বিবেক দংশন
বিবেক দংশন
- দেখো, সমুদ্রের তীরেও কত নোংরা! চারদিক শুধু জঞ্জালে ভরে গেল!
- যা বলেছ! কোথায় ঘুরতে এসে নির্মল প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করব, তা নয়! এত সুন্দর জায়গাটাকেও মানুষ আবর্জনায় ভরিয়ে দিচ্ছে!
সমুদ্র সৈকতে চুপ করে বসে ঢেউয়ের দিকে চোখ রেখে মা, বাবার আলোচনা শুনছিল আট বছরের ছোট্ট আরাত্রিকা। দু’দিন আগেই সবে ওর তৃতীয় শ্রেণীর ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়েছে। তারপরেই পুরী।
ও এই প্রথম সমুদ্র দেখল। সমুদ্রের অগুন্তি ঢেউয়ের ফেনিল জলরাশি ওকে মুগ্ধ করল। সমুদ্র সৈকতেই কাটছে দিনের অধিকাংশ সময়। এইমাত্র বালুতটে বসে সূর্যাস্ত দেখল ওরা। কী অপূর্ব! ঠিক যেন আরাত্রিকার ড্রয়িং বইতে আঁকা সিনারিটার মতো...!
- আচ্ছা বাবা! এই সমুদ্রে অক্টোপাস, তিমি, হাঙর, কচ্ছপ - এসব দেখা যায় না?
- হ্যাঁ মা, দেখা যায় তো। ওরা সমুদ্রের অনেক অনেক গভীরে থাকে। তাই সৈকত থেকে দেখা যায় না। তুমিও কিন্তু দেখতে পাবে না।
মুখটা বেজার করে বসে রইল আরাত্রিকা। সামুদ্রিক প্রাণীদের প্রতি ওর একটা অদ্ভূত আকর্ষণ আছে। অনেকের সাথেই ছবিতে পরিচিতি হয়েছে ওর। কী সৌন্দর্য ওদের! ও ভেবেছিল, পুরীর সমুদ্রে ওদের দেখা পাবে। কিন্তু সে তো হওয়ার নয়। সমুদ্রের পাড়ে এত প্লাস্টিক! ও জানে যে কচ্ছপরা এই প্লাস্টিকগুলোকে জেলিফিশ ভেবে ভুল করে খেয়ে নেয়। তাতেই ঘনিয়ে আসে ওদের মৃত্যু। সেই প্লাস্টিকেই ভরে গেছে সৈকত। ‘মানুষ কত অবিবেচক!’ – ভাবে আরাত্রিকা।
হঠাৎ ও দেখে, খাবারটা খেয়ে মা প্লাস্টিকটা পাড়েই ফেলে দিল। সেটা উড়তে উড়তে গিয়ে মিশল সমুদ্রে।
- মা, তুমি নিজেই তো প্লাস্টিক ফেলে নোংরা করছ প্রকৃতি! তার বেলা?
- তাহলে কোথায় ফেলব? এখানে তো ডাস্টবিনও নেই।
- সমুদ্র সৈকতটাও তো তোমার ডাস্টবিন নয়, মা।
ছোট্ট মেয়ের বোধের দীপ্তি দংশন করল মায়ের বিবেক।