STORYMIRROR

Priyanka Bhuiya

Inspirational

5.0  

Priyanka Bhuiya

Inspirational

বিবেক সঞ্চার - ৪

বিবেক সঞ্চার - ৪

2 mins
543


আজ এগারোই জানুয়ারি। আগামীকাল অর্থাৎ বারোই জানুয়ারি স্বামীজির জন্মদিবসে মূর্তির উন্মোচন হবে। খুব খুশি অবন্তিকা। আজ ওর স্কুলেই যেতে ইচ্ছে করছিল না। কিন্তু সামনে পরীক্ষা, তাই অগত্যা যেতেই হবে। ওর মর্নিং স্কুল। ভোর ছ'টায় বাবার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়েই চমকে উঠল ও। স্বামীজির মূর্তিটা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে পড়ে আছে। পাশে পড়ে দু'টো লোহার রড। কে বা কারা রাতে এসে মূর্তিটা ভেঙে দিয়ে গেছে! চিৎকার করে কেঁদে উঠল ও। ওর বাবা বাকরুদ্ধ। মর্নিং ওয়াক করতে বেরোনো রাজেশবাবু ও ধীমানবাবুর ঠোঁটের বাঁকা হাসি ওনার চোখ এড়ায়নি। আশ্চর্যজনক ভাবে সিকিউরিটি গার্ডও উধাও। তার মানে গার্ডের হাতে মোটা টাকা দিয়ে তাকে বেপাত্তা করে কাজ হাসিল করা হয়েছে। মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে!

অবন্তিকা স্কুলে গেল না। এদিকে ততক্ষণে অধিবাসীদের মধ্যে ঝামেলা চরমে উঠেছে। অবন্তিকা সারাদিন ধরে কেঁদে চলল। স্বামীজি তো জাতপাতের ঊর্ধ্বে ছিলেন। জাত যায় কিনা পরীক্ষা করার জন্য ছোট্ট বিলে সব ধর্মের হুঁকো টেনে দেখেছিল। আজ সেই সংকীর্ণ জাতপাতের বেড়াজালে এই মহামানবের মূর্তি ভেঙে খানখান করে দেওয়া হল! অবন্তিকার ভেতরটা কেঁপে যাচ্ছিল। মানুষ কতটা নীচ! এদিকে উন্মোচন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে ভাঙা মূর্তি দেখে নাসির চাচা তো স্তম্ভিত হয়ে পড়েছে। তার দু'চোখ বেয়ে পড়ছে জলের ধারা। নিজের সৃষ্টির অপমৃত্যু নিজের চোখের সামনে উনি মেনে নিতে পারছেন না কিছুতেই। উনি তো ওনার বকেয়া টাকা পেয়ে গেছেন। আবার জাতেও উনি মুসলি

ম। তবু কী স্বার্থে ওনার চোখে জল? প্রশ্নটা ভীষণ ভাবে নাড়া দিচ্ছে ছোট্ট অবন্তিকাকে। মায়ের অনেক জোরাজুরি অমান্য করে ও কিচ্ছু খায়নি।

রাত বারোটা বাজল, মানে আজ বারোই জানুয়ারি। ডুকরে কেঁদে উঠল ওর মনটা। ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে এই শহরটাকে ওর বড় অচেনা মনে হচ্ছে। ওর চোখটা লেগে গিয়েছিল মুহূর্তের জন্য। ওর প্রশ্নের উত্তরটা মনে হয় ভেসে এল ওর কানে, "আসলে সবকিছুর পেছনে স্বার্থ খোঁজা মূর্খতার পরিচয়। মানবিকতা আজ নিখোঁজ, পারলে সেটার খোঁজ করো।" চমকে উঠল ও। এটা কী তবে স্বামীজির আদেশ নাকি ওর মনের ভুল? সংকীর্ণমনা মানুষগুলোর মনে ওকে বিবেক সঞ্চার করতেই হবে, যাতে একটু হলেও ওরা ভাবে। সারা রাত জেগে তিনটে লিফলেট তৈরি করল ও। তিনটে কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে স্বামীজির একটা বাণী লিখল নিজে হাতে। আজ বিদ্যালয়ে স্বামীজির জন্মদিবস পালনের অনুষ্ঠান। বিদ্যালয়ে যাওয়ার আগে খবরের কাগজের কাকুকে ও লিফলেট তিনটে দিয়ে বলল, "কাকু, আজ অতনু কাকু, ধীমান কাকু আর রাজেশ কাকুর কাগজের সাথে একটা করে এগুলো দিয়ে দিও।"

তিন ভদ্রলোক আজ সংবাদ পত্রের সাথে পেয়েছেন এক টুকরো লিফলেট। সেটা পড়েই ওনারা হতবাক। গোটা গোটা অক্ষরে লেখা,

"স্বামীজি বলেছিলেন, 'সম্প্রদায় থাকুক, সাম্প্রদায়িকতা দূর হোক'। স্বামীজি তো অস্পৃশ্য মানুষের হাত থেকেও খাবার খেয়েছিলেন। তিনি যে ধর্মকে ভারতের 'প্রাণ' বলেছিলেন, আজ সেই ধর্মকে হাতিয়ার করে তোমরা নাসির চাচাকে নয়, আসলে তো স্বামীজিকেই অপমান করলে, কাকু...."



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Inspirational