতো আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকার একটা কারণ ফিরে পেয়েছিলেন অনিন্দ্যবাবু। সারাদিন ধরে কোলে-পিঠে আগলে রাখতেন ছোট্ট দাদুভাইকে। অঙ্কুশের যখন চার বছর বয়স, তখন থেকেই ছেলেটা প্রায়ই অসুস্থ হতে শুরু করল। জ্বর, বমি লেগেই থাকত। ক্রমে বাচ্চাটা দুর্বল হয়ে গেল। কিন্তু সেই সময় ডাক্তার দেখানোর পরিবর্তে বৌমা আস্থা রাখল তান্ত্রিকের ঝাড়ফুঁক-তুকতাকে। অনিন্দ্যবাবু প্রতিবাদ করলে তাকে বৌমা'র কাছে একদিন শুনতে হলো, "বাবা, আসলে আপনি চানই না যে আমার ছেলেটা সুস্থ হোক। তাইই বাধ সাধছেন।"