অনুরণন
অনুরণন


“মম, বুক শেলফটা ফাঁকা করো। ওখানে আমি ইন্টারন্যাশনাল রাইটারদের বুক রাখব। আর কতদিন এসব পুরোনো জামানার বেঙ্গলি বই পড়ে আনপড় গাঁওয়ার হয়ে থাকবে?”
মেয়ের বিশেষণের ঔদ্ধত্যে কেঁপে ওঠে মায়ের বুক। চোখের জল মুছে নিঃশব্দে শেলফ থেকে সরিয়ে নেন ভালোবাসার বইগুলো। শ্রবণা রায় তার বড় মেয়ে সুমনার তাচ্ছিল্যপূর্ণ ব্যবহারে হতচকিত। আসলে প্রয়োজনের সাথে আয়োজনের সাযুজ্য না থাকলে মানুষ অসংযমী হয়ে ওঠে। সুমনাও তার ব্যতিক্রম নয়, আর এর জন্য হয়তো শ্রবণা দেবীই সবচেয়ে বেশি দায়ী।
সংসারের আর্থিক টানাটানি সত্ত্বেও বড় মেয়েকে ভর্তি করিয়েছিলেন ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ে। সেকেন্ড ল্যাঙ্গুয়েজ হিন্দি থাকায় স্কুলে বাংলাটা লাগত না। তাই মেয়েকে সেভাবে বাংলা পড়া বা লেখায় অভ্যস্ত করে তোলার প্রয়োজন মনে করেননি তিনি। পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুকরণের হুজুগে গা ভাসাতে গিয়ে মেয়ে আজ নিজের মাতৃভাষাটাই ভুলতে বসেছে।
আগামীকাল একুশে ফেব্রুয়ারি, ছোট মেয়ে অনন্যাকে এক প্রথিতযশা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে ভর্তি করার দিন।
“অনন্যাকে বাংলা মাধ্যমেই ভর্তি করব।“ শ্রবণা দৃপ্ত কণ্ঠে সুমনাকে তার সিদ্ধান্ত জানায়।
- ম্যাড হয়ে গেলে নাকি মা? কালচার পরিবর্তন হচ্ছে। আর তুমি...!
- বাংলা-হিন্দি-ইংরেজির সংমিশ্রণে খিচুড়ি মার্কা যে ভাষাটা তুমি বলছ, সেটা উচ্চশিক্ষা নয়, বরং মূর্খামির পরিচয়, সুমনা। পরিবর্তন আর বিকৃতি কিন্তু সমার্থক নয়। বিক্রিত অত্যাধুনিক শিক্ষার আলোয় অনন্যাকে আমি আর তোমার মতো বিকৃত হতে দেব না।
শ্রবণার মনের গভীরে অনুরণিত “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস” এর লালিত্য।