Rima Goswami

Comedy Drama Inspirational

3  

Rima Goswami

Comedy Drama Inspirational

একটা আষাঢ়ে গল্প

একটা আষাঢ়ে গল্প

4 mins
175


দোকান থেকে লাল আবিরের প্যাকেট কিনে এনে ছাদে উঠে যায় সোহম । বন্ধুরা ওখানেই অপেক্ষমান ওর জন্য । আদি গঙ্গার ধারে কালীঘাট ঘেঁষে সোহমদের তিনতলা বাড়িটা অনেক পুরোনো । চিলে কঠোর এক কুঠুরি ঘরটা এখন সোহমের দখলে । ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে সোহম তাই বাড়িতে এখন তার আলাদা প্রাইভেসির নাকি খুব প্রয়োজন । হোলির আগের দিন ছাদের ঘরে ওর ছয়জন বন্ধু সহ সোহম একটা আড্ডা বসিয়েছে গাঁজা আর মদের । নীচে বাড়ির লোকজন ভাবছে পড়াশোনা নিয়ে আলোচনা চলছে ওপরে । দোকান থেকে আবির কিনে আনার সময় মাকে খেঁকিয়ে এসেছে একবার সোহম তাদের যেন পিঁয়াজি আর ছোলা ভাজা পাঠিয়ে দেওয়া হয় কাজের মেয়ে মিনতির হাত দিয়ে । মা একবার বলেছিল মুড়ি দিয়ে খেলে ভালো হত না ? তো সোহম মাকে যাচ্ছে তাই ভাবে অপমান করে মুড়ি দিতে চাওয়ার জন্য । মা তো জানেন না ছেলে আর তার বন্ধুরা পিয়াঁজি , ছোলা ভাজা দিয়ে কি অমৃত পানে ব্রতী ।


সোহম আর তার বন্ধুদের প্ল্যান কাল হোলিতে ওদের ক্লাসের সবথেকে ব্রাইট মেয়ে মহিমাকে লাল আবিরের সঙ্গে সিঁদুর মিশিয়ে পড়াবে সোহম । সোহম অনেক চেষ্টা করেও মহিমাকে পটাতে পারেনি তাই এবার হোলির সুযোগে রাঙা আবিরের সঙ্গে সিঁদুর মিশিয়ে মহিমাকে পড়াতে পারলে সামাজিক ভাবে মহিমা ওর বউ হবে । ও বা ওর পরিবার কি পারবে সোহমের সিঁদুরকে নস্যাৎ করতে ? সেই প্রিপারেশন চলছে ছাদের ঘরে এখন । মায়ের ড্রেসিং টেবিল থেকে একটা সিঁদুর এনে আবিরের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়েছে সোহম । ঠাকুমা বলে সিঁদুর হলো বিয়ের প্রধান উপাচার । তাই এবার সিঁদুর দিয়েই ওই মেয়েকে বস করবে সোহম । ওকে কিনা গাঁজাখোর , মাতাল বলে মহিমা । এবার মাতালের বউ হয়ে দেখ কেমন লাগে ? একবার ভেবেছিল এসিড দিয়ে রূপ পুড়িয়ে দিলেই হয় ! আবার ভাবে সোহম যে রূপই না থাকলে মহিমার আর কি দাম ? বন্ধুরা সারা সন্ধ্যা উল্লাস করে একে একে সকলেই বিদায় নেয় । সোহম রাত কাবার করে মহিমার চিন্তায় । একবার মহিমাকে হাতের মুঠোয় পেলে তারপর কি হবে ? বাড়িতে কি বলবে সোহম ? তবে ঠাকুমা আছে তাই একটু ভরসা । সকালে ঘুম থেকে উঠেই সাদা পাঞ্জাবী পরে সোহম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় ওদের ভার্সিটির দিকে ।


ভার্সিটিতে পৌঁছেই এদিক ওদিক খুঁজে খুঁজে মহিমাকে দেখতে পেয়ে যায় সোহম । একটা হলুদ রঙের শিফন শাড়িতে সুন্দরী মহিমাকে আরো সুন্দর লাগছে । তার উন্নত বক্ষ , সর্পিল কোমরে যে কোন পুরুষই ঘায়েল হতে বাধ্য । জিভটা নিজের ঠোঁটে একবার বুলিয়ে নিয়ে লাল অবির হাতের মুঠোয় নিয়ে এগিয়ে যায় সোহম তার কাঙ্খিত নারীর দিকে । এটাই লাস্ট ইয়ার আর ক্যাম্পাস ইন্টারভিউতে সোহম আর মহিমা দুজনেই জব কনফার্ম করে ফেলেছে । আর কটা দিন একটু এডজাস্ট করলেই ব্যাস সুখের দিন আগত । সোহম মহিমার কাছে গিয়ে ওর মাথায় মুঠো ভর্তি সিঁদুর মেশানো আবির মাখিয়ে দেয় । মহিমা ও ব্যাপারটা নিছক হোলির আবির মাখামাখি ভেবে নিজের হাতের গোলাপি আবির সোহমকে লাগিয়ে দেয় । সোহমের বন্ধুরা তাড়াতাড়ি এসে হুল্লোড় শুরু করে দেয় , গুরু ফাটিয়ে দিয়েছ ... কি বৌদি মাতাল দাদার বউ হলে তবে শেষমেষ । মহিমা ব্যাপারটা কিছুই বুঝতে পারে না । সোহম মহিমার কনফিউশন পরিষ্কার করার জন্য ব্যাপারটা স্পষ্ট করে বলে যে তাকে সিঁদুর পড়িয়েছে সোহম । পুরো কথাটা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো মহিমা । সোহমকে সে বলে , " আর ইউ ক্রেজি সোহম ? একটা হবু ইঞ্জিনিয়ার হয়ে এই আষাঢ়ে গল্প ফেঁদে সেটা আবার আমাকে বিশ্বাস করতে বলছো ? "সোহম , " শাস্ত্র মতে সিঁদুর বিয়ের প্রধান চিন্হ , আমি তোমাকে আজ সিঁদুর পড়িয়েছি তাই তুমি আমার বৈধ স্ত্রী "।মহিমা , "


এই লিসেন আমার অনুমতি ছাড়া যে কেউ এসে আমাকে সিঁদুর পড়ালে সে আমার স্বামী হবে ? ভাবছো কি করে এটা আমি মেনে নেবো ? জীবনটা সস্তার টিভি সিরিয়াল নয় । আর এই সব ব্যাকডেটেড আষাঢ়ে গল্প আমি বিশ্বাস করিও না ।আর রীতিনীতির কথা যদি বলছো তো স্পষ্ট করে হিন্দু বিবাহের বৈদিক আচারগুলি জানবে । যার মধ্যে অপরিহার্য হল কুশণ্ডিকা, লাজহোম (লাজ বা খই দিয়ে যজ্ঞানুষ্ঠান), সপ্তপদী গমন, পাণিগ্রহণ (কন্যার পাণি অর্থাৎ হস্ত গ্রহণ), ধৃতিহোম (ধারণ করার অর্থাৎ কন্যাকে ধরে রাখার যজ্ঞ) ও চতুর্থী হোম।এছাড়া পালিত হয় অরুন্ধতী নক্ষত্র দর্শন, নধ্রুব নক্ষত্র দর্শ, শিলারোহণ ইত্যাদি কয়েকটি বৈদিক প্রথাও । বৈদিক প্রথাগুলি বিধিবদ্ধ শাস্ত্রীয় প্রথা ও বিবাহের মূল অঙ্গ। এবার বলো তুমি কোনটা করেছ ? আমার অনুমতি ছাড়া আমাকে বিয়ে করা আদতেও সম্ভব ?আমি চাইলে তোমাকে পুলিশে দিতে পারি কিন্তু তোমার কেরিয়ারের উপর দাগ ফেলতে কষ্ট হচ্ছে । তাই যতটা পারলাম বোঝালাম তারপর তুমি বলো কি চাও ? ব্যাপারটা পরিবার ও পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলে আমার হাতের বাইরে চলে যাবে । এবার ছাড়ো আমাকে দয়া করে কারণ তোমার এই রঙ্গর কারণে আমাকে আবার এখুনি বাড়ি ফিরে শ্যাম্পু করতে হবে । "সোহমের মুখে কোন কথা নেই আর । কারণ মানুষ স্বাভাবিক শক্তর ভক্ত আর নরমের যম । যে মেয়েটা ভয় পায়না উল্টে ভয় দেখায় । সাময়িক ইমোশন যাকে ভাষায় না তাকে এই সিঁদুরের প্রহসনে ফাঁসানো যায় না । ক্ষমা প্রার্থনা করে সোহম বাড়ি ফিরে আসে । থাক বাবা মহিষাসুরমর্দিনী মহিমাকে পাওয়া তো যাবেই না এভাবে কিন্তু চাকরি ও কেরিয়ারের জলাঞ্জলি হবে নিশ্চিত ।



Rate this content
Log in

Similar bengali story from Comedy