Sumita Chakrabarti

Tragedy Crime Others

3  

Sumita Chakrabarti

Tragedy Crime Others

এখানে পিঞ্জর

এখানে পিঞ্জর

5 mins
12.2K


মনে মনে হাসে কবিতা. এই অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় তার. এর মধ্যে কবে কখন আর সে নিজের কথা ভেবেছে আর নিজের শরীরের যত্ন করেছে. তবু এর মধ্যেই কবিতার শরীর জুড়ে আজও যৌবনের ঘনঘটা. নন্তু দার বৌ সেকথাই বলছিলো আজ কবিতাকে. রোজকার মতোই আজও রাস্তার কলেই স্নান করছিলো কবিতা. বেলায় কল ফাঁকা দেখে ও বুকের কাপড় সরিয়ে সাবান ঘষছিল. কখন যে নন্তু দার বৌ পিছনে এসে দাঁড়িয়েছে খেয়াল করেনি কবিতা. চমক ভাঙলো বৌটার কথায় "তোমার বুক দুটো তো ভারি সুন্দর ! দুটো বাচ্চা হবার পরও এমন টান টান শরীর রাখো কিভাবে? আমরা তো পারিনা বাপু " কবিতা লজ্জা পেয়ে গায়ের কাপড় টেনে বলে "কি যে বল বৌদি, তোমরা কতো সুন্দর. তোমাদের সাথে কি আমার তুলনা হয় ! " মনে মনে


অবশ্য জানে কবিতা তার শরীরের একটা আলাদা টান আছে. আর সেই টানেইতো পোড়ারমুখো মিনসে গুলো অমন ছোঁক ছোঁক করে. নতুন যে বাড়িটায় কাজ নিয়েছে কবিতা, সেই বাড়ির পুরুষ মানুষ টাকে দেখলে হাসি পায় কবিতার. বৌয়ের সামনে একেবারে গরুচোর, যেন কবিতাকে চেনেইনা. আর যখন বৌদি বাড়ি থাকেনা, তখন ফাঁকা পেলেই কবিতাকে কাছে ডাকে, ওর শরীরটা ঘাটাঘাঁটি করে. পুরুষ গুলো একটা ভালো কাপড় কিংবা একটু টাকার লোভ দেখালেই কবিতা ধরা দেয় ওদের কাছে. কি করবে সে. ভগবান যে এমনধারা তৈরী করেছে তাকে. তার লোভ ছেলেবেলা থেকেই বড্ডো বেশি. ছোট বেলায় পড়াশোনার সুযোগ পায়নি. অভাবের সংসারে একটু বড়ো হতেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হলো তার. এখানেও সেই অভাব. এতে তার আদিম বৃত্তি গুলোই জোরালো হয়ে উঠেছে. জীবনের অন্য কিছু নিয়ে ভাবার ফুরসৎ কোথায় তার. ইদানিং এক নতুন ঝামেলা শুরু হয়েছে. পাড়ার বিষ্ণু বাবু প্রায়ই এসে হাজির হচ্ছে কবিতাদের বাড়ি. এটা সেটা সাহায্যের আশ্বাস দিয়ে নানা ছুতো করে খালি কবিতার শরীরে হাত দিচ্ছে. কবিতা কিছু বলছেনা. বিষ্ণু বাবুকে যে এই গ্রামের সবাই খুব মান্যি গন্যি করে. আগে বিষ্ণু বাবুর সরকারি স্কুলের হেড মাস্টার ছিল. আর কবিতাতো লোকের বাড়ি কাজ করে, স্বামী গত তিন বছর বিছানায়. ওকে আর কে মান ইজ্জত দেবে! আজকাল বিষ্ণু বাবু এলে কবিতা বড়ো ব্যস্ত হয়ে পড়ে. কোথায় বসতে দেবে তেনাকে. তারতো মোটে দুটো মাটির ঘর. তার একটায় তার পঙ্গু বর শুয়ে থাকে. আরেকটায় কবিতা থাকে তার ব্যাটা আর বিটি কে নিয়ে. বাইরে এক ফালি দাওয়া, তার এক কোনে রান্না করে কবিতা. ছেলে মেয়ে গুলোও তো বড়ো হচ্ছে. ওরা যদি বিষ্ণু বাবুর মতলব ধরে ফেলে. ছিঃ কি লজ্জা !


কালীর আজ সকালে টিউশন পড়া ছিল. ফিরে এসেই বললো "মা, খেতে দে, বড্ডো খিদে লাগছে " মেয়ের দিকে তাকায় কবিতা -- বেশ ডাগর হয়ে উঠেছে তার বিটি. হবে নাই বা কেন. বয়স তো চোদ্দ হলো. আর দুয়েক বছরের মধ্যে বিয়ে তো দিতেই হবে.কোথা থেকে যে বিয়ের টাকা জোগাড় হবে কে জানে ---ভাবতে ভাবতে মেয়েকে খাবার দেয় কবিতা. খেতে খেতে কালী বকেই চলে. ওর যে কতো কথা. আর ওর ছেলে অজয়টা হয়েছে ঠিক এর উল্টো. একেবারে চুপচাপ. ওর বাপের্ মতো. চেহারা টাও বাপের মতোই সুঠাম. ওর বাপ্ মিলে কাজ করত. কিন্তু কবিতার কপালে যে সুখ নাই. একদিন রেল লাইন পেরোতে গিয়ে ওর বাপের দুটো পা ই কাটা যায়. সেই থেকে তো বিছানায়. দীর্ঘ নিঃস্বাস ফেলে কবিতা.


আজ বিষ্ণু বাবু

এসেছেন. কবিতা তাড়াতাড়ি পাশের ঘরে গিয়ে দেখলো ওর স্বামী ঘুমাচ্ছে. ও ওঘরের দরজাটা টেনে দিয়ে এঘরে এলো, বিষ্ণু বাবুর জন্য শরবত নিয়ে. লেবু, নুন আর চিনি দিয়ে বানানো. খেতে খেতে বিষ্ণু বাবুর চোখ ঘুরতে লাগলো কবিতার শরীরের আনাচে কানাচে. আর কবিতা ভাবতে লাগলো ভাগ্যিস ছেলে মেয়ে স্কুলে আছে ! শরবত শেষ করে বিষ্ণু বাবু কবিতাকে কাছে টানলো. তারপর ফিস ফিস করে বলল "কবিতা, তুই কত সুন্দর জানিস !"অমনি কবিতা একটা আদুরে বিড়ালের মতো বিষ্ণু বাবুর গা ঘেঁষে বললো "আপনিতো শুধু আমার রূপটাই দ্যাখেন, আমার যে কত চিন্তা তা জানেন? আমার বিটির যে চোদ্দ বছর বয়স হলো. ওর বিয়ে দেবো কিভাবে বলুন তো " বিষ্ণু বাবু হেসে বলেন "আরে ঘাবড়াচ্ছিস কেন? তোর কালীর বিয়ের আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেবো.".

বিকেলে বিষ্ণু বাবু গাঁয়ের একটা লোককে দিয়ে কবিতার জন্য একটা ছাপার শাড়ি আর বাড়ির সবার জন্য এক কেজি মুরগির মাংস কিনে পাঠিয়ে দিয়েছেন. অনেক দিন পর ওদের বাড়িতে আজ মাংস রান্না হচ্ছে. মাকে মাংস কষাতে দেখে কালী এসে মার গা ঘেঁষে দাঁড়ায়. নাক টেনে গন্ধ নিয়ে বলে কি সুন্দর গন্ধ বেরোচ্ছে খিদে পেয়ে গেল." অজয় কিন্তু বাড়ি ফিরেই বলে "আজ হঠাৎ মাংস, বিষ্ণু বাবু টাকা দিয়েছেন বুঝি? লোকটা একটা ভন্ড শয়তান --তুই জানিসনা." কবিতা ধমক দেয় ছেলেকে "চুপ কর, তোর বাপ্ ঘুমাচ্ছে " অজয় ক্ষোভের সঙ্গে বলে "হ্যাঁ বাপ্ তো ঘুমিয়েই থাকে." তারপর গলা নামিয়ে বলে "আমাকে কটা দিন সময় দে মা.পার্টির একটা দাদাকে ধরেছি, বলছে বাপের কাজটা আমি পাবো" কবিতা অবাক হয়ে তাকায় ওর ব্যাটার দিকে, কবে এতো বড়ো হয়ে গেলো ! রাত্তিরে শুয়ে বুক ঠেলে কান্না আসে কবিতার. স্বামীকে খেতে দিয়ে অকথ্য গালাগালি শুনেছে আজ সে "এই মাংস কোথা থেকে আসছে বুঝিনা ভেবেছিস? অসভ্য মাগী, তোর লোভটা একটু কমা !" আজ তিন বছর ধরে একনাগাড়ে সেবা করে চলেছে মানুষটার... সেও মানুষ, তারও শখ আল্হাদ আছে, শরীরের খিদে আছে, কেন বোঝেনা !


দুপুরে এদিকটা বড়ো নিস্তব্ধ. কবিতাদের বাড়ির পাশের জঙ্গল টা থেকে কুবো পাখি টা একটানা ডেকে চলেছে কুব কুব কুব কুব...... আজ বিষ্ণু বাবুর সঙ্গে কবিতা আবার ঘনিষ্ট হয়েছে. কতক্ষন ওরা এভাবে ছিল কবিতা জানেনা. হঠাৎ খসখস একটা শব্দে চমকে তাকিয়ে কবিতা দেখে দরজায় ওর ব্যাটা দাঁড়িয়ে. ওর দুটো হাত পিছনে, চোখ দুটো লাল. ভয়ে হিম হয়ে যায় কবিতার শরীর. ওকি সব দেখেছে? এসব ভাবতে ভাবতেই ঘটে যায় সাংঘাতিক একটা ব্যাপার. অজয় ওর হাত দুটো সামনে আনে -- দুহাতে ও ধরে আছে ঘরের ধারালো কাটারিটা. আর মুহূর্তেই সেটা বসিয়ে দেয় বিষ্ণু বাবুর গলায়. উহঃ কি বীভৎস ! কবিতা জ্ঞান হারায়.


চোখ খুলে কবিতা দেখলো ওদের ঘর লোকে লোকারণ্য. ও শুয়ে আছে ঘরের দাওয়ায়. ও কোনোমতে জিজ্ঞাসা করলো "অজয় কোথায়? " ওর পাশে বসে থাকা অনেক জন্ একসঙ্গে বলে উঠলো "তোমার ছেলেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে. বাব্বা যা কান্ড করলো !" কবিতা চোখ বোজে, ওর মনে পড়লো ওর স্বামীর কথাগুলো "মাগী তোর লোভটা.... " কবিতার দুচোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়তে থাকলো --একটু ভালো ভাবে বাঁচতে কেন দেবেনা ভগবান ওকে !


.


Rate this content
Log in

Similar bengali story from Tragedy