Sumita Chakrabarti

Crime Others

3  

Sumita Chakrabarti

Crime Others

এখানে পিঞ্জর

এখানে পিঞ্জর

4 mins
11.8K


মনে মনে হাসে কবিতা. এই অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার. এর মধ্যে কবে কখন আর সে নিজের কথা ভেবেছে, নিজের শরীরের যত্ন করেছে. তবু এর মধ্যেই কবিতার শরীর জুড়ে আজও যৌবনের ঘনঘটা. নন্তু দার বৌ সেকথাই বলছিলো আজ কবিতাকে. রোজকার মতো রাস্তার কলেই স্নান করছিলো কবিতা. বেলার দিকে কল ফাঁকা দেখে বুকের কাপড় সরিয়ে সাবান ঘষছিলো সে. কখন যে নন্তু দার বৌ পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে তা খেয়াল করেনি কবিতা. চমক ভাঙলো বৌটার কথায় "বাব্বা তোমার বুক দুটো তো ভারি সুন্দর ! দুটো বাচ্চা হবার পরেও এমন টান টান শরীর রাখো কিভাবে? আমরা তো পারিনা বাপু " কবিতা লজ্জা পেয়ে গায়ের কাপড় টেনে বলে "কি যে বলো বৌদি !তোমরা কতো সুন্দর, তোমাদের সাথে কি আমার তুলনা হয় " মনে মনে অবশ্য জানে কবিতা তার শরীরের একটা আলাদা টান আছে আর ওর জন্যই তো ছোঁকছোঁক করে পোড়ারমুখো মিনসে গুলো. নতুন যে বাড়িটায় কাজ নিয়েছে কবিতা, ওই বাড়িটার ব্যাটালোক


টাকে দেখে হাসি পায় কবিতার. বৌয়ের সামনে একেবারে গরুচোর, যেন কবিতাকে চেনেইনা. আর বৌ বাড়িতে না থাকলে ফাঁক পেলেই কবিতাকে কাছে ডাকবে, ওর শরীরটা নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করবে. আর সেও তেমন. পুরুষ মানুষ একটু পয়সা কড়ি বা একখানা ভালো কাপড়ের লোভ দেখালেই কবিতা নিজেকে ধরা দেয় ওদের কাছে. কি করবে সে. লোভটা যে বড্ডো বেশি তার. ছোটবেলায় লেখা পড়া করতেই পারেনি অভাবের সংসারে. একটু বড়ো হতেই বিয়ের দিয়ে দিলো বাড়ি থেকে. এখানে এসেও সেই অভাবের সঙ্গে লড়াই. অন্য কিছু ভাবার ফুরসৎ কোথায় পেলো. ইদানিং একটা নতুন ঝামেলা হয়েছে --পাড়ার বিষ্ণু বাবু প্রায় ই চলে আসছে ওদের বাড়ি, আর নানা ছুতো করে কবিতার শরীরে হাত দিচ্ছে. কবিতা কিছু বলেনি. বিষ্ণু বাবুর এই গ্রামের মান্যিগন্যি লোক. আর কবিতা? সেতো লোকের ঘরে কাজ করে, স্বামী বিছানায়, তার আর কিসের ইজ্জত ! তাই বিষ্ণু বাবু এলে কবিতা বড়ো ব্যস্ত হয়ে পরে কোথায় বসাবে তেনাকে. তারতো মোটে দুটো মাটির ঘর. তার একটায় ওর পঙ্গু স্বামী শুয়ে থাকে. আর একটায় সে থাকে তার ব্যাটা বিটি কে নিয়ে. আর আছে একটা ফালি দাওয়া, তার এক কোনে রান্না করে কবিতা. তার ব্যাটা বিটিও বড়ো হচ্ছে, তারা যদি ধরে ফেলে বিষ্ণু বাবুর মতলব. ছিঃ কি লজ্জা!


কালীর আজ টিউশন পড়া ছিল, এসেই বললো "মা খেতে দে, বড্ডো খিদে লাগছে." মেয়ের দিকে তাকায় কবিতা -- বেশ ডাগর হয়েছে তার বিটি. তা হবে নাই বা কেন. চোদ্দ বছর বয়স তো হলো. আর দুয়েক বছরের মধ্যে বিয়ে দিতে হবে. কোথায় যে পাবে এতো টাকা. ভাবতে ভাবতে কবিতা খেতে দেয় মেয়েকে. খেতে খেতে কালী বকেই চলে. ওর যে কত কথা. কবিতার ছেলে অজয়টা হয়েছে ঠিক এর উল্টো. একেবারে চুপচাপ. ওর বাপের মতো. দেখতেও হয়েছে বাপের মতো. ওর বাপ ও অল্প বয়সে এমন সুঠাম ছিল. মিলে কাজও করত. কিন্তু কবিতার কপালে তো সুখ নেই. একদিন রেল লাইন পেরোতে গিয়ে ওর স্বামীর দুটো পা ই কাটা যায়. সেই থেকে তো বিছানায়. দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে কবিতা.


আজ বিষ্ণু বাবু এসেছেন. কবিতা দেখল পাশের ঘরে ওর স্বামী ঘুমাচ্ছে. ও তাড়াতাড়ি ওই ঘরের দরজাটা বাইরে থেকে টেনে দিয়ে ওদের ঘরে বিষ্ণু বাবুকে বসালো. তারপর শরবত বানিয়ে নিয়ে এলো বিষ্ণু বাবুর জন্য. লেবু, নুন, চিনি দিয়ে বানানো শরবত খেতে খেতে বিষ্ণু বাবুর চোখ ঘুরতে লাগলো কবিতার শরীরের আনাচে কানাচে. শরবত শেষ করে কবিতাকে কাছে টানলেন বিষ্ণু বাবু.বললেন "কবিতা, তুই কত সুন্দর জানিস? " অমনি কবিতা একটা আদুরে বিড়ালের মতো বিষ্ণু বাবুর গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে বললো "আপনি শুধু আমার রূপ ই দ্যাখেন, আমার যে কত চিন্তা তা জানেন? আমার বিটি যে চোদ্দোয় পড়লো, ওর বিয়ে দিই কিকরে বলুন তো " বিষ্ণু বাবু হাসতে হাসতে বলে "আরে ঘাবড়াচ্ছিস কেন? আমি তোর কালীর বিয়ে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেবো."


বিকেলে বিষ্ণু বাবু গ্রামের একটা লোককে দিয়ে কবিতার জন্য একটা ছাপার শাড়ি কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন আর ওদের সবার জন্য এক কেজি মুরগির মাংস. আজ অনেক দিন পরে মাকে মাংস রান্না করতে দেখে কালী মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে বলে "মা কি সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে, খিদে পেয়ে গেল." অজয় কিন্ত বাড়ি ফিরেই বলল

"হঠাৎ মাংস? ও বিষ্ণু বাবু টাকা দিয়েছেন বুঝি? মা, তুই জানিস না লোকটা একটা ভন্ড শয়তান." কবিতা ধমক দেয় ছেলেকে "চুপ কর, তোর বাপ ঘুমাচ্ছে " অজয় ক্ষোভের সঙ্গে বলে "হ্যাঁ বাপতো ঘুমিয়েই থাকে." তারপর গলা নামিয়ে বলে "আমাকে একটু সময় দে মা, বাবার কাজটা আমি পাবো. পার্টির একটা দাদাকে ধরেছি." কবিতা অবাক হয়ে ভাবে তার ব্যাটা সত্যিই অনেক বড়ো হয়ে গেছে. রাতে বিছানায় শুয়ে ঘুম আসেনা কবিতার. আজ খেতে দিতে গিয়ে স্বামীর গালাগাল

শুনে এসেছে--"মাংস কোথা থেকে আসছে বুঝিনা ভেবেছিস? মাগি তোর লোভটা একটু কমা... " আজ কতদিন ধরে একনাগাড়ে স্বামীর সেবা করছে সে. তারও তো একটা শখ আল্হাদ থাকতে পারে, তার শরীরের একটা চাহিদা থাকতে পারে !


দুপুরে এদিকটা বড়ো নিস্তব্ধ. কবিতাদের বাড়ির পাশের জঙ্গল তা থেকে একটা কুবো পাখি একটানা ডেকে চলেছে কুব কুব কুব কুব. আজ আবার ওরা ঘনিষ্ট হয়েছে -- হ্যাঁ ও আর বিষ্ণু বাবু. কতক্ষন এভাবে ছিল জানেনা কবিতা. হঠাৎ খস খস একটা শব্দে চমকে তাকিয়ে দেখে দরজায় অজয় দাঁড়িয়ে. ওরা দুটো হাত পিছনে, দুটো চোখ লাল. ওকি সব দেখেছে? লজ্জা আর ভয়ে কবিতা নির্বাক হয়েছে যায়. দেখে অজয় ওরা হাত দুটো সামনে এনেছে --ওর দুহাতে ধরা ঘরের ধারালো কাটারিটা. কিছু বুঝে ওঠার আগেই অজয় ওটা বসিয়ে দেয় বিষ্ণু বাবুর গলায়. উহঃ কি বীভৎস ! কবিতা জ্ঞান হারায়.


কবিতা চোখ খুলে দেখে ওরা ঘরের লোক ভর্তি, ও শুয়ে আছে দাওয়ায়. ও কোনোমতে জিজ্ঞাসা করলো "অজয় কোথায়?" পাশে বসে থাকা মহিলারা অনেকে একসঙ্গে উত্তর দিল "ওকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে, যা কান্ড করল

তোমার ব্যাটা !" কবিতা চোখ বোজে. ওরা মনে পরে ওর স্বামীর কথা গুলো "মাগী তোর লোভটা..."

ওর চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকে. ওতো ওর স্বামী সন্তান নিয়ে একটু খেয়ে পরে বাঁচতে চেয়েছিল শুধু !


-----:-----


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Crime